নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

উৎসব রংগ //

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১:২৭


শপিং মেলা ...।

ঢাকা শহরে এখন সি এন জি পাওয়া মানে পাওনাদারের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাওয়া।কাউকে টাকা ধার দেবার পর প্রথম প্রথম মনে একটা শীতল অনুভূতি হয়-আহা কি উপকারটাইনা যে করলাম।কিন্তু যতো দিন যায়, সেই কর্য করা ব্যক্তি বেমালুম সব ভুলে গিয়ে মুখে ইয়া বড় হাসি নিয়ে যখন বলে-“এবার বসুন্ধরায় তিন কাঠার জমিটা বুকিং দিয়েই দিলাম।“আপনি তখন চক্ষু লজ্জায় কিছু বলতে পারবেন না,বন্ধুদের সামনে কেবল প্লাস্টিক মার্কা হাসি ছুঁড়ে দিবেন-“কনগ্রাচুলেশন।“
আমাদের বর্তমান অবস্থাও তাই।সিএজি চালিত অটোরিক্সায় কোন মিটার নেই,দু”শ টাকার ভাড়া পাঁচশো টাকায় যাচ্ছেন।ট্রাফিক পুলিশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে সামনে এসে জিজ্ঞেস করবে-“আচ্ছা আপনি কি মিটারে যাচ্ছেন?”কি কথা?মিটারিতো নাই,যামু কেমনে?আমি অনেক সময় রেগে যাই-“মিটারিতো নাই।“কিন্তু হিতে বিপরীত হয়।চরম তাড়া থাকা স্বত্তেও ট্রাফিক ভাই জনস্বার্থে আমাকে নামিয়ে দিয়ে সি এন জির নামে মামলা করে ফু্রফুরা শরীরে দ্বিচক্রযান টান দেয়।হতভম্ব আমার দিকে তাকিয়ে সি এন জি ড্রাইভার তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে-“সত্যবাদী আইসে।“এটা গালি নাকি কমপ্লিমেন্ট এইটা বুঝতে আমার দুই দিন অতিবাহিত হয়ে যায়।
তাই আজকাল একা বের হলে নো সি এন জি,বাসোই ভরসা।তবে আজকের চেহারাটা সম্পূর্ন ভিন্ন।সকালেই আকাশ ভেঙ্গে চূড়মাড় করে বৃষ্টি ঝড়ে গেছে।প্রায় সব বাস ফাঁকা,আমি মনের আনন্দে একটাতে উঠে পড়লাম।কিন্তু বাসযে আর এগোয় না,এক ইঞ্চি দুই ইঞ্চি এইভাবে চলছে।কারন চলার জন্য ন্যূনতম জায়গা অবশিষ্ঠ নাই।ফুটপাতের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম বাস ফাঁকা হয়ে যাবার কারন।সোজা গেলে নিউমার্কেট-গাউসিয়া।আর বাঁমে গেলে বসুন্ধরা।কাহিনী পরিষ্কার-ললনারা শপিং করতে বেরিয়েছেন।এ মার্কেটে পছন্দ না হলে অন্য মার্কেটে যাবেন।সব মার্কেট ঘোরাঘোরি শেষ করে তবেইনা ডিসিশনে আসা যাবে।আর যারা এম্বুলেন্সে শুয়ে আছে তাদের শপিং নিয়ে কোন তাড়া নাই,কারন মৃত্যূ তাদের ডাক দিয়েই যাচ্ছে।
শপিং এবং স্কুলিঙ্গের বিষয়ে আমার নিজের একটা থিউরী হচ্ছে ; যে যে এলাকার তাকে সেই এলাকা থেকেই কাপড় কিনতে হবে এবং বাচ্চা যতোই স্কলার হোক এলাকার ভালো স্কুলেই দেওয়া উচিত।তাহলে এক এলাকার চাপ অন্য এলাকায় পড়বেনা।অবশ্য গভার্মেন্ট এই থিউরী এপ্লাই আদৌ করবে কিনা কে জানে,কারন বড় বড় নেতাদের বাচ্চারাতো বড় বড় স্কুলেই পড়বে আর বউ শপিং করতে যাবে আকাশ পথে।সো এই সব বিষয় অযথা সংসদে না তোলাই ভালো।তা যেখানে ছিলাম,ছিলাম শ্যামলী দুই ঘন্টা পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম ধানমন্ডি।আমিও শপিং সেন্টারেই যাচ্ছি,তবে কাপড় কিনতে না ,আমার ট্যাবের ব্যাটারী কিনতে।অর্জিনাল্টা পরিচিত লোকের কাছ থেকেই নিতে চাই,কন্যাকে ট্যাব দিয়ে না রাখলে আমি ল্যাপটপে লিখতে পারিনা।সে আমার যন্ত্রের উপর হানা দেয়।হোয়াট এ ডিজিটাল বেবি।
বাসরূপী ভ্যান যখন কোন রকম শুক্রাবাদ এযে ঠেকলো তখন অলরেডি বিকেল চারটা।আমি নেমে সোজা বাঁ দিকে হাঁটতে আরম্ভ করলাম,এই পথে যে রিক্সা এগোবে না তা আমি ভালো করেই জানি।পান্থপথ ধরে হাঁটি আর গাড়ির বাহার দেখি।আহা কতো রঙবে রঙের গাড়ি।কিন্তু বেচারাদের অবস্থা খুবি বেগতিক।এরা ইচ্ছে করলেই নিজের গাড়ি রাস্তায় ফেলে রেখে হেঁটে যেতে পারছেনা।গাড়ি পাহারা দেবার জন্যে হলেও এই খানে আরো দু’ঘন্টা নিম্নে থাকতে হবে।যাই হোক,স্কুল জীবনের মতো লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দ্যা গর্জিয়াস বসুন্ধরা মলে ঢুকলাম।আমাকে ছয়তলা যেতে হবে,ক্যাপসিউল লিফটের কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম ওখানেও লম্বা লাইন।তাই স্কেলটরি ভরসা।ঈদ আসলে খুব মজার একটা বিষয় হয়।যেগুলো খুব প্রয়োজনীয় সামগ্রী –মোবাইল,কম্পিটার,ল্যাপটপ এগুলোর দামো দ্বিগুন বাড়ে।আমি জানি ঈদে সবাই নতুন ফার্নিচার কিনে ,নতুন কম্পিউটার কিনে কিনা তা জানা নাই।কিনতেই পারে,বাঙ্গালীর মনে কখন কি খেয়াল হয় কে জানে।আজকালতো বাড়ি রঙ করে বাতি জ্বালাতেও দেখা যায়।নতুন পাঞ্জবীর সাথে নতুন ট্যাবলেট ম্যাচ করে গলায় ঝুলিয়ে রাখলে মন্দ হবে না।
