![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম পর্বের লিঙ্ক
তিন
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ফারহানের মনে হয়, আচ্ছা, বললে জেরিন যদি না করে দেয়? নিজের মতো করে পেতে গেলে যদি চিরদিনের মতো একটা ভালো বন্ধু হারিয়ে ফেলি? হায় হায়, তখন কি হবে? হঠাৎ করেই ফারহানের ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে। জেরিনের সাথে বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাবে চিন্তা করতেই ভেতরটা খালি খালি লাগে। বলবো? নাকি বলবো না? বুঝে উঠতে পারে না ফারহান। কষ্টের অনুভূতিটা প্রকট হয়ে ওঠে। এতোদিনের পুরনো বন্ধু। বললে যদি কষ্ট পায়? যদি আমাকে ইডিয়ট বলে? নাহ্ বলা যাবে না। বন্ধু হারানো যাবে না।
আচ্ছা, আমরা এখন একটু জেরিনের কাছে আসি। মজার ব্যাপার হলো জেরিনও মনে মনে ফারহানকে খুব পছন্দ করে। যেহেতু সে গণ্ডার না, তাই ফারহানকে সে অনেক আগ থেকেই ভালোবাসে। মনে মনে মিসেস গণ্ডার হতে চাইলেও সে চায় ফারহানই তাঁকে বলুক। জেরিনের বেস্ট ফ্রেন্ড নাতাশা তো প্রায়ই বলে “তুই ওরে একটা-দুইটাসিগন্যাল দে না রে বাবা। যদি না বুঝে তাইলে নাই। তখন বুঝবি ওর মেন্টাল বয়স বারো। ছোট্ট মানুষের সাথে তো আর প্রেম করা যায় না!” কিন্তু ফারহান যদি কিছু মনে করে? মিষ্টি বন্ধুত্বটা যদি ভেঙ্গে যায়? তাই আর বলা হয় না।
অবশেষে সেই কালান্তক ফাইনাল চলে আসে। জেরিন আর ফারহান পরীক্ষার আগের একমাস যে প্রিপারেশন লিভ থাকে সেই সময়টায় জেরিনের বাসায় একসাথে পড়ে, এটা গত তিন বছর ধরেই হয়ে আসছে। অবশ্য পড়াটা জেরিন একাই পড়ে, ফারহান সারাদিন জেরিনের আম্মার বানানো নানা রকম খাবার চিবিয়েই কুল পায় না। তবে জেরিনের বোঝানোর ক্ষমতা অসাধারণ, সে ফারহানকে যেটুকু বুঝিয়ে দেয় তাঁর গুণেই ফারহান মোটামুটি ভালো একটা মার্ক পেয়ে যায়। আর একসাথে পড়তে পড়তে জেরিনের এমন অভ্যাস হয়ে গেছে যে ফারহানকে পড়া বুঝিয়ে দিলে জেরিনের নিজের পড়াটা আরো ভালো হয়। Everybody is a winner ধরণের ব্যাপার স্যাপার আর কি।
জেরিনের বাবা চান মেয়ে বাকি পড়াশোনাটা বাইরে থেকেই শেষ করুক। তবে জেরিন এখনো বুঝে উঠতে পারছে না সে বাইরে যাবে কি যাবে না। জেরিনের আম্মা ভালোভাবেই বোঝেন তাঁর মেয়ের এমন দ্বিধার কারণটা ফারহান। এই সেশনে অ্যাপ্লাই করার সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছে, এদিকে জেরিন কিছুই মনস্থির করে উঠতে পারছে না, অন্যদিকে জেরিনের বাবা একটু অধৈর্য হয়ে উঠছেন। শেষে থাকতে না পেরে একদিন জেরিনের বড় বোন জেরিনের সাথে সরাসরিই কিছু কথা বলে ফেলে।
- “তুই ফারহানকে পছন্দ করিস, তাই না? আমি জানি তুই করিস।”
- “ধ্যাত আপু! কি যে বলিস না!” জেরিন আপুর মুখে এমন সোজাসাপ্টা প্রশ্ন শুনে কিছুটা লজ্জা পায়।
- “ও কি তোকে সরাসরি কিছু বলসে?”
