নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শনের আশায় পথ চলি...

রিদওয়ান হাসান

শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

রিদওয়ান হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হ্যালাে! আমি কোভিড-১৯

০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:১১


করোনা ভাইরাস যদি কথা বলতে পারত, তাহলে সে আমাদের কী বলতে চাইত? এ জিজ্ঞাসা থেকেই কেউ একজন করোনা ভাইরাসের হয়ে বিশ্বমানবতার উদ্দেশ্য একটি চিঠি লিখেছেন— Hi I'm Covid 19 শিরোনামে। বক্ষমান ব্লগটি সেই চিঠির বাংলায়ন। চিঠির মান যেমনিই হোক, এর কথাগুলো বেশ চিন্তার খোরাক জোগায়। যদিও আমরা এসব জানি, কিন্তু মানি না।

হ্যালাে! আমি কোভিড-১৯
তােমাদের অনেকেই সাধারণভাবে আমাকে করােনা ভাইরাস নামে চেনে। দুঃখিত, এত স্বল্প সময়ের মধ্যে তোমাদের নােটিশে চলে আসার জন্য। কিন্তু তােমাদের সামনে আমি কিভাবে আসব, কী পরিমাণ শক্তি নিয়ে আসব, এটা বলা আমার কাজ না।

আমি কেন এসেছি? বলতে পারো, আমি ক্লান্ত প্রগতির বদলে তােমাদের পশ্চাৎপদতায়। আমি ক্লান্ত নিজ থেকে তােমাদের ধ্বংসে। আমি ক্লান্ত এই গ্রহের সাথে তােমাদের আচরণে। আমি ক্লান্ত তােমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের কদর্যতায়—তােমাদের সংঘর্ষ, যুদ্ধ আর ব্যক্তি সংঘাতে। আমি ক্লান্ত তােমাদের উদ্ধত্যতায়—সামাজিক হিংসা আর লােভ লালসায়, তােমাদের ভণ্ডামিতে, তােমাদের স্বার্থপরতায়।

আমি ক্লান্ত তােমাদের নিজের প্রতি অবহেলায়, পরিবারের প্রতি অমনােযােগিতায়। আমি ক্লান্ত যেভাবে তােমরা তােমাদের সন্তানদের অযত্ন করো। আমি ক্লান্ত তােমাদের গাছাড়া ভাব দেখে আর যেভাবে তােমরা প্রয়ােজনীয় মূল্যবান জিনিস রেখে অদরকারি বস্তুর পেছনে ছুটে চলো। আমি ক্লান্ত তােমাদের প্রতিনিয়ত দামি পােশাক, স্মার্টফোন কিংবা গাড়ির নতুন মডেলের পেছনে পাগলের মতো দমনা ফেলে ছােটায়, যাতে করে সমাজে তােমাদের প্রতিষ্ঠিত দেখাতে পারো।

আমি ক্লান্ত তােমাদের বিশ্বাসঘাতকতায়। আমি ক্লান্ত তােমাদের ভুল তথ্যপ্রবাহে। আমি ক্লান্ত তােমাদের নিজেদের মধ্যে ভাববিনিময়ে এত কম সময় ব্যয়ে। আর আমি খুবই ক্লান্ত তােমাদের জীবন নিয়ে নিয়মিত নালিশে—যেখান তােমারে জীবনে উন্নত করার জন্য নিজেরাই কিছু করো না।

আমি ক্লান্ত তােমাদের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়ায়। আমি ক্লান্ত তােমাদের রাজনৈতিক জিঘাংসা আর তােমাদের নেতৃত্ব নির্বাচনের ভুলে। আমি ক্লান্ত সামান্য একটা ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে তােমাদের পারস্পারিক অপমান আর ঘৃণায়।

আমি দুঃখিত, তােমাদের সাথে আমি অত্যন্ত কঠোর হবো, বােধহয় একটু বেশিই। কিন্তু আমি ধনি-গরীব চিনি না। আমি একটি ভাইরাস। আমার কারণে তােমাদের অনেক জীবন ঝরে যাবে, কিন্তু আমি চাই। যদিও এটা তােমার কাছে বােঝা, এভাবে চলতে পারে না। কিন্তু এমন একটা ‍দুর্যোগ দরকার ছিল। সমাজে একটা পরিবর্তন খুব দরকার। তােমাদের ভালাের স্বার্থেই। তােমাদের আমি যা বলতে চাই তা খুবই সােজা।

আমি তােমাদের সমাজের সীমাবদ্ধতাগুলাে দেখাতে চেয়েছি, যাতে করে তােমরা এগুলাে দূর করতে পারো। আমি তােমাদের সব কিছুকে থামিয়ে দিয়েছি, যাতে করে তােমরা বুঝতে পারাে, এখন থেকে তােমাদের সমস্ত শক্তি শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণেই খরচ করা উচিত, আর তা হলো জীবন—তােমাদের নিজের আর তােমাদের সন্তানদের, আর তা রক্ষা করতে, ভালোবাসতে আর সবার সাথে ভাগ করতে যা প্রয়ােজন।

