নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতাঃ ভূগোল বইতে বিভিন্ন দেশের রাজধানীর নাম মুখস্থ করার এক প্রতীকি চিত্র

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৬

শাসকশ্রেণীসহ আমজনতা হিসাবে আমরা যারা নিজেদের দাবী করি আমাদের প্রত্যেকের আসল চরিত্র বোঝার জন্য জ্ঞানে-শিক্ষায় বিদগ্ধ পন্ডিত হবার প্রয়োজন নেই । না প্রয়োজন আছে টকশোতে গিয়ে মলত্যাগ করার মতো নিজের অর্জিত সমস্ত বিদ্যা ঝেড়ে দেওয়ার । ব্যক্তিগত , সামাজিক , জাতীয় মোদ্দা কথা সকল প্রকারের রাজনৈতিক হুজুগ থেকে নিজেকে দশ মিনিটের জন্য বাইরে রেখে মস্তিষ্ক নামক বস্তুটাকে একটু খাটাবার ইচ্ছা থাকলেই হয় ।



তেল-গ্যাসসহ বিভিন্ন জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে পুলিশ স্ট্যাবলিশমেন্টের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের লাঠি-পেটা করে । ভোর থেকেই অবলীলায় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা শুরু করে । আন্দোলনরতদের মধ্যে যারা নারী তাদের সাথে পুলিশ কি অভব্য ব্যবহার করে সেটা সামনে থেকে আমার নিজের চোখেই দেখা । “ থানায় একবার নিয়া যাই , ভিতরে ভইরা দিমুনে “ ধরণের কথাবার্তা শুনলে মনে হবার কোন কারণ নেই যে আমরা ১৯৫০ সালের সময়ের থেকে বর্তমানে ২০১৩ সালে এসে পৌঁছেছি যেই সময়ে তেভাগা আন্দোলনের পথিকৃৎ নেত্রী ইলা মিত্রকে পুলিশ কাস্টডীতে নিয়ে গণধর্ষণের পর তার যৌনাঙ্গে গরম ডিম প্রবিষ্ট করানো হয়েছিলো । নিজেদের জীবিকার খাতিরে পথে নামা নিরীহ শিক্ষকদের উপর পিপার স্প্রে করা হয় । গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিষয়টা নিয়ে আলাদা করে আর নাইবা লিখলাম । আবার ঠিক তার বিপরীতক্রমে আমরা কি দেখি ? স্ট্যাবলিশমেন্টের যেই অংশটি জনগণের সমর্থনের বিষয়টির থোড়াই কেয়ার করে জনপথে নেমে অগ্নিকান্ড , বিনাবিচারে মানুষ হত্যা , জ্বালাও-পোড়াও কর্মকান্ড করে সেই সময়ে পুলিশ কেবল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে । তাদের অনেকেই তখন তীব্রভাবে আহত হবার সাথে সাথে মৃত্যুবরণও করে । স্ট্যাবলিশমেন্টের ক্ষমতাসীন অংশটির নির্দেশ ছাড়া সেই সময়ে পুলিশের এই অপদার্থ ভূমিকা পালন করার অন্য কোন কারণ আছে বলে মনে করিনা । থেকে থাকলেও তা অবশ্যই গৌণ । এমন দৃশ্য স্ট্যাবলিশমেন্টের দলগুলার পারস্পরিক অবস্থান পরিবর্তিত হলেও বদলাবেনা , বদলায়না । বাংলা ভাই নামক এক মধ্যযুগীয় বর্বরের আবির্ভাব আমরা বিনা কারণে একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভিকে এসে প্রত্যক্ষ করিনি । সেই সময়ে গ্রেফতার করা ১৫ – ২০ জনকে একই দঁড়ি দিয়ে বেঁধে গরু-ছাগলের মতো করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও আমরা দেখেছিলাম । এই দেশে গণতন্ত্র ?? গণতন্ত্রের চর্চা ?? থু !!!!!!!



