![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
মেয়েটার চোখে অদ্ভুত মাদকতা।
- ‘শাহরিয়ার, তুমি কি ভয় পাচ্ছ?’
- ‘না মানে, তোমার বাসায় কেউ নাই তো, তাই অস্বস্তি লাগছে হয়তো।’
- ‘দূর বোকা! পুরুষ মানুষের এত ভয় পেলে চলে নাকি!’
চৈতি আরো কাছে ঘেঁষে বসে। শাহরিয়ারের অস্বস্তি আরো বেড়ে যায়।
- ‘কেউ নেই বলেই তো ডেকে এনেছি,’ চৈতির হাসিতে তখন দুষ্টুমি।
হুট করে শাহরিয়ারের জারার মুখখানা মনে পড়ে। নাহ্, এখন উল্টা-পাল্টা কিছু করলে জীবনে ও কখনো জারার মুখোমুখি হতে পারবে না। হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যায় শাহরিয়ার।
- ‘চৈতি, আজ বরং আসি। পরে আরেকদিন আসবো,’ উত্তরের জন্য দেরী না করে কেটে পরে শাহরিয়ার।
‘প্রতিশোধ নিতে গেলে নিজেরই গর্তে পড়া লাগে,’ চৈতির বাসা থেকে বেরিয়ে বিড়বিড় করে শাহরিয়ার।
জারাকে মনের কথা বলার পর ওর অগ্নিমূর্তি দেখে শাহরিয়ার বেশ দমে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল সুন্দর বন্ধুত্বটা এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল। ইস্, বন্ধু কোটা বলে যে কিছু নেই কেন! আর ওই ঘটনার পর থেকে জারাও কেমন যেন বদলে গেছে। কেমন যেন দূরে দূরে থাকে। প্রায়ই ফোন ধরে না, মেসেজের উত্তর দেয় না। মাঝে মাঝে শাহরিয়ারের মনে হয়, ওদের বন্ধুত্বের তানপুরাটার সুর কোথায় যেন কেটে গেছে। সেটা আর কখনো বাজবে না।
এই তো, মাসখানেক আগেই জারার জন্মদিন ছিলো। জারা অনেক বন্ধুকেই বাসায় ডাকল, কিন্তু শাহরিয়ারকে যেতে বললো না। কষ্টে শাহরিয়ারের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল। জারার ওপর খুব অভিমান হচ্ছিল। অভিমান থেকেই কিনা কে জানে, শাহরিয়ার ওর ডিপার্টমেন্টের চৈতির সাথে মেলামেশা বাড়িয়ে দেয়। উদ্দেশ্য- 'Make Jara jealous.' চৈতির ব্যাপারে ক্যাম্পাসে নানা রকম মুখরোচক কাহিনী চালু আছে। ছেলে ঘুরানোর ব্যাপারে সে মোটামুটি প্রবাদতুল্য। শাহরিয়ার নিজেও তাকে তিন-চার দিন ভর সন্ধ্যায় কোন না কোন ছেলের সাথে ক্যাম্পাসে আবিস্কার করেছে। আবার এক ছেলের সাথে কখনোই দু’বার দেখেনি। শাহরিয়ার তবু এগোয়। ন্যাংটার আবার বাটপারের ভয়! ধীরে ধীরে চৈতি আর শাহরিয়ারের ‘বন্ধুত্ব’ গভীর হয়। এরপর এক দুপুরে নির্জন বাসায় চৈতি শাহরিয়ারের কাছে ঘেঁষে বসে আর শাহরিয়ার কেটে পড়ে।
দুই.
‘পথশিশুদের জন্য কিছু করতে চাই। বন্ধুরা, প্লিজ তোমাদের আইডিয়া শেয়ার কর’ - এমন একটা স্ট্যাটাস দেখে চোখ আটকে যায় শাহরিয়ারের। জারার স্ট্যাটাস। অবশ্য জারার সব স্ট্যাটাসই তাঁর চোখে আটকায়। হুট করেই ছেলেমানুষি বুদ্ধিটা আসে শাহরিয়ারের। জারার অনেকদিন থেকেই চ্যারিটি ওয়ার্ক টাইপের কিছু করার ইচ্ছা। এই চ্যারিটির ছুতায় যদি ওর কাছাকাছি একটু আসা যায়! ভাবতে ভাবতেই জারাকে ফোন করে শাহরিয়ার।
- ‘হ্যালো জারা?’