তােমাদের আমি যদ্দুর সম্ভব ঘরে বন্দি করে রাখতে চেয়েছি, তােমাদের বাবা-মা, নানা-নানি আর আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে, যাতে করে তােমরা বুঝতে পারো, কতটা জরুরি তাদের বুকে জড়িয়ে ধরা, কতটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মানবিক স্পর্শ, পারস্পরিক সংলাপ, হাত মেলানাে, বন্ধুদের সাথে কাটানাে সময়, শহুরে রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটা, কোনো রেস্তোরায় বসে একসাথে খাওয়া অথবা পার্কে খােলা আকাশের নিচে দৌঁড়ানাে। আর এ থেকেই হােক নতুন দিনের শুরু।

তােমরা সকলেই সমান, কোনো বৈষম্য কোরােনা। তােমাদের আমি দেখিয়েছি—দূরত্ব কোনো বিষয় না, চোখের পলকে আমি মাইলের পর মাইল এগিয়েছি আর তােমরা বুঝতেও পারোনি। আমি মুসাফির, ক্ষণিকের জন্য আছি, কিন্তু আমি তােমাদের মাঝে যে ভালােবাসা আর সহযােগিতার বন্ধন তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি, তা যেন চিরকাল থাকে।

যত সহজ সরলভাবে পারা যায়, সেভাবে বাঁচো, ধীরলয়ে হেঁটো, ঔদ্ধত্য হয়ে চলো না, গভীরভাবে নিঃশ্বাস নাও, আর ভালো কাজ কোরাে। কারণ ভালো কাজ সুদসহ ফেরত আসে।

প্রকৃতি উপভােগ করো, যাচ্ছেতাই করো, যা অন্যায় নয়। প্রকৃতিকে ভালোবাস, যা তােমাকে আনন্দ দেয়, আর এমনভাবে বাঁচো, যেন তােমাকে কোনো কিছুর ওপর নির্ভর করতে না হয়। যখন তোমরা পারস্পারিক ভাব-আবেদন আর আনন্দে মেতে উঠবে, আমি তখন মাত্রই বিদায় হয়েছি।

কিন্তু মনে রেখো, শুধুমাত্র আমার উপস্থিতিতে ভালো মানুষ সাজার কোনো প্রয়ােজন নাই।

ইতি
তোমাদের কাছে মহামারী
করোনা ভাইরাস

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪১

রাফা বলেছেন: আমরা এমন শুভাকাংখীকে স্বাগত জানাতে পারলামনা বলে দুঃখিত। আমাদের জন্য করোনা শুধুই অভিশাপ।করোনা পরবর্তি পৃথিবি হবে বিচ্ছিন্ন পৃথিবি।গ্লোভাল ভিলেজের ধারনা থেকে বেরিয়ে যাবে পৃথিবি। সবাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার খেলায় মাতবে এবার।কাজেই করোনা'কে আমরা আরো তিব্র ঘৃণা নিয়েই দেখবো। .





০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৪

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: আমরা গড়তে পছন্দ করি। ভেঙে গড়তে পছন্দ করি না।
তাই আজীবন ভাঙাটাকে আমরা খারাপ চোখেই দেখি।

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: যা হয়েছে, তা ভালই হয়েছে,
যা হচ্ছে, তা ভালই হচ্ছে,
যা হবে, তা-ও ভালই হবে।
তুমি কাঁদছ কেন— তুমি কি কিছু হারিয়েছ?
তুমি কি সৃষ্টি করেছ— যা নষ্ট হয়ে গেছে?
তুমি যা নিয়েছ, এখান থেকেই নিয়েছ।
যা দিয়েছ, এখানেই দিয়েছ।
তোমার আজ যা আছে, কাল তা অন্য কারো ছিল, পরশু সেটা অন্য কারো হয়ে যাবে, পরিবর্তনই সংসারের নিয়ম।
— গীতা

০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৫

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: গীতার পাঠটি অত্যন্ত মর্মপূর্ণ। ধর্মীয় বাণীগুলো আসলেই সমাজের জন্য কাজের। কিন্তু মানুষ ধর্মটাকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থের জন্য।

৩| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:২১

আফসানা মারিয়া বলেছেন: Mad world

০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৬

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: বad world

৪| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আল্লাহ মানুষ সৃষ্টী করেছে । জ্ঞানও দিয়েছে । সেই জ্ঞান অবশ্যই কল্যাণকামী হবে

০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৭

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: কোরআনকে বলা হয় জ্ঞানের আকড়। অথচ সেই কোরআনের ব্যাপারেই আল্লাহ বলেন, এই কোরআন কাউকে সঠিক পথ দেখাবে, কাউকে ভ্রষ্ট করবে।

জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার আমরা করতে জানি না।

৫| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: আচ্ছা এই দুরদিনে আমাদের মানবাধিকার সংগঠন গুলো কই?? তাহারা কি শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিষয় গুলো তুলে ধরে???

০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৯

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: তারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকার পদ্ধতি হাতে কলমে শেখাচ্ছেন...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.