![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার প্রথম পাঠশালা মায়ের কোল। সেই মমতাময়ী মায়ের কোল থেকেই ছড়া শেখার ও পাঠের যাত্রা শুরু। সেই দিনগুলোর আনন্দ আজও যখন আবছা আবছা মনে পড়ে তখন বুঝতে পারি ছড়ার মধ্যে মিল জিনিসটার এত প্রয়োজন কেন। মিল আছে বলেই কথাটা শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না। তার বক্তব্য যখন ফুরায় তখনও তার ঝংকারটা ফুরায় না। মিলটাকে নিয়ে কানের সাথে মনের সাথে খেলা চলতে থাকে। এমন করে ফিরে ফিরে আমার সমস্ত চৈতন্যের মধ্যে জল পড়তে ও পাতা নড়তে থাকে। সেই শিশুকালে মমতাময়ী মা তাঁর আদরের সন্তানকে নায়ক বানিয়ে কোলে বসিয়ে মস্ত একটা ছড়ার মত বলে আমার মনোরঞ্জন করতেন। ছড়া শুনতে শুনতে মন ভারী উৎসুক হয়ে উঠত। অভূতপূর্ব সমারোহের বর্ণনা আমার মন চঞ্চল হয়ে ও মেতে উঠত এবং চোখের সামনে নানাবর্ণে বিচিত্র আশ্চর্য সুখচ্ছবি দেখতে পেতাম, তার মূল কারণ ছিল সেই অনর্গল শব্দচ্ছটা এবং ছন্দের দোলা। শিশুকালের সাহিত্যরসভোগের এই স্মৃতিগুলো এখনো জেগে আছে। আর মনে পড়ে, “বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এল বান।’ ঐ ছড়াটা যেন শৈশবের মেঘদূত।
চেষ্টা করলাম সেই অতীতের প্রেতলোকে প্রবেশ করতে। এখনকার সঙ্গে তার অন্তরবাহিরের মাপ মেলে না। আমাদের ভিতরের জীবনের চিত্রপটের দিকে ভালো করে তাকাবার আমাদের অবসর থাকে না। ক্ষণে ক্ষণে এর একেকটা অংশের দিকে আমরা দৃষ্টিপাত করি। কিন্তু এর অধিকাংশই অন্ধকারে অগোচরে পড়ে থাকে। পেছন ফিরে সেই ছবি দেখার অবসর যখন ঘটল, সেদিকে একবার যখন তাকালাম, তখন তাতেই মন নিবিষ্ট হয়ে গেল।
সুনির্মল বসু
সবার আমি ছাত্র
আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হতে ভাই রে,
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর কাছে পাই রে।
পাহাড় শিখায় তাহার সমান-
হই যেন ভাই মৌন-মহান,
খোলা মাঠের উপদেশে-
দিল-খোলা হই তাই রে।
সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয়
আপন তেজে জ্বলতে,
চাঁদ শিখাল হাসতে মোরে,
মধুর কথা বলতে।
ইঙ্গিতে তার শিখায় সাগর-
অন্তর হোক রত্ন-আকর;
নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম
আপন বেগে চলতে।
মাটির কাছে সহিষ্ণুতা
পেলাম আমি শিক্ষা,
আপন কাজে কঠোর হতে
পাষান দিল দীক্ষা।
ঝরনা তাহার সহজ গানে,
গান জাগাল আমার প্রাণে;
শ্যাম বনানী সরসতা
আমায় দিল ভিক্ষা।
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্র।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়,
পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতূহলে,
নেই দ্বিধা লেশমাত্র।
মদনমোহন তর্কালঙ্কার
আমার পণ
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে,
আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে।
ভাইবোন সকলেরে যেন ভালোবাসি,
এক সাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি।
ভালো ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা,
পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা।
সুখী যেন নাহি হই আর কারো দুখে,
মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে।
সাবধানে যেন লোভ সামলিয়ে থাকি,
কিছুতে কাহারে যেন নাহি দিঈ ফাঁকি।
ঝগড়া না করি যেন কভু কারো সনে,
সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে।
শিশুর পণ
গোলাম মোস্তফা
এই করিনু পণ
মোরা এই করিনু পণ
ফুলের মতো গড়ব মোরা
মোদের এই জীবন।
হাসব মোরা সহজ সুখে
গন্ধ রবে লুকিয়ে বুকে
মোদের কাছে এলে সবার
জুড়িয়ে যাবে মন।
নদী যেমন দুই কূলে তার
বিলিয়ে চলে জল,
ফুটিয়ে তোলে সবার তরে
শস্য, ফুল ও ফল।
তেমনি করে মোরাও সবে
পরের ভাল করব ভবে
মোদের সেবায় উঠবে হেসে
এই ধরণীতল।
সূর্য যেমন নিখিল ধরায়
করে কিরণ দান,
আঁধার দূরে যায় পালিয়ে
জাগে পাখির গান।
তেমনি মোদের জ্ঞানের আলো
দূর করিবে সকল কালো
উঠবে জেগে ঘুমিয়ে আছে
যে সব নীরব প্রাণ।
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
বুঝিবে সে কিসে
চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।
যতদিন ভবে, না হবে না হবে,
তোমার অবস্থা আমার সম।
ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে
বুঝে না বুঝিবে, যাতনা মম।
অপব্যয়ের ফল
যে জন দিবসে মনের হরষে
জ্বালায় মোমের বাতি,
আশু গৃহে তার দখিবে না আর
নিশীথে প্রদীপ ভাতি।
কুসুমকুমারী দাশ
আদর্শ ছেলে
আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন
‘মানুষ হইতে হবে’- এই তার পণ।
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান
নাই কি শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ?