ব্যাটারী চার্জে দিয়ে ভাবলাম খানিক ঘুরি,মেয়ের জুতোটাও কেনা যাবে।বাচ্চাদের জন্যে বাটা সব সময়ি আমার বেস্ট চয়েজ,তাই আর দেরী করলাম না।সাত তলায় চলে গেলাম।কিন্তু সুজ দেখবো কিভাবে,দুই হাত দিয়েতো মানুষ সরাতে সরাতেই আমার কম্ম সাবার ।বহু কষ্টে ঠেলেঠুলে একদম শেষ প্রান্তে চলে গেলাম।সেই একি ধাঁচের সুজ,খালি প্রাইস ট্যাগটা বদলে গেছে।মেয়ে বলে কথা,দ্বিতীয় চিন্তা না করে ক্যাশ করলাম।শপিং মনে হয় একটা ভাইরাসের মতো ,করলে খালি করতেই ইচ্ছে করে।যতোক্ষন পর্যন্ত ব্যাগে টাকা আছে চলুক।ঢুকলাম দেশী দশে,এখানে সবটাই সূতি কাপড়ের সমাহার।তবে এমন সব কামিজের গায়ে তিন হাজার টাকা লেখা আছে সে গুলো ছালা হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে বেশ হতো।আমি দেঁশালে গেলাম,একনজরেই পার্পেল রঙের একটা জামার উপর চোখ আটকে গেল।ওটার গায়ে হাত রাখতেই পাশ থেকে আর একজন মহিলা বলে উঠলো-“এইযে ভাই শুনছেন,এই পার্পেল কালারের ড্রেসটা আর নেতা”সেলস ম্যান এগিয়ে এলেন-“এটাই লাস্ট পিস”।আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি জামা খানা বগলে নিলাম,এই জিনিস যদি না হাতে রাখি নির্ঘাত এই মহিলা নিয়া যাবে।এইটারে বলে-নিজের জামাই থুইয়া পরের জামাইয়ের দিকে নজর।একবার রঙ-এ একটা শাড়ি আমি প্রায় কিনেই ফেলছিলাম,ওমনি কোথা থেকে এক মহিলা ক্যাশ ছুঁড়ে দিল।আমার আগেই পে করেছে বলে শাড়ি চলে গেল তার কাছে।সারা ঢাকা শহর ঘুরে সেই শাড়ি আমি পাইনি।তাই এই জামা কোন ভাবেই হাত ছাড়া করা যাবে না।আমি কোন রকম ট্রায়াল দিয়ে দেঁশাল ত্যাগ করলাম।
জামা যখন কিনেই ফেলেছি তখন এক জোড়া স্যান্ডেল কিনতে দোষ কি?সো গন্তব্য এপেক্স।এখানেও জন-জোয়াড় হাতড়িয়ে সুজ খুঁজতে হলো।কিন্তু পার্পেল কালারের একটা স্যান্ডেলের কাছে গিয়ে আমি থমকে দাঁড়ালাম-এই জিনিস তো চাঁদনী চকে ভরা,দু’শো টাকা দিলেই দিয়ে দিবে।কোথাও কোন এপেক্স্র সীল নাই।আমি স্যান্ডেল খানা উলটে পাল্টে জিজ্ঞেস করলাম-“এইটার কোন ওয়ারেন্টি আছে?”খুব গম্ভীর উত্তর সেলস ম্যনের-“এক মাস।“যাক এক মাসের গ্যারান্টি ,মন্দ না।এখান থেকে চাদনী চক যেতে এক মাসই লাগবে ,সো নো টেনশন।করো প্যাকেট।
সুন্দর সুন্দর পুত্তলিকার গাঁয়ে দূর্দান্ত সব ফ্রক আমার নজর কারছিল ,কিন্তু ওগুলো ধরার সাহস আমার হয়নি।এমনিতেই কন্যার মামা আর খালা সম্প্রদায় বেশ কিছু ড্রেস দিয়েছে।মেয়েকে এই সাড়ে তিন বছরেই বেশি বেশি কাপড় দিয়ে ডিজিটাল মাথাটা আর নষ্ট করতে চাইছিনা।ট্যাবটা চালু করে শপিং মলের বাইরে এসে দাঁড়ালাম।তখন সন্ধ্যে নেমে গেছে,পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে সূর্য। ছোট ছোট বাচ্চাদের হাতে বেলুন আর প্লাস্টিকের খেলনা।আহা,এদেরতো ঈদ আসছে।কিন্তু তারা এই রঙ্গীন ফানুসে অন্যের জীবন রঙ্গীন করায় ব্যস্ত।এরাই ফেত্রার কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে হাজার মানুষের পায়ের নীচে দলিত মথিত হয়,এরাই মানুষ নামক পশুর নির্যাতনের বলি হয়ে ঝুলে থাকে লাশ হয়ে।এদের নিয়েই বিশাল বিশাল ডাটাবেজ করে পয়সা কামায় দেশের কতো নাম করা মানবাধিকার সংস্থা আর এন জি ও।এরা কারোবা ব্যবসা ,কারোবা পথশিশু নামক মডেল।ক্যামেরার সামনে জন সেবকদের পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমাখা মুখে পোজ নেয় এরাই।
আমিতো আমিই।আমি কিছুই করতে পারিনা।সামর্থ আর ইচ্ছা এই দু’টোকে কোন দিন পাশাপাশি দাঁড় করাতে পারলাম না।তাই বৃষ্টি ভেজা কাঁদায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকি মিরপুরগামী কোন এক চার চাকার জন্য।হাতে ধরা থাকে সুদৃশ্য এক খানা বেলুন।
চলবে......
(পরের পর্ব ভোজন বিলাস)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:

