নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডালিম কুমারের ইতিবৃত্ত //

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০



কোন এক অজ্ঞাত কারণে শ্রাবন মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই।রোদ যেন মাথার উপর থেকে ধীরে ধীরে নেমে একদম চোখের পাতায় এসে বসেছে।রুমে এসি চলছে ফুল স্পিডে,আমি ভাত খাব বলে প্লেট ধুতে দরজা খুলে বাইরে দাঁড়ালাম আর অমনি এক ঝটকায় আগুন রোদ এসে পুড়িয়ে দিল যেন।নাহ, আজ আর কিছু খাব না,বসের কাছ থেকে বেতন নিয়েই বাসায় ফিরে যাব।যাবার সময় মেয়ের জন্য ডালিম কিনবো,মেয়েটা ডালিম খুব পছন্দ করে।কিন্তু এতো দাম চায় যে শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।প্রতিবারই দশ নম্বর গোল চক্করে বাস থামলে ফলপট্টির পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকি,কিন্তু আ্মার চোখ ওই লাল লাল ফলটার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।তবু আমি লোভী হই না,এই টাকায় বাচ্চার দুধ কেনা যাবে,এক ডজন ডিমও হবে-এই সহজ অংক কষতে কষতে বাড়ি ফিরি।
আজ আর কোন অংক নয়,আজ ঠিক ঠিক ডালিম কিনে নেব।ভাবতে ভাবতেই বস অফিসের ভেতর পা রাখলেন।এ এক অদ্ভূত ব্যাপার ,তিনি যখন অফিসে ঢোকেন তখনো তার কানে মোবাইল আবার বিদেয় নেওয়ার সময়্ও কানে মোবাইল।একটি মোবাইল বিহীন মানুষের কাছে বেতন চাইতে হলে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে,কিন্তু তা কতোক্ষন সেটার সঠিক হিসাব নেই।এক ঘন্টাও হতে পারে আবার ভাগ্য ভালো হলে আধ ঘন্টা।মাসের ১২ দিন চলে গেছে এটা বোঝানোর জন টেবিলের ডেক্স ক্যালেন্ডারটা তার মুখের দিকে ঘুরিয়েই রেখেছিলাম।তিনি যে পাশে বসেন সেখান থেকে ইচ্ছে না করলেও তা চোখে পরার কথা।কিন্তু আদৌ তা তার চোখে ধরা পড়লো কিনা ,ঠিক বোঝা গেল না .
তবে তার মুখে বিশাল হাসি আমার চোখ এড়ালো ন্যা-”আর বইলো না বন্ধু,তোমার ভাবী সংসারেতো এ টাকাও খরচ করে না,আমি দশ লাখ বিশ লাখ যা দেই সোজা ব্যাংকে রেখে দেয়।পুরো মাসের খরচতো আমাকেই চালাতে হয়।“এই অব্দি বলে একটু থামেন,ওপাশে কি প্রশ্ন করা হয় তা বোঝা যাচ্ছে না।কিন্তু বস বিগলিত উত্তর করেন-“কিযে বলো ,আমার জমি যা আছে তা বিক্রী করে ইন্সটিটিউট দিলেতো মেয়ের বিয়ের সময় এতো টাকা জোগার করতে পারবো না।কম করে হলেও কোটি টাকার মামলা। ওগুলো রেখে দিয়েছি খুব দরকার হলে বেঁচে দেব।“ আমার মাথায় পুনরায় ডালিমকুমার এসে উপস্থিত হয়।আচ্ছা এক কোটি টাকায় ঠিক কয়টা ডালিম কেনা সম্ভব?আহা আমার যদি এতো টাকা থাকতো তবে অনেক গুল ডালিম গাছ লাগিয়ে ফেলতাম।তারপর পাকলে কন্যাকে নিয়ে খেতাম আর বাকী গুলো মাথায় করে দশ নম্বর ব্রীজের নীচে ঝুড়ি সমেত বসে হাক দিতা্ম -এই ডালিম,পাকা পাকা ডালিম।
আমার স্বপ্নের মাঝখানে ডান হাত বাম হাত সব হাত দিয়ে বসেন বেরসিক বস- “নীলা,তুমি এক কাজ করো ,সন্ধ্যা ছয়টায় একটা মিটিং কল করো-মোহাম্মদপুরে আমার যে জায়গাটা আছে সেখানকার কাগজপত্র নিয়ে সবার সাথে বসতে হবে।ইঙ্কামট্যাক্সের একটা ঝামেলা আছে,ওটা আমার বন্ধু ঠিক করে দেবে।আর থানাকে দু’পয়সা দিলেই ম্যানেজ হয়ে যাবে।কি শুনতে পাচ্ছো?” ডালিমের চিন্তায় আমার মাথাটাই শালা ডাল হয়ে গেছে,কার নম্বর যে কোথায় রেখেছি এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না।আমি ফোন বুক ঘাটতে ঘাটতেই জিজ্ঞেস করলাম-“মিটিং কতক্ষন হবে স্যার ?”
বসের অবাক চোখ-“কেন?কিসের তাড়া তোমার ? দেরী হলে আমি বাড়ি পৌঁছে দেব।“
এ হচ্ছে আর এক যন্ত্রণা ,তার সাথে বাড়ির পথে যাওয়া এমন কোন সমস্যা না।আমি হিজাবী টাইপ মহিলাও না,লেগুনায় অপরিচত পুরুষ মানুষের গা ঘেষে বসার অভ্যাস আমার আছে।কিন্তু ,বস যখন ড্রাইভারের সামনেই আমার পিঠ ছুঁয়ে আয়েশি হাত রাখেন তখন নিজেকে আরশোলা টাইপ একটা প্রাণী মনে হয়।অবশ্য রাত বিরাতে বাড়ি ফেরা মেয়েদের আবার কিসের সন্মান!
