নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্থনীতিবিদ

অর্থনীতিবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

৩৫ এর আন্দোলন নিয়ে কিছু কথা

৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৪১


গত কিছুদিন যাবত চাকরীর আবেদনের বয়সসীমা 35 করার দাবীতে আন্দোলন হচ্ছে। ধীরে ধীরে আন্দোলনের কার্যক্রম ও পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার কলেজেরই অনেক তরুন সহকর্মী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। মাসিক বেতন থেকে টাকা তুলে আন্দোলনকারী উদ্যোক্তাদের দিচ্ছেন। আন্দোলন এখন বেশ জোরদার। আন্দোলনকারীদের দাবী হলো চাকরী চাইনা, চাকরীর আবেদন করার যোগ্যতা চাই। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অতি যৌক্তিক দাবী সন্দেহ নেই। কেননা বাংলাদেশে সেসন জটের কারণে পড়াশুনা শেষ করতে করতে একজন শিক্ষার্থীর জীবন থেকে হারিয়ে যায় অনেক অমূল্য বছর। ফলে পড়াশুনা শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য আর তেমন বয়স থাকে না। আন্দোলনকারীদের প্রতি আমার তাই মৌন সমর্থন আছে। কারণ আমি নিজেও এই অভিশপ্ত সেসন জটের শিকার হয়েছিলাম।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে চার বছরের অনার্স কোর্স শেষ করতে কত বছর লাগে? 4 বছর? 5 বছর? 6 বছর? আমি জানিনা বর্তমানে কত বছর লাগে। তবে আমার শেষ করতে মানে রেজাল্ট পেতে পেতে 7 বছর সময় লেগেছিলো? 4 বছরের কোর্স শেষ করতে 7 বছর!!! অবিশ্বাস্য একটা সংখ্যা। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পৌনে দুইটা অনার্স করা যায় এই সময়ে। একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টাকে আরেকটু পরিষ্কার করছি। আমার এক ভাবী যিনি আমার থেকে দুই বছরের জুনিয়র ছিলেন। (বিয়ের পূর্ব থেকেই তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ ছিলো।) আমি যখন ইন্টার পরীক্ষা দেই তখন তিনি এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছেন। ইন্টার শেষ করে আমি ভর্তি হলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা শেষ করে যখন দ্বিতীয় বর্ষে উঠলাম দেখি সেই ভাবী প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে তিন সেমিস্টার কমপ্লিট করে ফেলেছেন মানে তিনিও আমার সাথে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন। আমি যখন তৃতীয় বর্ষে উঠলাম তখন তাজ্জব হয়ে দেখি ভাবী বিবিএ অনার্স শেষ করে ফেলেছেন। আমি যখন চতুর্থ বর্ষে উঠলাম তখন ভাবীর এমবিএ শেষ। এরপর আমি যখন চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ও ছয়মাস পরে রেজাল্ট পেয়ে সবাইকে এই আনন্দের সংবাদ মেসেজ করে জানাচ্ছি তখন দেখি সেই ভাবী চাকরী করছেন এবং তার চাকরীর বয়স প্রায় একবছর ছুঁইছুঁই। হে ধরণী দ্বিধা হও, আমি তোমার কোলে মুখ লুকাই। এত দীর্ঘ সময় নিয়ে অনার্স শেষ করার পর চাকরীর পড়ার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের আর তেমন আগ্রহ থাকে না। আবার কিছুদিন পরেই মাস্টার্স ভর্তি। আবার একাডেমিক পড়া। তারপর মাস্টার্স শেষ করার পর আর চাকরীর জন্য বয়স কৈ? অথচ জীবন চলার জন্য চাকরী দরকার। তাই বর্তমান আন্দোলনকারীরা চাকরীর আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য যে মরিয়া হয়ে আন্দোলন করবেন তা সহজেই অনুমেয়। চাকরীর আবেদনের বয়সসীমা 35 হলে যদিও আমার কোনো ব্যক্তিগত সুবিধা নেই (কারণ আমার বয়স ইতিমধ্যেই 35 পার হয়ে গেছে), তবুও আমি দোয়া করি তাদের জন্য যারা এই আন্দোলন সফল হলে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।

