নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রেজাউল করিম খন্দকার

রেজাউল করিম খন্দকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার গল্প

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে কে প্রথম এভারেস্ট জয় করেছেন সে আলোচনায় গণমাধ্যম বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো এখন সরগরম। ১৯২১ সাল থেকেই এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার অভিযান চলছে। এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে নানা অদ্ভুত উদ্যোগও নিয়েছেন অনেকে। কিভাবে একের পর এক ক্যাম্প পেরিয়ে পর্বতারোহীরা চূড়ায় পা রাখেন তা নিয়ে ঢাকা গাইডের বিশেষ প্রতিবেদন:



কে আগে এভারেস্ট চূড়ায় পা রেখেছেন, এডমন্ড হিলারী নাকি তেনজিং নরগে?

১৯৫৩ সালে এভারেস্ট জয়ের পর এ দু’জন স্থির করেন, তারা দু’জন মিলে এভারেস্ট জয় করেছেন এমনটিই বলা হবে। ঔপনিবেশিকতা বিরোধী মনোভাবকে যেন একপাশে সরিয়ে রাখতে পেরেছিল ভারত আর নেপাল। কিন্তু তথ্য-প্রমাণ অনুযায়ী তেনজিং এর আগে হিলারীই এভারেস্টে উঠেছেন। জন হান্ট যিনি এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন এবং সে সময় নেপালে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার ক্রিস্টোফার সামারহায়েস জানান তেনজিং-এর আগে হিলারীই এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন। রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটির আর্কাইভে হিলারীর পেশ করা তিন পৃষ্ঠার একটি মেমো সংরক্ষিত আছে, যেখানে হিলারী লিখেছেন, “আমি এভারেস্টের ওপর উঠলাম.......আমি দ্রুত তেনজিংকে আমার পাশে নিয়ে এলাম”।



অবশ্য সর্বসাধারণের জন্য যে বিবরণ হিলারী দিয়েছেন তাতে তিনি বলেছেন, “বরফ কুঠারের (আইস অ্যাকস) শেষ কয়েকটি আঘাতের মাধ্যমে আমরা শীর্ষে পৌঁছালাম”। মানে হিলারী প্রথমে চূড়ায় পা রাখলেও কখনো কৃতিত্ব দাবি করেন নি।



১৯৫২ সালে এভারেস্টের চূড়ায় প্রায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তেনজিং

ম্যালরির (ম্যালরি সম্পর্কে লিখেছি আরেকটু পরে) মৃত্যুর পর আরও ১০টির মত প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল, যা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তেনজিং এর মধ্যে ৬টি অভিযানে অংশ নেন। সাহায্যকারীর ভূমিকায় শুরু করে এক পর্যায়ে তিনি পুরোপুরি অভিযাত্রীতে পরিণত হন। ১৯৫২ সালে তিনি এবং একজন সুইস পর্বতারোহী শীর্ষের ৮০০ ফুটের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যান। তথন পর্যন্ত এটাই ছিল সর্বোচ্চ উচ্চতায় মানুষের পদার্পণ। পরের বছর হিলারীর সাথে তেনজিং এভারেস্ট জয় করেন। আর তার পর থেকে চার হাজারের মত পর্বতারোহী এভারেস্ট জয় করেছেন, যাদের মধ্যে তেনজিং এবং হিলারীর ছেলেরাও আছে।



এভারেস্টই যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সেটা জানা ছিল না ঊনিশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত

আগে মনে করা হত আন্দিজই পৃথিবীর সর্বোচ্চ মাউন্টেন রেঞ্জ বা পর্বতমালা। কিন্তু ঊনিশ শতকে বৃটিশরা ভারতে বিস্তৃত পরিসরে একটি ত্রিকোণমিতিক জরিপের উদ্যোগ নেয়। ১৮৪৭ সালে দার্জিলিংয়ের কাছাকাছি থেকে একটি পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। সেবারই প্রথম ধারণা করা হয়েছিল হিমালয় পর্বতমালার ১৫ নম্বর চূড়াটি পথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া হতে পারে। ১৮৫২ সালে এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে ১৫ নম্বর চূড়া বলে পরিচিত চূড়াটিই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া। সে সময় এর উচ্চতা পাওয়া গিয়েছিল ২৯,০০২ ফুট। সর্বাধুনিক জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চতা নির্ণয় করতে গিয়ে এর উচ্চতা কেবল ৩৩ ফুট কম পাওয়া গেছে।



এভারেস্ট প্রসঙ্গ ছেড়ে পর্বতারোহণ নিয়ে ভিন্ন কিছু তথ্য যোগ করি এবার



সেভেন সামিট বা সপ্তশৃঙ্গ

পর্বতারোহীরা প্রায়ই সেভেন সামিটের কথা বলেন। সাত মহাদেশের সাতটি উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গকে সেভেন সামিট বলা হয়। সেভেন সামিটে আরোহণ পর্বতারোহীদের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ। ১৯৮৫ সালের ৩০শে এপ্রিল রিচার্ড হাস সর্বপ্রথম সাত মহাদেশের সাতটি উচ্চতম পর্বতচূড়ায় ওঠেন, তখন থেকেই সেভেন সামিট বা সপ্তশৃঙ্গ কথাটা চালু হয়।



সেভেন সামিটগুলো:

সেভেন সামিট বলা হলেও এখানে নয়টি চূড়ার উল্লেখ করা হচ্ছে। সেভেন সামিট নিয়ে বিভিন্ন তালিকা করা হয়েছে, সব মিলিয়ে নিচের তালিকাটি করা হয়েছে:



পর্বতশীর্ষ উচ্চতা যে পর্বতমালার অংশ দেশ/মহাদেশ

মাউন্ট এভারেস্ট ৮,৮৪৮ মিটার হিমালয় নেপাল, চীন/এশিয়া

অ্যাকনগুয়া ৬,৯৬১ মিটার আন্দিজ আর্জেন্টিনা/দক্ষিণ আমেরিকা

মাউন্ট ডেনালি ৬,১৯৪ মিটার আলাস্কা রেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্র/উত্তর আমেরিকা

