নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্থনীতিবিদ

অর্থনীতিবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিকশা - পর্ব ১

০২ রা জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:০৯


স্বল্প দূরত্বে, কোন ভারী দ্রব্য নিয়ে অথবা যেখানে যাবার জন্য অন্য কোন পরিবহন ব্যবস্থা নেই সেখানে যাতায়াতের জন্য রিকশা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাহন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশীদের জীবনে রিকশা এমনভাবে মিশে আছে যে এই সেকেলে ও মনুষ্যচালিত বাহনটিকে সাধারন মানুষের স্বাভাবিক জীবন থেকে কোন ক্রমেই আলাদা করা যায় না। রিকশাওয়ালারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে প্রচন্ড পরিশ্রম করে, প্রয়োজনের সময় দ্রুত চালিয়ে আপনাকে আমাকে গন্তব্যে পৌছে দেয়। তারা সবাই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। রিকশা চালিয়ে যে ভাড়া পায় তা দিয়েই তাদের সংসার, জীবন চলে। আর এই ভাড়া নিয়ে প্রায় সময়ই রিকশা আরোহী ও রিকশাওয়ালার মধ্যে বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। ক্ষেত্র বিশেষে আরোহীর সাথে মারামারি, রিকশাওয়ালাকে মারধর, ভাড়া কম দেওয়া, অপর কোন রিকশাওয়ালার সাথে সংঘাত, ভারী গাড়ী যেমন বাস, ট্রাক ইত্যাদির সাথে সংঘর্ষ, অন্যান্য দুর্ঘটনা ইত্যাদি ঘটনা ঘটে। রিকশা চালাতে গিয়ে রিকশাওয়ালাদের যেমন বিভিন্ন তিক্ত, বিব্রত, দুঃখজনক, অপমানজনক, কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তেমনি যারা রিকশা আরোহী তাদেরও রিকশায় চড়ে অনুরূপ বিভিন্ন অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। এ ধরণের ঘটনাগুলো আসলে একবারে লিখে শেষ করার মতো নয়। তাই আজকে দুটি ঘটনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। পরবর্তীতে রিকশাওয়ালাদের দুঃখ ও কষ্ট নিয়ে লিখবো।

দৃশ্যপট-১
দুই বছর আগের ঘটনা। মালিবাগ রেলগেট থেকে ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কি যাব। ওয়াসা অফিসে বিল সংক্রান্ত একটি কাজ ছিল। দুপুর বেলা। অবসন্ন লাগছিল। তাই বাসের চিন্তা না করে ভাবলাম একটা রিকশা করে আরাম করে যাই। রেলগেটের কাছে অনেক রিকশা দাড়ানো ছিল। প্রথম যাকে জিজ্ঞেস করলাম সে বেশ ইয়ং রিকশাওয়ালা। বললাম, যাবেন ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কি? (আমি অপরিচিত সবাইকে সে যে পেশারই হোক না কেন আপনি করে বলি) উত্তর দিল, যাব। ভাড়া? রিকশাওয়ালা বললো ৩৫ টাকা। আমি ৩০ টাকা বললাম। রিকশাওয়ালা রাজী হলো না। এরপরে আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, সবাই হয় ৩৫ নাহয় ৪০ টাকা বললো। আমি বুঝলাম আমাকে ৩৫ টাকাতেই যেতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে হেঁটে পিছনে এসে প্রথম যে ৩৫ টাকা বলেছিল তার রিকশাতেই উঠলাম। রিকশা চলতে লাগলো। এবং আমি অত্যন্ত আরাম করে একসময় ফকিরাপুল পৌছলাম। রিকশা থেকে নেমে ৩৫ টাকা ভাড়া দিলাম। রিকশাওয়ালা নিলো না। বললো ভাড়াতো ৫০ টাকা। আকাশ থেকে পড়লাম। বললাম, আপনিনা ৩৫ টাকা বলেছেন? রিকশাওয়ালা বললো, না, আমি ৫০ টাকাই বলেছি। থ হয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। কানে কম শুনেছি বলে কখনো মনে হয়নি। রিকশাওয়ালা বললো চালু করেন। রিকশাওয়ালা সাথে বিতন্ডা করতে মন সায় দিল না। তাছাড়া সময় চলে যাচ্ছে। দুপুর ২টার পরে আবার বিল জমা দেওয়া যায় না। নীরবে ৫০ টাকা বের করে দিলাম। রিকশাওয়ালা বিজয়ীর ভঙ্গিতে ৫০টাকা নিয়ে চলে গেলো। নিজের ভিতরের অনুভূতিটা কী বুঝতে পারলাম না। টাকা বেশি নিয়েছে সেজন্য কোন দুঃখ নেই। রাগ হলো যেভাবে নিয়েছে সেই পদ্ধতিটা আর পদ্ধতি প্রয়োগকারীর উপর।

