নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্থনীতিবিদ

অর্থনীতিবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুইটি সিএনজি ও তিনটি মামলা

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩১


গ্রাম থেকে একটি ছেলে এসেছে বাসায়, সাথে করে এনেছে বিপুল পরিমান আমড়া, আমলকি, পেয়ারা, কচু, কচুর লতি, কচুর ডগা, জাম্বুরা, আনাজি কলা, কাঠালি কলা, কলার মোচা, কলার থোড়, তিনটি হাঁস বিভিন্ন ধরণের সবজি ইত্যাদিসহ আরো কি কি যেন। আম্মা সিদ্ধান্ত নিলেন বিকেলে আমাকে পাঠাবেন মোহাম্মদপুরে এবং গ্রীনরোডের জাহানারা গার্ডেনে যথাক্রমে আপা ও মামার বাসায় উক্ত আনয়নকৃত দ্রব্যাদির মধ্য থেকে একটি বৃহৎ অংশ পৌছে দেওয়ার জন্য। সাথে সাহায্যকারী হিসেবে গ্রাম থেকে আসা সেই ছেলেটি। শুক্রবার। ভেবেছিলাম জুমার সালাতের পর খাওয়া দাওয়া সেরে একটি সুখনিদ্রা দেব তা আর হলো। বিরস বদনে রাজী হলাম। অবশ্য একটি লোভও কাজ করতে ছিল। কারণ এখনও আপা, বড় ভাই বা মামার বাসায় গেলে সবসময়ই কিছু না কিছু পকেট খরচ দেয়। যতই চাকরী করি না কেন, তাদের দেওয়া ঐ একশ বা দুইশ টাকার মূল্য আমার কাছে অনেক।

বাহিরে যাওয়ার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার পরে যখন আম্মার নিকট ব্যাগ ও ভাড়ার টাকা বুঝে নিতে আসলাম দেখি মা জননী আমার জন্য ছয়টি ব্যাগ প্রস্তুত করেছেন। তারমধ্যে ছোট ছোট দুইটি গ্রাম থেকে আসা সেই ছেলেটির। (সে আবার আজকেই দেশে ফিরে যাবে।) বাকি চারটি বৃহৎ আকারের ও ভয়ংকর ওজনসমৃদ্ধ যা যথাক্রমে মামা ও আপার বাসায় পৌছে দিতে হবে। গ্রাম থেকে আসা ছেলেটি যার নাম এনামুল আমাকে দেখে চোয়ালের সবগুলো দাত বিকশিত করে দিয়ে হেসে বলল, মামা, কোন চিন্তা করবেন না, আমি আছি। তার দন্ত প্রদর্শন অবশ্য আমাকে তেমন উৎফুল্ল করতে পারল না। যথাসম্ভব গম্ভীর স্বরে বললাম, যাও রিকশা কর।

বড় রাস্তায় গিয়ে এনামুলকে ব্যাগসহ দাড় করিয়ে একটি সিএনজির সন্ধানে ইতিউতি অনুসন্ধান চালাতে লাগলাম এবং মহান আল্লাহর অসীম কৃপায় কিভাবে যেন একজন সিএনজি চালকের দয়া হলো আমাকে ব্যাগসহ মোহাম্মদপুরে এবং জাহানারা গার্ডেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এজন্য তাকে সম্মানীবাবদ আমাকে অবশ্য পাঁচশত টাকা গুনতে হবে। যদিও জানি বেশি ভাড়া নিচ্ছে কিন্তু এই বাজারে এমন সুযোগ কয়জনের ভাগ্যে জোটে? তাই অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনা না করে ঐ সিএনজিতে যাওয়াই মনস্থ করলাম। সিএনজি চালক অবশ্য গাড়িতে ওঠার পরে আমাকে শিখিয়ে দিলেন রাস্তায় পুলিশ ধরলে যেন সম্মানীর ব্যাপারটা অস্বীকার করে সিনজির মিটারটি দেখিয়ে পুলিশের জীবনটাকে যেন ধন্য করে দেই। আমি সানন্দচিত্তে তার এই প্রস্তাবটিতে সম্মতি জ্ঞাপন করলাম।