কিলিমানজারো ৫,৮৯৫ মিটার -- তানজানিয়া/আফ্রিকা

মাউন্ট এলব্রুস ৫,৬৪২ মিটার ককেশাস পর্বতমালা রাশিয়া/ইউরোপ

মাউন্ট ভিনসন ৪,৮৯২ মিটার সেনটিনেল রেঞ্জ এন্টার্কটিকা

মাউন্ট কসসিউসকো ২,২২৮ মিটার গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ অস্ট্রেলিয়া

কার্টসটেঞ্জ পিরামিড ৪৮৮৪ মিটার --- নিউ গিনি

মাউন্ট ব্লান্ক ৪৮০৭ মিটার --- ফ্রান্স এবং ইতালী/ইউরোপ



সেভেন সামিটে বাংলাদেশী

বাংলাদেশর প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে সেভেন সামিট জয়ের অভিযান ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ শুরু করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। ইতোমধ্যে তিনি এভারেস্ট চূড়া ছাড়াও আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কিলিমানজারো, আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ অ্যাকানগুয়া এবং ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এলব্রুস জয় করেছেন।





এইট থাউজেন্ডার বা আট-হাজারী পর্বতশৃঙ্গ

পর্বতারোহীদের কাছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে এইট থাউজেন্ডার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা আট হাজার মিটারের বেশি এমন এমন পর্বতগুলোকে এইট থাউজেন্ডার বলা হয়। বিশ্বে এরকম ১৪টি পর্বতশৃঙ্গ আছে যার সবগুলোই এশিয়ার হিমালয় এবং কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত।



১৯৫০ সালের ৩রা জুন অন্নপূর্ণা পর্বতচূড়ায় আরোহণের মাধ্যমে মরিস হার্জগ এবং লুইস ল্যাচেনাল প্রথম আট হাজার ফুটের বেশি উঁচু কোন পর্বতচূড়ায় আরোহণ করেন। আর ১৪টি এইট থাউজেন্ডারে পা রাখার কাজটি সম্পন্ন হয় ১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর। রেনহোল্ড মেসনার প্রথম এ কাজটি সম্পন্ন করেন।



আট-হাজারী পর্বতশৃঙ্গের তালিকা



শৃঙ্গের নাম উচ্চতা অবস্থান প্রথম আরোহন

এভারেস্ট ৮৮৪৮ মি চীন/নেপাল মে ২৯,১৯৫৩

কে২ ৮৬১১ মি চীন/পাকিস্তান জুলাই ৩১,১৯৫৪

কাঞ্চনজঙ্ঘা ৮৫৮৬ মি ভারত/নেপাল মে ২৫,১৯৫৫

লোৎসে ৮৫১৬ মি চীন/নেপাল মে ১৮,১৯৫৬

মাকালু ৮৪৬৩ মি চীন/নেপাল মে ১৫,১৯৫৫

চো ওইয়ু ৮২০১ মি চীন/নেপাল অক্টোবর ১৯, ১৯৫৪

ধবলগিরি ৮১৬৭ মি নেপাল মে ১৩,১৯৬০

মানাসলু ৮১৬৩ মি নেপাল মে ৯,১৯৫৬

নাঙ্গা পর্বত ৮১২৫ মি পাকিস্তান জুলাই ৩,১৯৫৩

অন্নপূর্ণা ৮০৯১ মি নেপাল জুন ৩,১৯৫০

গাশারব্রুম ১ ৮০৬৮ মি চীন/পাকিস্তান জুলাই ৫,১৯৫৮

ব্রড পিক ৮০৪৭ মি চীন/পাকিস্তান জুন ৯,১৯৫৭

গাশারব্রুম ২ ৮০৩৫ মি চীন/পাকিস্তান জুলাই ৮,১৯৫৬

শিশাপাংমা ৮০২৭ মি চীন মে ২,১৯৬৪



এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম

শুধু এভারেস্ট জয়ে সাধ মেটে না অনেকের, সেভেন সামিট এমনকি ১৪টি এইট থাউজন্ডোর জয় করা চাই তাদের। কিন্তু এরপর কি? এরপরের ধাপ বা চ্যালঞ্জ হতে পারে এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম বা অ্যাডভঞ্চেরারস গ্র্যান্ড স্ল্যাম।



সেভেন সামিট এবংপৃথিবীর দুই মেরুতে পা রাখলে তাকে বলা হয় এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ঠিক ৯০ ডিগ্রী অক্ষাংশে পৌঁছাতে না পারলেও ৮৯ ডিগ্রী অক্ষাংশে পৌঁছাতে হয়।



আবার কেউ যদি এসবের সাথে ১৪টি এইট থাউজেন্ডারে পা রাখেন তবে সেটি কে বলা হয় ট্রু এক্সেপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম। অবশ্য অনেক সময় এসবের সাথে পৃথিবীর চৌম্বক উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অভিযানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।



অর্থাৎ ট্রু এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম হচ্ছে সেভেন সামিট, ১৪ টি এইট থাউজেন্ডার, পৃথিবীর ভৌগলিক উত্তর ও দক্ষিণ মেরু এবং চৌম্বক উত্তর ও দক্ষিণ মেরু জয়। ডেভিড হেম্পলম্যান-এ্যাডাম ১৯৯৮ সালে প্রথম ট্রু গ্র্যান্ড স্ল্যাম সম্পন্ন করেন।



মাউন্ট এভারেস্টে মৃত্যুর মিছিল:

