নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ

গোর্কি

ফেইসবুক: মাতরিয়শকা

গোর্কি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোহেমিয়ান বাউল চিত্রশিল্পীর সান্নিধ্যে

১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৫

ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত কালো আলখাল্লা, মাথায় বাবরী চুল, ঋজু দৈহিক গড়নের চোখে চশমা পরিহিত একজন লোক শ্রেণী কক্ষে ঢুকলেন। উঠে দাঁড়ালাম সবাই আর সেই সাথে সকলেই বেশ ভ্যাবাচ্যাকা এবঙ ভয় পেয়ে গেলাম। প্রিন্সিপ্যাল স্যারের মাধ্যমে আগে থেকেই অবহিত ছিলাম যে আমাদের একজন নতুন অঙ্কন শিক্ষক আসছেন। তারপরেও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে এই লোকটিই হতে পারেন আমাদের অঙ্কন শিক্ষক। আমাদের সেই সময় মনের অবস্থা উনি বুঝতে পেরেছিলেন কিনা জানা যায় নি। পরস্পরের সাথে পরিচয় পর্ব শেষে উনি ব্ল্যাক বোর্ডে আঁকতে শুরু করলেন। আমরাও ড্রইং খাতায় তাঁর সাথে সাথে আঁকতে লাগলাম। যতটুকু মনে পড়ে তাঁর সাথে প্রথম অঙ্কনটি ছিল একটি সহজ ফুলের ছবি। টিফিন পিরিয়ডে দেখলাম নীচু-উচু শ্রেনীর উৎসুক বালক-বালিকারা তাঁর সম্পর্কে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্য ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত। প্রথম দর্শনেই ওনার পোশাক-আশাক দেখে একটু ভীতির সঞ্চার হয়েছিল বৈকি। তবে তা ছিল ক্ষনিকের। কথাগুলো বলছি বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী শ্রদ্ধেয় এস এম সুলতান সম্পর্কে (১০ আগস্ট, ১৯২৩ – ১০ অক্টোবর, ১৯৯৪)।





ছবি কৃতজ্ঞতা: নাজমুল ভাই



সময়টা ১৯৭৩ সালের দিকে। তখন যশোর ক্যান্টনমেন্ট দাউদ পাবলিক স্কুলে পড়ি। বাবার সরকারী চাকরির সুবাদে যশোরে প্রায় এক যুগ অবস্থান করেছিলাম। সুলতান স্যার আমাদের শিক্ষক হয়ে এসেছিলেন খুব স্বল্পকালীন সময়ের জন্য। অতি স্বল্পসময়ের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁর গোঁড়া ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম। শিশু কিশোরদের সাথে তাঁর মিষ্টি মধুর চমৎকার অমায়িক ব্যবহার ছিল কল্পনাতীত। ওনার ড্রইং শেখানোর ধরনটিই ছিল একেবারে অন্যরকম। ক্লাসে শিক্ষাদানকালীন সময়ে অসম্ভব দক্ষ নিপুনতার সাথে বোঝাতেন। ব্ল্যাক বোর্ডে ছবি আঁকার সাথে সাথে তাঁর কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম আর আঁকতাম। খুব সহনশীলতার সাথে সময় নিয়ে আঁকতেন আর বোঝাতেন। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর ডেস্ক ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করতেন এবং কোনো সমস্যা থাকলে হাতে কলমে নির্দ্বিধায় সমাধান করে দিতেন। আমি তাঁর গ্রামীন যাপিত-জীবন এর ওপর চিত্রগুলোর (বাংলার গ্রামীন জীবনকে তাঁর ছবির বিষয়বস্তু করার মূলে রয়েছে এই জীবনের প্রতি তাঁর প্রচন্ড আকর্ষণ, সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর সীমাহীন ভালবাসা।) সাথে পরিচিত হবার পূর্বেই ব্ল্যাক বোর্ডে আঁকা তাঁর শান্ত নদীটির পাশে শ্যামল সবুজ গ্রামের ছবিটির সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। স্মৃতি অনেকটা অন্ধকারের অগোচরে চলে গেলেও যতটুকু মনে পড়ে, ছবিটা আমাদের আঁকতে শেখাতে সময় নিয়েছিলেন প্রায় একমাস। কতটুকু ধৈর্য সহকারে তিনি শেখাতেন। কিছু কিছু মানুষ থাকেন, যাদের জীবনের সব সময়েই কেউ না কেউ গভীর ভালবাসায় বেঁধে ফেলতে চায়, স্যারও হয়তো সেই খুব সংখ্যালঘু ভাগ্যবানদের একজন ছিলেন! ওনার প্রেরনায় উৎসাহিত হয়ে মেট্রিক অব্দি আঁকাআঁকির অভ্যাস ছিল। কিশোর বয়সে কেউ যদি কিছু আঁকতে বলত, আমি শান্ত নদীটির পাশে গ্রামের ছবিটিই এঁকে দিতাম। ছবিটি স্মৃতির ভেতর এমন নিখুঁতভাবে এটে গিয়েছিল যে অন্য কোনো ছবি মাথায়ই আসত না বা আঁকার চেষ্টাই করতাম না। সবুজ শ্যামল গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শান্ত নদীটিই হয়তবা ছিল চিত্রা। আমার কন্যা ও নাতনিকেও শিখিয়েছি আঁকতে এ ছবিটি। আমি যে শুধু একটি ছবিই আঁকতে জানি।



