নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিজভী_বুয়েট

রিজভী_বুয়েট › বিস্তারিত পোস্টঃ

আকাশের গল্প

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ২:৩২

১।
আমার নাম আকাশ। আমি পেশায় একজন ছিনতাইকারী। ছিনতাই কে কি পেশা বলা যায়? যাওয়ার কথা, যে পথে টাকা আসে সেটাই পেশা। কারো কারো কাছে পেশাটা নেশার মত হয়ে যায়। আমার কাছে ব্যাপারটা অবশ্য নেশা হয়ে যায়নি। ব্যাপারটা রুটিন ওয়ার্ক হয়ে গেছে। আমি এই লাইনে আছি ৫ বছর ধরে। প্রথম প্রথম পুলিশে ধরা খেতাম। একবার ধরা খেলে ৩ মাস। পরে ওস্তাদেরা টাকা দিয়ে ছাড়ায় আনত। এখন আমি নিজেই ওস্তাদ হয়ে গেছি। পুলিশকে মাসে একটা কমিশন দিতে হয় শুধু।

সপ্তাহে একদিন মিশনে নামি। বাকী ছয়দিন কিছু করি না। আমার সোর্সরা বাকী ছয়দিন টহল মারে। আমরা এটাকে বলি ওয়াচ করা। মিশনের দিনেও এখন আমি ডিরেক্ট টানের মধ্যে নাই। হয় বাইক চালাই, নয়ত সাগরেদগুলোর পিছন পিছন যেয়ে ওদের ব্যাকআপ দেই। ব্যাকআপ মানে ওরা কোনো ঝামেলায় পড়লে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করি। আমরা বেশিরভাগ ছিনতাই করি বাইক দিয়ে। ঠ্যাক মারার কাজ কমায় দিয়েছি। তবে আমার সাগরেদগুলো ঠ্যাক মারে মাঝে মধ্যে, হুটহাট কারো কারো ব্যাগে টান দেয়, ওগুলো ওরা করে ইচ্ছামত, আমাকে পার্সেন্টেজ দেয়।

আমি কয়েকদিনের মধ্যে বিয়ে করতে যাচ্ছি। মেয়ে খুব সুন্দরী, এইচ,এস,সি পাশ। বিয়ে আমার ওস্তাদ ঠিক করে দিয়েছে। মেয়েদের ফ্যামিলিকে বলা হয়েছে ঢাকায় আমার বাড়ি, গাড়ি আছে। মেয়েদের ফ্যামিলি থেকে আমার গাড়ি বাড়ি দেখতে এসেছিল। ওস্তাদ কীভাবে যেন বাড়ি গাড়ি ম্যানেজ করে দিয়েছে শুধুমাত্র ওদের ফ্যামিলিকে দেখানোর জন্য। বিয়ে মোটামুটি ঠিকঠাক। এখন আমরা দুইজন প্রায়ই ঘুরে বেড়াই। ছিনতাইকারী হলেও আমার প্রেমিক মন মরে যায়নি, এর জন্য ভালো লাগে। সময় পেলেই বাইক নিয়ে ওর সাথে উড়ে বেড়াই। আমাকে তখন একটা পাখির মতো লাগে, যে পাখির শুধুই উড়বে, ভালোবাসার লাল নীল আকাশে। ও আচ্ছা, ওর নামটা বলা হয়নি, ওর নাম হচ্ছে নীলা। নীলা আর আমি আকাশ, সুন্দর মিলে গেছে। দুইজন মিলে নীলাকাশ বানিয়ে ফেলেছি।

আজকে বিকালে নীলার সাথে ঘুরতে যাব। নীলা বাসা থেকে শপিং করবে বলে বের হবে। তারপর আমরা ঘুরব বাইক দিয়ে। ইচ্ছা আছে আশুলিয়ার দিকে যাব। ঐ দিকের রাস্তাগুলোতে স্পিড উঠানো যায় ভালো। আজকেও স্পিড উঠাবো, নীলা ভয় পাবে, চিৎকার করে বলবে, আস্তে চালাও। আমি শুনব না ওর কথা, আরো জোরে চালাব। মেয়েদের ভয় পাইয়ে খুব আনন্দ!