এ পর্যন্ত ২৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে। এভালাঞ্চ বা তুষারধ্বস, পাথরস্রোত, তুষারঝড়, উচ্চতাজনিত অসুস্থতা, হিমাংকের নিচের তাপমাত্রা, ক্লান্তি এসবই মৃত্যুর প্রধান কারণ। এই সবগুলো পরিস্থিতির সম্মিলনে এক ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। বিশেষ করে ২৬ হাজার ফুটের ওপরের উচ্চতার এলাকা ডেথ জোন হিসেবে পরিচিত। সেখান থেকে মৃত্যদেহ নিচে নামিয়ে আনা কেবল কষ্টসাধ্যই নয় অত্যন্ত বিপদজনক। অধিকাংশ মৃতদেহ সেখানেই থেকে যায়। প্রচন্ড ঠান্ডায় তুষারের ভেতর মৃতদেহগুলো প্রায় অবিকৃত থাকে। পর্বতারোহীদের জন্য এগুলো অনেকটা পথনির্দেশকের মত কাজ করে।



এভারেস্টের ইতিহাসে ভায়বহ দিনটি আসে ১৯৯৬ সালের মে মাসে। একদিনেই আটজন পর্বতারোহী মারা যায়। এ মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত আছে, গত বছর মারা গিয়েছে ১০ জন আর এ বছর মারা গিয়েছে ৮ জন। কিন্তু পর্বতারোহীরা দমতে রাজি নন। পৃথিবীর উচ্চতমশৃঙ্গটি জয় করতে হাজার হাজার ডলার খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন।



মাউন্ট এভারেস্ট জয় আগের তুলনায় কিছুটা সহজ হলেও, এখনো এভারেস্ট অভিযান অত্যন্ত কঠিন ও বিপদসংকুল। প্রতিকূল আবহাওয়া ও অসাবধানতাবশত মারা যান অনেকে। মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের একেবারে শুরুর দিকে একসাথে ৭ জন শেরপা মারা গিয়েছিলেন। এছাড়া প্রথম এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে আরভিন-ম্যালোরিও মারা গিয়েছেন। এভাবে প্রতি বছরই কেউ না কেউ মারা যায়। এই তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। ২০১৩ সালের ২১ মে এভারেস্ট জয় করে নিচে নেমে আসার সময় দূর্ঘটানায় নিহত হন বাংলাদেশী পর্বতারোহী মোহাম্মদ খালেদ হোসেন।



এভারেস্ট জয়ের শুরুর কথা

প্রথম মহাযুদ্ধের পরপরই শুরু হয় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই শৃঙ্গ জয়ের প্রতিযোগিতা। শুরুর দিকে ভারত ও তিব্বত সরকার এভারেস্টে আরোহণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সরকারই এভারেস্টে আরোহণের বিষয়ে একমত হয়। সকল প্রতিকূলতা শেষে রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অর্থায়নে গঠিত এভারেস্ট কমিটির অধীনে ১৯২১ সালে কর্নেল সিকে হাওয়ার্ড বেরী প্রথম অভিযান শুরু করেন। দলে ছিলেন জর্জ ম্যালোরি এবং অন্যান্যরা। মুলত এটা ছিল এভারেস্টের ম্যাপিং আর রেকি অভিযান। দীর্ঘ ৫ মাস ধরে এভারেস্টে ওঠার সম্ভাব্য পথ খুঁজতে থাকেন তারা। এই দলের দুঃসাহসী এক সদস্য ম্যালরি তার অপর দুই সঙ্গীকে নিয়ে ৭,১০৪ মিটার (১৯,১০০ ফুট) উঁচুতে এভারেস্টের শীর্ষ চূড়ায় যাওয়ার একটি নিরাপদ রাস্তা খুঁজে পান। কিন্তু চূড়ায় ওঠার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।



এর পরের বছর ১৯২২ সালে দলনায়ক জেনারেল ব্রুস এর অধীনে আবার নতুন করে অভিযানে নামেন ম্যালরিরা। এভারেস্টের ইতিহাসে এটাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ অভিযান। আগেরবারের ঠিক করা পথে ম্যালোরির দল ২৬,৮০০ ফুট পর্যন্ত উঠে যান। অন্য পর্বতারোহী জেফ্রি ব্রুস আর জর্জ ফিঞ্চ ইতিহাসে প্রথমবারের মত অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, তারা ২৭,৩০০ ফুট পর্যন্ত ওঠেন এবং ইতিহাসের প্রথম হাই ক্যাম্প স্থাপন করেন। তাদের সাথে যোগ দেয় আরও ১৩ জন ইংরেজ পর্বত আরোহী ও ৬০ জন শেরপা। কিন্তু হঠাৎই ৬ জুন রাতে সংঘঠিত এক তুষার ঝড়ে ৭ জন শেরপা হারিয়ে যায়। তাদের মধ্যে থেকে ৩ জনকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়। এভারেস্ট ইতিহাসে প্রথম মারা যাওয়ার ঘটনা এটাই। এবারের অভিযানটিও ব্যর্থ হয়।



১৯২৪: আবার শুরু হল অভিযান

১৯২৪ সালে আবার নতুন করে শুরু হয় এভারেস্ট জয়ের অভিযান। এবারও দলনায়ক ছিলেন জেনারেল ব্রুস। দার্জিলিং যাওয়ার পর জেনারেল ব্রুস ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দল থেকে বাদ পড়েন। তখন ম্যালোরিকে দলনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দলে ছিলেন আগেরবার অক্সিজেন ব্যাবহারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দেয়া জেফ্রি ব্রুস, হাওয়ার্ড সামারভেল, জর্জ নোয়েল। নতুন মুখ আলোচিত আরভিন এবং আরভিনের বন্ধু মাউন্টেনিয়ার নোয়েলও’ডেল।



১৯২৪ সালের ৮ জুন ম্যালোরিরা ২৬,৯০০ ফুট উঁচুতে ৬নং ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। সেদিন অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ক্যামেরা সাথে নিয়ে এভারেস্ট জয়ের জন্য বের হন ম্যালোরি ও অরভিন। ৮ জুন দুপুর ১২ টার পর তাদের আর দেখা যায়নি। তাদের কাছে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিল। দুজনেই সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী সুস্থ ছিলেন। সামিটে ব্যার্থ হবার সম্ভবনা খুব কমছিল।আরভিন-ম্যালোরির রহস্যময় অন্তর্ধানের মধ্য দিয়ে ৩য় এভারেস্ট অভিযান ব্যর্থ হয়।