দৃশ্যপট-২
ছয় বছর আগের ঘটনা। খিলগাঁও থেকে চৌধুরীপাড়া আবুল হোটেলের উদ্দেশ্যে রিকশায় উঠেছি। রাত ৮টা বা সাড়ে ৮টা হবে। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে রিকশাওয়ালা রিকশা চালিয়ে আসলো। রাস্তা দিয়ে সা সা করে বাস, ট্রাক, সিএনজি আর অন্যান্য রিকশা চলে যাচ্ছে। মালিবাগ বাজার থেকে আরো পূর্বে সোহাগ বাস ডিপো (কাউন্টার নয়) যেখানে সেখান থেকে একটা রাস্তা খিলগাঁও, আনসার ক্যাম্প, চৌধুরীপাড়া আবুল হোটেলের দিকে গেছে। রিকশাওয়ালা হঠাৎ মোড় নিয়ে সে রাস্তায় ঢুকলো। রাস্তাটা বেশ চওড়া আর নির্জন, এখন রাস্তার দুপাশে নানা দোকান থাকলেও পাঁচ বছর আগে সেখানে একটা ল্যাম্পপোস্টও ছিল না। অন্ধকার রাস্তা। রিকশা চলছে। হঠাৎ একটা রিকশা পাশাপাশি চলতে লাগলো। রিকশায় দুজন লোক বসা। একজন আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে সালাম দিলো। বললো, ভাইয়া কেমন আছেন? আমাকে চিনতে পারছেন? আমি শামীমের ছোট ভাই। তারপর আমি কিছু বলার আগেই আমার রিকশাওয়ালাকে বললো এই রিকশা থামো। এইবার বুঝতে পারলাম ঘটনা কী? রিকশাওয়ালার পিঠে হাত রেখে বারবার বলতে লাগলাম, না থামাবেন না, চালিয়ে যান, চালিয়ে যান। রিকশাওয়ালা আমার কথা শুনলো না। রিকশা থামিয়ে দিলো। পাশাপাশি চলতে থাকা রিকশাটাও থামলো। তাকিয়ে দেখি সামনে আরো একটা রিকশা থেমেছে। দুটো রিকশা থেকে দ্রুত চারজন এসে আমাকে ঘিরে দাড়ালো। একজন রিকশায় আমার পাশে উঠে বসলো। বললো, ভাইয়া আপনি ভয় পাইছেন? রিকশাওয়ালাকে শুনলাম বারবার চালিয়ে যেতে বললেন। ভয় পাবেন না আমি শামীমের ছোট ভাই। আমাকে সবাই চেনে। আর কোন চিৎকারও করবেন না। এই দেখুন..। শামীমের ছোটভাই নামধারী ব্যক্তি এরপর তার জামা উঠিয়ে আধো অন্ধকারে কোমরে গোঁজা পিস্তলের বাট বা ঐ জাতীয় কিছু দেখাল। রিকশার পাশে দাড়ানো একজন এরপর একটা ছুরি বের করে আমার জামা উঠিয়ে স্যান্ডো গেঞ্জির নীচে পেটের উপর চেপে ধরলো। ছুরির শীতল স্পর্শে শীউরে উঠলাম। আমার রিকশাওয়ালা মূর্তির মতো তার সীটে বসে রইলো। কী হচ্ছে দেখার জন্য একবার ফিরেও তাকালো না। পাশ দিয়ে আধো অন্ধকারে দ্রুত বেগে রিকশা চলে যাচ্ছে। থামানো রিকশা দেখে দু’একজন চলন্ত রিকশা থেকে একটু তাকিয়েছিলো এই পর্যন্তই। ফুটপাথে কোন পথচারী নেই বা ঘটনার সময় ছিলো না। যাহোক শামীমের ছোটভাই নামধারী ব্যক্তি সময় নষ্ট না আমার টাকাপয়সা আর মোবাইল নিয়ে নিলো। ১৪শো টাকার মতো ছিল। তাকে অনুরোধ করলাম, রিকশাওয়ালার ভাড়াটা দিয়ে দেন। শামীমের ছোটভাই নামধারী বললো, ভাড়া কতো? বললাম, ২০ টাকা। এরপর সে আমার টাকা থেকে ২০ টাকা বেছে নিয়ে রিকশাওয়ালাকে দিয়ে দিলো। আর বললো, এই রিকশাওয়ালা, আমরা যাওয়ার