নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিফাত রিদম

রিফাত রিদম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্থলোভী জ্ঞানপাপী এবং কোটা নিয়ে কিছু কথা

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪১



বাংলায় একটা শব্দ আছে ‘জ্ঞানপাপী’ যার অর্থ সজ্ঞানে পাপ কর্মকারী। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবি নামধারী কতিপয় মূর্খ(!) ব্যক্তিদের জন্য এই শব্দটি বেশ মাননসই। এরা কোন কিছু না জেনে, না বুঝে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে কাঠের পুতুলের মত স্বার্থান্বেষী কিছু মহলের শেখানো বুলি টেপ রেকর্ডারের মত আওড়াতে থাকে।
গতকাল (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ এক সংবাদ সম্মেলন করে কতিপয় জ্ঞানপাপী সরকারি চাকরিতে ‘আদিবাসীদের’ জন্য ৫% কোটা বহালের দাবি জানায়। ঐ সংবাদ সম্মেলনে যে সব জ্ঞানপাপীরা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেনঃ মিঃ রবীন্দ্রনাথ সরেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, ফজলে হোসেন বাদশা (এমপি), অধ্যাপক ইয়াসিন আলী (এমপি), অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, নূমান আহম্মদ খান, বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, হরেন্দ্রনাথ সিং, বিভূতী ভূষণ মাহাতো, আশিক বানিয়াস, সোহেল চন্দ্র হাজং, নকুল পাহান, পরিমল মাহাতো, প্রভাষ মাহাতো প্রমূখ। একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ সরকারের কাছে দাবী দাওয়া করতেই পারে। কিন্তু সেই দাবী যদি কোন কল্পনাপ্রসূত উর্বর মস্তিস্কের উদ্ভট দাবী হয় তবে সেটা জনমনে হাস্যরসের সৃষ্টি করে।
ঐ সব জ্ঞানপাপীরা ‘আদিবাসীদের’ জন্য ৫% কোটা বহালের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু তারা এতটাই মূর্খ যে বাংলাদেশে কোন কালেই যে ‘আদিবাসী’ কোটা ছিলো না সেটা তথ্যটাই তারা জানে না। আদতে, বর্তমানে সরকারি চাকরির জন্য সংরক্ষিত কোটার পরিমাণ শতকরা ৫৬ ভাগ। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শতকরা ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০, উপজাতি কোটায় ০৫ এবং প্রতিবন্ধী কোটায় ০১ শতাংশ। লক্ষ্য করুন প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সরকারী চাকুরীতে যে কোটা বরাদ্দ আছে সেখানে কোথাও ‘আদিবাসী’ কোটা বলে কিছু নেই। যেটা আছে সেটা হলো ‘উপজাতি’ কোটা। ঐ সব জ্ঞানপাপীরা ‘আদিবাসীদের’ জন্য ৫% কোটা বহালের যে দাবি জানিয়েছে সেটা তারা কোথায় পেয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। আমার মনে হয় তারা সুরা পান করে কাল্পনীক কোন ভীণগ্রহের কোটার দাবী করছে অথবা অর্থের বিনিময়ে কাঠের পুতুলের মত কারো শেখানো বুলি টেপ রেকর্ডারের মত বাজাচ্ছে। দাবী যদি করতেই হয় তাহলে ‘উপজাতি’ কোটার দাবী করুন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে উত্তরাধিকার সূত্রেই কোটা পদ্ধতি চালু হয়। ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে ব্রিটিশদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় ভারতীয়দের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা হয়। পরে সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্যও রাখা হয় কিছু কোটা। পাকিস্তান আমলে পিছিয়ে পড়া পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) দাবির মুখে কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সার্ভিসগুলোর কয়েকটিতে প্রদেশভিত্তিক কিছু কোটা চালু করা হয়। ১৯৭২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন সংস্থাপন (বর্তমানে জনপ্রশাসন) সচিব এমএম জামানের স্বাক্ষরে এক নির্বাহী আদেশে কোটা পদ্ধতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। ওই আদেশে সরকারি চাকরিতে মাত্র ২০ ভাগ ছিল মেধা কোটা, ৪০ ভাগ জেলা কোটা, ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর ১০ ভাগ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত নারী কোটা। ১৯৭৬ সালে এই কোটা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে মেধা কোটায় বরাদ্দ হয় ৪০ ভাগ, জেলা কোটায় ২০ ভাগ। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আগের মতোই ৩০ ভাগ রাখা হয়। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে-সার্ভিস কমিশনের সদস্য এমএম জামান ছাড়া বাকি সবাই সরকারি নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার বিরোধিতা করেন। তখন কোটার পক্ষে অবস্থান নেয়া ওই সদস্য প্রচলিত কোটাগুলো প্রথম ১০ বছর বহাল রেখে ১৯৮৭ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে দশম বছরে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন। ১৯৮৫ সালে এ ব্যবস্থা আবারও বদলানো হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৪৫ ভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ ভাগ, নারীদের জন্য ১০ ভাগ এবং প্রথমবারের মতো উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ ভাগ পদ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে যে শান্তিচূক্তি স্বাক্ষরিত হয় সেই শান্তিচূক্তির অনুচ্ছেদ ঘ(১০) এ উল্লেখ আছে যে,
“কোটা সংরক্ষণ ও বৃত্তি প্রদানঃ চাকুরী ও উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সমপর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত সরকার উপজাতীয়দের জন্য সরকারী চাকুরী ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখিবেন”।
সেই ধারাবাহিকতায় সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে ৫% উপজাতি কোটা চলমান। কিন্তু সম্প্রতি সংঘটিত কোটা আন্দোলনের পর বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দেন যে সকল কোটা উঠিয়ে দেয়া হবে। সরকারের এই ঘোষণার প্রেক্ষিতেই ঐ সব জ্ঞানপাপীরা ‘আদিবাসী’ কোটা বহাল রাখার দাবী জানিয়েছে।
সকল জ্ঞানপাপীকে বলছি— কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসুন। কোটার দাবী করতে হলে বিদ্যমান ‘উপজাতি’ কোটার দাবী করুন। এই দেশে ‘আদিবাসী’ কোটা বলে কস্মিনকালেও কিছু ছিলো না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.