অবশেষে এভারেস্টে পদার্পণ

এরপর এক দশক এভারেস্ট অভিযান বন্ধ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে ৪র্থ অভিযান শুরু করেন কানাডীয় একটি দল। এরপর ১৯৫০ সালে আমেরিকান ও ব্রিটিশরা যৌথভাবে শুরু করেন এভারেস্ট অভিযান। ১৯৫১ সালে এরিক শিপ্টন নতুন এক পথ আবিষ্কার করে নামেন এভারেস্ট জয়ে। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হয় অভিযান। অবশেষে ১৯৫৩ সালে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তাদের সাথে যোগ দেন আরেকদল অভিযাত্রী। তাদের মধ্যে ছিলেন কর্ণেল জনহান্ট, এডমন্ড হিলারী, নেপালী তেনজিং নোরগে সহ আরও অনেকে। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে সকাল ১১ টায় নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারী তার ২য় প্রচেষ্টায় এবং নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে তার ৭ম প্রচেষ্টায় ইতিহাসে প্রথমবারের মত এভারেস্ট জয় করেন এবং স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসেন।



তেনজিং-হিলারী জুটিই কি প্রথম এভারেস্ট জয় করেছেন?

সবাই জানেন হিলারী-তেনজিং জুটি সর্বপ্রথম এভারেস্ট এর চূড়ায় আরোহন করেন। ধারণা করা হয় হিলারী এবং তেনজিং এর আগে হয়ত এভারেস্ট চূড়ায় পা রাখেন অরভিন-ম্যালোরি জুটি। ১৯২৪ সালে অরভিন-ম্যালোরি প্রথম এভারেস্ট জয় করেন। কিন্তু সেই সাফল্য দাবি করার জন্যে জীবিত ফিরতে পারেন নি দু'জনের কেউই।



১৯৯৮ সালে একদল অভিযাত্রী মৃত অরভিনের লাশ খুঁজে পায় প্রায় অক্ষত অবস্থায়। তার পরনে ছিল সাতটি কাপড়। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, অরভিনের দেহে তেমন কোন ক্ষত চিহ্নছিল না। প্রচন্ড ঠান্ডায় প্রায় অবিকৃত ছিল তার দেহ। তবে কিভাবে তারা হারিয়ে গিয়েছিলেন? এর সঠিক উত্তর অরভিনের হারানো ক্যামেরাই দিতে পারবে। তবে সেটা উদ্ধার করা যায় নি।



মারা যাওয়ার ৭৫ বছর পর ম্যালোরির মৃতদেহ সমতলে ফিরিয়ে আনা হয়। ম্যালোরির কোমড়ে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তা থেকে ধারণা করা হয় অরভিনের সাথে দড়ি বেঁধে উপরে ওঠার সময় এই ক্ষত হয় এবং ২য় ধাপ বা ১ম ধাপ থেকে পরে গিয়ে তারা মারা যান।



এভারেস্ট চূড়ায় বাংলাদেশী:

বাংলাদেশীদের মধ্যে মূসা ইব্রাহীম, মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত, নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন এবং মোহাম্মদ খালেদ হোসেন এভারেস্ট চূড়ায় উঠেছেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ খালেদ হোসেন এভারেস্ট জয় করে নিচে নামার পথে অজানা কারণে মারা যান। আর মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট বিজয় নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়ায় কে প্রথম এভারেস্ট জয় করেছেন তার মীমাংসা এখনো হয় নি।



গ্রীণ বুট

এভারেস্ট ওঠার উত্তর-পূর্ব দিকের পথটিতে পড়ে থাকা একটি মৃতদেহ গ্রীণ বুট নামে পরিচিত, যা অনেকটা পথনির্দেশকে পরিণত হয়েছে পর্বতারোহীদের জন্য। মৃতদেহটির পায়ে এখন পর্যন্ত সবুজ বুট রয়েছে। উত্তর দিক থেকে যারা চূড়ায় ওঠেন তাদের সাবইকেই এ পথে যেতে হয়।



২৭,৮৯০ ফুট উচ্চতায় পাথুরে গুহার সামনে বেঁকে যাওয়া এই মৃতদেহটি পড়ে আছে। এই মৃতদেহটি একজন ভারতীয় পর্বতারোহীর যিনি সবুজ বুট পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।



ডেভিড শার্প

ডেভিড শার্প একজন বৃটিশ পর্বতারোহী যিনি কোন গাইড ছাড়াই এককভাবে এভারেস্ট জয় করে নেমে আসার পথে মারা যান। ২০০৬ সালে তার মৃত্যু ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়।



গ্রীণ বুটের কাছেই একটি পাথরের ওপর তিনি বিশ্রামের জন্য বসেন। মনে করা হয় তিনি এভারেস্টে পা রেখে নিচে নামছিলেন। প্রচন্ড ঠান্ডা এবং অক্সিজেন স্বল্পতায় এভাবেই তিনি মারা যান। সেটি ছিল বছরের অন্যতম শীতল রাত। ডেভিড শার্প মারা যান ২০০৬ সালের ১৫ মে আর ২৩ মে নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী মার্ক ইংলিস এক সাক্ষাতকারে জানান ৪০ জন পর্বতারোহী ওপরে ওঠার সময় ডেভিড শার্পকে পাথরের ওপর নিশ্চল বসে থাকতে দেখেছেন, কিন্তু তাকে বাঁচানোর কোন চেষ্টা করেন নি।



আবার ডেভিড শার্পকে দেখে কেউ কেউ ভেবেছেন এটিই সেই গ্রীণ বুট যা তাদের দেখার কথা।



নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী মার্ক ইংলিসের দলটি রাত একটার দিকে ওপরে উঠছিল। রাতের বেলা উদ্ধারাভিযান চালানোয় বিপদের বিষয়টি মাথায় রেখে তারা ওপরের দিকে উঠতে থাকেন। ডেভিড শার্পকে অন্যরাও একরকম সাহায্য না করেই ওপরে উঠে যান।