জীবন নিয়ে উদাসীন ছিলেন তিনি, তবে সৃষ্টির ক্ষেত্রে ছিলেন একশত ভাগ মনোযোগী। শিল্পের সাথে শিল্পীর জীবনদর্শন একীভূত হয়েছে তার চিত্রে। শিল্পী সুলতানের রেখাগুলো জীবনরেখা। জীবন বাস্তবতার উপলব্ধি থেকে নেয়া। শিল্পী সুলতান গ্রামবাংলার পথিকৃৎ­ যার আদল নির্মাণের ভাষা বাংলা চিত্রকলাকে উন্নীত করেছে উচ্চমার্গীয় আসনে। শিল্পী এস এম সুলতান শেষ জীবনে বলে গিয়েছেন ” আমি সুখী। আমার কোনো অভাব নেই। সকল দিক দিয়েই আমি প্রশান্তির মধ্যে দিন কাটাই। আমার সব অভাবেরই পরিসমাপ্তি ঘটেছে।”





ছবি কৃতজ্ঞতা: নাজমুল ভাই



তাঁর জীবনী সম্পর্কে আমরা অনেকেই কম বেশি জানি। তাই ওনার শৈশব, কৈশোর, শিক্ষা ও কর্ম জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় গেলাম না। ওনার সম্পর্কে যথেষ্ট লেখালেখি পাওয়া যাবে নেটে। শুধু স্মৃতির পটে এতদিন যাবত লুকিয়ে থাকা না বলা কথাগুলো উপস্থাপন করার প্রয়াস মাত্র। আমার প্রিয় মানুষদের একজন তিনি। কবে সেই ছেলেবেলায় তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। তাতে নিজেকে অনেক ধন্য ভাবি। তাঁর জন্য হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধাঞ্জলি।



আমাদের মধ্যে অনেকে অনেকবার তাঁর চিত্রকর্মগুলো দেখেছেন। তদুপরি আবারও তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চিত্র শেয়ার করার তৃষ্ণা সামলাতে পারলাম না বিধায়……





নিসর্গ-২, তেলরং, ১৯৫১





কাফেলা, কালি ও কলম, ১৯৫৩





প্রথম বৃক্ষরোপণ, তেলরং, ১৯৭৫





পানি ভরা-১, তেলরং, ১৯৭৯





চর দখল-২, তেলরং, ১৯৮৬





যাত্রা, তেলরং, ১৯৮৬





চুলবাঁধা, তেলরং, ১৯৮৭





মাছ-কাটা, তেলরং, ১৯৮৯





চিত্রা নদীর তীরে-৩, তেলরং, ১৯৮৯





জমি-কর্ষনে যাত্রা-২, তেলরং, ১৯৮৯



*ছবিগুলো সব গুগুল মামুর সৌজন্যে

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:০৯

আরজু পনি বলেছেন:

শেয়ারের জন্যে অনেক ধন্যবাদ ।।

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৪

গোর্কি বলেছেন:
-পড়ার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
-ভাল থাকুন অবিরত।

২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:১৩

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: ভালো পোস্ট

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৭

গোর্কি বলেছেন:
-পোস্ট পছন্দ হয়েছে জেনে আনন্দিত।
-ধন্যবাদ এবং ভাল থাকুন অবিরত।

৩| ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: ধন্যবাদ :)

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৯

গোর্কি বলেছেন:
-আপনাকেও ধন্যবাদ।
-ভাল থাকুন অবিরত।

৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:২৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভালো লাগল।

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০১

গোর্কি বলেছেন:
-ভাল লেগেছে জেনে প্রীত হলাম।
-ধন্যবাদ এবং ভাল থাকুন অবিরত।

৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৪১

বোকামন বলেছেন:
পোস্টের জন্য কৃতজ্ঞতা।।

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৩

গোর্কি বলেছেন:
-আপনিও কৃতজ্ঞতা জানুন।
-ধন্যবাদ এবং ভাল থাকুন অবিরত।

৬| ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


চমৎকার পোস্ট ++++

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৪

গোর্কি বলেছেন:
-ধন্যবাদ এবং ভাল থাকুন অবিরত।

৭| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:০৩

অদৃশ্য বলেছেন:




কি সৌভাগ্য আপনার!

ছবিগুলো অসাধারণ...

আপাতত এর থেকে বেশিকিছু বলার নেই...

শুভকামনা...

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৫৭

গোর্কি বলেছেন:
-সে বিবেচনায় সৌভাগ্যবান তো বটেই।
-ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হলাম।
-ভালো থাকুন অহর্নিশ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.