![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর জন্ম 1820 সালে! 1824 এ আসেন মহাকবি মধুসূদন। 1861 এ হৃদয়ের রবীন্দ্রনাথ। 1899 তে বিদ্রোহী নজরুল আসার আগ পর্যন্তও এই বাংলায় গুণের কোন কমতি থাকেনি। 1899 পরবর্তী সময়েও আমরা সৃষ্টিশীলদের সান্নিধ্য যথেষ্ট পেয়েছি। জসীমউদ্দিন, মানিক বন্দোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, ফররুখ আহমদ, সুকান্ত ভট্টাচার্য আরও অনেকে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এখন তাঁরা আসেনা কেন? বিশেষ করে 1990 পরবর্তী সময়ে। যদিও 1970 এর পরেই এই লাইনে ভাটা পরতে থাকে কিন্তু নজরুলকে জীবিত পেয়ে তা বুঝার চেষ্টা করিনি। অবশ্য কাজী নজরুল অনেক আগেই বাকশক্তি হারিয়েছিলেন।
শুনেছি রবীন্দ্রনাথ স্কুল পালাতেন (আমি কিন্ত আবার বলছিনা যে স্কুল পালাও, রবীন্দ্রনাথ হওয়ার গ্যারান্টি সরকার দেবে)। তখনকার শিক্ষাব্যবস্থা আর এখনকার মধ্যে যে খুব ফারাক তা বলা যায়না। প্রমথ চৌধুরী বা রবীন্দ্রনাথ নিজেও তখনকার ঐ ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করতে করতে তাদের মুখের ফেনা তুলেছেন। আসল কথা যেটা, তখন তাদের স্বাধীনতা ছিল। আরও বলতে গেলে স্বাধীন হওয়ার জন্য যেই অনুপ্রেরণা দরকার তা ছিল।
রবীন্দ্রনাথ যখন স্কুল ফাকি দিয়ে গাছতলায় বসে থাকতেন, নিশ্চয়ই তার সৌন্দর্য পিয়াসী চোখে কত কিছু ধরা পড়ত। খোলা আকাশ, তার মাঝে পাখি উড়ে যাচ্ছে, পানিতে হাস ডিগবাজি দিচ্ছে, ছোটরা ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে একে আরেকজনের নাকে কামড় বসিয়ে দিচ্ছে।
যাই হোক! এতকিছুর পরও একজন মানুষের চার দেয়ালে বন্দী থাকার বাসনে মনে থাকে কিভাবে?
এখন ধরুন বর্তমান একটা স্টুডেন্ট স্কুল ফাকি দিয়ে গাছতলায় বসেছে। সে কি দেখবে?
হয়তো একটা লোক চেঁচাচ্ছে,
"ঐ হাগু করলে ফাছ ট্যায়া আর হিসু করলে দুই ট্যায়া"
বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড এর থোতায় চিমটি দিয়ে ধরে রাখছে, ছাত্ররা ব্যাগ নিয়ে ছুটাছুটি করছে, শিক্ষক ব্যস্ত প্রশ্ন ফটোকপি করায়, পাড়ার বড়ভাইরা ব্যস্ত ছোটভাইদের শাসাতে, বাবা ব্যস্ত টাকা কামিয়ে বাড়ি বানাতে, মা ব্যস্ত 50 টাকার শুটকি 20 টাকায় আনতে! খোদা!
রবীন্দ্রনাথরা দেখেছিলেন সবুজ লতার উপর আরেক সবুজ লতার নীরবে বয়ে যাওয়া, কোন কৃষ্ণকলির কলসি কাঁখে ঘরে ফিরে যাওয়া, ধবল ধেনুর মাঠ ঘুরে বেড়ানো।
এখন কি দেখবে? ফর্মালিনের বেগুন ফর্মালিনের কলাকে কাতুকুতু দিচ্ছে, কৃষ্ণকলি পার্লার এ গিয়ে ফুলকলি হয়েছে, তার চেহারায় মায়ার বদলে খাটাশ খাটাশ ভাব এসেছে, ধেনু হয়তো ঠিকই মাঠে ঘুরে ফিরবে কিন্তু এনথ্রাক্স এর ধেনু! খাইসে!
"ঠিকাছে বুঝলাম মিয়া! কিন্তু অহন কথা যেইডা কথা হেইডা না! কথা হইল নজরুল আসে না কেন?"
আরে ভায়া নজরুল কি সহজ জিনিস? বলিষ্ঠ দেহের ঐ বিদ্রোহী কি কম পাগলাটে ছিল? ঘরজামাই হওয়ার কথা শোনায় বিয়ে বাড়ি থেকে সোজা প্রস্থান করেছিলেন ঐ কাজী নজরুল।
কিন্তু এখন কাউকে এই স্বাধীনচেতা মনোভাবের পাবেন কিভাবে? নজরুল হওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হলো মুক্ত ঘুরাফেরা। কিন্তু এখন স্পেস কোথায়?
