![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার নাম রুবেল। পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির খুব সাধারণ একজন মানুষ। স্বল্পভাষী, মিশুক, আর পরস্বার্থে কাজ করতে ভাল লাগে। চশমা ব্যবহার করি। বিশ্বাস প্রবণ আবেগী একটা মানুষ। বাবা তারা মিয়া, মা মারা গেছে অনেক আগে। বাড়ি টাংগাইল। মাস্টার্স করেছি ইংরেজীতে , তবু বাংলা আমার শিকড়। ভূলিনা।
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আরিফ। ছল ছলে চোখ। চোখে মুখে হতাশার ছাপ। পাশের বেডেই আমার আত্বীয় এডমিটেড। ঢাকায় থাকার দরুন আমিই মাঝে মাঝে যেতাম। সেখান থেকেই আরিফের সাথে আমার পরিচয়। কুশল বিনীময় হওয়ার পর থেকেই মনটা ভাল নেই আমার। আমি সবার মতো অত বড় মাপের লেখক নই। গরীবকে নিয়ে কেউ ভাবেনা। কথাটি যেমন সত্য তেমন এদের ধারাবাহিক দুঃখটাও একটার পর একটা লেগেই থাকে। যেখানে আমি নিজেই একজন গরীব। পরিবারের বড় ছেলে আরিফ। ছোট ভাই শফিক আর তার মাকে নিয়ে তিন সদস্যর সংসার তার। তার বাবা করিম মিয়া রোড এক্সিডেন্ট মারা যাবার মা রাহেলা বেগম পড়ে যান অতল পাথারে। যার জন্য আরীফের জীবনে ঘটে যায় জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
আরিফ এস এস সি পাশ করার পর অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারনে আর পড়া লেখা করতে পারেনী। ঢাকার একটা অনলাইন বেজড কোম্পানীতে চাকুরী নেয় আরিফ। ডিউটির সময় রাত। ইংরেজীতে বলে নাইটি ডি্উটি। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও পরে সহ্য হয়ে যায়। বেতন যা পায় তাতে বাড়িতে টাকা পাঠানো, ঢাকা শহরের মতোই কঠিন।
নিলা ম্যাডাম হচ্ছে ঐ কোম্পানীর ম্যানেজার। তিনটি শিফটেই তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। মর্নিং, ডে এবং নাইট। আরিফের একটাই শিফট নাইট। গরীবের জন্য সব কিছুই সিঙ্গেল। দুঃখ বাদে। আর সবই সিঙ্গেল। এদের বেতন, ভাতাও খুব বেশি বাড়েনা। আরিফ টি-বয়। মাস শেষে আট হাজার টাকা বেতনে খাওয়া খরচায় মাস শেষে একবেলা না খেয়ে টেকে মাত্র চারহাজার টাকা। দুই হাজার টাকা মেস ভাড়া, আর বাকি খাওয়া দাওয়ার জন্য দুই হাজার।
একদিন বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছিল। নিলা ম্যাডাম খেয়াল করে। তার কাছে গিয়ে বলে।
- কি আরিফ এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কান্না করছো কেন? আরিফ চোখ মুছতে মুছতে বলল-
- কিছুনা ম্যাম। মায়ের শরীর টা ভালনা। মায় কল দিছিল । ওষুধ ফুরাইয়া গেছে। টাকা পাঠাইতে হইব।
- তোমার মায়ের কি সমস্যা আরিফ?
- মায়ের প্রেসারে সমস্যা।
- কত টাকা লাগবে। মানে ওষুধের টাকাটা যদি আমি দেই তোমার কোন আপত্তি আছে!
