নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুখের বদলে সুখ //

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৯


--------------------------------------------------------------------------

ড্রেসিং টেবিলটার বয়স প্রায় নিশির বয়সের সমান। নিশি যখন সবে ক্লাশ ত্রিতে পড়ে তখন বাবা বেশ আয়োজন করেই এই আয়না সমেত টেবিলটা কিনে দিয়েছিল অনেক সখ করে ।ছোট বেলা থেকেই মেয়ের সাজগোজের খুব শখ ,মায়ের মেকাপ বক্স থেকে চুরি করে ঠোঁট সাজানো নতুন কোন কিছু নয় । মা প্রায়ই বকা ঝকা করতেন এই নিয়ে তখন নিশির চাইতে বাবার মন খারাপ হতো বেশি ।তাই একদিন মেয়ের সাজগোজ করায় কোন বিঘ্ন না ঘটে সে জন্য আয়োজন করে একটা সেগুন কাঠের ড্রেসিং টেবিল বানিয়ে দিলেন ,সাথে একটি কাঠের বক্স যার ভেতর চুড়ি আর নেইল পলিশ রাখাই ছিল। এই সেই ড্রেসিং টেবিল যার সাথে জীবনের পঁচিশ বছর কাটিয়ে দিল নিশি ।
আজ বাবা নেই ,মা সারাক্ষণ বিছানায় পড়ে থাকেন ।তাকে চিকিৎসা করানোর মতোন বাড়তি টাকা আয় করার মতোন অবস্থা নিশির নেই ।স্কুলের বাচ্চা পড়িয়ে যে ক’পয়সা মাস শেষে জোটে তা দিয়ে বাজার করেই শেষ ,এই পরিত্যাক্ত বাড়িতে থাকতে না পারলে মা মেয়ে রাস্তায় থাকতে হতো।
ডান কানের দুলটা কানে দিতে দিতে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ কানে এলো। মা উঠে যাবার চেষ্টা করছিলেন ,কিন্তু নিশি তাকে নামতে বারন করে নিজেই দরজা খুলে দিল । বাইরে করুণ মুখে তাকিয়ে আছে বণ্যার মা । এ বাড়িতে এ অব্দি অনেক মহিলা কাজ করতে এসেছে ,কিন্তু কারো নাম ঠিক মতোন মনে থাকেনা নিশির ।কেউ রহিমার মা ,কেউবা জরিনার মা ,আর এই হলো বন্যার মা ।সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে হলেও কোন এক বণ্যার সময় তাদের ঘর বাড়ি সবই চলে যায় নদীতে ।তখন দুই মেয়ে কোলে নিয়ে স্বামীর সাথে ঢাকায় চলে আসে কাজের সন্ধানে ।স্বামী রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবজী বিক্রী করলে আর বন্যার মা বাড়ি বাড়ি কাজ করে ,বাকীটা সময় নিশি যখন বাইরে যায় সে সময়টকু সে মায়ের পাশে থেকে দেখশোনা করে ।

