নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।
বইয়ের নাম : পশ্চিমের চোখে প্রাচ্যকে দেখার তত্ত্ব
লেখক : ড. মুস্তফা সিবাঈ
অনুবাদ : কামরুল হাসান নকীব
প্রচ্ছদ : ইসমাঈল আহমদ
প্রকাশনী : হোয়াইট লেটারস পাবলিকেশন্স
বইটি এর আগেও নেড়েচেড়ে দেখেছি, পড়েছি, গায়ে-গতরে কোথাও একটু-আধটু কাচিও চালিয়েছি, রাতযাপনের সঙ্গী করে নির্ঘুম থেকেছি রাতকে রাত। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে বইটি আজকেই হাতে পেলাম। মূলত আজকেই বইটির ঘরোয়া রিলেজডেট। মোড়ক উন্মোচন শব্দটা বললাম না, খুবসম্ভবত অনুবাদক ঘটা করেই প্রাচ্যতত্ত্বের ওপর নাতিদীর্ঘ একটি আলোচনা রেখে আমাদের সামনে গ্রন্থটির বস্ত্রবিচন করবেন। আমি সেই আলোচনার শ্রোতা হওয়ার ইচ্ছা রাখি।
আসলে এই প্রাচ্যতত্ত্ব কী, কোত্থেকে এলো, এসব আপেক্ষিক আলোচনা। চাঁদের আলোর নিজস্বতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, এসব প্রাচ্যতত্ত্ব এবং প্রাচ্যতত্ত্ববিদদেরও নিজস্ব সংজ্ঞায়ন নিয়েও রয়েছে বিশাল প্রশ্ন ও তথ্যের আকড়। আসলে প্রাচ্যতত্ত্ব একটি প্রকল্প। এর সাথে সরাসরি জ্ঞানের সম্পর্ক থাকলেও নিগূঢ়ে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক এমনকি সামরিক লক্ষ্য, যা পাশ্চাত্যের শাসকচক্ষুর অনুগত প্রজা বানিয়ে রাখে প্রাচ্যকে।
প্রাচ্যবাদী প্রকল্প ছিল একটি ধুরন্ধরময় পদক্ষেপ। প্রাচ্যের পরাধীনবিমুখ জনগণরা যখন পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক দাসত্ব থেকে মুক্তি চাইল তখন পাশ্চাত্য কিছু রাষ্ট্রকে স্বাধীনতার এমন কমলালেবু খাওয়ায়, যেটির হলদে চামড়া স্বাধীনতার হলেও ভেতরের কোষগুলো ছিল পরাধীনতার। অর্থাৎ, সেখানকার অধিবাসীদের কথিত স্বাধীনতা পাবে, অন্যান্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর মতো তারাও গণতন্ত্রের ধুম্রজালের খেলা খেলতে পারবে। কিন্তু এসব রাষ্ট্রে সাম্রাজ্যবাদ, শিক্ষা ও মগজধোলাইয়ের মাধ্যমে সেই স্বাধীনচেতা মানুষের মস্তিষ্ক ইউরোপের তুলনায় হীনম্মন্যতা ও স্নায়ুবিক পর্যদুস্ততার শিকার করে রাখবে। পরিকল্পনার ছক এঁটে ব্যাপারটা এমন দাঁড় করাল, যেন স্বাধীন হয়েও তারা মস্তিষ্কের দাসত্ব থেকে মুক্তি না পায়।
সে সময়ে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদ প্রাচ্যদেশগুলোর ওপর নজরদারি রাখলেও গোটা রাজ্যে তখন মুসলিম শাসন কার্যকর ছিল। তুর্কি শাসন ছিল সময়ের নামজাদা। গোটা পৃথিবীর মুসলিম শাসনের সেরেতাজ মনে করা হত তুর্কিকে। কারণ, হারামাইন শরীফের ওপর তুর্কির অভিভাবকত্বের হাত ছিল। এই তুর্কি শাসনের সাথেই ইউরোপের খ্রিষ্ট শাসনগুলো আশতাব্দি লড়াই চলতে থাকে। কিন্তু সবসময়ই তুর্কির কাছে মাথানত ছিল ইউরোপের। ইতিহাস এসব যুদ্ধকে ‘ক্রুসেড’ নামে স্মরণ করে। বারবার পরাজয়ের গ্লানি একটা সময় ইউরোপীয় শক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। এ কারণে তারা প্রতিশোধের নেশায় রণাঙ্গণে বিজয়মালার আশা ছেড়ে দিয়ে চিন্তাগত আগ্রাসনের পথ অবলম্বন করে। প্রচার মাধ্যম, মিডিয়া, শিক্ষার দাঁত দিয়ে চিরশত্রুর মোকাবিলায় মরণকামড়ের কূটকৌশল গ্রহণ করে। পাশাপাশি প্রাচ্যের ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি গবেষণা করে একে মুসলমানদের মধ্যে মগজধোলাইয়ের হাতিয়ার বানিয়ে নেয়। ইতিহাস এদের নাম দিয়েছে—প্রাচ্যতত্ত্ববিদ। অর্থাৎ এ সংগ্রাম পাশ্চাত্যের গবেষকদের প্রাচ্যকে জানার, আবিষ্কার করার এবং এ বিষয়ক জ্ঞানচর্চা করার একটি বিশেষ ধারা। এর দ্বারা গবেষককে বুদ্ধিবৃত্তির পথ দেখায়। বিশেষ করে যখন কেউ তার পরিচিত গণ্ডি ছেড়ে অন্য দল বা সমাজকে পাঠ করতে যায়।
