নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ বিকেলের বৃষ্টি //

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:২০


গতকাল রাত থেকেই আকাশটা কেমন মন ভার করে বসে আছে, শ্রাবণ আকাশে এক ফোঁটা বৃষ্টির দেখা নেই । বড় ওভার ব্রীজ পাড় হতেই মিতার রিক্সা আটকে গেল ট্রাফিক জ্যামে,সে কি লম্বা লাইন ! বাড়ি ফেরার তাড়া সব মানুষের মধ্যে।যে করেই হোক পাঁচটার মধ্যে ব্লু-লেগুনে পৌঁছতে হবে।অরণ্য যেন কিছুতেই তার আগে চলে আসতে না পারে, মিতা বোঝাতে চায় সে অরণ্যর ব্যাপারে কতোটা সিরিয়াস।মিতা রিক্সাওয়ালাকে তাড়া দেয়-ভাই,আপনে মনিপুরের ভেতর দিয়ে যান।আমি ভারা বাড়ায় দিব।
দশ নম্বর গোলচক্কর থেকে শ্যাওড়া পাড়া অব্দি যেতেই এক ঘন্টা পাড় হয়ে গেল,আর অমনি মেঘের কিযে গর্জন।পার্স থেকে ভাড়া বের করতে করতেই এক পশলা বৃষ্টি একদম মিতার মাথার উপর ,উফ এই ভেজা শাড়িতে কিভাবে যে রেস্টুরেন্টে ঢুকবে।দ্বিধায় পড়ে যায় ত্রিশোর্ধ মিতা ,কিছুক্ষন ডানে বামে তাকিয়ে নেয়।নাহ,ঢাকা শহরে এখন আর কেউ কা্রো দিকে তাকায় না।কোন রকম আঁচল দিয়ে শরীর ঢেকে সে বসে পড়লো এক কোণায়।মনে কিছুটা সংশয় ছিল ; অরণ্য বোধ করি চলে এসেছে।তারপর চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল -নাহ ,নীল স্ট্রাইবের শার্ট পড়া কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
ঘন পুরু কাঁচের গা ঘেঁষে বৃষ্টি অনর্গল ছিটকে পড়ছে।কিছু কিছু ঘেমে ওঠা জল কাঁচের গ্লাসের শরীর বেয়ে মাটিতে পড়ে কিসব আল্পনা আঁকছে।কিছুক্ষণ মিতা মুগ্ধ হয়ে জলের নকসা আঁকা দেখলো,তারপর চোখ সড়িয়ে নিয়ে এলো হাতের মুঠোতে ভেজা মোবাইলে।যন্ত্রটা এখনো ভালোই কাজ করছে, চীনের সব কিছুই খুব ভালো টেকে, মানুষও হয়তো।অরণ্য কেনোযে এতো রেঁস্তোরা থাকতে এই জায়গাটাই বেছে নিল ,সেটা বুঝতে পারছে না ।মনে হয় তার নীল রঙ খুব পছন্দের ,তাই মিতাকেও নির্দেশ দিয়েছে নীল শাড়ি পরতে। মজার বিষয় হচ্ছে,মিতা মোটেও নীল শাড়ি পড়েনি।তার সংগ্রহে যা আছে তারমধ্যে এটাকে আকাশি বলা চলে।তাও আবার ব্লাউজটা ঠিক ম্যাচ করে না।হাতে এতো সময় নেই যে কাপড় কিনে ব্লাউজ বানিয়ে নেবে।কথাতো হলো মাত্র গতকাল রাতে।
কিছুক্ষন না যেতেই একজন চিন্তিত মুখের ওয়েটার এগিয়ে এলো-ম্যাডাম,এটা রিজার্ভ টেবিল।আপনি ওই দিকটায় বসেন।মিতা খুব অবাক হয়ে উত্তর দিল-এখানেওতো দুই জনের ব্যবস্থা,ওখানেও তাই।তাহলে গেস্ট দুইজনকে বলুন ওখানে গিয়ে বসতে ,আমার সাথে আরো একজন আছে।ওয়েটার গো ধরে দাঁড়িয়েই রইলো,মিতা বুঝলো এভাবে কাজ হবে না।সে পার্স থেকে দু’শো টাকা বের করে তার হাতে দিয়ে বললো -এটা রাখুন।অত্যন্ত বিনয়ের সাথে ওয়েটার টাকাটা পকেটে ভরে রিজার্ভ লেখাটা নিয়ে অন্য টেবিলে চলে গেল।
মিতা আবার মোবাইলে চোখ রাখলো । নাহ,সে কোন ভাবেই অরন্যকে কল করবে না,জানতেও চাইবে না সে আসছে নাকি আসছে না।মিতা অপেক্ষা করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত।যদি অরণ্য এর মধ্যে চলে আসে তাহলে বুঝে নেবে অরণ্য তার জন্য এসেছে আর যদি সে তার পরে আসে ততোক্ষনে মিতা চলে যাবে,ধরে নেবে মিতাকে বসিয়ে রাখার আনন্দ নিতে সে এসেছে ।সবশেষে ,যদি নাই আসে তাহলে বুঝে নেবে -অরণ্য কোন দিন আসবেনা।
অরণ্যর সাথে মিতার কোন দিন দেখা হয়নি,এই প্রযুক্তিময় পৃথিবীর একটি প্রযুক্তির মাধ্যমেও তাদের অনুভূতির আদান প্রদান ঘটেনি।কোন একটা সাহিত্য পত্রিকায় অরণ্যের একটা কবিতা পড়ে মিতা,সেই থেকে কিযে হলো ; সে কবিতার প্রেমে পড়ে গেল নাকি কবির প্রেমে নিজেই বুঝতে পারছেনা। মোট দু’বার কথা হয়েছে।খবরের কাগজ থেকেই নম্বরটা টুকে নিয়েছিল ফোনে,বেশ কয়েকবার ডায়াল করতেই ওপাশ থেকে ব্যস্ত দরাজ কন্ঠ-Arannay is here।মিতা ভেবেই নিয়েছিল যারা বাংলা কবিতা লিখে তারা খুব খাঁটি বাংলায় কথা বলবে ।কিন্তু হলো তার ঠিক উল্টো,অরণ্য কতটা ব্যস্ত তাই সে অনর্গল ইংরেজীতে বলে গেল,আর বলে দিল রাত ১২টার আগে সে কোন ভাবেই ফ্রী হয় না।তারপর মিতার কোন কথা না শুনেই খট করে মোবাইল কেটে দিল।