বাবা মারা তো এখন সন্তানকে খাইয়ে খাইয়ে কোরবানীর খাশির মতো না বানানো পর্যন্ত শান্তি পান না। আমার মতে এখনকার বাঙ্গালি ঘরে সন্তান মেয়ে হোক ছেলে হোক, বাবা মায়েরা তাদের শুধু মেয়ের মতোই ট্রিট করে। তাদের প্রধান ডিউটি এখন সন্তানদের বাইরে যেতে বাধা দিয়ে "সঙ্গদোষে লোহা ভাসে" 'র খপ্পরে না পড়া। সন্তানকে ভালো মন্দের বিভেদ না বুঝিয়ে তারা তাদেরকে ঘরে বসিয়ে রাখাকেই সহজ আর নিরাপদ মনে করেন। তাছাড়া সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি তো তাদের সাথে তালই মিলাচ্ছে।
সূর্যাস্তের আগে ঘরে ফিরে আসার আদেশ সবসময় সব বাঙ্গালি মায়েরাই দিয়েছেন। কিন্তু আগে অন্য উপায় ছিল। বনে জঙ্গলে বা অন্ধকারে পা বাড়ালেই ঘরকে বহু পিছনে ফেলে আসা যেত। নিজের সাজে সাজা যেত।
এখন অন্ধকারে পা বাড়াতে চান? "বাপরে বাপ! দেশে যেই বিল্ডিং হইসে, এক ঠুয়া খাইলে কপালও ভাংবো, মাজার হাড্ডিও ভাংবো!"
দেশে অন্যায় হচ্ছে ঠিকাছে, কিন্তু তা তো নতুন প্রজন্মকে দেখাতে হবে। আপনি যদি একজন মানুষের গবেট হয়ে বেড়ে উঠার পিছনে শুধু শিক্ষা ব্যবস্থার দোষ দেন, তাহলে আমি এর সাথে বন্দি জীবনযাপনের কথাটাও যোগ করতে চাই।
আপনি যদি ক্লাসের রোল ১ আর রোল ৫০ এর তুলনা দেন, দেখবেন ঐ ৫০ এর ই বাস্তব জ্ঞান বেশি। কারণ বাইরে ঘুরে ঘুরে শরীরটাতে ময়লা জমানোর সাথে সাথে তার এক্সপেরিয়েন্স ও বাড়ছে। তারাই বড় হয়ে কাজ করে। আসল কাজ।
আমি এতে রোল ১ দের কোন দোষ দিচ্ছিনা। আবার সব রোল ১ যে এমন হবে, তাও না। আমি বলতে চাচ্ছি বন্দিত্বে সুখ নেই।
"স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে"
আসলেই। আমরা না চাইলেও চারপাশের চাপে বাইট্টা হয়ে বন্দি থাকতে হচ্ছে।
যারা এমন চারদেয়ালে থেকে কেবল পড়াশোনাই করে গেছে তারা বড় হয়ে কি করবে? তাদের কি কোন বাস্তবজ্ঞান আদৌ আছে?
তারা কি সমাজের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন? "টিভি দেখে হয়তো বা। কারণ সাধারণ জ্ঞানে এ থেকে 1 নম্বরের প্রশ্ন আসে।"
কিন্তু নজরুলের মতো কলম ধরে মানুষের মনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য কি এতটুকুই যথেষ্ট?
তাদের উচিৎ না বাইরে বেরিয়ে আসা? সবার ই তো উচিৎ।
বাবা মায়েরও তাদের সন্তানকে মুক্তির আলোতে চোখ আলোকিত করতে দেয়া উচিৎ। এত জঞ্জালের মাঝেও সূক্ষ্ম আনন্দটা অনুভব করে রবীন্দ্রনাথ হতে দেয়া উচিৎ।
মুক্তিই জ্ঞান। সবচেয়ে বড় আনন্দ। আগে আমাদের মুক্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, পরে নবীনদের সেটার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে দিতে হবে।
"আমাদের চেতনায় নজরুল আর হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ" বলে গলা ফাটালেই চলছে না।
২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২
রবিরুল বলেছেন: একমত নই। মানুষকে দমিয়ে রাখার ক্ষমতা সময়ের নেই। কেউ যদি মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে তবে সেটা মানুষই। পাওয়ারে থাকা দেশগুলো থেকে যেমন নান্দনিকতা হৃদয়ে নিয়ে আসা ব্যক্তিদের সৃষ্টি হয়, তেমনি পাওয়ারে না থাকা মূলত গরিব সমাজ থেকেও চারপাশের জগতের প্রতি তীব্র ঘৃণা বুকে নিয়ে আসা ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে কেবল গুণীদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হয়।
আমাদের নজরুল কিন্তু কলকাতার রাজধানী হওয়ার কোন স্বাদই বোঝেননি। তার জীবন কেটেছিল দারিদ্রের মাঝেই। পরেও তিনি অনুকরণীয়, বরণীয়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮
বিলিওনার বলেছেন: তার কারন হলো সময়। তাই তারা আর আসেনা। যেই দেশ বা ভূখন্ডযখন হাইট অফ পাওয়ারে থাকে তখন তাদের মধ্যে বালো ভালো আরটিস্ট, সাহিত্যিক জন্মায়। ঐ সময় কলকাতা ছিলো ব্রিটশ সম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী। এটা ফ্রান্স, ব্রিটিশ, রাশিয়া, আমেরিকা, সবার বেলায় একি রকম।