সিএনজি পূর্ণগতিতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলতে লাগল। চালকের খোঁচা খোঁচা দাড়ি এবং রাস্তা পার হওয়ার সময় পথচারীদের বা মনমতো ওভারটেক করতে না পারলে অন্য সিএনজি চালকদের যেভাবে উদারহস্তে গালাগালি বিতরণ করতে লাগল তাতে বুঝলাম আমাদের সিএনজি চালক বড় জাদরেল মানুষ। বনানী সিগনালে এসে জামে পড়েও সে ট্যা ট্যা করে হর্ন বাজিয়ে তার আগমনধ্বনি সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছিল। এ নিয়ে পাশের এক বাসের ড্রাইভারের সাথে তার একদফা অন্তরঙ্গ আলাপন হলো। তারা একে অপরকে যথাক্রমে শ্যালক, দুলাভাই, কে কার ছেলে, কার বাবা কে তা যেভাবে উচ্চ গলায় ঘোষণা করতেছিল তা শুনে এবং তাদের মধ্যকার এই আত্মীয়তার সম্পর্ক দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সিগনাল ছাড়ার পরে তাদের এই মধুর বাক্য বিনিময় সমাপ্ত হলো এবং বাস চালক তার এই নতুন আত্মীয়টিকে যেভাবে হোক বাসের চাকার নিচে ফেলে স্বর্গ দর্শন করিয়ে আনার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে বাস চালাতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু বেরসিক আমার এই মুহুর্তে স্বর্গ দর্শনের তুলনায় মোহাম্মদপুরে এবং জাহানারা গার্ডেনে বৃহৎ আকারের ব্যাগগুলি পৌছে দেওয়াটাকেই জরুরী কাজ বলে মনে হলো। তাই করজোরে সিএনজি চালককে অনুরোধ করলাম আমাদেরকে গন্তব্যস্থলে পৌছে দেওয়ার পরই তিনি যেন স্বর্গ দর্শনের চেষ্টা করেন।

আমার এই কাতর অনুরোধ শুনে সিএনজি চালকের মন গললো কিনা বুঝতে পারলাম না তবে সিএনজি নিয়ে যে বাসের সাথে পারা যায় না তা বোধহয় তিনি বুঝতে পারলেন। তাই তিনি বাসচালকের নিকট আরেকবার নিজেকে তার প্রকৃত জন্মদাতা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে মহাখালী ফ্লাইওভারে উঠে গেলেন। বাসের ড্রাইভারও তার এই নব্য পিতাটিকে নানা উপাধিতে ভুষিত করে এর প্রতিদান দিলেন। যাহোক বাসটি বলাকা পরিবহনের ছিল বিধায় সেটি আর ফ্লাইওভারে উঠলো না। আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তবে পিচ্চি একটি সিএনজির ড্রাইভার হয়ে বাসের ড্রাইভারের সাথে যেভাবে বাদানুবাদ করলেন এবং আমাকে স্বর্গ দর্শনের যে মহৎ প্রচেষ্টা তিনি গ্রহণ করলেন তাতে তার অসীম সাহসের পরিচয় পেয়ে আমি রীতিমতো তার ভক্ত হয়ে গেলাম।

ফ্লাইওভার পার হয়ে সিএনজি যথারীতি পূর্ণগতিতে চলতে লাগল। কিন্তু বিধিবাম। জাহাঙ্গীর গেটে এসে সিএনজি বামে মোড় নিতেই একজন বেরসিক পুলিশ এসে আমাদের সিএনজিকে রাস্তার পাশে থামানোর ইঙ্গিত দিলেন। এরূপ অশ্লীল ইঙ্গিত দেখে আমাদের ড্রাইভার বেজায় নাখোশ হলেন এবং তিনি জোরে জোরে বলতে লাগলেন, বনানীতে একবার ধরছে, উত্তরায় একবার ধরছে (সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা), আপনারা পাইছেনটা কি, এভাবে ধরলে আমি খ্যাপ নিয়া যামু ক্যামনে, আপনাগো কোন বিবেচনা আছে? এভাবে মোড়ে মোড়ে চেক করার কোন দরকার আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। পুলিশকে তিনি যেভাবে ঝাড়ি দিতে লাগলেন তাতে মনে মনে আরেকবার তার সাহসের তারিফ না করে পারলাম না। পুলিশটি অবশ্য তাতে মোটেও প্রভাবিত হলো না। সিএনজি চালকের পাশে এসে তিনি ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন জায়গা? সিএনজি চালকও তার সেই পুরনো কলের গান বাজাতে লাগলো যে, একটু আগেই তার গাড়ি চেক হয়েছে তাহলে আবার কেন চেক করা হবে? তাকে ছেড়ে দেওয়া হোক, ইত্যাদি ইত্যাদি। আর পুলিশটিও তার নিকট বারবার এটি কোন জায়গা তা জানতে চাইলেন। তবে একটু পরেই পুলিশটির ধৈর্যচ্যুতি ঘটল এবং তিনি জায়গা চেনার পরিবর্তে সিএনজি চালকের নিকট তার কাগজপত্র দাবী করলেন ও তাকে গাড়ী থেকে বের হতে আদেশ দিলেন। সিএনজি চালক বিরক্তমুখে তার কাগজপত্র নিয়ে গাড়ী থেকে বের হলো এবং পুলিশটি অপেক্ষাকৃত বড় একজন অফিসারের নিকট চালককে নিয়ে গেল কাগজপত্র পরীক্ষার জন্য।

