![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অক্সিজেনকে ভালবাসি, তাই বলে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ঘৃণা করতে পারিনা। কারণ আমি যার কাছ থেকে আমার ভালবাসাকে পাই সে তো কার্বন ডাই- অক্সাইডকেই ভালবাসে।
চার তলায় আলো আধারী ভাব। একটা চল্লিশ ওয়াটের বাল্প টিমটিমিয়ে জ¦লছে। এতো বড় ফ্লোরের জন্য এই আলো যথেষ্ট নয়। কোন কিছু স্পষ্ট দেখা সম্ভব না। ভূতুড়ে পরিবেশের মত অবস্থা। সামনে এগোতে মানুষের অবয়বের মত কিছু একটা নড়ে উঠলো। আদৌ মানুষের অবয়ব নাকি অল্প আলোতে বিভ্রম-সেটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। অবয়বটিকে মনে হল কিছু একটা খুঁজছে। আমি নিজেকে যতোটা সম্ভ আড়াল করে তার কাছে এগোতে থাকলাম। আমার চেষ্টা ব্যর্থ হল। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে উল্টোদিকে দৌড় দিলো। তাকে ধরতে পিছু নিয়ে লাভ হল না। মূহুর্তেই উধাও সে। চার তলা থেকে এতো দ্রুত উধাও হয়ে যাওয়া রীতিমতো বিষ্ময়কর! রেলিং থেকে লাফ দিলেও তো শব্দ হবে। তাহলে গোপন কোন জায়গা কি আছে যেখানে লুকিয়ে থাকা যায়? একটু সামনে এগোলাম। অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতে যাবো এমন সময় পেছন থেকে কে যেনো হাত রাখলো। তাড়িঘড়ি করে পিস্তল বের করে পিছন ফিরতেই দেখি নিপেন।
‘তুমি!’
‘বিয়ার দিতে আপনার ঘরে গিয়েছিলাম। দেখলাম দরজা খোলা। আপনি নেই। তাই ভাবলাম উপরে আছেন। গোয়েন্দা বলে কথা।’
‘কিন্ত তোমার তো অনেক আগে বিয়ার দেয়ার কথা ছিলো।’
‘আসলে স্যার বরফ ছিলো না। ভাবলাম বরফ করে একবারে আপনাকে বিয়ার দিয়ে আসবো। বরফ ছাড়া তো বিয়ার মজা পাবেন না।’
নিপেন সহজ সরলভাবে কথাগুলো বললেও আমার কাছে কেমন যেন খটকা লাগছে। মানুষের মত অবয়বটির উধাও হয়ে যাওয়া। তারপর নিপেনের হাজির হওয়া। খুনটি কি তাহলে নিপেন করেছে? যদিও এখনই সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবেনা। তবে নিপেনকে সন্দেহের তালিকায় যোগ করতে হবে।
‘চলো রুমে যাই। দু’জন একসাথে বিয়ার খাওয়া যাবে।’
‘আমি বিয়ার খাইনা।’
‘তাই নাকি? ঠিক আছে বিয়ার খেতে হবে না। চল গল্প করি।’
সিঁড়ি থেকে নীচে নামতে নামতে নিপেনকে প্রশ্ন করলাম,
‘আচ্ছা নিপেন,তোমাদের হোটেলে তো অবিবাহিত ছেলে মেয়ে এক রুমে ওঠার নিয়ম নেই। তাহলে ওরা কিভাবে উঠলো?’
‘টালিগঞ্জের এক প্রযোজকের সাথে আমার মালিকের বন্ধুত্ব। সেই প্রযোজেকর বন্ধু বাংলাদেশের পরিচালক আদনান ফারুক। বন্ধুত্বের খাতিরে এসব হয় স্যার।’
‘ প্রযোজকের নাম জানো?’
‘অনির্বাণ লাহেড়ী। উনিও মাঝে মাঝে এখানে মেয়ে নিয়ে আসতেন।’
‘অনির্বাণ লাহেড়ী মানে,বোল্ড টাইপের ছবি বানায়। উনি তো?’