এভারেস্ট গাইড জেমি জানান, নয় ঘন্টা পর নামার সময়ও তারা শার্পকে একই অবস্থায় দেখতে পান। তারা অক্সিজেন দেয়া সহ বিভিন্নভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে শার্পের দুই পা এবং হাতে ফ্রস্টবাইট হয়ে গেছে। প্রায় এক ঘন্টার ব্যর্থ চেষ্টার পর তারা শার্পকে রেখেই নিচে চলে আসতে বাধ্য হন।



ডেভিড শার্পের সাথে কোন গাইড ছিল না, এমনকি কোন বেতার যন্ত্রও তিনি নেন নি। কারণ বেতারে 'এশিয়ান ট্রেকিং' এর সাথে যোগাযোগ করেও কোন লাভ ছিল না। সে সময় কোন উদ্ধার অভিযান চালানোর ব্যবস্থা 'এশিয়ান ট্রেকিং' এর ছিল না।



এভারেস্ট জয়ে অদ্ভুত প্রচেষ্টা: মরিস উইলসনের বিমান অভিযান

পর্বতারোহণ বা বিমান চালনার কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই মরিস উইলসন নামে এক পাগলাটে ইংরেজ এভারেস্টে ওঠার উদ্যোগ নেন। তিনি প্রপেলার চালিত হালকা একটি বিমান চালিয়ে এভারেস্টের উত্তর দিকে অর্থাৎ তিব্বত অংশে শীর্ষের কাছাকাছি গিয়ে বিমানটি আছড়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন। বাকি সামান্য অংশটুকু অবশ্য পর্বতারোহীদের কায়দাতেই ওঠার পরিকল্পনা ছিল তার। পর্বতারোহণের জন্য বৃটেনে পাঁচ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নেন তিনি।



শীতের মধ্যে দুই সপ্তাহ দার্জিলিং-এ বসে তিনি চূড়ান্ত অভিযানের পরিকল্পনা করেন। ১৯৩৪ সালের মে মাসে পর্বতারোহণের কোন সরঞ্জাম ছাড়াই তিনি রঙবাক হিমবাহের দিকে অগ্রসর হন। প্রতিকূল পরিবেশে তার সাথে নিচের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মে মাসের ২২ তারিখে তিনি একটি প্রচেষ্টা চালান কিন্তু বরফের বাধা অতিক্রম করা তার পক্ষে সম্ভব হয় নি। তার ডায়েরীতে শেষ কথাটি লেখা হয়েছিল ৩১ তারিখে, “আরেকটি সুন্দর দিন চলে গেল”। ১৯৩৫ সালে তার নিজের বিধ্বস্ত তাঁবুর মাঝেই তার মৃতদেহটি পাওয়া যায়।



তিনি নারী পোশাক পরতেন এটা জানার পর তার কাহিনী নতুন মাত্রা পায়। মনে করা হয় ওরকম প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার মত উপযুক্ত পোশাক তিনি সাথে নেন নি। আগে তিনি নিউজিল্যান্ডে নারীদের পোশাকের দোকানে কাজ করতেন। তার মৃত্যুর সময় তার পরনে থাকা পোশাক এবং অন্তর্বাসও নারীদের বলে মনে হয়। এ ধারণাটি জোরালো হয় ১৯৬০ সালে যখন চীনারা ২১ হাজার ফুট উচ্চতায় নারীদের ব্যবহার্য ফ্যাশনেবল জুতা আবিষ্কার করে।



শেরপা কারা?

এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া থেকে এই পাহাড়ের সব রহস্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন এই শেরপারাই। এরা কেউবা‘গাইড’ কিংবা ‘মালবাহক’ হিসেবে ওঠেন পর্বতে। দুর্গম তুষারময় পর্বতে উঠতে গিয়ে কেউ কেউ পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারা যায় কখনো। নামচে হচ্ছে শেরপা রাজধানী। এটি তিন হাজার ৪৪৬ মিটার উচ্চতায় নেপাল হয়ে এভারেস্ট বেইস ক্যাম্পে যাওয়ার পথে একটি বসতি। শেরপাদের আদিবাস তিব্বতে। ১৬ শতাব্দীর শুরুর দিকে তারা নেপালের হিমালয় অংশে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। একজন পর্বতারোহী এভারেস্টে উঠতে খরচ করেন ৬০ হাজার ডলার আর সেই কাজের জন্য শেরপা পান মাত্র দুই হাজার ডলার। এটাই তাদের পেশা। বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে মিশতে মিশতে তারা প্রত্যেকেইএকাধিক ভাষা শিখে ফেলেন।



নেপাল সরকারের তত্ত্বাবধান:

পর্বতআরোহীদের জন্য নেপালে সরকারীপৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করছে‘হিমালয়ান গাইডস’। তাদের তত্ত্বাবধানে কার্যকর ভূমিকা রাখছে বিভিন্ন বেস ক্যাম্প, স্যাটেলাইট ফোনও ওয়্যারলেস। ৫৩ সনের হিলারী-তেনজিং আমলের দুর্গম সব গিরি-পথে এখন এলুমিনিয়ামর তৈরি নিরাপদ সিঁড়ি বসানো হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ক্যাম্পে ক্যাম্পে চিকিৎসা সরঞ্জাম, টেলিযোগাযোগ, অক্সিজেন, খাদ্য, নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র ইত্যাদি সহায়তা নিয়ে বসে রয়েছে ‘বাণিজ্যিক’বেসক্যাম্পগুলো।



এভারেস্ট জয়ের যত রেকর্ড:



এভারেস্টে প্রথম এভারেস্টের চূড়ায় প্রথম উঠেন স্যার এডমন্ড হিলারিএবং তেনজিং নোরগে, ১৯৫৩ সালের ২৯মে।

প্রথম নারী ১৯৭৫ সালের ১৬মে প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছার কৃতিত্ব দেখান জাপানের জুনকোতাবেই।

