নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ

গোর্কি

ফেইসবুক: মাতরিয়শকা

গোর্কি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শরৎ লাবণ্যের সেকাল-একাল

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৩

বাংলার প্রকৃত শরতের অপরূপ সাজের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল তাও প্রায় এক যুগ আগে। সে সময়ে দেশে প্রায় বছর খানেক অবস্থান করেছিলাম। তার মাঝেও যাওয়া পড়েছে বেশ ক’বার। তবে তা স্বল্পকালীন সমেয়ের জন্য। অল্প সময় হাতে নিয়ে গেলে সাধারনত শীতকালকেই বেছে নেই। শুস্ক আবহাওয়ার কারনে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ীতে যাতায়াত এবং সর্বোপরি ভ্রমনে সহায়ক একটি কাল।



ঢাকা শহরে একান্নবর্তী পরিবারে জন্ম। আমাদের ফার্মগেট এলাকাটার মাঝে তখনও একটা গ্রাম গ্রাম ভাব ছিল। বাড়ীর আঙ্গিনার ভেতর উঠানে ছিল জুঁই আর শিউলি ফুলের গাছ। শরতের প্রভাতে ঘুম থেকে উঠেই জ্ঞাতিভাই-বোনেরা মিলে কুড়াতে শুরু করতাম শিউলি আর জুঁই ফুলের ঘ্রাণে কী যে আনন্দ লাভ করতাম! তাছাড়া বছরে দু’বার গ্রামের বাড়ীতে যাওয়া পরত। বেশিরভাগ সময়ই বকরী ঈদ ও শারদীয় উৎসব একই সাথে পড়ে যেত। শহর থেকে এসেছি বলে একটু উপরি, বাড়তি খাতির যত্ন পেতাম বটে। তবে ওসবের তোয়াক্কা না করে, যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম গ্রামের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে। সমবয়সীদের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে। তাতে আনন্দ বাড়ত বৈকি কমত না। জানালা খুলতেই রাতের শিশির বুকে নিয়ে ঝরে পড়া ঈষৎ লালচে বোঁটার ধবল শিউলীর বুকে চিকচিক করা কচি রোদের সোনালী-লাল আভা দর্শনে প্রাতরাশ সমাপ্ত করা, ভাদ্রের তালপাকা দুপুরের গরমে উঠানে খেলাধুলা, ছুটোছুটি; বিকেলের পড়ন্ত বেলায় বিদায় নেয়া বর্ষার জলধারা বুকে নিয়ে বয়ে চলা শান্ত সরোবর নদীর বাঁকের নরম-কোমল হাওয়ার দুলুনিতে কাশবনে লুকোচুরি খেলা। আহা! নীল অম্বর তলে ভেসে বেড়ানো শুভ্র রাশি রাশি মেঘমালার সেই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠত তরঙ্গবিহীন শান্ত সৌম্য দীঘি-ঝিলের স্বচ্ছ টলটলে জলে। শ্বেতশুভ্র শিউলি, বকুল, মল্লিকা, কামিনী, মাধবী ফুলের সুরভিতে মুখরিত হয়ে উঠত পল্লীর প্রকৃতি। পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে গগনের বুকে চাঁদ আর মেঘের লুকোচুরিতে প্রকৃতিকে অনন্য লাগত। সব মিলিয়ে শরতের অপরূপ শোভা সত্যি মুগ্ধকর। শরতের এই নির্মল প্রকৃতি কারই না ভালো লাগে।



পৃথিবীর আরেক প্রান্তে শরতের প্রকৃতি অনুভূব করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিলাম। মাসটা ছিল এ বছরের আগস্টের শেষের দিকে। ‘দাচা’ বা কান্ট্রি কটেজে গ্রীষ্মকালীন সময়ে টুকটাক কাজ কিছু না কিছু থাকেই। কুটিরের ভেতরে ও বাহিরে মেরামতের, বাড়ীর আঙ্গিনার ভেতরের খন্ড জমিতে শাক-সবজি আবাদ করার, আশে-পাশের প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা আগাছা পরিষ্কার করা; কাজগুলো ইত্যাদি।







এখানে কাজের ধরন খুব একটা জটিল না হলে সাধারনত কেউ মিস্ত্রী বা কারিগরের দ্বারস্থ হয় না। নিজেই সেরে নেয় মামুলি কাজগুলো। কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে একটু জিরানো আর পাশাপাশি চলে শাশলিকের আয়োজন।







তারপর একটু ফ্রেশ হয়ে পড়ন্ত বেলায় বৈকালীন ভ্রমনে বের হওয়া। গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ই চোখ গিয়ে পড়ে আকাশের ওপর। বাহ! চমৎকার স্বচ্ছ নীল আকাশ, তলে ভাসমান সাদা সাদা মেঘের ভেলা। আরও কিছু দূর এগিয়ে নদীর পাড় ধরে হাঁটা। যদি চোখে পড়ে যায় অকস্মাৎ কাশবন! শরতে কাশফুল দেখলে যে কোন পথিক ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়াবে, প্রকৃতি কীভাবে সেজেছে তা একনজর দেখার জন্য। অনেক নাম না জানা জংলী ফুলের গন্ধ পাওয়া গেল। কিন্তু নেই জুঁই, শিউলি, কামিনী ফুলের মন মাতোয়ারা গন্ধ।