জেরিন দু’ পাশে মাথা নেড়ে না করে।
- “জানিস তো, বাবার অনেক সখ তুই যেন বাইরে যাস। তুই ওকে হারানোর ভয়ে দূরে যেতে চাচ্ছিস না, তাই না?” আপু বলে।
- “হুম”
- “শোন, তুই বরং ওকে একটু টাচ দে। বল যে বাবা বাইরে পাঠানোর প্রসেস শুরু করে দিসে। আমার মনে হয় এইটায় কাজ হইলেও হতে পারে। নাকি আমি আম্মুকে ফারহানের ভাবীর সাথে কথা বলতে বলবো?”
এখানে বলে রাখা ভালো ফারহানের বাবা মা নেই, সে ছোটবেলা থেকেই ভাই-ভাবীর কাছে মানুষ।
- “আমি একটু ভেবে দেখি রে আপু।”
জেরিনের এই ভেবে দেখার পেছনে কারণ আছে। যদি ফারহান ওকে ঐ দৃষ্টিতে না দেখে? তাহলে খামোখা একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। একটা হারানোর ভয় জেরিনকে পেয়ে বসে। কি করবে না করবে, এদিকে ফাইনালের প্রেশার, আরো টুকটাক ঝামেলা, জেরিনের মাথা গরম হয়ে ওঠে। নাতাশাকে ফোন করে সে। সমস্যাগুলো খুলে বলে।
- “কি করবো কিছুই বুঝতে পারতেসি নারে দোস্ত” জেরিনের গলা কেমন অসহায় শোনায়।
- “আচ্ছা ধর ও তোকে ফাইন্যালি কিছু বললো। এরপর কি হবে? তুই ওকে রেখে বাইরে যাবি? নাকি যাবিই না?”
- “আব্বুর অনেক ইচ্ছা আমি যাই। কিন্তু তবু, আমি ওকে ফেলে গেলে যদি কোন সমস্যা হয়? আমার মুখ ফুটে কিছু বলারও সাহস হচ্ছে না রে। বাবাকে কষ্ট দিতে ইচ্ছা করে না, আবার ওকেও হারাতে ইচ্ছা করে না।”
- “আমি একটা পরামর্শ দিতে পারি, মানা না মানা তোর ব্যাপার। একটু রিস্কি অবশ্য।”
- “শুনি।”
- “আপু যেটা বলসে সেইটাই কর। একটু হিন্ট দে। কাজ না হইলে বুঝবি যে তোর না সে কখনোই তোর না। কিছু পেতে গেলে তো কিছু হারাতেই হয়, তাই না?”
চার
দিন গড়িয়ে চলে। কেউই কারোর দিকে সাহস করে এগোতে পারে না। যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়? সময় কেটে যায়, পরীক্ষা আরম্ভ হয়, পরীক্ষা শেষ হয়, জেরিনের বিদেশে যাবার প্রসিডিং শুরু হয়। কিন্তু মনের কথা আর মন থেকে বেরোয় না। এর মধ্যে ফারহান রাফসানরা একটা ট্যুরের প্ল্যান করে, রাঙ্গামাটি-বান্দরবন-কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন্স – সাত দিনের মামলা। সাত দিনের মধ্যে ছেলেটা ক’দিন ফোনের নেটওয়ার্কের বাইরে থাকে কে জানে? জেরিনের গলার ভেতরে দলা পাকিয়ে ওঠে। ওর বাইরে যাবার তারিখ এগিয়ে আসছে। এদিকে কিছুই হচ্ছে না। তাঁর ধারণা ফারহানের মতো মানুষের জন্য লং ডিসট্যান্স রিলেশন মেনটেন করাটা সমস্যা হবে না। কিন্তু কোন কমিটমেন্ট ছাড়াই বাইরে চলে যাবার পর যদি ফারহানের সাথে কারো পরিচয় হয়, তখন? জেরিন আর ভাবতে পারে না। বিকেলে নাতাশার বাসায় যেতে হবে, একটা পার্টি আছে। কিন্তু ইচ্ছা করছে না। নাতাশাকে ফোন করে সে।
- “দোস্ত, আজকে আমার আসতে ইচ্ছা করতেসে না রে। না আসলে কি তুই খুব মাইন্ড করবি?”