অক্সিজেন ছাড়া লিডিয়া ব্র্যাডি। তিনি এভারেস্ট জয় করেন ১৯৮৮সালের১৪ অক্টোবর।

১৯৭৮ সালের ৮মে এভারেস্ট জয় করেন অস্ট্রিয়ার পিটার হেবেলারএবং ইতালির রেইন হোল্ড মেসনার।এ অভিযান টি অনন্য, কারণ তাঁরাই প্রথম অক্সিজেন ছাড়া চূড়ায় আরোহণ করেন।

সহযোগিতা ছাড়া ইতালির রেইন হোল্ড মেসনার প্রথম অভিযাত্রী যিনি একা এভারেস্ট জয় করেন, ১৯৮০ সালের ২০ আগস্ট।

শীতকালে প্রথম শীতকালে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন পোল্যান্ডের এলসিচি এবং কেওয়েলিকি ১৯৮০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি।

প্রথম জয়ী দম্পতি ১৯৯০ সালের ৭ অক্টোবর এভারেস্ট জয় করেন এক দম্পতি। স্লোভেনিয়ার এই স্বামী-স্ত্রীর নাম আন্দ্রেজ এবং মারিয়া স্ট্রেমফেলজ।

প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জয় ২০০১ সালের ২৫ মে প্রথম অন্ধ ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন যুক্তরাষ্ট্রের এরিক ভিয়েনমায়ার।

দুই ভাই ১৯৯২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রথম সহোদর হিসেবে এভারেস্ট জয় করলেন আলবার্তোও ফেলিক্স ইনুরাতে গুই।

বাবা-ছেলে ১৯৯০ সালে প্রথম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন জ্যনোয়েলরোচে এবং তাঁর ছেলে রোচে বারত্রা ওরফে জেবুলন।

১৭ বছরের বারত্রা ছিলেন তখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সী এভারেস্ট জয়ী।

খোঁড়া হয়েও চূড়া জয় ১৯৯৮ সালে বিশ্ব্ববাসী কে চমকে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রে রটমাসহু ইটাকের। একটা কৃত্রিম পা নিয়ে ও দুর্গম এভারেস্টকে পরাভূত করেন তিনি।

প্রথম দুবার প্রথম দুবার এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার কৃতিত্ব নেপালের নওয়াং গোম্বুর।

সবচেয়ে দ্রুত এভারেস্ট জয় সবচেয়ে দ্রুত এভারেস্টে ওঠার রেকর্ড অস্ট্রিয়ান ক্রিস্টিয়ান স্টেনগালের। বেইস ক্যাম্প থেকে চূড়ায় পৌছাতে তিনি সময় নেন মাত্র ১৬ ঘণ্টা ৪২ মিনিট। ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালে।

সবচেয়ে দ্রুত নেমে আসা সবচেয়ে দ্রুত চূড়া থেকে নেমে আসার রেকর্ডটি ফ্রান্সের জ্যঁ-মার্কবোয়াভিনের। তিনি প্যারাগ্লাইডিং করে মাত্র ১১ মিনিটে নেমে আসেন বেস ক্যাম্পে।

বাঙালির প্রথম এভারেস্ট জয় বাঙালি হিসাবে প্রথম এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন দেবাশীষ বিশ্বাস ও বসন্তসিংহ রায়। দেবাশীষের বাড়ি পশ্চিম বঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় আরব সন্ত সিংহের বাড়ি নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে।

সবচেয়ে বেশি বার এভারেস্টের চূড়ায় কোনোমতে একবার পৌঁছাটাই বেশির ভাগ মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো। সেখানে নেপালের আপাশের পার কাণ্ড শুনলে চোখ কপালে উঠবে। এপর্যন্ত ২৩বার এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন তিনি।

সবচেয়ে বেশি সময় এভারেস্ট চূড়ায় সবচেয়ে বেশি সময় মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে অবস্থানের রেকর্ড নেপালের বাবুচিরি শেরপার। ১৯৯৯ সালে অক্সিজেন ছাড়া ২১ ঘণ্টার বেশি চূড়ায় থাকেন তিনি।শুধুতাই নয়, চমৎকার একটা ঘুমও দিয়ে দেন সেখানে।

সবচেয়ে বেশি বয়সে এভারেস্ট জয় সবচেয়ে বেশি বয়সে এভারেস্ট জয় করেন বাহাদুরশেরচান। ২০০৮সালে ২৫মে এভারেস্ট জয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৭৬ বছর।

সবচেয়ে কম বয়সে জয় ঘটনাটা ঘটান আমেরিকান এক কিশোর। জর্ডান রোমেরা নামের এই কিশোরের বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখন ইসে এইবিজয়ছিনিয়েআনে।

সবচেয়ে বড় অভিযাত্রী দল এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অভিযাত্রী দল এভারেস্ট জয়ে গেছে চীন থেকে। ১৯৭৫ সালে ৪১০ জনের একটি অভিযাত্রী দল ওই অভিযানে অংশ নেয়।



দূর্গম এভারেস্ট জয়

১৯৫৩ সালের পর বিশ্বের সর্বোচ্চ এই চূড়াটি দীর্ঘদিন মানুষের কাছে রহস্য হিসেবেই ছিল। সে সময় মাউন্ট এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া জয় করা অনেকটা দুঃসাধ্যই ছিল। এখন এভারেস্ট নিশ্চয়ই তুলনামূলকভাব কম দুঃসাধ্য। তব তারপরও এভারস্টে নিশ্চয়ই একটি র্দূগম গন্তব্য।



এভারেস্ট এখন আর আগের মত নির্জন কোনো জায়গা নয়। মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে এলাকাটি। ২০০৭ সালে সর্বোচ্চ ৬৩০ জন আরোহী এভারেস্ট চূড়া জয় করেন। জয়ীদের তালিকায় কেবল পুরুষই নয়, রয়েছেন নারী, শিশু, বৃদ্ধও প্রতিবন্ধীরাও। 'হিলারী ও নরগে যখন এভারেস্টে যান, তখন তাঁরা সম্পূর্ণ অচেনা এক জগতের খোঁজে ছিলেন। এখন কিন্তু বিষয়টি আর তেমন নেই। এমনকি আরোহীদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ভাবে দড়ি ও মই লাগানো রয়েছে। এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণের মানচিত্র এখন মুখস্থ। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) আরোহীদের হাতে হাতে। তাছাড়া পথপ্রদর্শক ও দেহরক্ষী হিসেবে সার্বক্ষণিক শেরপা তো রয়েছেই। রয়েছে আধুনিক সরঞ্জাম।