খুব বিরক্ত হয়েই নিশি জিজ্ঞেস করলো-কী ব্যাপার এতো দেরী করলা কেন,জানোনা আমি বাইরে যাব।
বণ্যার মায়ের চোখে পানি-মাইয়াটার ক্লাশ শুরু হইয়া গেসে আপা,কিন্তু এখনো ভর্তিই করাইতে পারলাম না।
নিশি খানিক ভেবে বলে -কতো লাগবে ভর্তি করতে ?
-নতুন কলেজ ,ভর্তি ফিতেই দুই হাজার টাকা চইলা যাইবো ।আর বই-খাতা হাবি জাবি কিনতেতো সব মিলাইয়া পাঁচ হাজার টাকা লাগবোই।
বণ্যা প্রায়ই এই বাড়িতে যাওয়া আসা করে ।এতো দরিদ্র ঘরে কেন এতো মেধাবী সন্তান হয়,তা নিয়ে নিশি অনেকক্ষণ ভাবে। এই মেয়ে জিপিএ পেয়েই স্কুল জীবন শেষ করেছে, কথা বার্তায় যথেষ্ট শালীন। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার বাবা মায়ের এই অবস্থা। নিশি একদিন ওকে ইংরেজী পত্রিকা পড়তে দিল,সে গড় গড় করে পড়ে ফেললো ।এমন একটা মেয়ে কেবল টাকার অভাবে কলেজে পড়তে পারবে না ;তা কী করে হয় ।মায়ের অষুধ কেনার জন্য কিছু টাকা নিশী আলাদা করে রেখে দিয়েছিল ।ওখান থেকেই গুনে গুনে পাঁচ হাজার টাকা বণ্যার মায়ের হাতে তুলে দিল । খুশীতে আত্মহারা মাঝ বয়সী মহিলার চোখে যে তৃপ্তির কান্না খেলে উঠলো তার সঠিক বিশ্লেষণ করা নিশির পক্ষে সম্ভব নয়। নিশি চোখ সড়িয়ে কাপর বদলে নিল ।
আজ অনেক দেরী হয়ে গেছে। মাসে দুই একজন ক্লায়ন্ট এমন পাওয়া যায় যারা খুব টাইম মেইন টেইন করে ।ওকে ঠিক বিকেল চারটায় কুড়িল থাকতে বলা হয়েছে ।দিনার সকাল থেকে দু’বার ফোন করে বলে দিয়েছে -খুব ডিসিপ্লিনড মানুষ,কথার হের ফের হলে খুব রাগ করবে।
নিশি সোজাসোজি প্রশ্ন করেছে-টাকা নিয়ে ঝামেলা করবে নাতো ,এর আগেও দেখা গেছে নিজেই ক্লায়েন্টের সাথে দরদাম করতে হয় ,এটা খুবই বিরক্তিকর ।অনেকেতো আবার অর্ধেক টাকা দিয়েই লাপাত্তা হয়ে যায় ।
দিনার খুব বলিষ্ঠ ভাবেই উত্তর করেছে- ও আমার বন্ধু মানুষ ,তুমি পাঁচ হাজার টাকাই পাবে ।একদম চিন্তা করো না।
দিনারকে নিশি বিশ্বাস করে ,আজ প্রায় চার বছর হলো ওর সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে।মা যখন প্রথম স্টোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে তখন এই দিনার খুব ছোটাছোটি করেছিল ।শুধু তাই না ,এক গাদা টাকা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল পাশে ।কিন্তু অতোগুলো টাকা নিশি এখনো শোধ করতে পারেনি ,কিন্তু যখন দিনার যেখানে যেতে বলেছে সেখানেই চলে গেছে। অবশ্য দিনারের বেশীর ভাগ বন্ধুই দেশের বাইরে থাকে,তাদের সাথে নিশির আর কখনোই দেখা হয় নি ।এমন কি তাদের নাম পর্যন্ত তার জানা নেই ।অবশ্য এই কাজে নাম জানাটা খুব দরকারী কিছু নয়।
নিশি একবার ভেবেছিল একটা বাসে উঠে পড়বে,তারপর সেটা কুড়িলের কাছাকাছি আসেলেই নেমে যাবে।সে যে বাসে এসেছে সেটা গাড়ীওয়ালা ভদ্রলোক না দেখলেই হয়,কিন্তু হাতে সময় খুব কম।আবার ফোন ,ওপাশে দিনারের কন্ঠ-তুমি এখনো সি এন জি নাও নি,উনি কিন্তু চারটা বাজার এক মিনিট দেরী করবেন না।
নিশি সিন এন জি ওয়ালাকে জোড়ে চালাতে বললো ।ড্রাইভার যথারীতি মিটারে চল্লিশ তুলে দিল,নিশি মহা বিরক্ত-আপনারা ভাড়া ঠিক করে নেন ,আবার মিটার ছেড়ে দেন ।কাহিনী কি?
ড্রাইভারের নির্লিপ্ত উত্তর-কাহিনী কিছুই না আপা,পোশাইতেতো হইবো। আর দশ মিনিট টাইম দিয়েন ,গ্যাস নেওন লাগবো।
আসলেও তাই।সবাই পোশাইতে চায়,এই যেমন স্কুলের বেতনে পোশায় না,কোচিং-এর টাকায় পোশায় না,চাকরী করেও পোশায় না।তাই নিশির মতোন সবাই এ দিক ওদিক যায় ।সমস্যা একটাই -তারা করে প্রকাশ্যে,আর নিশীরা সবার চোখের অন্তরালে । সমাজ এদেরকে নোংড়া -অচ্ছুত করে রাখে ।