- ‘হ্যা বল।’
- ‘তোর স্ট্যাটাসটা দেখলাম এফবি তে।’
- ‘ও আচ্ছা।’
নাহ, এ তো এখনো এক মাইল গ্যাপ রেখে চলছে! - মনে মনে ভাবে শাহরিয়ার।
- ‘শোন, এখন তো শীত পড়তে শুরু করেছে। আমরা তো পথশিশুদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ টাইপের কিছু একটা করতে পারি।’
- ‘হ্যা, সে তো খুবই ভালো হয়।’
এরপর টুকরো টুকরো ঘটনা ঘটতে থাকে। ঘরকুনো শাহরিয়ার বন্ধু, আত্বীয়, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ঘুরে ঘুরে চাঁদা আদায় করে; পুরোনো শীতের কাপড় সংগ্রহ করে; সেগুলো লন্ড্রিতে দেয়; স্পন্সর খোজে, ভলান্টিয়ার ঠিক করে, হাড় কাঁপানো শীতে বাচ্চাগুলোর মাঝে কাপড় বিলায়। শুধু শীতবস্ত্র বিতরণ না, পথশিশুদের লেখাপড়া, ব্লাড ডোনেশন - আরো কত কি!
ধীরে ধীরে এসব নেশার মতো হয়ে যায়। জারাকে পাওয়ার নেশাটাও বেড়ে চলে। কিন্তু মুখ ফুটে বলা হয় না।
‘ও সে হারাই হারাই সদা ভয় হয়
হারাইয়া ফেলি চকিতে’
একসময় মনে হয়, ওর আর জারার দূরত্ব অনেক কমে এসেছে। জারা এখন ওর সাথে অনেক সহজভাবে মেশে, কথা বলে, হাসে। একটা সময় শাহরিয়ারের মনে হয়, আমি বোধ হয় ওকে পেতে যাচ্ছি। দোহাই লাগে বেলা, চাকরিটা একবার পেতে দাও। আর কেউ আটকাতে পারবে না।
আজকাল মাঝে মাঝেই জারাকে স্বপ্নে দেখে শাহরিয়ার। ছোট্ট একটা নদী, টলটলে স্বচ্ছ পানি। নদীর নাম ময়ূরাক্ষী। হুমায়ূন আহমেদের ময়ূরাক্ষী, কেবল স্বপ্নেই যাকে দেখা যায়। সে অদ্ভুত সুন্দর, মন খারাপ করা সুন্দর। সেই নদীর মাঝখানে একটা নৌকা। নৌকায় নীল শাড়ি পড়া একটা মেয়ে। মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শাহরিয়ার জানে, মেয়েটা জারা। এক সময় শাহরিয়ারের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভাঙ্গার পর ওর বুকে অদ্ভুত একটা কষ্ট হতে থাকে। এ কষ্ট ময়ূরাক্ষীর সৌন্দর্য দেখার কষ্ট, এ কষ্ট জারার মুখ না দেখতে পাওয়ার কষ্ট। পূর্ণিমার আলোয় ঘর ভেসে যায়, সেই চাঁদের আলোয় শুয়ে ছটফট করে শাহরিয়ার।
‘তুমি যাবে কি ময়ূরাক্ষীতে?
হাতে হাত রেখে জলে নাওয়া
যে ভালোবাসার রং জ্বলে গেছে,
সেই রংটুকু খুঁজে পাওয়া।
সখী ভালোবাসা কারে কয়?
নদীর জলে ভালোবাসা খোজার,
কোন অর্থ কি হয়?’
তিন.
জ্যৈষ্ঠের এক পড়ন্ত বিকেল। শাহরিয়ার বাংলা একাডেমি ধরে শাহবাগের দিকে হাঁটছিল। এক বড় ভাইয়ের অফিসে যেতে হবে। শাহরিয়াররা ঠিক করেছে পথশিশুদের ওরা একটা দিন হলেও মৌসুমি ফল খাওয়াবে। সেই ভাই আম, কাঁঠাল, লিচু কেনা বাবদ কিছু টাকা দেবেন বলেছিলেন। শাহরিয়ার সেটা আনতেই যাচ্ছিল। হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রিনের নামটা দেখে শাহরিয়ারের হার্টবিট বেড়ে যায়। জারা।
- ‘হ্যা জারা?’
- ‘কি অবস্থা শাহরিয়ার?’ অনেকদিন বাদে শাহরিয়ারের মনে হয় সেই পুরোনো জারা, ওর কাছের বন্ধু জারা যেন ওর সাথে কথা বলছে। অদ্ভুত একটা ভালোলাগায় শাহরিয়ারের মনটা ভরে ওঠে।
- ‘এই তো। তোর কি অবস্থা?’
