নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্প্রদায়িক আক্রমণঃ সুদূর অতীতের শৌর্য-বীর্যের নিস্ফল কথনে বাড়বে বই কমবেনা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৬

বাংলাদেশে গত ৪২ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক আক্রমণের ব্যাখ্যা - বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেকেই সচেতন - অসচেতন উভয়ভাবেই এই ভূখন্ডের হাজার বছরের ইতিহাসকে সেই আলোচনা - বিশ্লেষণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেননা । ফলশ্রুতিতে মৌলবাদ , সাম্প্রদায়িকতা , রাজনীতিতে ধর্মের প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণাসমূহ শুরুতেই অনেকটা বস্তুনিষ্ঠতা হারিয়ে বাগাড়ম্বরসম্পন্ন মুখস্থ বাক্যমালায় পরিণত হয় ।



এই ভূখন্ডের ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যে কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষণের সময় যেই বিষয়টি লক্ষ্য রাখা দরকার তা হলো এই ভূখন্ডের মুসলমান শাসকগোষ্ঠীর ' ধর্ম ' এবং বৌদ্ধ থেকে নীম্ন বর্ণের হিন্দু অতঃপর বর্ণপ্রথার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দলে দলে নীম্নবর্ণের হিন্দুদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা বিষয় দুটি পৃথক মনোযোগের দাবী রাখে । আমরা যদি এই ভূখন্ডের মুসলমান শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চরিত্রের দিকে লক্ষ্য করি তবে দেখা যাবে তারা চারিত্রিকভাবেই তীব্র আত্মপরিচয় সংকটের কারণে নিজেদের আরব , ইরানী , তুর্কী এদের বংশধর হিসাবে পরিচিত হতে চাইতো । এই ভূখন্ডের জল , মাটি , এসবের কিছুর সাথেই তাদের সম্পৃক্ততা ছিলোনা তার কারণ ভারতবর্ষের হাজার বছরের অনড় , অচল অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক কাঠামোর কনামাত্র কোন পরিবর্তনও ব্রিটিশপূর্ব অন্যান্য শাসকগোষ্ঠীর মতো মুসলমান শাসকগোষ্ঠীরা করতে সমর্থ হয়নি । স্পষ্ট কথায় বললে সেই সদিচ্ছাও তাদের ছিলোনা । একদিকে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠদের অনেকাংশই পূর্বে নীম্ন বর্ণের হিন্দু , তারও আগে বৌদ্ধ ছিলো বলে তারা সমাজে ' নেড়ে ' ( বৌদ্ধরা মুন্ডিত মস্তকে থাকতো বিধায় এই নামকরণ ) বলে পরিচিত ছিলো । অন্যদিকে মুসলমান শাসকগোষ্ঠীরা ছিলো নিজেদের আরব , ইরানী , তুর্কীদের বংশধর বলে পরিচয় দেওয়া আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগা লুন্ঠণকারী চরিত্রে । শ্রদ্ধেয় গবেষক ও লেখক বিনয় ঘোষের বর্ণনানুসারে মুসলমান শাসকগোষ্ঠীদের আমলে স্থাপত্যকলায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হলেও নগরপরিকল্পনায় কোন প্রকারের চিন্তাশীলতার জায়গা সেই শাসকগোষ্ঠীর ছিলোনা । কারণ সেই সময়কার সমাজের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক কাঠামোর কনামাত্র পরিবর্তন করবার সদিচ্ছাও তারা রাখেনি ।



ব্রিটিশদের এই ভূখন্ডে আগমনের পরবর্তী সময়ের বিশদ ব্যাখ্যায় না গিয়ে যদি এতোটুকুই বলা হয় যে ব্রিটিশপূর্ব সময়ের মুসলমান শাসকগোষ্ঠীর তথাকথিত শৌর্য-বীর্যের প্রতি মোহগ্রস্ততা সেই সময়কার মুসলমান শাসকগোষ্ঠীর ও মুসলমান সমাজের অপেক্ষাকৃত নিঁচু শ্রেণীর একাংশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিলো তবে বোধহয় খুব একটা অত্যুক্তি হবেনা । এই পরিস্থিতিরই সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী এবং এক সময়ে হিন্দু শাসকগোষ্ঠীরা মুসলমানদের নিপীড়িত অংশ যারা অতীতে নীম্ন বর্ণের হিন্দু ছিলো তাদের পদানতই রাখে । ব্রিটিশরা তাদের শাসনের সুবিধার্তে বিভাজন এবং শাসন নীতিতে হিন্দু - মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখে । ১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্রের উৎপত্তির পেছনেও সেই ধর্মীয় বিভাজন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো ।