উন্নত প্রযুক্তির পোশাক ও সরঞ্জাম পর্বতারোহণের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় ভালো হাতমোজা, জুতা ও পোশাক বড় ব্যবধান গড়ে দেয়। এসব বিশেষায়িত কাপড় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও আরোহীদের উষ্ণ রাখে। তাছাড়া কৃত্রিম অক্সিজেনের ব্যবস্থাও এখন অনেক আধুনিক হয়েছে। রয়েছে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত আধুনিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস। এসব দূর্গম এভারেস্টে আগরে চেয়ে বেশি মানুষ যেতে পারছে।



এভারেস্টে জয়ে

মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করতে চাইলে নেপাল পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। তিব্বত অংশ থেকে যাত্রা করে এভারেস্ট জয়ের সফলতার হার নেপালের তুলনায় বেশি। নেপাল বা তিব্বত থেকে এভারেস্টে আরোহণের অনুমতি সংগ্রহ করতেই মাথাপিছু ফি দিতে হয় ১০ হাজার ডলার। এছাড়া আরোহণের অন্যান্য ব্যয় তো আছেই। প্যাকেজ ট্যুরের উপর ভিত্তি করে এই খরচ মোটামুটি ৪০,০০০ - ৮০,০০০ ডলারের মত হয়।



এভারেস্টের অবস্থান

নেপাল এবং চীনের স্বায়ত্তশাসিত এলাকা তিব্বত সীমান্তে তিব্বত মালভূমি প্রান্তে মাউন্ট এভারেস্ট এর অবস্থান। নেপাল এবং তিব্বত দু’দিক থেকেই এভারেস্ট চূড়ায় ওঠা যায়। হিমালয় এলাকায় জরিপ কাজ ছিল সবচেয়ে কঠিন। হিমালয়ের জরিপকাজে বৃটিশদের পাশাপাশি কয়েক হাজার ভারতীয় অংশ নেয়। অসংখ্য মানুষ মারা যায়। ম্যালেরিয়া এবং বাঘের আক্রমণই ছিল বড় কারণ।



রাধানাথ শিকদারের আবিষ্কার কাহিনী

১৮৫২ সালের একদিন, ৩৯ বছর বয়সী কাজপাগল এর জরিপকারী অফিসে ঢুকে উচ্ছাসের সঙ্গে তার বড়কর্তাকে জানালেন, আমি পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াটি আবিষ্কার করেছি। এভাবেই সেদিন তাক লাগানো তথ্যটি তিনি দিয়েছিলেন। চার বছর ধরে গাণিতিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে ১৫ নম্বর চূড়াটির উচ্চতা নির্ণয়ে সমর্থ হন তিনি। ১৫ নম্বর চূড়াটিই ছিল তখনকার এভারেস্ট।



রাধানাথ শিকদার ছিলেন বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান, হিন্দু কলেজে গণিতে পড়াশোনা করেন, ইংরেজিতেও মোটামুট দক্ষতা ছিল। কাজের জন্য যে কোন কষ্ট শিকারে প্রস্তুত ছিলেন তিনি। গণিতের জন্যই যেন জীবন উৎসর্গ করে চিরকুমার থেকে যান। তিনি ছিলেন বিরল প্রতিভার অধিকারী। গাণিতিক তথ্য বিশ্লেষণে দক্ষতার জন্য তিনি পরিচিতি পান ‘কম্পিউটার’ হিসেবে। আর পরে পদোন্নতি পেয়ে হন ‘চিফ কম্পিউটার’। তাঁর প্রধান ভূমিকা ছিল পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে আলোর প্রতিসরণ বা বেঁকে যাওয়া বিশ্লেষণে।



নামকরণ

১৮৫৬ সাল পর্যন্ত এভারেস্ট পরিচিত ছিল ১৫ নং চূড়া (Peak XV)হিসেবে। নেপালে এটি পরিচিত স্বর্গমাতা নামে আর তিব্বতে এটি পরিচত চোমোলুংমা নামে। শুধু তাই নয় দার্জিলংসহ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল এভারেস্ট। বৃটিশরা চেয়েছিল স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নামটি গ্রহণ করতে। কিন্তু চূড়াটি বিভিন্ন নামে পরিচিত থাকায় তা সম্ভব হয় নি। এ অবস্থায় বৃটিশ ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল এনড্রু ওয়াহ তার পূর্বসূরী জর্জ এভারেস্টের নামে নামকরণের প্রস্তাব করেন। জর্জ এভারেস্ট অবশ্য এর বিরোধিতা করেছিলেন, তিনি বলেন হিন্দীভাষী ভারতীয়দের পক্ষ উচ্চারণটি কঠিন হবে। কিন্তু রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি শেষ পর্যন্ত এ নামটিই গ্রহণ করে।



অবশ্য এমনও শোনা যায় চূড়াটির উচ্চতা যে নির্ণয়ে সক্ষম হবে তার নামানুসারেই এর নামকরণ হবে এমন সিদ্ধান্ত ছিল। সে হিসেবে বাঙালি জরিপকারী রাধানাথ শিকদারের নামানুসারে নামকরণ হওয়ার কথা, কিন্তু তা হয় নি।





তিব্বত প্রান্ত থেকে এভারেস্টে আরোহণ

এভারেস্ট ওঠার উভয় রুটেরই কিছু সুবিধা-অসুবিধা আছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত উত্তরের প্রতিটিই ঝোঁক ছিল পর্বতারোহীদের। কারণ সে দিকে খরচ কম। কিন্তু চীনারা কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করার পর, দক্ষিণের রুটটির দিকে ঝুকেঁছেন পর্বতারোহীরা। পর্বতারোহীদের জন্য নেপালের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চালু করা সেবাও এর একটি কারণ।