নীলাকে বসুন্ধরা সিটির সামনে থেকে পিক করার কথা। আমি বারবার বলেছি, তোমার এত কষ্ট করে রিকশা দিয়ে এখানে আসতে হবে না। আমিই তোমার বাসার সামনে থেকে তোমাকে নিয়ে আসব। কিন্তু কীসের কী, নীলা লজ্জা পায়। ভয় পায়, যদি কেউ দেখে ফেলে। আমি বলি দেখে ফেললে ক্ষতি কী, আমরা তো বিয়ে করতেই যাচ্ছি। ও বলে, নাহ, মানুষ খারাপ ভাববে। বেশি ভালো মেয়েদের এই এক সমস্যা, সব কিছুতেই বলে মানুষ খারাপ ভাববে।
২।
আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। নীলা এখনও আসেনি। এর মধ্যে বার দশেক ফোন দিয়েছি। প্রত্যেকবার ফোন বন্ধ পেয়েছি। মেয়েটার হলো কী! টেনশনে দুই-তিনটা সিগারেট খেয়ে ফেলেছি। মেয়েটা কি জেনে গেলো আমি ছিনতাইকারী? মেয়েটাকে কি কেউ আমার আসল পরিচয় বলে দিল? বলে দিতেই পারে, আমার তো শত্রুর অভাব নেই। এখন কী করা যায়? ওর বাসায় যাব? মিষ্টি হাতে নিয়ে ওর বাসায় যেয়ে বললাম, শ্বশুর আব্বা আপনার জন্য এনেছি। এখনই কি চলে যাব? না মনে হয়, আরেকটু অপেক্ষা করা দরকার। মেয়ে মানুষ, হয়ত একটু বেশি সাজগোজ করছে। হয়ত লিপস্টিকের সাথে ড্রেস ম্যাচ হচ্ছে না, হয়ত আই লাইনারটা ঠিকমত দেয়া যাচ্ছে নাহ। ওকে কেমনে বোঝাই, তুমি এমনিতেই অনেক সুন্দর, তোমার সাজগোজের কোনো দরকার নেই। সাজগোজ বলতে চোখে একটু কাজল দিতে পার, কাজল কালো চোখে রাখব চোখ!

আকাশ কুসুম কল্পনা করছি, এমন সময় ফোন, নীলার বাবার ফোন, “আকাশ, নীলা তো অ্যাকসিডেন্ট করেছে”।
৩।
নীলার অবস্থা খুব বেশি রকমের খারাপ। ওর পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলে গিয়েছিলো। ডাক্তার বলছে পা কেটে ফেলতে হবে। রাতে সার্জারি। আমি মন খারাপ করে বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় এসে দেখি দুই সাগরেদ বসে আছে। তাদের মুখ হাসি খুশি। তারা বলে, ওস্তাদ ভালো একটা মোবাইল সেট মেরে দিয়েছি, মিনিমাম ২০ হাজার হবে।

আমার মন খারাপ, আমি বলি, টেবিলের উপর রেখে দে, কালকে দেখব নে। ভালো লাগছে না, আমার সাথেই কেন এমন হয়? এগুলো কি আমার পাপের শাস্তি? এই পেশা কি বদলানো দরকার? বদলানো সম্ভব না, অনেক শিকলে আটকে আছি, যে শিকল একটা ছাড়ালে আরেকটা জড়িয়ে যায় আমার সাথে। ঘুমানো দরকার, হয়ত এটা একটা দুঃস্বপ্ন যাচ্ছে, সকালে উঠে দেখব সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে।
খেয়ে শুয়ে পড়ব, হঠাত টেবিলের উপর চুরি করে রাখা মোবাইলটার দিকে চোখ গেল, খুব পরিচিত লাগছে। আমার সারা শরীরে কেমন একটা স্রোত খেলে গেল। আরে, এটা নীলার ফোন না??

ফোনটার কাছে যাচ্ছি আর ভাবছি, তার মানে আমার সাগরেদ দুইটা নীলার ফোন টান দিয়েছে? নীলা উলটে পরে গিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে?

ধীর পায়ে চুরি হওয়া ফোনটার কাছে গেলাম। তাকিয়ে আছি ফোনটার দিকে, হ্যাঁ এটা নীলারই ফোন। কম্পিত হাতে ফোনটা তুলে নিলাম, ওপেন করলাম! কললিস্টের প্রথম নামটাই আমার- নামটা হল- “আমার আকাশ”...


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:৪৯

টাইম টিউনার বলেছেন: ভাল লাগলো

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২৪

অশ্রুকারিগর বলেছেন: “আমার আকাশ”...

ভালো ছিল।

৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:২৭

সুমন কর বলেছেন: শেষটা অনুমান করা যাচ্ছিল, খারাপ হয়নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.