জ্ঞানী মাত্রই জানেন যে, পুলিশের সাথে আসলে কখনো তর্ক করা উচিত নয়। এবং তাদেরকে কখনো রাগিয়ে দেওয়াও উচিত নয়। কিন্তু আমাদের সিএনজি চালক মহাবিক্রমে উক্ত দুটি কাজই করেছে এবং ফলশ্রুতিতে পুলিশকে আমার নিকট আসতে দেখে শঙ্কিত চিত্তে ভাবতে লাগলাম আজকে 54 ধারায় বুঝি এখানেই গ্রেফতার হলাম। তারপরে নিশ্চিত ক্রসফায়ার। স্নেহময়ী মায়ের মুখটি ভেসে উঠল মানসপটে। হায়! তিনি কোনদিন জানতেও পারবেন না তার ছেলে জাম্বুরা আর কলার মোচা বিলি করতে গিয়ে কী ভয়ানক বিপদেই না পড়েছে।

পুলিশটি আমার নিকট এসে অত্যন্ত নরম সুরে বললেন, ভাই, আপনার কোন ভয় নেই। সত্যি কথা বলবেন। পুলিশের কাছে মিথ্যে বলে পার পাওয়া যায় না। আমরা চেহারা দেখেই বলে দিতে পারি কে সত্যি আর কে মিথ্যে বলে। আমি আপনাকে আরেকটা সিএনজি করে দিব। আপনি শুধু এটুকু বলুন, আপনি কি মিটারে এসেছেন না চুক্তিতে এসেছেন? আমাকে গ্রেফতার করবে না বা ক্রসফায়ারে দেবে না জেনে আমি যারপরনাই আনন্দিত হলাম। উপরন্তু আমার মতো একজন অতি সাধারণ ব্যক্তির সাথে একজন পুলিশ এতো নরম সুরে কথা বলায় আমি রীতিমতো অভিভূত হয়ে গেলাম। আমাকে একটু আগেও স্বর্গ নেওয়ার মহৎ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কেন জানি অকৃতজ্ঞ আমি নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম, আমি চুক্তিতে এসেছি। পুলিশটি একথা শুনেই তার সেই বড় অফিসারকে কাগজপত্র আটকাতে বললেন। তা দেখে একটু বিবেকের দংশন অনুভব করলাম। কারণ গাড়িতে উঠার পরেই সিএনজি চালক কীভাবে মিথ্যে বলতে হয় সেই শিক্ষা আমাকে দিয়েছেন। তার সেই শিক্ষা বিফলে গেল দেখে বেশ কষ্ট পেলাম। অতঃপর পুলিশটি আমার সম্পর্কে কিছু তথ্য নিলেন, যেমন, আমার নাম কী, কী করি, মোবাইল নম্বর, কোথায় যাচ্ছি, কোথা থেকে আসছি, কত টাকায় চুক্তি হয়েছে ইত্যাদি। এগুলো লিখতে লিখতেই সিএনজি চালক উদভ্রান্তের মতো আমাদের নিকট চলে আসলো। এসেই পুলিশটিকে এক ধমক দিল। বললো, 500 টাকাতো লিখেছেন আবার এতো কিছু লেখা লাগে? পুলিশটি বিনয়ের সাথে বললো, আমি কি লেখি না লেখি তা আপনার না দেখলেও চলবে? এরপর পুলিশটি তার উর্ধ্বতন অফিসারকে বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য গেল। এই ফাঁকে সিএনজি চালক আমাকে এমন অকৃতজ্ঞতার জন্য ভৎসনা করতে লাগলো। তার মুখের ভাষা কেমন তা আশা করি আপনাদের আর বোঝাতে হবে না। তার কথা হলো সে আমাকে তার গাড়ীতে উঠিয়ে পাপ করেছে এবং জরিমানার সম্পূর্ণ টাকা সে আমার নিকট থেকে আদায় করে তার এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবে। এবং কীভাবে টাকা আদায় করতে হয় তার পন্থাও নাকি তার জানা আছে। তার হুমকি ধামকী শুনে আমি রীতিমতো আতঙ্কিত বোধ করতে লাগলাম।