- না, না ম্যাম। আপনে দিবেন কেন? আমি ম্যানেজ কইরা ফালাবো।
নিলা ম্যাডাম আরিফের হাতে দুইহাজার টাকা দেয়। আরিফ নিরুপায় হয়ে টাকাটা নিতে বাধ্য হয়।
-শোন আরিফ, আমার ও মা নেই। ধর টাকাটা আমি আমার মাকেই দিচ্ছি। আমি ডেস্কে যাচ্ছি। মুখ ধুয়ে নাও, কেউ দেখলে সমস্যা হতে পারে । কাল সকালে টাকা পাঠিয়ে দিও। এখন একটু হাসো। এক কাপ চা দিয়ে যাও।
আরিফ মৃদ হাসে।
-ঠিক আছে ম্যাম।
নিলা আরিফের বিষয়টা নিয়ে ভাবছে।
একটা ষোল/সতের বয়সের ছেলে আট হাজার টাকায় চাকুরী করে তার পরিবারকে সাপোর্ট করে। ওর নিজেরইতো হিমশিম খেতে হয়।সেখানে বৃদ্ধা মাকে টাকা পাঠানো, ছোট ভাইকে পড়ালেখা করানো। কি করা যায়।
রাতের বেলায় প্রায় পয়ঁতাল্লিশ জন এমপ্লয়ি এই অফিসে চাকুরী করে। আরিফের কাজ সবাইকে চা বানিয়ে খাওয়ানো। ও যদি রাতের বেলায় তাদের কাছে ডিম বিক্রি করে তাহলে কেমন হয়। ও একটা এক্সট্রা সাপোর্ট পেল।
আরিফ চা নিয়ে নিলার কক্ষে ঢুকলো।
- এই যে আরিফ তুমি তিন মিনিট বসো।
আরিফ ইত্স্ত করছিল বসতে। ম্যামকে দেখে সবাই ভয় পায়। শ্রদ্ধার ভয়। সবাই ম্যামকে পছন্দ করে শুধু মাত্র ভাল একজন মানুষ হিসেবে নয়। ভাল উৎসাহদাত্রী হিসেবেও নিলা ম্যাম সবার কাছে প্রসংসনীয়। কোম্পানীর মালিক স্বয়ং তাকে মেয়ের মতোই ভালবাসে।
আরিফের ইতস্ত মনোভাব দেখে নিলা বলে
আমি তোমাকে বসতে বলেছিনা। আরে বসো।
আচ্ছা আরিফ, তোমার ডিউটি শুরু হয় কয়টা থেকে?
-ম্যাম, রাত ৯ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত।
- আর কিছু কর!
- না ম্যাম! সারা রাত কাজ করার পর সকাল বেলায় খুউব ক্লান্ত লাগে।বাসায় গিয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুমাই।
- আচ্ছা আরিফ, কাল থেকে রাতের বেলায় অফিসে তুমি সেদ্ধ ডিম বিক্রি করবে। পারবেনা!
- পারবো ম্যাম।
আরিফ নিলার প্রস্তাবে খুশি হয়। অফিসের অনেক এমপ্লয়ি আরিফকে এই বিষয়ে বলেছে। কিন্তু, কর্তপক্ষের গ্রীন সিগনাল ছাড়া কিভাবে সম্ভব। আরিফের মতো টি-বয়ের সাহসই বা কোথায় এ কথা তার সুপ্রিমকে বলার। প্রস্তাবে আরিফ খুশি হয়।
আরিফের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখে নিলাও মানসিক ভাবে তৃপ্তি লাভ করে।
(পরের দিন)
-ম্যাম আসসালামুলাইকুম।
- হম! ওয়ালাইকুম সালাম! কেমন আছ আরিফ!
- জি ম্যাম ভাল আছি।
- আজ চা না চাইতেই চা নিয়ে এলে। কয়টা বাজে। তোমাকে যা বলেছিলাম করা শুরু করেছ।
- জি ম্যাম, চুলায় সেদ্ধ হচ্ছে।
- আমাকেও দিও একটা।
- জি ম্যাম!
প্রতিদিন এভাবে ভালোই চলে আরিফের। ঢাকা শহরের প্রত্যেকটা অফিসেই পলিটিক্স চলে। একজন আরেকজনের পেছনে লাগবেই। কিছু কিছু এমপ্লয়ি আরিফের কাছ থেকে ডিম খেয়ে পয়সা দেয়না। জোড় করে কিছু বলতেও পারেনা আরিফ। নজীব নামে এক অফিসার আরিফকে মাস শেষে টাকা নিতে বলেন। সে বিষয়টি নিলা ম্যাডামকে জানালে। ম্যাডাম নজীব সাহেব কে ডেকে পাঠান। গল্পটি অন্য দিকে মোড় নিতে থাকে।
- ম্যাডাম আসবো।
- নজীব সাহেব আসুন। বসুন।
- কাজের কি অবস্থা।
- ভালো ম্যাম।
- কিছু মনে করবেন না। একটা বিষয় শেয়ার করতে চাচ্ছি।
-বলুন ম্যাম।
-বলছিলাম আরিফের মা খুব অসুস্থ। ও যা বেতন পায় তাতে ঢাকা শহরে ওর থাকাটা দারুন কষ্টের।
অফিসে ডিম বিক্রির বিষয়ে আমিই ওকে পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু, বেশ কয়েকজন ওর টাকাটা ঠিক মতো পে করছেনা। বিষয়টি কেমন বলুনতো!