প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই নেত্রী নিজেদের মধ্যে ফোনালাপ সেরেছেন । আহা সাধু সাধু !!!!!! আমরা এই বছরে আরো একটি অতিরিক্ত ঈদের চাঁদ দেখতে পেয়েছি !!!!!! আসন্ন সেই ঈদের পর সম্ভাব্য কি হতে পারে ? অনেক কিছুই হতে পারে । সবচাইতে বড় যেই বিপদ এসে আমাদের সামনে হাজির হতে পারে সেটা হলো প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নিজেরকার মধ্যকার চুলোচুলি , কামড়াকামড়ির ফসল হিসাবে আমরা আরেকটি ১ / ১১ প্রত্যক্ষ করতে পারি । জলপাইওয়ালাদের ইশারা করলেই তারা সর্বদা প্রস্তুত । সাথে আছে যাদের দান-ক্ষয়রাতের মাধ্যমে স্ট্যাবলিশমেন্টের প্রধান যেই দুই দল আপামর জনগণের উপর ছড়ি ঘোরাতে পারে সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিজস্ব হিসাব-নিকাশ । নিজেদের ষোল আনার উপরে আঠারো আনা লাভ নিশ্চিত করতে তারা প্রয়োজনবোধে আরেকটি ১ / ১১ এর জন্ম দিতে দ্বিতীয়বার কুন্ঠিতবোধ করবেনা । এমন আরেকটি রাজনৈতিক পালাবদলের পালে বাতাস দিতে কারা আছেন ? জনগণের সাথে কনামাত্র সম্পৃক্ততা না থাকা তথাকথিত টেকনোক্রেটগণ । তারা তাদের নিরাকার অবয়ব দ্বারাই জনগণের তার চেয়ে অনেক বেশী পরিমাণ ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম যেটা নিজস্ব চেহারা দেখিয়ে একজন পাতি রাজনৈতিক নেতা , এমপি করে থাকে । আমাদের দেশের ইতিহাস বলে যে কোন অবস্থায় একজন পাতি রাজনৈতিক নেতা , এমপির চেয়ে এসব টেকনোক্রেট , আমলারা জনগণের জন্য বেশী ক্ষতিকর । কারণ অবয়ব থাকা শত্রুকে চেনা যায় । কিন্তু যার অবয়বই অস্পষ্ট , আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে তাকে কিভাবে ধরবেন ? সেই সময়েও তার সবই হবে যা ক্ষমতাসীন দুই রাজনৈতিক দলের যে কোন একটি ক্ষমতায় থাকলে হয়ে থাকে । পার্থক্য হলো সেই সময়ে আপনি প্রকৃত শত্রুকে ঠিকভাবে শনাক্তই করতে পারবেন না যা ক্ষমতাসীন দুই রাজনৈতিক দলের একটি থাকলে পারেন । আপনি তখনও ঢিল ছুড়বেন কিন্তু সম্পূর্ণ অন্ধকারে !!!!!!



ঠিক এমন সংকটপূর্ণ সময়ে পত্রিকায় খবর আসলো যে ক্ষুদ্র ঋণের দায় মেটাতে অনেকে নিজের কিডনী বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন । যিনি এই ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা তার পরিচয় কি ? তিনি ‘ শান্তিতে ‘ নোবেল পুরুষ্কার একজন ব্যক্তিত্ব । সেই ডঃ ঈউনূস সাহেবের ‘ ক্ষুদ্র ঋণ ‘ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা কি ? তার এই কনসেপ্ট দেশের দারিদ্য্ বিমোচনে সাহায্য করছে । অজস্র দরিদ্র জনগণকে স্বনির্ভর করে তুলতে সাহায্য করছে । মারহাবা , সত্যিই আমাদের প্রজ্ঞার কোন তুলনা হয়না !!!!!! এই কনসেপ্ট এমনই এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে যার কারণে নিজের কিডনী বিক্রি তো অনেক দূরের কথা অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন ইতোমধ্যে । মনে পড়ে সবিতা রানীকে ? তখন সদ্য ঈউনূসের নোবেল পদক প্রাপ্তির ডামাডোলে , ১ / ১১ এর সূচনায় হকচকিত জনগণের আশা , ভয় ইত্যাদির মাঝেই ক্ষুদ্র ঋণের দায় মেটাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন কুড়িগ্রামের এই সবিতা রানী । আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতা সবিতা রানীদের দেখতে শেখায়নি । ‘ শান্তিতে ‘ নোবেল পাওয়া ডঃ ঈউনূস সাহেবের রাজনৈতিক মতাদর্শ ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ? কাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আছে ? তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে কিছু বলেন না । রামুতে সাম্প্রদায়িক আক্রমনের ঘটনাসহ এরকম বিভিন্ন ঘটনাসমূহের বেলায় নিশ্চুপ থাকেন । দেশের তরুণদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস , ভরসা প্রকাশ করার পরেও বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রতি তার সমর্থনের কোন কমতি থাকেনা । চট্টগ্রাম বন্দর খুলে দেওয়ার প্রতিও তার অগাধ সমর্থন ছিলো বিগত সামরিক শাসনের সময় । উৎপাদনমুখী কর্মকান্ডের উপর নির্ভর করে জাতীয় অর্থনীতির ভিত গড়ে উঠুক এই চিন্তাই তার নিকট সাক্ষাত দুঃস্বপ্ন । আমাদের কারোরই এই বিষয়সমূহ নিয়ে আদপেই কোন ভাবনা কিংবা মনোযোগ নেই । অপরিপক্ক বয়সে আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতার সর্বোচ্চো পাঠ ছিলো স্কুলের ভূগোল বইতে কোন দেশের রাজনীতির নাম কি তা মুখস্থ করা এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার জন্য কারেন্ট এফেয়ার্স ধরণের ছোট ছোট কাগজে দেশীয় এবং বৈশ্বিক রাজনীতির সম্পর্কে সাময়িক সময়ের জন্য সড়গড় হয়ে নেওয়ার কৌশিশ করা । পরিপক্ক বয়সে এসে আমাদের সেই রাজনৈতিক সচেতনতা !!!! এসে দাঁড়িয়েছে দুই নেত্রীর ফোনালাপ থেকে শুরু কোন এক গায়িকা কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে তা নিয়ে আলোচনার অর্থহীন পরিসরের ঘেরাটোপের মধ্যে । এই কারণে আমাদের এই কথিত রাজনৈতিক সচেতনতার কনামাত্র মূল্য নেই । এই কারণেই আমাদের তথাকথিত রাজনৈতিক সচেতনতা ঊটের মূত্রের মতই দুর্গন্ধযুক্ত ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৩৫

স্বসংকোচ বলেছেন: সুন্দর লেখা, ভাল লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.