আচ্ছা,ডালিমওয়ালারা কয়টা পর্যন্ত ব্রীজের গোড়ায় বসে ? এটা একবারো জানা হয় নি,আজ জেনে নেব।কারণ মিটিং-এর পর শুরু হবে ডিনার ।আর এই ডিনার শেষ করে বাড়ি ফিরতে রাত এগারোটা।হাতে কোন প্যাকেট না দেখলেই কন্যার হয় মন খারাপ,বাব মাকে কেউ শর্তহীন ভালোবাসতে পারে না।ভালোবাসা পাবার জন্য আজকাল ঘুষ দিতে হয়।
মিটিং শুরু হয়ে গেছে,বিষয় একটাই-কতোখানি কম খরচে সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি চমৎকার প্রতিষ্ঠান খুলে অবাধে বাণিজ্য করা যায়।নাস্তার মধ্যে আছে-সিংগারা আর আপেল,সাথে কফি।আহারে আপেল ,তোরা যদি আজ ডালিম হতি তবে কিযে ভালো হতো আমার জন্য।তাহলে আর বাস থেকে দশ নম্বর নামতে হতো না,সোজা সারে এগারো পর্যন্ত চলে যেতাম।আলোচনার প্রায় শেষের দিকে,ঘড়িতে আটটা বাজে ,আমি নির্ভয়ে বসের দিকে এগিয়ে গেলাম-স্যার ,আমি বাড়ি যাব,দেরী হয়ে যাচ্ছে।তিনি যেন সবে মঙ্গলগ্রহ থেকে ল্যান্ড করলেন,হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন-ও আচ্ছা ,তুমি চলে যাও,আমার আবার আর একটা মিটিং আছে।এত লোকের সামনে নিজের পারিশ্রমিক চাইতেও আমাদের লজ্জা করে,হায়রে মধ্যবিত্ত!তবুও একটু জোরেই বললাম-স্যার ,আজকে ১২ তারিখ।তিনি কি বুঝলেন কে জানে ,গুরূত্বপূর্ণ মানুষদের সাথে তার জমির বর্তমান মূল্য হিসেব করতে বসে গেলেন।
ঢাকা শহরে আমি সহজে রাত হতে দেখিনি, যখনি বাইরে পা রাখি কেবল ঝলমলে আলোতে আমার চোখ ঝলসে যায়।এতো বিদ্যুৎ কেন রাস্তায়, নিরাপত্তার জন্য?কার নিরাপত্তা দিতে চায় রাষ্ট্র?দাঁড়িয়ে আছি,ভাগ্য ভালো যে একটা সিঙ্গারা মুখে পুরেছিলামা আর একটা আপেল ব্যাগে।কোথাও কোন শুখনো খাবার পেলে আমি চুরি করতে দ্বিধা করিনা।জানি মেয়ে এই বস্তুটি মুখেও দেবে না,তবু আশা নিয়ে রেখে দিয়েছি -যদি একবার খায়।শ্যামলী দিয়ে এক মাত্র তেঁতুলিয়া বাস সার্ভিস যায়।কোন এক বিচিত্র কারনে এক নম্বর হয়ে কোন বাস উত্তরা যায় না।আমি মনে মনে ঠিক করে নিলাম ,আজ আর ডালিম কুমারের আড়তের সামনে দিয়ে যাব না।ষাট ফিটের রাস্তায় নেমে লেগুনা ধরে মিরপুর দুই অব্দি ফিরবো।কাজটা ভালোই করলাম,কিন্তু বাস থেকে নেমে যাবার পর আর কোন সার্ভিসো পেলাম না।সি এন জি নেবারতো প্রশ্নই ওঠেনা,মিটারে গেলেও ত্রিশ টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে,রিক্সাওয়ালা আরো দুই কাঠি সরেশ -ভাড়া ১০০ টাকা।
কিছুক্ষন রাস্তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার পর উলটো পথে একটি খালি লেগুনা আসতে লাগলো।শক্তিমান মধ্যবিত্ত কি নারী কি পুরুষ ,বৃদ্ধ এক জোগে লাফিয়ে পড়লাম রণক্ষেত্রে-কার আগে কে উঠতে পারে।আমার ঘাড়ে ল্যাপটপ -চোখে চশমা।ভুল করে চশমাটা পার্সে রাখা হয় নি।কিভাবে যে লেগুনায় উঠলাম সে দৃশ্য এখন আর মনে করতে চাচ্ছি না।ভেতরে ক্রমশ পিশে যেতে যেতে কোন মতে একটা সীট দখল করে ফেললাম।আহা ,রাজারা জমি দখল করাব্র সময়ো বোধ করি এতো ব্যাকুল ছিলেন না।আমাদের মতোন মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরা একটা সীটের জন্য জীবন বাজি রাখেন।পাশ থেকে একজন বলেই ফেললো-“মেয়েরা এইভাবে যে গাড়িতে ওঠে তা নতুন দেখলাম,আপনারতো বিরাট এক্সিডেন্ট হতে পারতো।“আমিও তাকে হেসেই দেখালাম-“ওই দেখেন বাদরের মতোন চার জন ঝুলে আছে লেগুনার পিছে ,ওদের জীবনতো আরো অনিশ্চিত।“
আসলে আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে।রোজ সকালে জীবনের মায়া ছেড়ে কাজে যেতে হবে আর রোজ সন্ধ্যায় সেই জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।এটাই নিয়ম,এই বৃত্ত চলতেই থাকবে।ছেলে মেয়ে বড় হয়ে যাবে,তাদের একটা বৃত্ত হয়ে যাবে ।আমরা আর একটা বৃত্তের ভেতর ঢুকে যাব,কেউবা সঙ্গীর হাত ধরে আবার কেউবা একদম একা।কিন্তু বৃত্ত চলতেই থাকবে।ডালিমের দাম ক্রমশ বেড়েই চলবে ,দশ নম্বর গোল চক্করের ভীড় বাড়তেই থাকবে।সব কিছুই আটকে থাকবে একটা কঠিন বলয়ের মধ্যে ,যে বলয় ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সাধ্য কারো নেই।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৬

