![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক ছিল কাঠুরিয়া। সে বাস করত এক বনের পাশে। প্রতিদিন সে কাঠ কাটত। সপ্তাহে একদিন বাজারে তা বিক্রি করত। এভাবেই কাঠুরিয়ার স্ত্রী ও তিন সনত্মানকে নিয়ে কোন রকমে দিন কাটত। একদিন কাঠুরিয়া বনে কাঠ কাটতে গেল। কিন্তু কোন কাঠ পেল না। এতে মন খুব খারাপ হলো। আসত্মে আসত্মে বনের গহীনে গিয়ে কিছু কাঠ পেল। তাই মনোযোগে দিয়ে কাঠ কাটতে লাগল। কিছুৰণ কাঠ কাটার পর সে খুব ক্লানত্ম হয়ে পড়ল। তাই সে সঙ্গে আনা পুটলী থেকে কিছু খাবার বের করল এবং পেটপুরে খেল। তারপর কিছুৰণ বিশ্রামের জন্য একটা গাছের নিচে বসল। তখন তার কাছে মনে হলো কিসের যেন একটা শব্দ আসছে দূর থেকে। হঠাৎ দেখে এক অদ্ভূত ধরনের পাখি শাঁ-শাঁ শব্দ করে যাচ্ছে। অবাক হয়ে দেখল পাখিটা দেখতে কী যে সুন্দর। তখন পাখি কাঠুরিয়াকে দেখে বলল, হে ভাই কাঠুরিয়া আমার রাজ্যে তুমি কিভাবে এলে। কাঠুরিয়া মনে মনে বলল, স্বপ্ন দেখছি না-কি। পাখি আবার কথা বলে উঠল, কি ভাবছো কাঠুরিয়া? তখন কাঠুরিয়া বলল, ভাবছি পাখি মানুষের মতো এত সুন্দর কথা বলে কিভাবে? যেন তা বিশ্বাস করতে পারছি না। তখন পাখিটা বলল, আমি সাধারণ পাখি নই? তুমি কিসের জন্য এসেছ এই গহীন বনে? তখন কাঠুরিয়া বলল, আমাদের কথা কেউ কি শোনে? এখানে এসেছি পেটের তাগিদে। সবই তো জানলে। এবার তোমার পরিচয়টা বল। তখন পাখিটা সুন্দর কণ্ঠে বলতে লাগল_ আমার নাম সুখ পাখি। সবার দুঃখ মুছে দেয়া আমার কাজ। সবার ঘরে সুখ এনে দেই আমি। তখন সুখ পাখি বলল, হে কাঠুরিয়া তোমার সারা জীবন কি যাবে গভীর অরম্নণ্যে কাঠ কেটে? কাঠুরিয়া বলল, কি আর করব, গরিবের কপালে যা আছে।
কি যে বল? এসেছ যখন আমার রাজ্যে দেব তোমার দুঃখ মুছে। তখন সুখ পাখি তার বিশাল ডানা থেকে একটি মণি-মুক্তা ভরপুর থলে দিয়ে বলল, তোমাকে খুশি হয়ে উপহার দিলাম। কাজে লাগবে তোমার। আর এক মাস পর আমাকে এখানে এসে ডাক দেবে, তখন আমি হাজির হব। তখন সেই দিনের মতো সুখ পাখিকে বিদায় জানিয়ে কাঠুরিয়া বাড়ি ফিরল। ব্যাগভর্তি সোনাদানা দেখে কাঠুরিয়ার বউ বলল, তুমি এসব কোথায় পেলে। না তুমি ছুরি করেছ? কাঠুরিয়া বউকে সব কাহিনী বলল। বউ ভয়ও পেল, কিন্তু হলো খুশিও। কয়েক দিনের মধ্যে তাদের অবস্থা অন্য রকম হয়ে গেল। কাঠুরিয়া আর কাঠ কাটে না। তারা সুখে বসবাস করতে লাগল। ঠিক একমাস পর কাঠুরিয়া সুখ পাখির কথা মতো গহীন বনে গেল। তখন সে জোরে সুখ পাখিকে ডাক দিল। পরপর সে তিন তিনটি ডাক দিল। তারপর সে বিরক্ত হয়ে বলল, আরে ওই সুখ পাখি তুমি কোথায়।
তখন সুখ পাখি বলল, আমি এখানে।
তুমি ভাল আছ সুখ পাখি?
হঁ্যা ভাল আছি।
কিসের জন্য আসতে বলেছ আমাকে?
তোমাকে আজ আমার সবুজ ঘেরা বন দেখব এবং আমার রাজ্যে নিয়ে যাব।
কিভাবে যাবে আমাকে নিয়ে?
সুখ পাখি বলল, আমার পিঠের উপর উঠিয়ে নিয়ে যাব। তখন কাঠুরিয়া সুখ পাখির পিঠের ওপর উঠল আর পঙ্খীরাজের মতো উড়ে বিশাল বন দেখতে লাগল। সুখ পাখি বলল, হে ভাই কাঠুরিয়া শক্ত করে আমাকে ধরবে না হয়তো পড়ে যাবে।
আচ্ছা শক্ত করে ধরব, কাঠুরিয়া বলল।
বন দেখার পর তারা সুখ পাখির রাজ্যে যেতে শুরম্ন করল। যখন তারা রাজ্যে নামল। তখন বিশাল বিশাল অদ্ভূত ধরনের পাখিরা কাঠুরিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে লাগল। এতে কাঠুরিয়া খুশি হলো। কাঠুরিয়াকে এক সিংহাসনে বসতে দেয়া হলো। রাজ্যের সবাই সুখ পাখির কথা মতো চলে। যা বলে তাই করে। তখন সুখ পাখি বলল, হে ভাই কাঠুরিয়া তোমাকে এত কিছু দেখানোর মানে হলো তোমার সাথে আর দেখা হবে না। তখন কাঠুরিয়ার চোখে পানি এসে গেল। সুখ পাখি বলল, কেঁদো না ভাই, আমরা অন্য প্রদেশে রাজত্বে করব। তাই আমরা চলে যাব। তারপর কাঠুরিয়া সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিল এবং সুখ পাখি তার ডানায় উড়ে উড়ে কাঠুরিয়াকে তার বাড়ির সামনে দিয়ে গেল। সুখ পাখি বলল, তুমি অনেক দিন আগে একটা ছোট্ট পাখিকে গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার সময় রৰা করেছিলে। সে জন্যই তোমাকে সামান্য কিছু উপহার দেয়া হলো। কাঠুরিয়া অনেক বেদনার মাঝে সুখ পাখিকে বিদায় জানাল। কাঠুিরয়া তার বাড়ির দিকে চেয়ে বলল, এ সব কিছুই সুখ পাখির দান। ভাবতে অবাক লাগছে কাঠুরিয়ার সুখ পাখির সাথে তার আর দেখা হবে না। তারপর থেকে কাঠুরিয়া সুখ পাখির উপহার নিয়ে সুখে শানত্মিতে বসবাস করতে লাগল। আজও পাখির কথা মনে পড়ে কাঠুরিয়ার।
©somewhere in net ltd.