নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি নতুন সকাল। হর্নের শব্দে চোখ মেলে দেখলাম ট্রেন কমলাপুর রেল েষ্টশনে এসে থেমেছে। আপা ব্যাগটা দিবেন? আমি অবাক হয়ে তাকালাম সাত-আট বছরের এই শিশুটির দিকে। যে বয়সে আমরা স্কুল যেতাম বাবা-মায়ের হাত ধরে, সে বয়সে এই শিশুটি কিনা পেটের দায়ে ভারী বোঝা বহন করছে।
-এই তোর নাম কি?
-আমার নাম জুবায়ের।
-স্কুলে যাস না?
-যে না আফা।
-আমি কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে রইলাম জুবায়ের নামক এই দেব শিশুটির দিকে। শিশুটির সাথে কথা বার্তার এক পর্যায়ে বেশ ভাব হয়ে গেলো আমার। জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো পড়াশোনার ব্যাপারে তার আগ্রহ আছে, কিন্তু কোন ব্যবস্থার কথা জানা নেই তার।
এটাই শেষ নয়। তখন ছিল শীতকাল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বস্তিতে শীতবস্ত্র বিতরণের সময় দেখা হয়ে গেল আবার শিশুটির সাথে। পরিবারের সাথে বসে রাতের খাবার খাচ্ছিল। আমাকে দেখে চিনতে পারল। ঢাকার মানিকগঞ্জে তাদের আবাস। মানিকগঞ্জে অবস্থিত বাজারের কাছে দৈনিক চুক্তি ভিত্তিতে মাটি কাটার কাজ করেন ফাতেমা। পঙ্গু স্বামী ভিক্ষা করেন ।আর শিশু জুবায়ের কমলাপুরে কুলীর কাজ করে। স্বামী স্ত্রীর ও শিশু সন্তান অমানুষিক কায়িক শ্রমে চাকা ঘোরে তিনজনের সংসারের। সংসার বলতে কিছু নেই এইখানে, কোনমতে খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন। দু’বেলা খাবার যোগাড় করতেই যেখানে তাদের দু’জনের পাওনা পারিশ্রমিক হিমশিম খেয়ে যায় সেখানে অন্যান্য মৌলিক অধিকার বাহুল্যই বটে। অথচ এ বয়সে পড়াশোনা আর খেলাধুলায় মেতে ওঠার কথা জুবায়েরের।
কিন্তু যেখানে সর্বগ্রাসী ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় সেখানে পড়াশোনা আর খেলাধুলার বাণী তো জুবায়েরের কাছে পূর্ণিমার চাঁদের মতই দুর্লভ আর দুষ্প্রাপ্য কোনো বিষয়। বাবা-মায়ের কঠিন সংগ্রামময় পরিশ্রমের প্রত্যেকটি মুহূর্তের নীরব সাক্ষী হয়েই সময় কাটাতে হয় জুবায়েরকে। নিত্য অনিশ্চয়তা, আর সুশীল সমাজের লাথি, গুতা মোকাবেলা করে খড়কুটোর মতই ভেসে থাকতে হচ্ছে জুবায়েরের পরিবারকে। তাদের কজনেরই খবর আর রাখে আমাদের সুশীল সমাজের কর্ণধাররা?
সুশীল সমাজের কাছে আমার একটা প্রশ্ন ,এই শিশুটির ভবিষ্যৎ কি কেও বলতে পারেন? কী জবাব দেবেন শিশু ও মানবাধিকার নিয়ে নিত্য সরব আমাদের রাষ্ট্র আর সুশীল সমাজের কর্ণধাররা?
নীরবে দিনের পর দিন বাবা-মায়ের কঠিন সংগ্রাম দেখতে দেখতে এই বয়সেই জুবায়েররা বুঝে যায় পৃথিবীতে তাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা, শখের কোনো মূল্য নেই, এমনকি সুস্থভাবে বেঁচে থাকারও অধিকার নেই। আমাদের অনুন্নয়নশীল দেশে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা কাছে সৃষ্টির সেরা এই অবহেলিত মানুষগুলোর কোন সামাজিক মর্যাদা নেই। তাদের ঘরে জন্ম নেয়া শিশু-কিশোরদের কোন ভবিষ্যতে নাই।
শিশু শ্রম নিয়ে অনেক আইন আছে সুপ্রিম কোর্টের বড় বড় বইয়ের পাতায়। কিন্তু কার্যকরের বেলায় আইন থাকে শূন্যের কোটায় যার ফলশ্রুতিতে শ্রমিক শিশুরা করে মানবেতর জীবন যাপন আর থাকে বস্তিতে ।
কথায় আছে, আবেগ দিয়ে ভালোবাসা হয় জীবন চলে না। জুবায়েরদের জীবনেও হয়তো ভালোবাসা আছে কিন্তু জীবন চলছে তিমিরাবগুণ্ঠিত ভাবে।
ব্রিটিশ গেলো, পাকিস্তান গেলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আর জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ সবই হল। কিন্তু জুবায়েরদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হল না।
কামিনী রায়ের সেই বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে গেল এই অবেলাই
-"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"-
সকলেই ছোটবেলায় বইয়ে পড়েন কবিতাটি কিন্তু সেই অনুযায়ী কাজ করেন ক’জন? আবার মুখে অনেক ভালো কথা বলছেন কিন্তু কোন কাজ করছেন না।
যদি জুবায়েররা কখনও জিজ্ঞেস করে এই স্বাধীন দেশেও কেনো তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হলো না, তবে কী জবাব দেবেন দেশ সুশীল সমাজ আর সচেতন নাগরিকের লেবাস লাগানো সমাজের সুবিধাভোগীরা? শিশু সদনের সংখ্যা বাড়িয়ে সুবিধা বঞ্ছিত শিশুদের আবাসন ও পড়ালেখার সুব্যবস্থা গ্রহণ করে জুবায়ের তথা সকল সুবিধা বঞ্ছিত শিশুদের জীবন আলো ফুটিয়ে তুলতে রাষ্ট্র আর সুশীল সমাজের কর্ণধারদের সুদৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।
২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৪৪
ছায়াসঙ্গী তারিক বলেছেন: এগিয়ে যাও সম্মুখপানে
কথা আর সুরের তানে ৷৷৷
৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:০৬
রহস্যময় পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা @হাসান মাহমুদ ১২৩৪ এবং @ছায়াসঙ্গী তারিক
আপনাদের শুভকামনা ভবিষ্যতে ভালো লিখনির জন্য অনুপ্রেরনা হয়ে থাকবে ।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:২৮
হাসান মাহমুদ ১২৩৪ বলেছেন: স্বাধীন দেশেও আমরা স্বাধীন নই। দারিদ্রতা, মানবাধিকার সমস্যা, শিশুশ্রম এর শিখলে আমরা বন্দি। আমাদের দেশে সুশীল সমাজ কিছু করতে পারেনা। যারা করতে পারে, সেই রাজনীতিবিদরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত, তাদের সময় কোথায় এসব দেখার!!!
অনেক ভভালো লেগেছে আপনার ভাবনা আর লিখা।