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
মধ্যবিত্তের দিনাপাত।
লিঙ্গভেদে কষ্টটাও বেশি। হয়তো।

কেমন আছেন আপু?

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫৮

রোদেলা বলেছেন: এইতো বেশ আছি মিলে মিশে।।

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:৫২

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: রাত বিরাতে বাড়ি ফেরা মেয়েদের আবার কিসের সম্মন! এমন কথা বলতে চাই না। মেয়ে হউক, ছেলে হউক প্রয়োজনে যেখানে যখন যাবে, আসবে। এটা তার ইচ্ছা - তার স্বাধীনতা। তবে মা-বাব যেন সন্তানের অধিকার খর্ব না করে।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৫০

রোদেলা বলেছেন: সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব করাই বাবা মায়ের সব চাইতে দক্ষতার জায়গা।ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৪২

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: কিন্তু যেদিন ডালিম কিনতে পারবেন সে আনন্দ যে বসের কোটি টাকা খরচ করে মেয়ের বিয়ের চাইতে বহুগুণ বেশী । এ খবর কেবল মধ্যবিত্তরা রাখে । শুভ কামনা রইল ।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৫০

রোদেলা বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন ফাতিমা জান্নাত।

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৪৪

রানার ব্লগ বলেছেন: একটা ডালিম কুমার দেখে মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে দিন , মেয়ে আর ডালিম চাইবে না, কুমার কে নিয়ে ব্যাস্ত , তখন না হয় কোন এক সন্ধায় অসহনীয় অবসরে ছোট্ট এক টা ডালিম হাতে নিয়ে বললেন আহারে ডালিম।

মধ্যবিত্ত জীবন টা না থাকলে কি হতো , আমি মাঝে মাঝে ভাবি। অন্যের অর্থের আস্ফলন শুনতে শুনতে আমাদের ছোট্ট চাওয়া গুল মিলিয়ে যায় অর্থহীনতার আড়ালে।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৫২

রোদেলা বলেছেন: মেয়েকে কি আর ডালিম কুমার কিনে দিতে হবে। সে এখনি যা অবস্থা।
আহ ! মধ্যবিত্ত।আসতে যেতে দু'ধারেই সবাই কাটে।

৫| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২০

আরিয়ান রাইটিং বলেছেন: মধ্যবিত্ত নারীর বাস্তব চিত্র।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:১০

রোদেলা বলেছেন: ঠিক তাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.