নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পটা কোন এক ফাগুণ বিকেলের ...

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৭



সকাল থেকেই মাজেদা বেগমের পেটে ব্যথা শুরু হয়েছে ,কিন্তু তিনি কিছুতেই সে কথা স্বামীর কাছে বলবেন না।রুটি বানানো শেষ করে কিছু কাপড় ছিল সেগুলো সড়িয়ে রাখলেন বাথরুমের এক কোণায় ,আজ এমন কষ্ট হচ্ছে নীচে বসে আর কাপড় কাঁচা সম্ভব না। ছেলে হবার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হামিদ সাহেব কচুক্ষেতের এই কোয়ার্টারটি পান ।সরকারী চাকরী, এখনো সেভাবে প্রমোশোন হয়নি ; বড় কর্মকর্তা হতে গেলে আরো সময় লাগবে। দুই রুমের এই ছোট্ট ফ্ল্যাটে স্ত্রী -এক ছেলে-ছোট ভাই আর নানী শ্বাশুরীকে নিয়ে দিব্যি কেটে যাচ্ছে।এখান থেকে মতিঝিল যেতেও খুব সময় লাগেনা, বিকেলে বাড়ি ফিরে পাঁচ-ছয়টা ছেলে মেয়েকে পড়িয়ে সংসারের খরচ উঠে যায়।
নানী শ্বাশুরী অবশ্য বেশি দিন এখানে থাকবেন না,শহরের ঘিঞ্জি ঘর তার পছন্দ না।অনেকটা জোর করেই তাকে ধরে রেখেছেন হামিদ সাহেব।মাজেদা বেগম দ্বিতীয় বারের মতো মা হবেন ,মেটাররনিটি হাসপাতাল আছে একটা ঢাকায় তাও অনেক দূরে-আজিমপুর।আর ঘন্টায় ঘন্টায় ডাক্তার দেখাতেও মাজেদা চান না।তাই ,নানীকে বলাই আছে মাজেদার কাছাকাছি থাকতে।
ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল পাঁচটা প্রায় ,মাজেদা বেগম চা বসালেন হাড়িতে।গ্যাসের লাইন তখনো এই শহরে আসেনি,কেরোসিনের চুলো ; অনেকটা নিভু নিভু করেই চলছে।টানাটানির সংসার,এতো ঘন ঘন তেল কেনা সম্ভব না।বেতন আর টিউশনি এই দিয়েই সারা মাস চলতে হয়।কর্তারতো আবার খাবার টেবিলে তিন চার পদ না হলে হয় না।বন্ধের দিনতো আরো ঝামেলা,কচুক্ষেত বাজার থেকে দু”হাত ভর্তি করে বাজার নিয়ে আসবে।আর প্রয়োজনের সময় এক টাকাও পাওয়া যাবে না।এই এখনকার কথাই ধরা যাক,বাচ্চাটা যদি এখন হয়েই যায় তাহলে বিরাট বিপদ হবে।একটা ছেলের দুধ কিনতেই হাজারবার চিন্তা করতে হয়,তারপর আবার বাড়তি আর একজন।খরচ কেবল বাড়ে ,কমে না।
মাজেদা বেগম চুলোর আগুণের দিকে অবিকল চেয়ে আছেন -জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে খুব সাধারণ মনে হয়।
জন্ম হলে বেড়ে ওঠা, কন্যা সন্তান হলে দ্রুত বিয়ে হয়ে যাওয়া,তার উপর পরিবারের বড় সন্তান মেয়ে হলে দায়টা আরো বেড়ে যায়।এই বিশ বছর বয়সেই সংসার নামক বিশাল রণক্ষেত্রে ক্রমাগত লড়ে যেতে হয়।প্রথম সন্তান হবার তিন বছরের মাথায় পুনরায় মা হওয়া আর দশটা সাধারণ ঘটনার মতোনই খুব স্বাভাবিক।শরীর খারাপ লাগলেই দৌড়ে ডাক্তার বাড়ি যাওয়া অথবা উহ আহ করে কারো নজর কাড়তে চাওয়ার বাড়তি আগ্রহ তার কোনদিন ছিল না।আগের বার যেমন বাড়িতে বসে প্রুকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ছেলে এসেছে এই পৃথিবীতে ,তেমনি ভাবে এও আসবে সেটা ছেলেই হোক আর মেয়ে।বাড়তি উত্তেজনা বা উচ্ছাস কোনটাই তিনি নিজের মধ্যে ধারণ করছেন না।
হামিদ সাহেব ছেলেদের অংক করাতেই বেশী পছন্দ করেন,সুযোগ পেলে দু’চারটে কৌতুক করতেও তিনি ছাড়েন না।এই যেমন এখন বাচ্চাদের তিনি যে কাজটা করতে দিয়েছেন সেটা খুব মজার -ছাগল+গরু+ঘোড়া=৯০, ছাগল+ঘোড়া =৬০ হলে গরু+ঘোড়া=?
এই গরু -ছাগলের হিসেব কষতে গিয়ে এই ফাল্গুন মাসের ঝিরঝিরে হাওয়াতেও বাচ্চাগুলো ঘামছে।হামিদ সাহেব বেশ মজাই পাচ্ছিলেন মনে মনে ,তিনি হাত বাড়িয়ে সিলিং ফ্যান বাড়িয়ে দিলেন।ঠিক তখনি ভেতর থেকে একটা চিৎকার শোনা গেল।হামিদ সাহেব চোমকে উঠলেন,তিনি বুঝতে পারলেন শব্দটা রান্না ঘর থেকে আসছে।হামিদ সাহেব দৌঁড়ে ভেতরে চলে গেলেন ।ছেলেরা বুঝে নিল শিক্ষক আজকের জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছেন,গরু ছাগলের হিসেব আর তাদের মেলাতে হবেনা।
হামিদ সাহেব মেয়ের মুখ দেখে কি বলেছিলেন তা আজো আমার জানা হয়নি।আমি বহুবার মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-আব্বা আমাকে দেখে কি বলে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন? কিন্তু আম্মার মুখ থেকে একটাও শব্দ বের হয় নি।আমার এতো হাসি খুশী বাবাটা যিনি আমাদের ছেড়ে অনেক আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি আমার আগমনে এতো নিষ্প্রভ থাকতে পারেন তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা।অনেকেই অনেক ভাবে আমাকে বলেছিলেন-বাবা আমাকে নিয়ে সারাক্ষন অস্থির থাকতেন,মেয়ের কোথাও কোন কষ্ট হচ্ছে কিনা সেটার দিকে তার নজর ছিল চব্বিশ ঘন্টা।সেটা আমিও ভালোই জানি,জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যিনি আমার কাছে উপভোগ্য করে তুলেছিলেন -তিনি আমার বাবা।কিন্তু বাবা আমাকে দেখে ঠিক কিভাবে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন সেটা কোন দিন আমার জানা হবে না।পৃথিবীর সব জানাইযে মানুষ জানবে এমনতো কোন কথা নেই।তবু আমার জানতে ইচ্ছে করে,খুব জানতে ইচ্ছে করে ; জন্মের মতোন অতি সামান্য ঘটনাকেও খুব বেশি অসাধারণ করে তুলতে ইচ্ছে করে বাবার মুখ থেকে উচ্চারিত কোন একটি শব্দে।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৫

