![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নায়ে বসে আছি, চারপাশে খরস্রোতা ঢেউ আর ঢেউ জীবনের তীক্ষ্ণ অভিজ্ঞতা গুলি যেন মিশে যাচ্ছে নদীর বাঁকে, পুনরায় ধরেছি বৈঠা , আসুক না হাজারো ঝড়, যাব এক অচিন গাঁয়ে, বিলিয়ে দেব ভালবাসা অকাতরে , যাবে আমার সাথে? তিমির এখন কাটেনি , তবুও ধরেছি বৈঠা, আজ খেলবো নদীর ঢেউয়ের সাথে, থাকবে আমার পাশে? ঝড় এলে করনা ভয় , আমার কাছে বেঁচে থাকার মন্ত্র আছে। এই দেখ, কত সব কচুরিপানা এসেছে, আমাদের সঙ্গ দেবে বলে। তুমি ভয় করনা , আমার কাছে মন্ত্র আছে...
২০০৮ সালে সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওয়া গায়ে লেগেছে, প্রায়ই নদীর পাড়ে বেড়াতে যেতাম , বসে থাকতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা , সেখানে পরিচয় হয় আমার সাথে মনু মিয়াঁর , খুব দারুণ বাঁশের বাঁশী বাজাতে পারেন তিনি , তাঁর সাথে বসে কথা বলা যেন আমার প্রতিদিনের রুটিন মাফিক কাজ হয়ে গেল। আমি তাঁকে বললাম মনু ভাই আমি আপনার কাছে বাঁশী বাজানো শিখব , আপনি আমাকে তালিম দিবেন ,কিভাবে বাঁশী বাজাতে হয় ? মনু ভাই , আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন । তারপর , আমাকে বললেন , ঠিক আছে তবে এক শর্তে ।আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি শর্ত ? তিনি বললেন আপনি আমার বাড়িতে এক বেলা ডাল ভাত খাইতে যাইবেন ।
মনু মিয়াঁর সম্পর্কে বলি , তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি , তাঁর বাড়ি মতলব দক্ষিণে কোন এক গ্রামে , তাঁর পরিবার বলতে তিনি , তাঁর স্ত্রী আর সাত বছরের এক কন্যা সন্তান। তিনি কথায় কথায় বলে ছিলেন এটা নাকি তাঁর দ্বিতীয় জন্ম। আমি বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তিনি বললেন আপনি আমার বাড়ীতে আসেন আগে, তহন কমু।
মনু ভাই , ক্লাশ চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন , কিন্তু উনার কথা শুনলে মনে হবে তিনি খুবই উচ্চ শিক্ষিত লোক । দেখতে লম্বা , রোগাটে , কিন্তু চেহারায় এক অদ্ভুত ধরনের মায়া আছে , কোন লোক বুঝতে পারবে না তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। যতদিন উনাকে দেখছি গায়ে কালো দাগের সাদা শার্ট আর সাদা লুঙ্গী আর পায়ে দামী চামড়ার জুতা এক কথায় সম্পূর্ণ পরিপাটি একজন লোক।
অবশেষে আমি তাঁর সাথে রওনা হলাম গ্রামে......
গ্রামটা যেন গাছগাছালির লীলাভূমি যেন সবুজের এক তীর্থস্থান । মনু মিয়াঁর বাড়ির বর্ণনা দিলে পাঠক বিষয়টা সম্পর্কে আরও পরিস্কার হবেন। বিশাল বাড়ি , চারপাশে নাম না জানা হাজারোও গাছ , বাড়ির সামনে একটা পুকুর , পুকুরটার দক্ষিণ দিকে পাকা ঘাট । আমার বুঝতে অসুবিধা হলনা , মনু মিয়াঁ বিশাল জায়গা জমিনের মালিক । আমি মনু মিয়াঁর বাড়িতে প্রবেশ করলাম , তিনি আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন, চারদিকে গাছপালা, এক পাশে পুকুর আর এক কোনে চারপাশে দেয়াল আর উপরে টিন দেওয়া ছোট খাট একতলা ঘর।
আমি ঘরে প্রবেশ করলাম...।
- ভাই আসেন , লজ্জা পাইয়েন না আসেন আসেন , আমার বাড়িতে আমি , আমার বউ আর ছোট মাইয়াটা।
- ভাবিকে দেখছি না যে ?
- ভাই , আমার কপাল খারাপ , মাইয়াটা যখন তিন বছর আমার বউর জানি কি হইল , ঘাটেরতন উঠতে পারত না । টাউনে নিয়া গেলাম , ডাক্তার কইল এটা নাকি পারকিন্সন রোগ। আচ্ছা ভাই আপনি কিছু জানেন এই রোগ সম্পর্কে ?
- হুম কিন্তু তেমন কিছু না । এই রোগ হলে মানুষের মাথার স্নায়ুগুলি কাজ করা বন্ধ করে দেয় , মোট কথা আমাদের ব্রেনের যেই জায়গা থেকে আমাদের দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গ পরিচালনা করে সেই সব স্থানের সেল গুলি বিকল হয়ে যায় । আর রোগটার আবিস্কার করেন ডাঃ পারকিন্সন ,তার নাম অনুসারে এই রোগের নামকরন করা হয়।
মনু মিয়াঁ আমার কথা খুব মনযোগ দিয়ে শুনলেন
- ভাই , এই রোগ কি ভালা হয়না ।
- এই রোগ ভাল হয়ার সভবনা
হলুদ শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করল একটা মেয়ে, টেবিলের উপর গ্লাস রেখে মেয়েটা চলে যাচ্ছিল ।
- মা , আঙ্কেলকে সালাম দে।
- অসসালামুয়ালাইকুম ।
মেয়েটা তারপর আমার পা ধরে সালাম করতে লাগল ।
- ভাই , এটা আমার একমাত্র মাইয়া মালা । দেখতে কালা হইলেও অনেক গুন আছে আমার মাইয়াটার । তিন বছর বয়সে এর মা বিছানা নিছে , আর তখন থেকা মাইয়াটা মন মরা হইয়া থাকে , স্কুলে যায় না , মার বিছানার কাছে সব সময় বইয়া থাকে । আপনার জন্য আজ যে ডাল ভাতের ব্যবস্থা করছি , বেশির ভাগ কাজই আমার মাইয়াটা করছে ।
- মনু ভাই , আপনি আপনার দ্বিতীয় জন্ম সম্পর্কে কিছু বললেন না ?
- বলমু আগে খাওয়া দাওয়া করেন তারপর , মালা মা খাওয়ার রেডি কর।
- আচ্ছা , আব্বা।
- মনু ভাই , আমি ভাবির সাথে একটু দেখা করতে পারি ?
- করবেন ? , আসেন।
রুমটা অন্ধকার , কিন্তু দক্ষিন দিকে জানলাটা খোলা , বাইরের আলো রুমের বিছানার উপর পড়ছে ......... to be continued
©somewhere in net ltd.