ঘড়ির কাটাতে চারটা দশ,শনিবার হওয়াতে কীনা বোঝা যাচ্ছে না ;রাস্তা ঘাট একেবারেই ফাঁকা ।কেবল বড় বড় গাড়ি হর্ণ বাজিয়ে ছুটে চলেছে ।নিশি সি এন জি বিদায় দিয়ে ব্রীজের নীচে দাঁড়ালো,কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে ফোন দিল দিনারকে -কী ব্যাপার,আমিতো কাউকে দেখছিনা।
দিনারের গলায় চিন্তার সুর-হুম,মনে হচ্ছে জ্যামে আটকে গেছে।তুমি থাকো ,আমিই আসছি ।
এটা এমন একটা জায়গা ,না আছে কোন রেস্টুরেন্ট ,না মার্কেট ।শীতের বিকেল,হু হু করে বাতাস বইতে শুরু করেছে ।নিশি বুঝতে পারছে না -কী করবে ।একেতো সকালেই এতো গুলো টাকা গেল,এখন আবার দু’শো টাকা শেষ গাড়ি ভাড়াতেই ।দিনার যদি টাকাটা না দেয় তাহলে মায়ের জন্য আজ আর অষুধ কেনা হবে না ।আগের ধার এখনো পরিশোধ হয়নি ,নতুন করে কে দেবে টাকা ! আবার ফোন বেজে উঠলো-সরি নিশি , ও একটা কাজে আটকে গেছে ।
কথাটা শোনা মাত্র নিশির মাথাটা ঘুরে উঠলো ,সে কিছু বলার আগেই দিনার জিজ্ঞেস করলো-তোমার কি বিকাশ নম্বর আছে ?
নিশি খুব অবাক-কেন? আছেতো ।
-তুমি আজ চলে যাও,আমার বন্ধু খুব ঝামেলায় পড়ে গেছে, আমি তার অফিসের নিচেই আছি ।কিছু মনে করোনা বন্ধু ,তুমি টাকাটা পেয়ে যাবে ।
নিশি মনে মনে হাসে ।তার এখানে মনে করার কীবা আছে ,তার দরকার টাকা ,কে আসলো আর কে গেল -এইসব নিয়ে ভাব্বার সময় নেই ।কিন্তু ভয় হচ্ছিল যদি দিনার টাকাটা না পাঠাতে পারে,কারন ঐ বন্ধুর সাথে তার দেখাইতো হয় নি।তবু এক ধরণের বিশ্বাস আছে নিশির, দিনার এমন করবে না।
খুব লাল চা খেতে ইচ্ছে করছে ,ভীষন তেষ্টাও পেয়েছে ।সেই সাথে মাথা ব্যাথা গেছে বেড়ে ।নিশি বাড়তি কিছু ভাবতে চাইছে না,পাশেই অনেক গুলো টঙ্গের দোকান ।সন্ধ্যা আলোতে মানুষ গুলোকে কেমন আবছায়া লাগছে ।কারো মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না,দেখা না হওয়াই ভালো। এই শহরের চেনা গলির ভেতর অচেনা মুখের আগ্রহী চাহনী আজকাল বড্ড ভালো লাগে ।অবশ্য তা এক মুহূর্তের জন্য, প্রয়োজন যখন ফুরিয়ে যায় তখন সেই চেনা মানুষটিকে বড্ড বিরক্তিকর মনে হয় ।মনে রাখার মতোন জীবনে দুই একটা মানুষ থাকলেই যথেষ্ট।
গরম চা নিশি একদম খেতে পারে না,তাই হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিল ।মাঘ মাসের ঘন সন্ধ্যায় তার হাতের পেয়ালা ঠান্ডা হয়ে গেল ,নিশী কাপে ঠোঁট ছোঁয়াতেই মোবাইলে মৃদু শব্দ। চায়ের কাপ পাশে রেখে নিশি মুঠোফোন হাতে নিল ,ইনবক্স খুলতেই ভেসে উঠলো সেই আকাংখিত ম্যাসেজ-bKash.
ঠান্ডা হতে থাকা চা টা আরো বেশী ঠান্ডা হতে থাকে ।নিশি খুব দ্রুত একটি চলন্ত বাসে উঠে পড়ে,বেশী রাত হবার আগেই একাউন্ট থেকে টাকা তুলে মায়ের জন্য অষুধ কিনে বাড়ি ফিরতে হবে । উফ ,রাস্তায় এতো ট্রাফিক জ্যাম পড়ে কেন !!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন রোদেলা!!

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪১

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অনেক সুন্দর লিখেছেন। ভাল লাগল।

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১২

রানার ব্লগ বলেছেন: এমনি করেই নিশিদের দিন কেটে যায়, নিশিরা কখনই ভোরের স্নিগ্ধ আলোর মুখ দেখে না।

৪| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৯

কালীদাস বলেছেন: সিম্পল প্লট। কিন্তু ঝরঝরে, সুন্দর :)

৫| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩৭

রোদেলা বলেছেন: সমাজের অন্ধকার গলি থেকে মেয়েদের তুলে আনতে চাই,জানতে চাই তাদের ও পথে হারিয়ে যাবার রহস্য।সাথেই থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.