গোধুলি লগ্ন। এবার নীড়ে ফেরার পালা। ছেলেবেলার হারিয়ে যাওয়া শরতের স্মৃতি আংশিক হলে অনুভূত হলো। তাই বা কম কিসে। অন্তত নাই মামা থেকে কানা মামা তো। ছেলেবেলায় আমরা ভালো করে জানতামই না শরৎ প্রকৃতির এ অসীম সৌন্দর্য আমাদের নিত্যনিয়মিত বরাদ্দ। জননী যেমন প্রতি ক্ষুদ্র কাজে অজস্র স্নেহের দ্বারা আমাদেরকে অনুক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখেন, তার মধ্যে অনেকটাই আমাদের আবশ্যকের অতিরিক্ত, তার অনেকটাই আমাদের নজরে পড়ে না, তার অনেকটাই আমরা অবহেলে গ্রহণ করি, কিন্তু বিচার করি না, কিন্তু উদার মাতৃস্নেহের তাতে কিছুই আসে যায় না – প্রকৃতিও সেরকম।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

সুন্দর পোস্টে ++++ রইল।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২০

গোর্কি বলেছেন:
-অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: শরতের পোস্টে ভাললাগা।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২১

গোর্কি বলেছেন:
-ভালোলাগায় অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৯

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: নাইস পোস্ট!

দাচা বা কান্ট্রি কটেজ টা কোথায় (কোন দেশে)?

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৩

গোর্কি বলেছেন:
-রাশান ফেডারেশনের 'তুলা বিভাগ' অঞ্চলে।
-অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪২

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: খুব চমৎকার পোষ্ট !

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৬

গোর্কি বলেছেন:
-অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: লেনিনের দেশে শরতের পোষ্টে ভাল লাগা।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

গোর্কি বলেছেন:
-হা হা হা! লেনিনের দেশে শরৎ নেই, আছে হেমন্ত!!
-ভালোলাগায় অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৩

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
আমাদের বাপ দাদারা বলতেন একসময় দেশে ছয়টা ঋতু ভালভাবেই বুঝা যেত। এখন তো আমরা টেরও পাইনা! বছরে কেবল কিছুদিন শীত আসে, দুই চার মাস বর্ষা আর পুরা বছর গরম!

সুন্দর পোস্টে প্লাস। +++

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৭

গোর্কি বলেছেন:
-ভূমণ্ডলীয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্ভবত।
-শহরে তো শরতের উপস্থিতি খবরের কাগজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যৎসামান্য শরৎ প্রকৃতি উপভোগ করার উৎকৃষ্ট স্থান বোধহয় এখনও গ্রামাঞ্চল। আশ্বিন মাস মনে হয় মোক্ষম সময়।
-অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

৭| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগা রইলো। শরৎ আমার কাছে বেশ রহস্যময় ঋতু। একে আমি কখনই তেমন করে বুঝে উঠতে পারি না।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪১

গোর্কি বলেছেন:
-রহস্যময়-ই বটে!
-তাইতো শরতের শুভ্র, স্বচ্ছ, নীল্ ও স্নিগ্ধ আকাশের রহস্য ভেদ করতে কবি-সাহিত্যিকগণেরা অনবরত লিখে চলেছেন মেঘের ভেলায় চড়ে।
-ভালোলাগায় অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

৮| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩০

তুষার কাব্য বলেছেন: শরতের পোষ্টে ভাল লাগা রইলো।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪২

গোর্কি বলেছেন:
-ভালোলাগায় অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

৯| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৫

অদৃশ্য বলেছেন:





প্রিয় গোর্কি

শুরুতে আপনি যা লিখলেন তা অনন্য সুন্দর... লিখাটি আমাকে মুগ্ধ করেছে... অনন্য সুন্দর অনুভূতি... তার স্পর্শ পেলাম...

সাথে সময়ের পরিবর্তন ও বিজাতীয় দেশের বর্তমান ও অনুভবের পার্থক্য জেনে অনেক ভালো লাগলো...

আপনি কিন্তু ভালো লিখেন...

শুভকামনা...

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৫

গোর্কি বলেছেন:
-আপনি যা লিখেছেন, আমি আসলেও ঠিক তাই বোঝাতে চেয়েছি।
-লেখা পড়ে প্রশংসার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
-ভালো থাকুন অহর্নিশ।

১০| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৬

আরজু পনি বলেছেন:

পড়ছিলাম আর আপনার বিশেষণ ব্যবহারের গুনে মুগ্ধ হচ্ছিলাম !

কী দারুণ করে বর্ণনা দিয়েছেন !




আপনার এতো সুন্দর পোস্টটা নির্বাচকরা সম্ভবত নির্বাচিত করতে মিস করে ফেলেছে !

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪০

গোর্কি বলেছেন:
-আপনার বলার ভঙ্গিটাও বেশ ভালো লাগলো।
-মন্তব্যের প্রেরণাই লেখার উৎস।
-অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

১১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: অনেক অনেক ভালো লাগা শরতের পোস্টে!!!!



---আপনার মতো সুন্দর কমেন্ট করতে পারি না বলে ক্ষমে করবেন।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৮

গোর্কি বলেছেন:
-ভালো লেগেছে জেনে খুব প্রীত হলাম।
-আপনি যেমন বেশ গুছিয়ে পোস্ট উপস্থাপন করতে পারেন, আমি কিন্তু ততটা ভালো পারি না। ভালো-মন্দ, দোষ-গুন মিলিয়েই তো আমরা। -বাংলা সামাজিক ব্লগে মিথস্ক্রিয়াটাকেই গুরুত্ব দেই বেশি।
-অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

১২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পোস্ট ভালো লাগলো। আর শাশলিকের জন্য জিভে পানি চলে এলো ;)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:০৪

গোর্কি বলেছেন:
-ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হলাম।
-প্রাসঙ্গিকভাবে পোস্টে শাশলিকের ছবি চলে এসেছে। আর লোভ দেখানোর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
-অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

১৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬

বৃষ্টিধারা বলেছেন: অনেক সুন্দর ......

০১ লা মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০২

গোর্কি বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অহর্নিশ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.