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: খুব আবেগপ্রবণ একটা লেখা । বাবা মানেই যেন আস্থার এক বিশাল পাহাড় তিনি যতই গরীব হোন না কেন । লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগলো ।

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৯

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: অনেক ভাল লিখেছেন নীলাপু

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



কিছু কিছু অনভূতি এমনই হয় মনে হয়।

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০২

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: চমৎকার একটি লেখা

৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হুউউউউউউউউউউউউউউউউউউউম
দীর্ঘশ্বাসের ইমো কোনটা?
সুন্দর লিখেছেন।

৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩২

আবু শাকিল বলেছেন: অনেক অনভূতি কথা কখনো জানা হয় না।
ভাল লাগল লেখা ।

৭| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০০

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: মন ছোঁয়া আবেগী প্রকাশ। খুব ভালো লাগলো আপু লেখাটা।

৮| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৯

রোদেলা বলেছেন: জন্ম দিনে যথারীতি বাবাকে মিস করি,তাই লেখার মাধ্যমে তার কাছে আকুতি পৌঁছাতে চাই।তিনি শুনেছেন কিনা তা অবশ্য আমার জানা হবে না কোন দিন।সবাইকে শুভেচ্ছা।

৯| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৩৫

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: বাবা সেত বাবা বট বৃক্ষ সমান। আপনার হৃদয়নিংড়ানো লিখাখানি অতি চমৎকার পৃত্রি প্রেম ফুটে ওঠেছে।

১০| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১৮

উল্টা দূরবীন বলেছেন: আবেগ ফুটে উঠেছে লেখায়। ভালো লাগলো।

১১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০

হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। শুভকামনা।

১২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: চমৎকার মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।

১৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:০৫

প্রীতম বলেছেন: কিছু কিছু গল্প পড়ে মনে হয় নিজেরি জিবনের প্রতিচ্ছবি

১৪| ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:০৮

এম এস আরেফীন ভুঁইয়া বলেছেন: বেশ সুন্দর পরিপাটি লেখা, ভাল লাগল।

১৫| ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬

রোদেলা বলেছেন: সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.