- ‘এই তো। শোন, একটা জরুরী কথা বলতে ফোন করেছি।’
এক মুহূর্তের জন্য শাহরিয়ারের মন শাহরিয়ারকে আশা দেখায়। জারা কি নিজ থেকেই মনের কথা শাহরিয়ারকে বলতে চাইছে?
- ‘হ্যা বল,’ শাহরিয়ারের গলাটা কেমন যেন কাঁপা কাঁপা শোনায়।
- ‘পরশু রাতে আমার হুট করে এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। কিছুদিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল। পরশু দুপুরে ওরা হঠাৎ করে জানালো যে কাবিন করে রাখতে চায়।’
হুট করে শাহরিয়ারের মনে হল, ওর মনটা চার ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এক ভাগ ওর হার্ট মনিটর করছে, হার্টবিট হঠাৎ করেই কেন যেন অনেক বেড়ে গেছে। এক ভাগ বলছে, ‘গলা স্বাভাবিক রাখো গাধা কোথাকার!’ একভাগ চিৎকার করতে চাইছে, ‘জারা, আমাকে ছেড়ে যেয়ো না! তোমাকে ছাড়া কি নিয়ে থাকবো আমি?’ আরেকটা অংশ বলছে, ‘মেয়েটা ওখানেই অনেক ভালো থাকবে। এমন কিছু বলিস না যাতে ও শেষ মুহূর্তে কষ্ট পায়। যে তোর না সে কখনোই তোর না।’ আর মাথার ভেতর এসব চিন্তা ঘটে চলেছে অবিশ্বাস্য দ্রুততায়।
- ‘বিয়ের যে কথাবার্তা চলছে কিছু জানাস নাই তো?’
- ‘ভাবলাম সব ফাইনাল হলে জানাই।’
- ‘হুম। ছেলে কি করে?’
- ‘ও আর্মিতে আছে।’
- ‘র্যাঙ্ক?’
- ‘ক্যাপ্টেন।’
এ পর্যায়ে শাহরিয়ারের মনে হয়, মেয়েটাকে কনগ্রাচুলেট করা উচিত।
- ‘ওহ, কনগ্র্যাটস্! চিরকালের মত ফেঁসে গেলে হে,’ শাহরিয়ার রসিকতা করার চেষ্টা করে। বেঈমান গলাটার জন্য রসিকতাটা খুব একটা প্রাণবন্ত হয় না।
- ‘তুই কিন্তু অবশ্যই আসবি।’
- ‘কবে বিয়ে?’
- ‘সামনের সাতাশ তারিখ।’
- ‘কোথায়?’
- ‘সেনাকুঞ্জে। আমি একদিন সময় করে বাসায় এসে আঙ্কেল-আন্টির সাথে দেখা করে যাব।’
- ‘ওহহো, ওই সময় তো আমার ফাইনাল পরীক্ষা থাকবে রে।’
- ‘আমি কোন কথাই শুনবো না, তুই আসছিস, ব্যাস!’
- ‘চেষ্টা করব রে।’
- ‘ভাব ধরিস না তো! আমার এত বড় একটা দিন আর তুই থাকবি না মানে! শোন, হাতে অনেক কাজ, এখন রাখি রে, কেমন?’ জারা ফোনটা কেটে দেয়।
ফোন রাখার পর শাহরিয়ার কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকে। কি হল এতক্ষণ? তারপর বুক জুড়ে খুব কষ্টের একটা অনুভূতি হতে থাকে। নিজেকে খুব ফেলনা, খুব তুচ্ছ মনে হতে থাকে। অবসাদে কেমন যেন ঘোর লেগে আসে। দূরে পার্ক থেকে একটা গানের কলি ভেসে আসে।
‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো?
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা,
সম্বন্ধটা এইবার তুমি ভেস্তে দিতে পারো...’
নাহ, অফিস টাইম শেষ হয়ে আসছে। ভাইয়ের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে আসা উচিত। কতগুলো বাচ্চা সারা বছরে এই প্রথম আশ মিটিয়ে আম খাবে। খুশিতে চকচক করবে ওদের মুখ। এই খুশি দেখার নেশা বড়ই কঠিন নেশা। শাহরিয়ার দ্রুত পা চালায়।
*শেষ*
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২২
রিফাত শামস বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০০
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
বেশ ভালো লাগল গল্পটি।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২৩
রিফাত শামস বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:১৪
রসায়ন বলেছেন: মনটা খারাপ করে দিলা রে ভাই ;( !
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০৮
রিফাত শামস বলেছেন: কমপ্লিমেন্ট হিসাবে নিলাম। মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:১৪
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: ভালো লাগল... খুব সুন্দর
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৫৬
রিফাত শামস বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: সুন্দর