‘ঠিক ধরেছেন।’
আমার দরজার সামনে পৌছতেই ঘুমের অযুহাত দেখিয়ে ভিতরে যেতে চাইলো না। আমি জোর করলাম না। সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা পেয়ে গেলাম। সকালে উঠে ঠিক করব কালকের কর্মসূচি। আমি ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখি টেবিলের উপর ট্রেতে সুন্দর করে বিয়ার,গ্লাস আর বরফ রাখা। এজন্য নিপেনকে ধন্যবাদ দেয়া যেতেই পারে।
দরজার ঠক ঠক শব্দে সকালে ঘুম ভাঙলো। ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। সেটা কান অব্দি পৌছায়নি। না পৌছানোর কথা। গতকাল কলকাতা এসে বিশ্রাম নেয়ার সময় পেলাম না। এসেই দৌড়াদৌড়ি। তারপর আবার রাতে পুরো বোতল বিয়ার সাবাড় করে ফেলেছি। যদিও বিয়ার খেলে নেশা হয়না। কেমন যেন প্রশান্তি লাগে। সেই প্রশান্তি আমাকে ঘুমের অন্য জগতে নিয়ে গিয়েছিল।
চোখ মুছতে মুছতে গিয়ে দরজা খুললাম। দরজা খুলতেই সুঠাম দেহের একটি ছেলে প্রণাম দিয়ে পকেট থেকে আই কার্ড বের করে পরিচয় দিল,
‘সিবিআই অফিসার। তিনা মার্ডার কেসটার দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে। শুনলাম আপনি কেসটার ব্যক্তিগত তদন্ত করছেন। তাই দেখা করতে এলাম।’
‘খুব ভালো করেছেন। আপনি না এলেও আমি যেতাম। কেসটা সুরাহা করতে সিবিআই দপ্তরের সাহায্যের দরকার ছিল। আসুন ভেতরে আসুন। চা খেতে খেতে কথা বলা যাবে।’
আমি ইন্টারকমে দু’কাপ চা দিতে বলে তৈরী হতে হতে বললাম,
‘তা নিখিলেশ বাবু,কেসটা নিয়ে তো স্টাডি করেছেন নিশ্চয়ই।’
‘করেছি। কুল কিনারা পাইনি। সিবিআই দপ্তর থেকে যখন জানতে পারল কেসটা আপনি তদন্ত করছেন তখন আপনাকে সাহায্য করার জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে।’
‘আমি কতোদূর কি করবো বুঝতে পারছি না। তবে এর রহস্য বের করতে এমন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হতে পারে যা আমার জন্য মোটেও সহজ নয়। তারা কলকাতার বেশ গণমান্য ব্যক্তি।’
‘আপনি একদম চিন্তা করবেন না। সিবিআই দপ্তর থেকে আপনাকে সব ধরনের সাহায্য করা হবে।’
এরমধ্যে চা চলে এলো। আমিও তৈরী। কোনমতে কয়েক চুমুক দিয়ে বললাম,
‘তার আগে আমাকে একবার ৪০৬ নম্বর কক্ষে যেতে হবে।’
‘নিশ্চয়ই। চলুন,এখনই যাওয়া যাক।’
দরজা খুলতেই ঘরের ভেতর একটা গুমোট গুমোট ভাব। বদ্ধ ঘরে এমন ভাব হওয়াটা স্বাভাবিক। তারউপর আবার খুন হয়েছে। পুরো পরিবশেটাই থমকে আছে। ঘরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। বাথরুমের ভিতর ঢুকতেই ভেন্টিলেটারের দিকে চোখ গেলো। একটা ছোট খাটো অবয়বের মানুষ অনায়াসে বাইরে থেকে ঢুকে খুন করে যেতে পারে। চারদিক ভালভাবে তাকাতেই কমোডের ঠিক পেছনে একটি আংটি চোখে পড়ল। প্রথমে বুঝেছিলাম মেয়েটির আংটি। কিন্তু এর ডিজাইন দেখে পুরুষের হাতের মনে হল। দামী রুবির আংটি। যাক আংটি নিয়ে পরে ভাবা যাবে। পলিথিনের প্যাকেট বের করে আপাততো পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম।
‘স্যার কিছু পেলেন কি?’ নিখিলেশ বলে উঠলো।
‘না তেমন কিছু পাইনি। ভেন্টিলেটার ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করছিলাম।
চলবে......................
[
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০৫
আব্দুল্লাহ আল তানিম বলেছেন: ভালো লেগেছে