পুলিশটি আমাকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করলেন এবং আমাকে গাড়ী থেকে নামতে বললেন। কিন্তু সিএনজি চালক আমাকে গাড়ী থেকে নামতে দেবে না। তার কথা হলো সে আমাকে নিয়ে আসছে এবং সেই আমাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে। পুলিশটি বললো, আপনার গাড়ী ছাড়া হবে না। এরপর পুলিশটি আমাকে গাড়ী থেকে বের হতে সাহায্য করলেন এবং অদূরে দাড়ানো অন্য আরেকটি সিএনজির দিকে ইঙ্গিত করে মালসামানা নিয়ে তাতে উঠতে বললেন। অধিকন্তু ভাড়া হিসেবে মিটারে যা উঠে তা নেওয়ার জন্য নতুন চালককে নির্দেশ দিলেন। পুলিশটির এই উদারতা দেখে আমি তাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেললাম। আমার পূর্বের সিএনজি চালক বারবার আমাকে তার নিজের সিএনজিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলো। তবে তার প্রচেষ্টাকে বারবার পুলিশটি ভন্ডুল করে দিচ্ছিল। নতুন সিএনজিতে উঠার এক ফাকে পুলিশটি প্রাক্তন সিএনজি থেকে মিটারে কত ভাড়া উঠেছে তা দেখে আসলো এবং আমাকে 180 টাকা দিতে বললো। 180 টাকা ভাংতি না থাকায় আমি পুলিশটিকে 200 টাকা দিলাম। পুলিশটি তা আমার প্রাক্তন সিএনজি চালককে দিতে চাইল। সিএনজি চালক আমাকে হারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়লো এবং 200 টাকা তার কাছে আকিঞ্চিৎকর বলে মনে হলো। তাই সিএনজি চালক আমি অন্য যে সিএনজিতে উঠেছি তার দরজা ধরে দাড়িয়ে রইল যেন আমি তাকে ফাকি দিয়ে যেতে না পারি। আমার প্রতি তার এই ভালবাসা দেখে চোখে পানি এসে গেল। তবে তার প্রতি আমার এই আবেগ প্রকাশ না করে পরিবর্তে এক ধমক দিয়ে দরজা ছাড়িয়ে নিলাম এবং সেটাকে ছিটকিনি দিয়ে আটকে নতুন চালককে চালিয়ে যেতে বললাম। প্রাক্তন চালক আমার এই হৃদয়হীন আচরণে অত্যন্ত ব্যথিত হলো এবং সর্বস্ব হারানোর বেদনা নিয়ে চলমান সিএনজির দিকে তাকিয়ে থাকলো।

এরপরে ভালোয় ভালোয় মোহাম্মদপুরে রাজিয়া সুলতানা রোডে আপার বাসার সামনে পৌছলাম। বাসার সামনে আসার পরে নতুন চালক বেকে বসলো। বললো, আমাকে ছেড়ে দেন। পুলিশ আমাকে শুধু মোহাম্মদপুরে আসতে বলেছে। এখন আপনার অন্য গাড়িতে যান। মিটারে যাওয়া আমার পোষাবে না। তার এই কথায় কর্ণপাত না করে আপার বাসায় একটি হাঁস ও ভারী দুটি ব্যাগ পৌছে দিয়ে তার গাড়িতেই উঠে বসলাম এবং মামার বাসায় যেতে বললাম। লোভ দেখালাম, মিটারে যা উঠবে তার থেকে 20 টাকা বেশি দিব। চালক কিছুক্ষণ গাইগুই করে অবশেষে নিমরাজী হলো।