এই আন্দোলন যারা করছেন তারা প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষিত। বাংলাদেশে এ ধরনের আন্দোলন মনে হয় এটাই প্রথম যেখানে শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষিতরাই অংশগ্রহণ করছেন। দাবী আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করা যায়, তবে সমস্যা হলো যে কোনো আন্দোলন একটা সময় পরে সহিংসতার দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চান। পুলিশ দিয়ে হয়তো কিছু আন্দোলনকারীকে দমন করা যায় কিন্তু আন্দোলনের চেতনাকে কখনও দমন করা যায় না। 500 বছর পরেও চেতনা থেকে যায়। তাই সরকার এবং আন্দোলনকারী উভয়ের প্রতি অনুরোধ হলো আপনারা কখনও সহিংসতার দিকে যাবেন না। সহিংস আচরণ হলো মানুষের সবচেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ। সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পথে 35 এর আন্দোলন সফল হোক এই কামনা করে এখানেই শেষ করছি।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ২:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


সরকারী চাকুরীতে 'অবসরে যাবার বয়স যদি ৬০ বছর হয়', মানুষ ৫৯ বছর বয়স অবধি চাকুরী পাবার যোগ্যতা রাখে; কারণ, সরকারী চাকুরীর মালিক হচ্ছে দেশের মানুষ।

৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ২:৪১

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ ভোর ৫:৫৮

সৈয়দ তাজুল বলেছেন:
দেখা যাক, রেজাল্ট কী আসে!

০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:২৫

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: হ্যা, দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কি হয়।

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ ভোর ৬:১৮

কালীদাস বলেছেন: ভাল পোস্ট, চিন্তার অবকাশ আছে।

আমি এই আন্দোলনের পক্ষেও না বিপক্ষেও না। পক্ষে না কারণ, এদের সবার একমাত্র গোল সরকারি চাকরি করা; যেটার সীমা ৩০। আমরা যখন মাস্টার্স শেষ করি, তখন ভার্সিটিগুলো সেশনজটে ভারাক্রান্ত থাকত, চাকরী খুঁজতে ৫ বছরের বেশি কেউ পেত না। এখন সে সমস্যা অনেকটাই কেটেছে, ইজিলি অনেকে ৬/৭/৮ বছর পর্যন্ত সময় পাচ্ছে। সেই সময়টাকে এখন ১১~১৩ বছর বানাতে চাচ্ছে কেবলই সরকারি চাকরির জন্য। আমার নিজের ক্লাসমেটই দুয়েকজন এখনও বেকার কেবল সরকারি চাকরি করার জন্য।

বিপক্ষে পুরাপুরি যেতে পারছি না কারণ সমস্যার গোড়ায় নজর দেয়া উচিত। প্রথমত, এত গ্রাজুয়েট আমাদের আসলেই কি প্রয়োজন? দুনিয়ার অনেকগুলো খুবই উন্নত (এবং ধনী) দেশে থাকতে হয়েছে, আর কোথাও বাংলাদেশের মত হায়ার স্টাডিস কে সামাজিক প্রয়োজন বানাতে দেখিনি। নেহায়াত টপ ২০% স্টুডেন্ট হয়ত যায়, আমাদের মত ৯০% না। সেকেন্ড, কোটা। মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে আমি তবে পরিমার্জন প্রয়োজন। এর বাইরে প্রতিবন্ধি এবং উপজাতীয় কোটা ছাড়া বাকি সব কয়টা বন্ধ করা উচিত। থার্ড, অলস বাঙালির লোভ। সবাই সরকারি চাকরি কেন করতে চায়? শুধুই পাওয়ার? দারওয়ান/অফিসারদের স্যালুট? মোটেও না!!

আমরা সবসময় গাছের মাথায় পানি ঢালতেই কেন জানি প্রেফার করি :(

০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:২৬

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: আপনার মন্তব্যটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। সুন্দর ও যুক্তিসঙ্গতভাবে আপনার বক্তব্যকে উপস্থাপন করেছেন।

৪| ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:২৩

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: এটা যৌক্তিক দাবী মানা উচিত, কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের মাথাব্যথা নেই।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:২৬

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৫| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৫৭

করুণাধারা বলেছেন: এই আন্দোলন কি সফল হয়েছিল? এই যৌক্তিক দাবি কি মানা হয়েছিল শেষ পর্যন্ত?

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৪৪

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: না, আন্দোলন এখনও সফল হয়নি। তবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। এখন আন্দোলনের সফলতা সবই মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.