-জী ম্যাম। একদম ঠিকনা। যারা করে তারা একটু ছোট লোক টাইপের। নিলা ম্যাডাম মৃদ হাসেন। তারপর বলেন-
- দেখুন তাদেরকে আমার হয়ে অনুরোধ করবেন যাতে এরকম না হয়। আর আপনি ও এরকম কোন কিছুতে জড়াবেন না।
- ঠিক আছে ম্যাম।
- আসুন।
নজীব সাহেব, ভিষন রাগ করলেন। আরিফকে ডেকে পাঠালেন।
-কি আরিফ, ম্যামকে কিছু বলেছিস।
- না, স্যার।
-ম্যাম আমাকে ডেকে নিয়ে বলল যে, তুই নাকি আমার কাছে টাকা পাবি।
- না স্যার।
-১০/২০ টাকার জন্য ছোট লোক হবিনা আরিফ।
-স্যার, ১০/২০ টাকার বাকী যারা মাস শেষে দিতে চায় তারা মনে হয় বড়লোক।
-বেয়াদবী করিস ক্যান। ভাগ এখান থেকে।
-দেখেন আমি আপনার চাকরী করিনা।
আরিফ রেগে চলে যায়। জীবনে প্রথম বার রেগে গেল আরিফ। ওদিকে নজীব সাহেব পাশের বাড়ান্দায় ঢুকে সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে আনমনে বলে চলল।
-শুয়ারের বাচ্চা, তোর ডীম তোর হুগায় যদি না ঢুকাইছি তবে আমি নজীব না।
(তারপরের দিন)
সিও স্যার দেশেরে বাইরে ছিলেন। স্যার এয়ারপোর্টে নেমেই নিলা ম্যামকে ফোন দিলেন।
- নিলা, কেমন আছো মা।
-স্যার, আসসালামুলাইকুম। কেমন আছেন স্যার।
- আমি ভাল আছি। কাজ কেমন চলছে।
-ভাল স্যার।
-একটা গুড নিউজ আছে।
- কি স্যার।
- আরো ৬টি কোম্পানীর কন্ট্রাক্ট হয়েছে। আমরা সামনে তাদের কাজ করবো।
- কংরাচুল্যাশন স্যার। আমি জানতাম আপনি সফল হবেন।
- সবই তোমাদের সহযোগীতা মা। আচ্ছা রাখি, কাল দেখা হবে। বাই।
(সিও স্যার যেদিন অফিসে)
নজীব সাহেব আজ একটু আগে ভাগেই অফিসে এসেছেন। পায়চারী করছেন। অপমান মানুষের পশুত্বকে জাগিয়ে তোলে। নজীব সাহেবের অবস্থাটাও তাই। আরিফ পর পর দুইবার নজীব সাহেবের কাছে মাফ চেয়েছে। কিন্তু তাতে তার মন গলেনী। বিষয়টি ম্যামকেও জানানো হয়নি। সিও স্যার রাতের বেলায় তেমন থাকেন না। আজ তিনি এসেছেন নিলা ম্যাডামের সাথে অফিসের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। কোম্পানীর অবস্থা দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। আর ও লোকবল বাড়ানোর চিন্তা শিল্পপতি আনিস সাহেবের।
কোম্পানীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। কর্ম পরিবেশ নিয়ে নিলার সাথে ঘন্টা দুয়েক কথা হয় আনিস সাহেবের। রাত তখন ১২ টা । তিনি বের হতে যাবেন। তখন নজীব সাহেবকে মোবাইলে ফোন দিলেন। রিং হচ্ছে। এত রাতে নজীব আবার কি জন্য কল দিল। কল টা রিসিভ করলেন আনিস সাহেব।
-আসসালামুলাইকুম স্যার কেমন আছেন।
- ওয়ালাইকুম সালাম। ভাল আছি নজীব। অফিসে তো ছিলাম। দেখা করতে।
-স্যার, ডেস্কে ছিলাম। এক ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশন করছিলাম।
- ও আচ্ছা। তোমাদের জন্য গুড নিউজ আছে। নিলাকে বলেছি। শুনতে পারবে। তা কিছু বলবে নাকি।
-জি স্যার। নিলা ম্যাডাম তো টি-বয়কে দিয়ে ডিম সার্ভিস করাচ্ছে।
-ডিম সার্ভিস- মানে। এটা আবার কি? কি বল এসব। ফোন রাখ। মুড অফ হয়ে যায় আনিস সাহেবের।