রাত ১২টার পর কিভাবে একজন অচেনা মানুষকে ফোন করতে হয়, প্রথম কথাটা কি বলতে হয় তাই নিয়ে বহুবার আয়নার সামনে প্র্যাক্টিস করেছে মিতা।কিন্তু অন্য প্রান্তের বলিষ্ঠ ইংরেজী উচ্চারণ তাকে নার্ভাস করে দিয়েছে।কিন্তু কথা না বলে কিছুতেই মনকে শান্ত করা যাচ্ছে না।সে রাতেই পু্নরায় ডায়াল করলো মিতা, বেশ কয়েকবার ফোন ব্যস্ত এলো। কিছুক্ষণ পর ও প্রান্ত থেকে কল এলো ,এবার ঘামতে থাকলো মিতা।মাথার উপর ফুল স্পীডে ফ্যান চলছে,তার ভেতরেই সে ঘামছে।শাড়ির এক কোনা দিয়ে কপালে জমে থাকা ঘাম মুছতে মুছতেই সে মোবাইলে হ্যালো বললো।ওপাশের কৌতুহল-you remembered my time, good.
এতো আত্মবিশ্বাসী কন্ঠের উত্তর কি হতে পারে মিতা বুঝতে পারছে না।ওপাশের প্রশ্ন-You mentioned your name Mita, am I wright ? এবারতো কিছু বলতেই হয় -হুম,আমি মিতা।আসলে গত সপ্তাহে আপনার একটা কবিতা পড়েছি দৈনিক বাংলায় ।তাই জানাতে চাচ্ছিলাম আপনি খুব ভালো বাংলা লিখেন।
মিতাকে খুব চমকে দিয়ে অরণ্য হাসলো-আমি খুব ভালো বাংলা বলতেও পারি।কি করেন আপনি ?
এবার সত্যি চমকানোর পালা,এই স্যুটেড ব্যুটেড কবি দেখা যাচ্ছে বাংলাও খুব ভালো বলে।মিতা যেন প্রাণে একটু শান্তি পেল, মাতৃভাষা বলে কথা।মিতার ভয় ততক্ষনে কেটে গেছে-আমি একটি এন জি ও-তে আছি,আচ্ছা আপনি দেশে থাকবেন কত দিন ?
-ওহ মাই গড,আপনি জানেন যে আমি বাইরে থাকি।যাই হোক,আছি আর দু’সপ্তাহ।
-আমি আপনার বিষয়ে খোঁজ নিয়েই ফোন দিয়েছি,আপনি টরেন্টোতে ব্যবসা করেন ।গরমের ছুটি কাটাতে দেশে এসেছেন,প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসেই আসেন।কিন্তু এবার এসেছেন বৃষ্টি দেখতে।
-এই তথ্য আপনি কোথা থেকে পেলেন?
-গত পরশু একটা লাইভ শোতে আপনার সাক্ষাতকারে বলেছেন।
-সেকি আপনি দেখছি বিরাট জাসুস,গুড ইন্তারেস্টিং।আচ্ছা,আপনার অফিস কোথায়?
-মোহাম্মদপুর ।
-Can we meet tomorrow ?will have some tea or coffee .
মিতা হুট করে রাজি হয় না,সে কিছুটা সময় নেয়।
-কাল ঠিক কখোন?
-এই ধরুন পাঁচটাকি ছ’টা।সন্ধ্যায় আমার একটা সেমিনার আছে, আমি আপনার সাথে দেখা করেই ওখানে চলে যাব।
এই রেঁস্তোরার নাম অরণ্যই প্রপোজ করে,কারণ আর কোন রেস্টুরেন্ট সে চিনেই না।ছাত্র জীবনে সে এই পুরনো রেঁস্তোরা রেখেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছিল ,তার মাথায় এখনো সেটাই ঘুরছে।
অরণ্য নিজ থেকেই দেখা করতে চেয়েছে,সুতরাং তাকে আর ফোন দেওয়া যায় না।তার যদি মনে থাকে তাহলে সে নিজেই আসবে,আর চেনার জন্যেই এই নীল শাড়ির বিষয়টি চলে এসেছে যদিও মোবাইল হাতে আছে।তবু অরণ্য নিশ্চিত হবার জন্য তাকে নীল পড়তে বলেছে।আচ্ছা ,সেতো আকাশি রঙের শাড়ি পড়ে এসেছে ,তাহলে কি অরণ্য তাকে না পেয়ে চলে গেছে?এমনতো হতেই পারে সে মোবাইলে কথা বলতে বলতে হাঁটছিল ,পেছন থেকে একটা ছিনতাইকারি টান দিয়ে তার মোবাইলটা নিয়ে গেছে।সে আর তার নম্বরে কল দিতে পারছেনা।
বৃষ্টি এখন ধরে এসেছে অনেক খানি ।আকাশটা নীল থেকে ক্রমান্নয়ে সাদার দিকে ধাবিত হচ্ছে।ঢলে পড়া সূর্যটা দিনের শেষ রশ্মি বিলিয়ে দিচ্ছে পশ্চিম আকাশ জুরে । হঠাত নিজেকে খুব অবহেলিত মনে হয় মিতার ,এভাবে অল্প পরিচয়ে কোন অচেনা মানুষের সাথে দেখা করতে আসা ঠিক হয়নি।বিষয়টা একটু টিন এজ-দের মতন হয়ে গেল।তারপরো অরণ্যকে একবার দেখার সাধ তার বুকের ভেতর আকুন্ঠ জলের ঢেউ তোলে।সে ভুলে যায় নিজের প্রতি সন্মান ,সে ভুলেই যায় এই সাহিত্য অঙ্গনে তার নিজের পরিচিতিও কিছু কম না ।তার নাম এই দেশের অনেক মানুষ জানে ,সে নিজে একজন জাতীয় পর্যায়ের আবৃত্তিকার।অরণ্য দেশের বাইরে থাকে বলে তাকে চেনেনি, এমন হতে পারে সে যে মিতাকে এখানে আসতে বলেছে তাই তার মনে নেই।
সব ভাবনা দূরে ঢেলে মিতা অরণ্যর নম্বরে ডায়াল করে যায় ।ওপ্রান্তে ওয়েলকাম টিউন বেজেই চলেছে-আজ সারাটা দিন মেঘলা আকশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম ...।কি এক বিষন্ন গোধূলি এসে মিতার চোখে মুখে জায়গা করে নেয় , তা একবার দেখার জন্য কেউ আসে না।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:২৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আহা বৃষ্টি তোমাকে দিলাম। পরিবেশের সাথে আপনার গল্পটি ও ভাল লাগলো।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪৩

রোদেলা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, বৃষ্টি শুভেচ্ছা।

২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৪৬

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
যদি আমি ভুল না করি তবে আপু, তোমার কবিতাগুলো মিস করি।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৩০

রোদেলা বলেছেন: কি ছাই কবিতা লিখেছি তাই লোকে কবি বলে আর এতো গল্প লিখলাম কেউ আমারে গল্পকার বলে না।ঠিক আছে -একটা কবিতাই পোস্ট দেব তোমার জন্য।

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:৩৯

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
:`>
আমার গল্প লিখতে আর পড়তে দুটো কাজেই আগ্রহ শূন্যের কাছাকাছি। :(

অলস। বিভৎস অলস। |-)

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:১৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: রোদেলা ,




শেষ হইয়াও হইলো না শেষ ..... ঝরঝর বৃষ্টি শেষের আমেজটুকুর মতোই বিষাদময় ।
সুন্দর গল্প । +

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪৬

রোদেলা বলেছেন: কিছু কিছু গল্প আছে কখনো শেষ হয় না।ধন্যবাদ ভাই।

৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:২৭

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: এই রেঁস্তোরার নাম অরণ্যই প্রপোজ করে,কারণ আর কোন রেস্টুরেন্ট সে চিনেই না।ছাত্র জীবনে সে এই পুরনো রেঁস্তোরা রেখেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছিল ,তার মাথায় এখনো সেটাই ঘুরছে। - কি সুন্দরে অতীত মানুষকে আগামীর পথ তৈরী করে দেয়।

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩১

অগ্নি সারথি বলেছেন: ভালোলাগা জানায়া গেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.