- ”বদমাইশি করবি না জেরিন। আসতে বলসি, ঝটপট চলে আয়। একজন তোর সাথে দেখা করার জন্য সেই দুপুর থেকে বসে আছে।”
- “কে?” জেরিন অবাক হয়।
- “তোর নতুন বয়ফ্রেন্ড...যত্তসব! আইসা দেখ কে” নাতাশা ফোনটা কেটে দেয়।
মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জেরিন বেরোয়। জেরিনের বাসাভর্তি লোক। এর মধ্যেও সে এক কোণায় সংক্ষেপে নাতাশার সাথে বাইরে গেলে ফারহানকে হারিয়ে ফেলার যে ভয়টা কাজ করছে সেটা শেয়ার করে।
- “দ্যাখ জেরিন, এই যে তুই ওকে হারানোর ভয় করছিস; আবার বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে কিছু বলতেও চাচ্ছিস না। তোকে সোজাসাপ্টা একটা কথা বলি, কেমন? এই দেশে আসলে বিয়ের পর কিন্তু একটা মেয়ের পক্ষে তাঁর ছেলে বন্ধুর সাথে বিয়ের আগের সেই বিন্দাস বন্ধুত্ব বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ধরে রাখা সম্ভব হয় না। আর ফারহানের সাথে তোর যে লেভেলের বন্ধুত্ব, সেইটা কিন্তু খুবই খাঁটি। আমার মনে হয় বললে পরে ও রাজিই হবে। আর যদি নাও হয়, কি আর করা। তোর অন্য কোথাও অন্য কারো সাথে হবে। জীবন তো থেমে থাকবে না। রিস্ক একটা নে দোস্ত। যদি কিছু না হয়, নিজেরে অন্তত সান্ত্বনা দিতে পারবি য চেষ্টা করসিলি। কিন্তু কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকলে একটা সময় কিন্তু তুই নিজেরে নিজেই হেট করবি।”
- “একটু চিন্তা করতে দে দোস্ত”
- “গত ছয় মাসে অনেক চিন্তা করছিস দোস্ত। একটু সাহস কর। হইলে হবে, না হইলে না। আফসোস রাখিস না। কিছু একটা কর দোস্ত। শোন, কোন ভালো একটা জায়গায় ওরে একটা ডেট দে। একটা সুন্দর শাড়ি পড়ে, সুন্দর করে সেজে ওর সামনে যা। যেয়ে বল, ‘এই যে ছেলে তোমাকে আমি ভালোবাসি। তুমি কি আমাকে বাসো?’ ব্যাস, হয়ে গেলো সবসময় যে ছেলেদেরই বলে হবে এমন তো কোন কথা নাই।”
জেরিন মুখে কিছু বলে না। কিন্তু ওর চোখ দেখে নাতাশা বুঝতে পারে, এই প্রস্তাবটা জেরিনের পছন্দ হয়েছে।
- “সময় কিন্তু খুব বেশী বাকি নাই। কবে বলতে চাস?” নাতশা জিজ্ঞেস করে।
- “ওরা তো ট্যুর থেকে বুধবার ফিরবে, শুক্র বা শনিবার বললে কেমন হয়?”
- “হুম, শুভস্য শীঘ্রম।”
এমন সময় পেছন থেকে একটা ভরাট গলা ভেসে আসে, “নাতাশা, আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবে না?”
জেরিন পেছন ফিরে দেখে অত্যন্ত সুদর্শন একটা চেহারা ওর দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে। নাতাশা চলতি ভাষা ছেড়ে শান্তিনিকেতনি ভাষায় সুইচ করে।
- “জেরিন, এ হচ্ছে শওকত, তোর নতুন বয়ফ্রেন্ড। শওকত, এ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড জেরিন। তোরা একটু গল্প কর, আমি চা নিয়ে আসি।” নাতাশা কিচেনে চলে যায়।
এরপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। পার্টি আরো জমে ওঠে। শওকত খুব মজার একটা মানুষ, পুরোটা সময় জেরিনকে হাসিয়ে মেরেছে। অনেকদিন পর আজ জেরিন একটু মন খুলে হেসেছে, মজা করেছে। বাসায় ফিরে জেরিন উপলব্ধি করে, তাঁর মন এখন ভালো। নাহ্, শওকত ভাই আসলেও একটা চিজ! ভাগ্যিস উনিই যেচে কাল আবার ওদের সাথে একটা বাইরে একটা গেট টুগেদারের ব্যবস্থা করেছেন। আরেকটা সুন্দর দিন কাটবে।
পাঁচ
ফারহান আর রাফসান একটা টঙ দোকানে মুখোমুখি বসা। দুজনের হাতে ইনস্ট্যান্ট কফির পেয়ালা, কফিটা খেতে চমৎকার হয়েছে। দোকানটা সি বিচে, দোকানের পাশে একটা গেটের মতো দেখা যাচ্ছে, গেটের ওপর একটা সাইনবোর্ড। তাতে লেখা “নীল দিগন্তে সী রিসোর্ট।” ‘সী’ বানানটা ভুল। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ। পূর্ণিমায় সমুদ্র ঝলমল করছে। চাঁদের আলোয় চারদিক ভেসে যাচ্ছে। সে এক দমবন্ধ করা ভয়ঙ্কর সুন্দর পরিবেশ।
- “তুই যে একটা বলদ, সেইটা কি জানিস?” রাফসান কফির পেয়ালায় ফুঁ দেয়?
