নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিফাত রিদম

রিফাত রিদম › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক কুখ্যাত রাজাকার ও তার পুত্রের কথা

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৭

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের কতিপয় উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকলেও বেশিরভাগ নেতৃস্থাণীয় উপজাতীয়রা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন। বর্তমান চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের পিতা ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের সময় থেকেই এই সকল উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের সাথে তথা আজকের বাংলাদেশের সাথে অন্তর্ভূক্তি মেনে নিতে পারেননি। তাই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রান্তিকালে এই সকল উপজাতীয় কূ-চক্রী নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতার ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত করতে প্রবৃত্ত হয়। তারই অংশ হিসেবে তৎকালীন চাকমা সার্কেল চীফ ত্রিদিব রায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে রাঙ্গামাটি তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের বুক থেকে স্বাধীনতার মহান লড়াকু মুক্তিযোদ্ধাদের নাম নিশানা মুছে ফেলতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

ছবিঃ পাকিস্তানের মন্ত্রী সভায় ত্রিদিব রায়

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি রাংগামাটি জেলার রিজার্ভ বাজার এবং তবলছড়ি বাজারে জনসভায় ভাষণ দেন। এসব জনসভায় তিনি ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেন। ত্রিদিব রায় বাংলাদেশের একমাত্র যুদ্ধপরাধী যার লাশ পাকিস্তানে সমাহিত করা হয়েছে। যদিও তার ইচ্ছা ছিল যেন তার শেষকৃত্য বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী জনতার প্রবল প্রতিরোধের মুখে তা সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর দশদিন পর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে তাকে দাহ করা হয়।
ত্রিদিব রায় যে একজন খাস রাজাকার এবং পাকিস্তান প্রেমী ছিলো তার আরও প্রমাণ পাওয়া যায় শরদিন্দু শেখর চাকমা বিরচিত বঙ্গবন্ধু ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক বইয়ে। পাঠকের জ্ঞাতার্থে আমি বইটির অংশ বিশেষ হুবহু তুলে ধরছিঃ
“১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে পাক বাহিনী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ভারত বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর কাছে আত্ন সমর্পন করলে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান হতে স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর তিনি নতুন মন্ত্রীসভা গঠন করেন। এরপর শুরু হয় দেশের জন্য নতুন শাসনতন্ত্র রচনার কাজ। শাসনতন্ত্র রচনার কাজ শেষ হলে এবং সেটা গণপরিষদে গৃহিত হলে ১৯৭৩ সালে নতুন শাসনতন্ত্রের অধীনে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পূর্বে বঙ্গবন্ধু রাঙ্গামাটিতে যান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে তিনি রাজা ত্রিদিব রায়ের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তাকে তীব্র ভাষায় তীরস্কার করেন। উল্লেখ্য, পাকিস্তান হতে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু রাজা ত্রিদিব রায়কে বাংলাদেশে ফেরত আনার জন্য তার মা বিনীতা রায়কে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলেন। তখন ত্রিদিব রায় জাতিসংঘে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু রাজা ত্রিদিব রায় দেশে ফেরত আসেননি। তিনি এখনও পাকিস্তানে আছেন। আরো উল্লেখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় রাজা ত্রিদিব রায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করেন এবং যুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য শ্রীলংকা, বার্মা (বর্তমান মায়ানমার), থাইল্যান্ড ইত্যাদি বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশগুলো সফর করতে গেছিলেন। এসব কারণে বঙ্গবন্ধু ত্রিদিব রায়-এর ওপর খুবই নাখোশ হয়েছিলেন”। (সূত্রঃ বঙ্গবন্ধু ও পার্বত্য চট্টগ্রাম, শরদিন্দু শেখর চাকমা, পৃষ্ঠা নং- ১১).

ছবিঃ জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে ফেরার পর ত্রিদিব রায়কে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো

১৯৭১ সালে তৎকালীন চাকমা সার্কেল চীফ ত্রিদিব রায় যেভাবে বাংলাদেশের সাথে গাদ্দারী করেছিলো ঠিক তেমনি ভাবে বর্তমান সময়ে তার পুত্র ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বাংলাদেশের সাথে গাদ্দারী করে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশের অখন্ড ভূমি হল পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা- রাংগামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। ১৯৭১ এ ত্রিদিব রায় বাংলাদেশের বিরোধীতা করে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলো আর বর্তমানে সেই রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্র ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র “জুম্মল্যন্ড” গঠনের পাঁয়তারা করছে। আর সে লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ নামক দেশ গঠনের জন্য দেবাশীষ রায় গোপনে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এই নব্য রাজাকার দেশে-বিদেশে বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনসহ নানান সংস্থার সাথে এ ব্যাপারে লবিং করছে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে মদন ও ইন্ধন দিচ্ছে। তাদের জন্য ব্যাপক অস্ত্র ক্রয় করছে। জানা যায় যে, পার্বত্য চট্রগ্রামের উপজাতি সন্ত্রাসীদের কাছে মায়ানমার থেকে সব অস্ত্রের চালান আসতো আরাকান আর্মির নেতা ডা. রেনিন সোয়ের মাধ্যমে। সেই রোনিন সোয়ের সাথে দেবাশীষ রায়ের গোপন বৈঠকের কথা কারোরই অজানা নয়।