পর কোন দিকে না তাকিয়ে রিকশা চালিয়ে সাহেবকে তার জায়গায় নামাইয়া দিবা। আমাকে বললো, সোজা নাক বরাবর চলে যাবেন। যদি এখানে থাকেন বা আমাদের খোঁজে আসেন আপনার বিপদ হবে। পেটের উপর ছুরি ধরা ব্যক্তি ছুরিটা একটু নাড়িয়ে হিংস্র গলায় বললো, আবার দেখলে ভুড়ি গালাইয়া ফালামু। এরপর তারা যেভাবে দ্রুততার সাথে এসেছিলো সেভাবে দ্রুততার সাথেই চলে গেলো। একা হওয়ার পর রিকশাওয়ালাকে বললাম, আপনাকে চালিয়ে যেতে বললাম আপনি থামালেন কেন? রিকশাওয়ালা বললো, সামনের রিকশাটা পথ আটকাইছিলো দেখলেন না? পাশ দিয়েতো জায়গা ছিলো। ঐখান দিয়েতো যেতে পারতেন? রিকশাওয়ালা বললো, রিকশা কি আমি চালাইতেছিলাম না আপনি চালাইতেছিলেন? কথা বাড়ালাম না। বললাম, চলেন। ভাবলাম আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে ব্যাটাকে ধরবো। আবুল হোটেলের সামনে আসার পর রিকশা থেকে নামতেই রিকশাওয়ালা আশেপাশের লোকদের আমাকে দেখিয়ে বলতে লাগলো, ওনার সবকিছু নিয়া গ্যাছে। কী হইছে? কী হইছে? কে নিছে? কী নিছে? কারা নিছে? বলতে বলতে আমাকে ঘিরে ছোটখাট একটা ভীড় জমে উঠলো। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আর পরিচিত দু’একটা মুখের খোজ করতে করতেই দেখি রিকশাওয়ালা হাওয়া হয়ে গেছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:২০

গ্রাম্যবালিকা বলেছেন: বাজে অভিজ্ঞতা :(

শুভকামনা থাকলো আপনার জন্য :)

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৫

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ধন্যবাদ। কামনা করি এই ধরণের বাজে অভিজ্ঞতা যেন অন্য কারো না হয়।

২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৩০

প্রত্যাবর্তন@ বলেছেন: এগুলিই তো নাগরিক ঢাকার অলংকার । X( X((

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৩৫

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। রাস্তা ঘাটে চলাফেরার সময় অনুগ্রহ করে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৪০

খায়রুল আহসান বলেছেন: দুটো বাজে অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে পাঠকদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, সেজন্য এ পোস্ট প্রকাশিত হবার ৫ বছরেরও বেশী সময় পরে এসে আমি আপনাকে বিলম্বিত ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং পোস্টে প্রথম প্লাসটা দিয়ে গেলাম।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২২

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। অনেক ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে। শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.