উত্তর দিকের তিব্বত অংশ থেকে এভারেস্ট আরোহণ-

পূর্ব রঙবাক হিমবাহ মাউন্ট এভারেস্ট এবং চ্যাংস্টি চূড়াকে যুক্ত করেছে, এ পথটি নর্থ কোল নামে পরিচিত। উত্তর দিক থেকে এভারেস্টে আরোহণের সময় এখানেই প্রথম ক্যাম্পটির অবস্থান। এরপর কয়েকটি ক্যাম্প পেরিয়ে তারা চূড়ায় পা রাখেন।



বেস ক্যাম্প থেকে এডভান্সড বেস ক্যাম্প-

বেস ক্যাম্পের অবস্থান ৫,৬৬৬ মিটার উচ্চতায়। এখান থেকে পর্বতারোহীগণ যান এডভান্সড বেস ক্যাম্পের দিকে। এডভান্সড বেস ক্যাম্পটি রঙবাক হিমবাহের উত্তর পশ্চিম দিকে অবস্থিত। সেটি প্রায় ২২ কি.মি. দূরে এবং উচ্চতা ৬,৪০০ মিটার। এই ক্যাম্পে যাওয়ার পাথুরে ও বরফাচ্ছাদিত পথটি বেশ দূর্গম।



বেস ক্যাম্প থেকে এডভান্সড বেস ক্যাম্পে পৌঁছাতে সাধারণত ২ দিন লাগে। তবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ১ দিনেই যাওয়া সম্ভব। উত্তর পশ্চিম দিকে এটিই অধিক উচ্চতার প্রধান ক্যাম্প। ওপরের বেস ক্যাম্পগুলো ব্যবহৃত হয় প্রস্তুতি ও বিশ্রামের জন্য।



অ্যাডভান্সড বেস ক্যাম্প থেকে থেকে নর্থ কল (ক্যাম্প-১)

নর্থ কলের উচ্চতা ৭,০০০ মিটার বা ২৩,০০০ ফুট, অ্যাডভান্সড বেস ক্যাম্প থেকে প্রায় ২,২০০ ফুট উঠতে হয় এখানে পৌছাতে। এখানেই স্পাইক ওয়ালা বুটের ব্যবহার শুরু করেন পর্বতারোহীরা। এ পর্যায়ে ক্রমাগত অধিক উচ্চতায় উঠতে হয় তাদের। একটি জায়গায় প্রায় ৬০ ডিগ্রি কোণে দড়ি বেয়ে উঠতে হয়। নামার সময় র্যাপেলিং কৌশল ব্যবহার করেন। হিমাবাহের মাঝে কিছু কিছু জায়গায় গভীর খাদ আছে যা পেরোতে মইও ব্যবহৃত হয়।



আবহওয়া অনুকূলে থাকলে এবং পর্বতারোহীরা এ পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারলে দ্রুত উঠতে পারেন, মোটামুটিভাবে ৪ থেকে ৭ ঘন্টা লাগে। অ্যাডভান্সড বেস ক্যাম্প থেকে নর্থ কলে যেতে।



নর্থ কল বা ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প ২

উচ্চতা ২৫,৬০০ ফুট, অনেক অভিযাত্রী এখানে না থেমে সোজা উপরে ৮,৩০০ মিটার উচ্চতায় উঠে যান। প্রায় ৮০০০ মি. উচ্চতায় আরোহীরা অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমেই ঘুমিয়ে নেন।

৩ থেকে ৫ ঘন্টা লাগে এখানে পৌঁছাতে। অনেক পর্বতারোহী ভবিষ্যৎ অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে হিমালয়ের পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেবার উদ্দেশ্যে এখানে আসেন।

ক্যাম্প ২ থেকে ক্যাম্প ৩

উচ্চতা ২৫,৬০০ ফুট, অনেক অভিযাত্রী এখানে না থেমে সোজা উপরে ৮,৩০০ মিটার উচ্চতায় উঠে যান। প্রায় ৮,০০০ মি. উচ্চতায় আরোহীরা অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমেই ঘুমিয়ে নেন।

এখানে ওঠার পথে প্রচন্ড বায়ু প্রবাহের মুখে পড়তে হয় অভিযাত্রীদের।

এভারেস্টর কারণে উত্তর দিকে বায়ু প্রবাহ বাধাপাপ্ত হয়। এ কারণে এখানে ঘুমানো কিছুটা সহজ। ৩ থেকে ৬ ঘন্টা লাগে। এখানকার আবহাওয়া এবং উচ্চতা সাউথ কলের মত।





ক্যাম্প ৩ থেকে ক্যাম্প ৪

উচ্চতা ২৭,৩৯০, এখানে সবচেয়ে কম সময় কাটান অভিযাত্রীরা। এখান থেকে খাবার ও পানি সংগ্রহের পাশাপাশি ছোট্ট একটা ঘুম দিয়ে রাত দশটার দিকে যাত্রা শুরু করেন তারা।



এখানে একটি দড়ি রাখা হয়েছে, যেটি অনুসরণ করে বরফপূর্ণ একটি খাদ অতিক্রম করেন নর্থইস্ট রিজ এর কয়েকশ ফুট উপরে ওঠেন।



ক্যাম্প ৪ থেকে সামিট

নর্থইস্ট রিজ হচ্ছে এভারেস্টের সবচেয়ে কঠিন পর্যায়। পাহাড়ে ওঠার তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এরপর বরফাচ্ছাদিত পথ পেরিয়ে শীর্ষে পৌছাতে হয়।



এখানেও পাথুরে পথ পেরিয়ে ওপরের দিকে এগোতে হয়, সূর্য রশ্মি এখানে প্রায় সরাসরি এসে পরে। এখান থেকে ক্যাম্প ৩ তে নামতে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা লেগে যায়।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৫০

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: +++++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.