ছবিঃ আরাকান আর্মির নেতা ডা. রেনিন সোয়ের সাথে দেবাশীষ রায়ের গোপন বৈঠক

স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠনের হাতিয়ার হিসেবে সম্প্রতি উপজাতিরা নিজেদেরকে আদিবাসী দাবী করা শুরু করেছে। কারণ আদিবাসী স্বীকৃতি পেলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সরকারের কোন কর্তৃত্ত্ব থাকবে না। সেখানকার সকল ক্ষমতার মালিক হবে উপজাতিরা। উপজাতিদের এই আদিবাসী দাবী করার পিছনের মূল কারিগর ঐ দেবাশীষ রায়। যদিও আমরা জানি যে, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই; বরং মূল বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিপরীতে এই অ-বাঙালি জনসমষ্টিকে- উপজাতি; ক্ষুদ্র জাতিসত্তা; নৃগোষ্ঠী নামে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু, এই অ-বাঙালি জনগোষ্ঠী জাতিসংঘ আদিবাসী অধিকার ঘোষণা ২০০৭ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১০৭ ও ১৬৯ নং কনভেনশনের ঘোষণা অনুযায়ী নিজেদের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি আদায়ের কর্মসূচি পালন করে আসছে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থানের ফলে আদিবাসী ইস্যু কিছুটা স্তিমিত হলেও দেবাশীষ রায় বাংলাদেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের হাত করে এ ব্যাপারে তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মহলেও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষতঃ UNPFII (United Nations Permanent Forum on Indigenous Issues), ILO (International Labour Organization), CHTC (Chittagong Hill Tracts Commision), আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস, আদিবাসী ফোরাম ইত্যাদি সংগঠনের মদদে এই ইস্যুটি এখনও চলমান রয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে বর্তমান চাকমা সার্কেল চিফ রাজাকার পুত্র ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এবং অন্যান্য চাকমা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একাংশ।
দেবাশীষ রায় UNPFII’এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে ২০১১-২০১৩ এবং ২০১৪-২০১৬ সালের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলো। তার এই অবস্থানকে পুঁজি করে সে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী/সংস্থাসমূহের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে অত্যন্ত সুকৌশলে ইস্যুটির স্বপক্ষে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন দেশে (অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, থাইল্যান্ড, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ইত্যাদি) অভিবাসী হিসেবে বসবাসরত পার্বত্য উপজাতীয় সদস্যদের দ্বারাও একই তৎপরতা লক্ষ করা যায়।
সেই সাথে দেশের অভ্যন্তরে সরকারি বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা বা সংস্থার ব্যানারে এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধির মাধ্যমে এই দাবির পক্ষে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে অত্যন্ত সুকৌশলে একচেটিয়া প্রচারণা চালানো হয়, যা সরকারের ভাবমর্যাদা ও অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে, মানবাধিকার কমিশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন’কে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে এবং কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দ্বারা আদিবাসী প্রচারণায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই দাবিকে পুনরায় জোরালো করবার তৎপরতা জারি রয়েছে।
অথচ, ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যরিস্টার দেবাশিষ রায় রাষ্ট্রীয়ভাবে অফিসিয়ালি লিখেছিলেন যে, “বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই। কিছু জনগোষ্ঠী আছে”। এমনকি গত ১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত কোটা সংরক্ষণ সংক্রান্ত এক চিঠিতে উপজাতিদেরকে ‘আদিবাসী’ আখ্যার পরিবর্তে ‘পাহাড়ী’ ও ‘স্বল্প সংখ্যার জাতিসত্ত্বা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন দেবাশিষ রায়। বাংলাদেশ সরকার যেহেতু দেশের উপজাতিদেরকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি তাই চতুর দেবাশীষ রায় তার কোটার দাবি সংক্রান্ত চিঠিতে ‘আদিবাসী’ শব্দটি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন শুধুমাত্র সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে। হায়রে স্বার্থপর, লোভী, বিবেক বর্জিত, দ্বিমূখী চরিত্র রাজাকার পুত্র!