গতিশীল, পরতে ভালো লেগেছে

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩৭

রোদেলা বলেছেন: ঈদ মোবারাক।

২| ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১৭

সুমন কর বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা পড়লাম। বুঝালাম, বেশ প‌্যারায় ছিলেন !! B-)
মিরপুরগামী কোন এক চার চাকার মধ্যে হয়তো একদিন দেখা হয়ে ও যেতে পারে।

ঈদ মোবারক !

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩৯

রোদেলা বলেছেন: দেখা হোলে এই ছবিখান লগে নিয়েন। B-)

৩| ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩১

মেধাহীন মেধাবী বলেছেন: বাস্তবতা

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:২২

রোদেলা বলেছেন: কঠিন বাস্তবতা।

৪| ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:৪৪

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: দেশে নেই বলে এই ঝামেলায়ও নেই।। কিন্তু পরিস্কার দূর্ভোগ।। আপনার লেখাটি এনেছে আো বৈচিত্র আর বাস্তবতা।। এ নিয়েই কিন্তু বেচে আছি আমরা!!

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:২৫

রোদেলা বলেছেন: হুম দেশ থেকে দূরে থাকলে হয়তো ভালো থাকা যায়,কিন্তু আমাদের কাছের মানুষগুলোতো সেই একি বৃত্তে বন্দী।

৫| ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:০৬

সৃজন আহমদ বলেছেন: এটাই বাস্তবতা । অভ্যস্ত হয়ে গেছি ।

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:২৭

রোদেলা বলেছেন: সেই আর কি।।

৬| ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬

সীমান্ত প্রধান বলেছেন: কিছু বলার নেই। যা বলার আগেই বলে এসেছি :)

২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৫৫

রোদেলা বলেছেন: হুম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.