প্রাচ্যবাদের বিশেষ ও প্রধান ধারা হলো ইসলামকেন্দ্রিক। ইসলাম নিয়েই তার নেতিবাদীচর্চা আর এ চর্চার মধ্য দিয়ে তারা ইসলামকে বিকৃত করা, হেয় করা এবং দণ্ডিত করার কাজ করতে চায়। তাদের মধ্যে যেসব গবেষক ইসলাম ও মুসলিম চিন্তা নিয়ে কাজ করেছে তারা ইসলামসংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনায় অনেক শব্দ-পরিভাষার সচেতন ও উদ্দেশ্যপূর্ণ বিকৃতি ছড়িয়েছে। এসব পরিভাষার অশুদ্ধ ও বিকৃত ব্যবহারের মধ্য দিয়েই তারা মুসলিমদের যাপন ও আচরণকে ইসলাম বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের তরফ থেকে এসব নেতিবাদীচর্চার প্রতিক্রিয়ায় যেসব জ্ঞানতাত্ত্বিক কাজ হয়েছে, তা খুব বেশি না হলেও কম নয়। এক্ষেত্রে ড. মুস্তফা সিবাঈ রচিত কিছু গ্রন্থ গড়বিচারে শীর্ষচারী। বয়ানের ভিন্নতায় মুস্তফা সিবাঈ সমসাময়িক বুদ্ধিজীবীদের চেয়ে নিজেকে আলাদা করে প্রকাশ করেছেন। সর্বোপরি, তিনি এসব প্রাচ্যতত্ত্ববিদদের সাথে থেকে তাদের থেকে এমন অনেক তথ্যের আকড় বানিয়েছিলেন, যার সারসংক্ষেপ ‘পশ্চিমের চোখে প্রাচ্যকে দেখার তত্ত্ব’ বইয়ে ছেপে গেছেন। যদিও মুস্তফা সিবাঈর তুখর কর্মময় জীবনের ফিরিস্তি তাকে বিস্তর সময় দেয়নি, তাই অনেক ডকুমেন্ট মাঠে মারা গেছে, তারপরও এই বইয়ে মোটামুটি সব তথ্য-উপাত্তের নির্যাস রেখে তিনি কীর্তিমান হয়েছেন। এজন্য ‘অরিয়েন্টালিজমের নাড়িনক্ষত্র’ অনুবাদী নামটি আমার কাছে যথার্থই মনে হয়েছে।
বইটি পড়লে প্রাচ্যতত্ত্ব নিয়ে কারা কাজ করেছে, কারা এর গোড়ায় ছিল, কারা ছিল নিগূঢ়ে, তার তথ্য এবং তাদের উৎসজ্ঞানের প্রতিপাদ্য কী ছিল, তার সরল জবানবন্দি পাবেন। আরও পাবেন প্রাচ্যতত্ত্ববিদদের কোন্ রচনা ইতিহাসে ‘কালজয়ী’ স্বাক্ষর রেখেছে, অথচ তাতে রয়েছে প্রভূত গলদ উপাদান। যেসবের পাঠ আপনার মনে নিছক প্রশ্নই তুলবে না, সুযোগে আপনার ইমানের ভীতও নাড়িয়ে দিবে। তাই বক্ষমান বইটি সবাইকে পড়ার একপ্রকার অনুরোধই করব। কারণ, ইতিহাসের স্বচ্ছ আয়নায় যাতে আপনার হারানো অতীতকে দেখে নিজের বর্তমান অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন, তারপর যদি কিছুটা টনক নড়ে যে, আসলেই যে পথে আপনি দাঁড়িয়ে, তার গন্তব্য কোথায়?
বক্ষমান গ্রন্থ সম্পর্কে আরেকটি তথ্য আমি বোকার মতো এড়িয়ে গেছি। বইটি যদিও অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন প্রাকটিক্যালি লেখালেখির সাথে একযুগ পেড়িয়ে আসা প্রচারবিমুখ তরুণ আলেম কামরুল হাসান নকীব। কিন্তু বইটি পড়ে অনুবাদ মনে হয়নি একটুও। মৌলিক রচনার মতো স্বাচ্ছন্দে গড়গড় করে এগিয়েছে শব্দগাঁথুনির গতি। অনেকটা বৈঠকি ঢংয়ের গদ্যভাষা আর গল্পের টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়ার মতোই অনুবাদে পাঠকের মনে জোশ সৃষ্টি করতে পারায় অনুবাদকের মুন্সিয়ানা আলাদা প্রশংসার দাবি রাখে। জানতে পেরে খুশিই হয়েছি, অনুবাদক ড. মুস্তফা সিবাঈর আরেকটি বইয়ের কাজে হাত দিয়েছে, তার অনুবাদের হাত আশাপ্রদ। গতিমন্থর হলেও কাজে স্বকীয় ধাঁচ আছে। মূলের সাথে মিশে যাওয়ার প্রবণতা আছে। এটি তার অনুবাদের স্বতন্ত্র দিক। অনুবাদে অনেকটা সরল হলেও তরল নয়, গোগ্রাসে গিলে ফেলার মতো নয়, ধীরে ধীরে জাবর কেটে খাওয়ার মতো, বুঝে পড়ার মতো। হয়ত এই কারণে প্রাথমিক পাঠকরা হোচট খেলেও খেতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭
জেন রসি বলেছেন: রিভিউর জন্য ধন্যবাদ। বইটি সম্পর্কে জানা ছিলনা।