সিএনজি চলতে লাগলো। কিন্তু আবারো বিধিবাম। আসাদ গেট পার হয়ে গন্তব্য স্থলের কাছাকাছি আসার পরে গ্রীন রোডে ঢোকার পূর্ব মুহুর্তে আমাদের এই সিএনজিকেও পুলিশ থামতে নির্দেশ দিল। চালক কাগজপত্র নিয়ে বের হলো। বেশ কিছুক্ষণ পরে চালক যখন ফিরলো জানলাম পুলিশ তাকে দুটি মামলা দিয়েছে। একটি হলো তার ওয়াইপার নষ্ট হওয়ার জন্য, আরেকটি হলো বাম পাশের হলুদ লাইটি কাজ করছে না এজন্য। চালক আমাকে দোষারোপ করতে লাগলো যে, আমার আগের সিএনজি খেয়েছে একটি মামলা যাতে নিম্নে 1200 আর উর্ধে কত খরচ হয় আল্লাহ মালুম। আর সে খেল দুটি মামলা। তার যে কত খরচ হয় কে জানে। সে বলতে লাগলো, আমাকে নিয়ে আসার কারণেই সে মামলা দুটি খেয়েছে। গাড়ি খালি দেখলে পুলিশ নাকি তাকে থামাতো না ইত্যাদি। যাহোক মামার এপার্টমেন্টে পৌছলাম। নামার পরে সিএনজি চালক একই কথা বারবার বলতে লাগলেন যে, আমি তাকে জোর করে নিয়ে আসছি দেখেই নাকি সে মামলা খেয়েছে। আমাকে নিয়ে না আসলে মামলা খেতো না এই রকম হাবিজাবি কথাবার্তা বলতে লাগলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি কি মুসলমান? সে বললো, হ্যা। তাকে বললাম, আপনি গাড়ি নষ্ট হওয়ার কারণে মামলা খেয়েছেন। মনে করেন, এটা আল্লাহর তরফ থেকে আপনার জন্য এক প্রকার শাস্তি। আল্লাহ আপনার তকদিরে মামলা লিখে রাখছেন, আপনি আমাকে না নিয়ে এসে অন্য কাউকে নিয়ে আসলেও মামলা খেতেন। আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখেন। কারণ সবকিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। চালক বিড়বিড় করে কি বললো বুঝতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ভাড়া কত হয়েছে? চালক বললো, 120 টাকা। এনামুলের হাতে 150 টাকা দিলাম। এনামুল তার সাথে আরো 10 টাকা যোগ করে 160 টাকা চালকের হাতে দিল। চালক অত্যন্ত অবহেলার সাথে টাকাকটি হাতের মুঠোয় পুরে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

একা হওয়ার পরে, এনামুল বললো, মামা আপনি একটা কুফা। দুইটা সিএনজিতে উঠলাম, দুইটাই মামলা খাইল। ভুরু কুচকে এনামুলের দিকে তাকিয়ে বললাম, ভুলে যেওনা আমার সাথে তুমিও ছিলে। কুফা তুমিও হতো পারো।

মামার বাসায় বসার পরে মনে হতে লাগলো, এই যে দুইজন সিএনজি চালক তিনটি মামলা খেল তা কি আসলেই আমার জন্য নাকি তারা নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালিয়ে, যাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে, বেআইনীভাবে মিটার বাদ দিয়ে চুক্তিতে যাতায়াত করে মামলা খেল?

এর বিচারের ভার না হয় পাঠকদের উপরেই ছেড়ে দিলাম।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৫১

ভিটামিন সি বলেছেন: মুই কিছু কমু না।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৭

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইডি।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮

আিম এক যাযাবর বলেছেন: আপনার দিনটা ভালই কাটছে.... :P :P :P

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৪২

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: সবদিক বিচারে ভালই কাটছে বলা যায়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫৩

ভোরের সূর্য বলেছেন: দেরি করে রিপ্লাই দিলাম।কারন আজকেই হঠাৎ আপনার এ লেখাটি দেখলাম।খুব ভাল শাস্তি হয়েছে।জানি পুলিশ খারাপ কিন্তু আমি যতবার পুলিশ কে অভিযোগ করেছি ততবার ওদের সাহায্য পেয়েছি সিএনজি বিষয়ে। আপনার ভাগ্য ভাল ওরা অটোমেটিক শাস্তি পেয়েছে। পুলিশ যদি সবসময় এরকম হত তাহলে কতই না ভাল হত আমাদের বাংলাদেশ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৬

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। হ্যা আপনি ঠিকই বলেছেন, পুলিশ যদি কঠোর হস্তে আইনকে প্রয়োগ করতো তাহলে সমাজ তথা দেশ থেকে অন্যায়, অবিচার বিলুপ্ত হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য মাঝে মাঝেই রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তখন তাদের ভালো অর্জনগুলো শূন্য হয়ে যায়।

৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৪১

আনির্বান বলেছেন: darun lekha, khub valo laglo

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৩

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.