হাত পা সবারই আছে, মিছে কেন ভয়?
চেতনা রয়েছে যার, সে কি পড়ে রয়?
সে ছেলে কে চাই বল, কথায় কথায়
আসে যার চোখে জল, মাথা ঘুরে যায়?
মনে প্রাণে খাট সবে, শক্তি কর দান,
তোমরা ‘মানুষ’ হলে দেশের কল্যাণ।
কালী প্রসন্ন ঘোষ
পারিব না
পারিব না এ কথাটি বলিও না আর
কেন পারিবে না তাহা ভাব এক বার,
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পার কি না পার কর যতন আবার
এক বারে না পারিলে দেখ শত বার।
পারিব না বলে মুখ করিও না ভার,
ও কথাটি মুখে যেন না শুনি তোমার,
অলস অবোধ যারা
কিছুই পারে না তারা,
তোমায় তো দেখি নাক তাদের আকার
তবে কেন পারিব না বল বার বার?
জলে না নামিলে কেহ শিখে না সাঁতার
হাঁটিতে শিখে না কেহ না খেয়ে আছাড়,
সাঁতার শিখিতে হলে
আগে তব নাম জলে,
আছাড়ে করিয়া হেলা, হাঁট বার বার
পারিব বলিয় সুখে হও আগুয়ান।
কামিনী রায়
পাছে লোকে কিছু বলে
করিতে পারি না কাজ
সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,-
পাছে লোকে কিছু বলে।
আড়ালে আড়ালে থাকি
নীরবে আপনা ঢাকি,
সম্মুখে চরণ নাহি চলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
হৃদয়ে বুদবুদ মত
উঠে শুভ্র চিন্তা কত,
মিশে যায় হৃদয়ের তলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
কাঁদে প্রাণ যবে আঁখি
সযতনে শুষ্ক রাখি;-
নিরমল নয়নের জলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
একটি স্নেহের কথা
প্রশমিতে পারে ব্যথা,-
চলে যাই উপেক্ষার ছলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
মহৎ উদ্দেশ্য যবে,
এক সাথে মিলে সবে,
পারি না মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
বিধাতা দেছেন প্রাণ
থাকি সদা ম্রিয়মাণ;
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৩৩
গোর্কি বলেছেন:
-এ জাতীয় কবিতা বা ছড়া বর্তমানে খুব প্রয়োজন শিশুমন গঠনে। এরাই যে আগামীর ভবিষ্যত।
-পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।
-শুভকামনা এবং ভাল থাকা হোক অবিরত।
২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৪৬
অদৃশ্য বলেছেন:
যে দিন পোষ্ট করেছিলেন লিখাটি সেদিনই দেখেছিলাম ... কিছুটা পড়েও গেছিলাম... আজ শেষ করে গেলাম...
অনেক পেছনে ফিরে গিয়ে অনেক কিছুই মনে করতে চাইছিলাম... সব কি মনে করা যায়! অনেক অনেক ভালোলাগা...
শুভকামনা...
১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৪০
গোর্কি বলেছেন:
-সব কিছু মনে রাখা সম্ভব নয়, ঠিক বলেছেন।
-অতীতকে মনে করি আগামীতে সঠিক পথ নির্ধারণের জন্য।
-পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।
-শুভকামনা এবং ভাল থাকা হোক অবিরত।
৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
সুন্দর কালেকশন, এই কবতাগুলো এখন হয়ত অনেকেই জানেনা।
++++++
১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৪১
গোর্কি বলেছেন:
-পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।
-শুভকামনা এবং ভাল থাকা হোক অবিরত।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১৮
ঢাকাবাসী বলেছেন: এসব কবিতা এখন আর পড়া হয়না, পেোষ্ট ভাল লেগেছে।