পর্দার অন্তরালে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করতে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় যে সর্বদাই সচেষ্ট তার প্রমাণ এর আগেও আমরা জেনেছি। চলতি বছরের মার্চ মাসে নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী সেমিনার আয়োজন করেছিলেন এই ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ মার্চ, ২০১৮).
কুখ্যাত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্র ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এবং তার অনুসারীরা এখনো সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। নিজস্ব পতাকা, মানচিত্র, মুদ্রা, আইডি কার্ড, জাতীয় সংগীত থেকে শুরু করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার জন্য যত কিছু প্রয়োজন সব কিছুর প্রাথমিক যোগান তারা করে রেখেছে। তারা এমএন লারমাকে জুম্মল্যান্ডের জাতির পিতা ঘোষণা করার পাশাপাশি তার মৃত্যু দিবস ১০ নভেম্বরে জুম্মল্যান্ডের জাতীয় শোক দিবস পালন করছে। এমনকি ১০ নভেম্বরকে তারা জুম্ম জাতীর শোক দিবস হিসেবে সাধারণ ছুটি ঘোষণাও করেছে এবং ঐ দিন জুম্মল্যান্ডের পতাকা অর্ধনমিত রাখার কথাও বলেছে। তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল খুলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠনের প্রচার চালাচ্ছে। তারা দাবি করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন করার মতো পর্যাপ্ত অস্ত্র তাদের হাতে রয়েছে। কাজেই দেবাশীষ রায়ের স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠনের স্বপ্ন কোনো ছেলের হাতের মোয়া নয়। এর সাথে জড়িত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, অস্তিত্ব, কর্তৃত্ব, ইতিহাস ও মর্যাদার প্রশ্ন। এই সব রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত সকলকে দেশদ্রোহীতার অভিযোগে আইনের আওতায় নিয়ে এসে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা এখন সময়ের দাবী।






প্রিয় পাঠক, আপনাদের হয়ত জানা আছে যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ’র মধ্যে একজন হলেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রাংগামাটি জেলার বুড়িঘাট গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে শহীদ হন। রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো যে রাংগামাটিতে এই দেশের একজন বীর সূর্য সন্তান ঘুমিয়ে আছেন সেখানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী কুখ্যাত রাজাকারের নামে এখনো শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনার নাম।

ছবিঃ রাজাকার ত্রিদিব রায়ের নামে সড়ক


ছবিঃ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের সমাধি

উল্লেখ্য যে, দেশের সকল স্থাপনা থেকে রাজাকারের নাম অপসারন করার জন্য ২০১২ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। ২০১৫ সালে সে রীটের পক্ষে চূড়ান্ত রায় প্রদান করেন হাইকোর্ট। সেই রায়ের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় রাজাকারের নামে স্থাপনা অপসারণ করা হলেও রাংগামাটিতে রাজাকার ত্রিদিব রায়ের নামে স্থাপনা অপসারণ করা হয়নি। পরবর্তীতে, ২০১৭ সালে খাগড়াছড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ও রাঙামাটির বাসিন্দা বদিউজ্জামানের করা রিটের প্রেক্ষিতে ঐ বছরের মে মাসে ৯০ দিনের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে থাকা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ত্রিদিব রায়ের নাম অপসারণের আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু, হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা স্বত্ত্বেও সেই রায় আজও কার্যকর হয়নি। ধারনা করা যায়, এই রায় কার্যকর না হবার পিছনেও দেবাশীষ রায়ের হাত রয়েছে।


পরিশেষে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশের একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে সরকারের কাছে আমার দাবী এই যে- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে খন্ডিত করে যারা আলাদা রাষ্ট্র “স্বাধীন জুম্মল্যান্ড” গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাদেরকে দেশদ্রোহীতার কারনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক। সেই সাথে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী চাকমা সার্কেল চীফ ত্রিদিব রায়ের নামে সকল স্থাপনার নামফলক দ্রুত অপসারণ, রাজাকারের বংশধর বর্তমান রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায়কে তার পদ থেকে অপসারণ, তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা হরণ করা হোক।

মুক্তিযুদ্ধের মাটিতে,
রাজাকার ও তার বংশধরদের ঠাই নেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪১

মাহের ইসলাম বলেছেন: তথ্যবহুল একটি পোষ্ট।
ভালো লিখেছেন।
তবে, কিছু কিছু ছবি ঠিকমতো আপলোড হয়নি।
আবার আপলোড করে দেখতে পারেন।

শুভ কামনা রইল।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১৬

রিফাত রিদম বলেছেন: ধন্যবাদ।
ছবিগুলো ঠিক করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.