![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কৃত্তিকা ত্রিপুরা ওরফে পুণাতি ত্রিপুরার বয়স মাত্র ৯ বছর ছিল। এইটুকু বয়সেই, তাকে যে বীভৎস এবং ভয়াবহ নৃশংসতার শিকার হতে হয়েছিল, তা জানা নেই – বাংলাদেশে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়ার দুরাশা করছি না, বিশেষত পার্বত্য চট্রগ্রামেতো নয়ই।
পাহাড়ের গন্ডি পেরিয়ে এই নৃশংসতা আর প্রতিবাদের আওয়াজ সমতলের মানুষের কাছেও পৌছে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই, সকল সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই অবর্ণনীয় নৃশংসতার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছিল। আর, আমাদের দেশের মানুষের ঐতিহ্য এবং চারিত্রিক বৈশিস্ট্য অনুযায়ী সবাই এই ঘটনার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সেই প্রতিবাদের লক্ষ্য কোন দল বা গোত্র ছিল না। বরং অন্যায়ের আর নৃশংসতার প্রতিবাদ করে, অপরাধীর শাস্তি দাবী করা হয়েছিল।
গত ২৮ জুলাই যে নৃশংসতার সাথে কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে হত্যা করা হয়েছিল, তা ভুলে যাওয়ার আগেই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ রবেন্দ্র ত্রিপুরা ওরফে শান্ত নামের একজনকে গত ১ সেপ্টেম্বর তারিখে গ্রেফতার করেছে। বাংলাদেশ পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ – এমন দক্ষতার পরিচয় দেয়ার জন্যে। আমরা গর্বিত এমন পুলিশ বাহিনীর কর্মদক্ষতায়।
পার্বত্য নিউজের সংবাদে ( ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮) জানতে পারলাম যে, “কৃত্তিকা ত্রিপুরা হত্যার আগে নয়মাইল এলাকার মৃত নরোত্তম ত্রিপুরার ঘরে বসেই চাঁদা উত্তোলন করতো শান্ত। কৃত্তিকা ত্রিপুরার মা অনুমতি ত্রিপুরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার কারনেই ক্ষুব্ধ হয়ে কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে হত্যা করে এবং ঘটনা ঘটানোর পর কাউকে না জানানোর জন্যে হুমকি প্রদান করা হয়।“
সংবাদে পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো জানানো হয়েছে যে, “ঘটনার দিন দুপুর ২:৩০ মিনিটে টিপিন পিরিয়ডে বাড়ি যাওয়ার পর ৩:০০টার দিকে হত্যার স্বীকার হয় কৃত্তিকা ত্রিপুরা। কিন্তু খাগড়ছড়িতে একটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায় ওইদিন দুপুর ২:৩৮ মিনিটে আটক তিন বাঙ্গালী যুবক জেলা সদর থেকে মোটরবাইক যোগে দীঘিনালার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে ধর্ষণ এবং হত্যা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।…………… গত ২০ আগস্ট পাওয়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের কোন প্রকার আলামত পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাদে শান্ত আরো জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে তিনজন সহযোগী ছিলো, তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।“
মুদ্রার অপর দিকের মত, এই ঘটনারও আরেকটি দিক রয়েছে। যা হয়ত, আমাদের অনেকই অবগত নন। যে দিকটি যতটা না দোষের
তার চেয়ে অনেক বেশী লজ্জার।
নিতান্তই মর্মান্তিক হলেও সত্যি যে, এই ঘটনার পরপরই পার্বত্য অঞ্চল ছাড়াও দেশের অন্যান্য জায়গা থেকেও বাঙালীদের দায়ী করে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার চালানো হয়। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনজন বাঙ্গালীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করে তাদেরকে এই ঘটনায় জড়িত দাবী করে কিছু পোস্ট দেয়া হয়। চিরাচরিত চর্চা অনুযায়ী এই পোস্টে বিভিন্ন ধরণের কমেন্ট/রিএকশন চলতে থাকে। অবশ্য পুলিশ ঐ তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে জেলে পূরতে দেরী করেনি।
আজ, এতদিন জেল খাটার পরে, আমরা জানতে পারলাম যে, তারা এই ঘটনায় জড়িতই ছিল না। তাহলে, ঘটনার অব্যবহিত পরেই যারা উচ্চকণ্ঠে দোষী বাঙালীদের ফাঁসি দাবী করেছিলেন, তারা এখন কি করবেন ? যারা নিরীহ এক মহেন্দ্র চালককে এমন এক জঘন্য ঘটনার জন্য দোষী দাবী করে তার ছবিসহ নাম-পরিচয় ফেসবুকে দিয়ে দিলেন, তাদেরকে আমরা কি বলতে পারি?
যে সব সুশীল এবং বাঙালি তাদের বন্ধুদের কথায় ফেসবুকে পাহাড়ের বাঙালিদের খেদাতে চেয়েছিলেন, তারা কি পাহাড়ের উপজাতিদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করার মত নৈতিকতা (দেখানোর জন্যে হলেও) দেখাবেন?
যাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছিলেন, সেই সব বিশ্বাসী বন্ধুদের জিজ্ঞেস করতে পারবেন, কেন মিথ্যে তথ্য দেয়া হয়েছিল?
অথবা পার্বত্য চট্রগ্রামে ধর্ষণ বন্ধ করতে যারা পাহাড়ের বাঙালীদের ------- কেটে ফেলার দাবী জানিয়েছিলেন, তারা কি এখন পাহড়ের অ-বাঙ্গালিদেরটা কেটে ফেলার দাবী জানাবেন?
আর, যে সব সংবাদপত্রে লেখা হয়েছিল যে, তাকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছিল। তারা কি কখনো জানাবেন যে, বাস্তবে, তাকে ধর্ষণ করা হয়নি। তারা ভুল করেছিলেন ?
কে জানে, হয়ত একজন মৃতার নামে মিথ্যে ধর্ষিতার অপবাদ কারো কারো কাছে কোন বিশেষত্ব বহন করে না।
(লেখক: মাহের ইসলাম)
©somewhere in net ltd.