(সিও স্যারের মুড অফের দিন)
ডে শীফটের কাজ শেষ করার পর আনিস সাহেব রাত ১২ টার দিকে অফিসে ঢোকে। গাড়ীটি ড্রাইভারকে পার্ক করতে বলে সোজা তার রুমে গিয়ে বসেন। কলিং বেলে চাপ দিতেই আরিফ হাজির হয়।
- আরিফ একটু কফি খাওয়াতো বাবা।
- জি স্যার।
আরিফ কফি বানিয়ে এনে আনিস সাহেবকে দেয়। কফিতে চিনি দেওয়া হয়নি। আনিস সাহেবের নজীব সাহেবের মোবাইলে কল পাওয়ার পর থেকে মুড অফ হয়ে আছে। মুড অফ হওয়ার যত ক্ষোভ সব কফির উপর গিয়ে পড়ে। কফির কাপে চুমুক দেবার পর। মুখ আরো বিকৃত হয়ে পড়ে আনিস সাহেবের। আরিফ জানে তিনি কফিতে চিনি খাননা। তারপর ও মন চাচ্ছিল কফিতে আজ চিনি দিলে ভাল লাগতো।
- আরিফ আজকাল অফিসে কি কাজ কর্ম ঠিকমতো করিস।
-জি স্যার।
-কফিতে চিনি দেস নাই ক্যান।
-স্যার আপনার ডায়বেটিসের সমস্যা। আপনি চিনি খান না।
- মুখে মুখে তর্ক করিস না। কাপটা ধর।
আরিফ ভয়ে ভয়ে কাপটা ধরে।
নে একটা আছার মার। (ধমকের সুুরে) আছার মার। আরিফ কাপটা ভেঙ্গে ফেলে।
-নজীবকে ডেকে পাঠা।
নজীব সাহেব আসে।
- আসো নজীব। টেক ইউর সিট। কাল রাতে কল দিয়েছিলে । অফিসে ডিম ডিম বিষয়টা এখন বলো। আরিফ নিলাকে আসতে বল।
নিলা আসে।
আনিস সাহেব সব কিছু জানার পর। নিলাকে কিছু না বলে। আরিফকে কাল থেকে অফিসে আসতে নিষেধ করে।
- এই ছেলে শোন কাল থেকে তোর আর অফিসে আসার দরকার নাই। ডিম বাইরে গিয়ে বিক্রি কর। ভাল ইনকাম হবে।
আরিফ চুপচাপ অফিস থেকে বের হয়ে আসে। এ মাসের বেতন টা তোলা হয়নি।
(নিলা ম্যাডাম বোঝাতে সমর্থ হলেন)
অবশেষে নিলা ম্যাডাম আনিস সাহেব কে বোঝাতে সমর্থ হলেন।
-নিলা, আমি মনে হয় ছেলেটার উপর বড় অন্যায় করে ফেললাম। ওকে খবর পাঠাও।
- আমি দেখছি স্যার।
-নজীব ধমক টমক দিও একটু। এই রকম ব্যাক বাইট স্বভাব থাকা ভালনা। অফিসের পরিবেশ নষ্ট হয় এই রকম আপদ আশা করি তুমিও বরদাসত করবেনা।
(আরিফ যখন রোড এক্সিডেন্ট করে)
অফিস থেকে বের হওয়ার পর মনটা খারাপ করে, ছল ছল চোখে রাস্তা পার হতে যায়। ঠিক ঐ সময় একটি লেগুনার সাথে আরিফ সজোরে ধাক্কা খেয়ে রাস্তার এক পাশে পড়ে যায়। ডান পাটা মচকে যায় আর মাথা আঘাত , বুকে চাপ খেয়ে রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এক রিকশাওয়ালা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তাররা আমাদের সাথে নাকি আমরা ডাক্তারদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি, আমি জানিনা। শুধু জানি, সব প্রফেশনেই ভাল মন্ধ থাকে। থাকবে। এটাই নিয়ম। সাধু এবং সয়তান শব্দ দুটি আছে বলেই আমরা ভাল মন্ধের প্রার্থক্য বুঝতে পারি।
আমার সাথে আরিফের পরিচয় হবার পরে আমি প্রায়ই ছেলেটাকে কান্না করতে দেখতাম। একদিন তার বেডে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
- আচ্ছা ছোট ভাই তোমাকে বেশ কয়েকদিন ধরে দেখছি। তোমার কোন আত্বীয় স্বজন নেই্। মা, বাবা, ভাই বোন আত্বীয় স্বজন!