- “কি করলাম!”
- “মেয়েটা মাসখানেকের মধ্যে বাইরে চলে যাচ্ছে। তুই এখনো চুপ আছিস। শোন তোরে একটা প্রশ্ন করি, সোজাসুজি উত্তর দিবি, নো হাঙ্কিপাঙ্কি।”
- “বল, শুনি।”
- “তুই যে ম্যাডামকে এখনো কিছু বলছিস না, ধর ইংল্যান্ড যাবার পর যদি কলিজা আছে, তোর মতো কাপুরুষ টাইপ না, এমন কেউ ওর সাথে এনগেজ হয়? তখন কি নিজেরে সান্ত্বনা দিতে পারবি?”
- “কে জানে” ফারহান মিনমিন করে।
- “আমার ধারণা পারবি না। তুই ওরে অনেক ভালবাসিস দোস্ত, ভালোবাসিস দেখেই ‘প্রপোজ করলে যদি কষ্ট পায়’ ‘বন্ধুত্ব যদি ভেঙ্গে যায়’ টাইপের চিন্তা করিস। ভালোবাসা খুব গভীর না হলে আমার মনে হয় না তুই এভাবে ভাবতি। যাই হোক, কাউয়ার্ড থাকিস না, মানুষ হ ব্যাটা। যা হবার হবে।”
- “দোস্ত, ব্যাপারগুলা আসলে অনেক জটিল, বুঝতেছিস না।”
- “তোর বোঝার গুষ্টি কিলাই শালা!” রাফসান এবারে কিছুটা চাঁছাছোলা হয়। “আঙ্গুল না বাঁকাইলে ঘি উঠবে না তোমার! শোন, আমরা সামনের সপ্তাহে ঢাকায় ফেরার পর হয় তুই ওরে নিজ থেকে বলবি, নইলে আমি আর শায়লা রসায় রসায় বলবো। ভেবে দ্যাখ, কোনটা চাস? বাই চান্স যদি পজিটিভ কিছু হয়, জেরিন তোদের সব অ্যানিভার্সারিতে কিন্তু বাচ্চাদের সামনে কেলাইতে কেলাইতে বলবে, ‘ও তো আমাকে নিজ থেকে বলার সাহস পায় নাই, দোস্তোদের দিয়ে বলাইসে’। ভেবে দ্যাখ, তুই এরকম কিছু চাস নাকি।”
- “দেখি কি করা যায় দোস্ত”
- “সরি, এইটা অপশনাল না। হয় তুই বলবি, নইলে আমরা”
- “আচ্ছা বাবা, যা বলবো। খুশি?”
- “বেজায়” রাফসানের আকর্ণবিস্তৃত হাসি স্বাক্ষ্য দেয় সে মিথ্যা বলছে না।
- “ওয়েট। সামনের সপ্তাহ বলতে কি বুঝাচ্ছিস? আমাদের তো তরশু ঢাকায় রওনা দেওয়ার কথা।” ফারহান বলে।
রাফসান শয়তান মার্কা একটা হাসি দেয়। “কায়েস ভাই নিজ খরচে খুলনা নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। কীভাবে মিস দেই?”