- মা আছে ভাই। বাবা ছোট বেলায় মারা গেছেন। ছোট এক ভাই আছেন। তাছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমার এক্সিডেন্টের খবর মাকে বললে তিনি হয়তো বাঁচবেন না।
আরিফের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আজ চার মাস যাবৎ আমার চাকুরী নেই। এই দেশে গরীবদের কোন মূল্য নেই। গরীবের উন্নয়ন এটা সেটা ওমক তমক হাজার হাজার উন্নয়ন চিত্রের বিজ্ঞাপন দেখি, শুনি। ঘরে ঘরে চাকুরীর আশ্বাস পেয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম সুখি সুন্দর একটি জীবনমান। এদেশে গরীবের কষ্ট গুলি কেউ দেখেনা, শুনেনা। এদের শুধু ব্যবহার করা হয়। মিটিং, মিছিলে কর্মী হিসেবে, সমর্থক হিসেবে। মাঝে মাঝে কষ্ট নিয়ে ভাবী দেশটা কি গরীব, মেহনতী মানুষদের নয়! অধিকার কোথায় আমাদের! আমাদের স্বপ্ন গুলো রোড এক্সিডেন্টে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হয়। কারো দেখার নেই, শোনার নেই। আরিফের সাথে যখন কথা বলছিলাম, তখন চারদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে তার হসপিটালের বেডে। চোখের লোনা পানি ছাড়া যার আর কোন সান্তনা নেই।
-স্যার, আমার এখন কি হবে!
আরিফ আমার হাত চেঁপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে আরিফ। আরিফের কান্নায় আমি বাংলাদেশের সমস্ত গরীবদের কাঁদতে দেখছি। যাদের পাষাণ হৃদয় প্রকাশ করতে পারছেনা। তাদের ক্ষোভ প্রকাশের সাহস ও নেই যে ভাঙ্গতে পারে সে শ্রেণী বৈষম্যের শিকল। আমিও চোখের জল ধরে রাখতে পারিনী। নাখালপাড়ার আজিজ ভাইয়ের কম্পিউটারের দোকানে বেকার সময় কাটিয়ে যা পাই, তা দিয়ে ইট কাঠের এই শহরে আমি টিকে আছি। বাবা ডায়বেটিকের রোগী। আমার গল্পটা আরিফের মতন নয়। আমি উচ্চ শিক্ষিত বেকার। চাকরী নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার কথা রাখেন নাই। তবু তাকে শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। বঙ্গবন্ধু কন্যা তিনি। আমাদের গরীবদের অনেক গল্প। হরেক কষ্টের গল্প থেকে যদি একটা গল্পের সমাধান কেউ দিত। তাহলে হয়তো স্বার্থকতা পেত। বাস্তবতা মিশ্রিত আমার গরীবের গল্পটি।
২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:২৪
রুবে৭১ বলেছেন: http://www.somewhereinblog.net/blog/akhenaten গল্পটি ভাই শেষ করি নাই। আবার পড়বেন প্লীজ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:০৫
আখেনাটেন বলেছেন: অনেক সুন্দর গল্প লিখেছেন ব্লগার রুবে৭১।
কত শত মানুষ এভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। শত সমস্যার মাঝেও পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য কি নিরন্তর প্রচেষ্টা।