ফারহানরা ঢাকায় পৌঁছেছে পরশুদিন। গতকাল পর্যন্ত ওরা ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। আজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে ‘দিল কি বাত’ বলার প্রস্তুতি। এখন ফারহান একটু আর্চিস গ্যালারিতে যাচ্ছে জেরিনের জন্য একটা কার্ড কিনবে বলে। মনটা কেমন যেন একটু অশান্ত। জেরিনের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত এ মন শান্ত হবে না। কিন্তু আর্চিস থেকে বেরিয়েই ফারহান একটা ধাক্কা খায়। রাস্তার ওপারে ক্যাফেতে বসা মেয়েটাকে কেমন যেন পরিচিত মনে হচ্ছে না? আরে, ও তো জেরিন! সাথে আরেকটা লোক বসা। লোকটা জোকার জোকার মুখ করে কি যেন বলছে, আর জেরিন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। পরিচয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত জেরিনকে এমন প্রাণ খুলে ফারহান হাসতে দেখেনি। কেন যেন ফারহানের মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। আর মেজাজ খারাপ হবেই বা না কেন? সেন্ট মার্টিন্সে না হয় ফোনের নেটওয়ার্ক খারাপ ছিলো, খুলনায় কি ওকে একটা ফোন করতে পারতো না? যদিও ফারহান রাগের মাথায় বেমালুম ভুলে গেছে যে ও নিজেও ফোন করেনি। দ্রুত পা চালিয়ে ফারহান চলে আসে।
সন্ধ্যায় ফারহানের কাছে রাফসানের ফোন আসে।
- “দোস্ত, একটা ঘটনা ঘটসে, কীভাবে বলবো বুঝতেসি না” রাফসান ইতস্তত করে বলে।
- “ভাই, এমনিতেই বহু ঝামেলায় আছি, ঢং না করে বইলা ফেল।”
- “ইয়ে, আমরা যে দুই সপ্তাহ ঢাকার বাইরে ছিলাম সে সময় থেকেই নাকি জেরিনের সাথে এক ভদ্রলোককে দেখা যাইতেসে। মাঝে মাঝে সাথে নাতাশা থাকতো, কিন্তু তিনদিন আগে নাতাশা ওর বাবা-মার সাথে সম্ভবত ইন্ডিয়া গেসে। এখন ওরা দুইজনই হ্যাং-আউট করে। আমাদের বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত অনেকেই ওদের ক্যাম্পাস, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডিতে ঘুরতে দেখসে।”
- “আমি জানি, আমিও আজ বিকালে দেখসি ওদের। তা ভালো তো।সুন্দরী মেয়ে, ভাইও মারাত্মক হ্যান্ডসাম। আবার হাসাইতেও পারে। ক্যান খামোখা আমার আশায় বইসা থাকবে বল? মাত্র পাশ করসি, চাকরি পেতেও দেরী আছে। সেম বয়সের মেয়ের সাথে জড়াইলে কীভাবে কি করবো? ভাবীকে যেয়ে কি বলবো? ‘ভাবী, একটা মেয়ে পছন্দ হইসে, বিয়ে করবো। একটা চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তোমরা ওরে খাওয়াবা’।” ফারহান নিজেকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করে। মনের ভেতর ঝড় বইছে, সান্ত্বনাটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য শোনায় না। তাছাড়া ফারহান রাফসান দুজনেই জানে, ছোটবেলাতেই বাপ মা হারানো ফারহানকে ওর ভাই ভাবী কতোটা ভালোবাসে। ফারহানের ভাই ভাবীর একটা মেয়ে আছে। ফারহানের বন্ধুদের তো মাঝে মাঝে মনে হয় ফারহানের ভাবী নিজের মেয়ের থেকে ফারহানকে বেশী ভালোবাসেন। দেখলে মনেই হয় না তাঁরা দেবর-ভাবী, মনে হয় মা ছেলে। সুতরাং সমবয়সী কেন, নিজের থেকে পাঁচ বছরের বড় মেয়ে আনলেও ফারহানের ভাবীর আপত্তি করার কথা না।
- “দোস্ত, আমরা তো কিছুই জানি না। হয়তো অন্য কোন ঘটনা আছে।“ রাফসান বলে। “একটু খোঁজ নেই, তারপর চিন্তাভাবনা করা যাবে কি করা যায়। হয়তো আমরা যা মনে করতেসি সেটা হচ্ছে না। আগেই মাথা গরম করে কোন সিদ্ধান্ত যাওয়া মনে হয় ঠিক হচ্ছে না।”
রাফসানের জানা নেই ফারহানের মাথা অলরেডি গরম হয়ে গেছে।
(চলবে)
০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৫০
রিফাত শামস বলেছেন: কাল পর্যন্ত একটু কষ্ট করে ঝুলতে হবে
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৪২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আসলেইতো ভাই পুরাইয়া ঝুলায়া দিলেন!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ঝুলে ঝূলে লাল দম মাস্ত কালান্দার!! ঝুলতেই থাকি!
দেখি কুতায় নিযে যান