১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির জন্মলগ্ন থেকেই একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয়েছিলো সেটা হলো ধর্মকে ভিত্তি ধরে কোন রাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে টিকে থাকতে সমর্থ নয় । অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক যেই বৈষম্য সেই রাষ্ট্রে ক্রিয়াশীল ছিলো সেগুলো বিশ্বের যে কোন ভূখন্ডে , যে কোন সময়েই অনতিক্রম্য । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের উদ্ভব সেই পরিস্থিতিরই একটি অনিবার্য পরিণতি ছিলো । এবং আরো বাস্তব হলো ভারত উপমহাদেশের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিই অপেক্ষাকৃত সবচাইতে বেশী আধুনিক যদি আমরা রাষ্ট্রগুলোর উৎপত্তি ও তাদের জন্মলগ্নের ধরণ বিশ্লেষণ করি ।



১৯৭১ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ নামক যেই রাষ্ট্রকে আমরা দেখি সেই রাষ্ট্রের শুরু থেকেও ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতা পরিলক্ষিত হয় । সংবিধানে ' ধর্মনিরপেক্ষতা ' থাকলেও তার জন্য অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যেই বাস্তবিক ভিত্তি স্থাপন করার প্রয়োজন হয় তার অনেকাংশই করা হয়নি । এই কারণেই রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই হিন্দুদের সম্পত্তি লুটপাট , মাদ্রাসা খাতে দেদারসে বিনিয়োগ ইত্যাদি মুসলমানদের নিপীড়িত জনগণকে পরকালমুখী করে তোলে । প্রবল অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক বৈষম্য সেই পরিস্থিতিকে টিকিয়ে রাখবার পেছনে অপরিহার্য ছিলো বললে তেমন ভুল বলা হবেনা । শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস , ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ , ১৯৯০ পরবর্তী সময়ের তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারসমূহ প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক স্বার্থে যেভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে এসেছে তাতে ধর্মনিরপেক্ষতার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়না । দেখা যাবে এমন কোন কারণও নেই । সেই চিত্রই প্রত্যাশিত ছিলো ।



যারা ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ দেখবার স্বপ্ন দেখেন বা স্বপ্ন দেখেন বলে দাবী করেন তাদের একাংশ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ পন্থা অবলম্বন করেন । সেটা হলো রাজনীতিতে ধর্মের প্রতিক্রিয়াশীলতার কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারা " প্রকৃত " ইসলাম ধর্ম এমন নিপীড়ণমূলক নয় , সুদূরঅতীতের ইসলাম ধর্ম এমন ছিলোনা , আগের ইসলাম ধর্ম শৌর্য-বীর্যে অতুলনীয় ছিলো এমন কথা বলতে থাকেন । কিন্তু তার পরিবর্তে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতিক্রিয়াশীলতা , ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো কখনো সমাজের নিঁচুতম শ্রেণীর অর্থনৈতিক , সামাজিক , রাজনৈতিক স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেনা এই বিষয়গুলো তুলে আনা অনেক বেশী জরুরী । মনে রাখা দরকার ব্রিটিশপূর্ব সময়ে যেই শ্রেণীটি নীম্নবর্ণের হিন্দু থেকে মুসলমান বনে কালের পরিক্রিমায় আজও মুসলমান সেই শ্রেণীর কোনকালেই অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক কোন ক্ষমতা ছিলোনা এবং আজও নেই । সাম্প্রদায়িকতা , মৌলবাদ , ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবার সময়ে ইসলাম ধর্মের অতীতের শৌর্য-বীর্যের কথন , গৌরবের বর্ণনা ইত্যাদি বিষয়সমূহ সেই শ্রেণীর মানুষকে এক পাও এগিয়ে যেতে সাহায্য করবেনা , বরং দুই পা পিছিয়ে দিবে । অতীতকালে ইসলাম ধর্মের অবদান , সাফল্য ইত্যাদি বর্ণনার চাইতেও বর্তমানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ভয়াবহতা , রাজনীতিতে ধর্মের প্রতিক্রিয়াশীলতা টিকিয়ে রাখবার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতা দ্বারা পীড়িতদের সচেতন করাটা অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক এবং সময়ের দাবী । ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ না হোক নিদেনপক্ষে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সফল না হলে সাম্প্রদায়িক আক্রমণকে প্রতিহত করবার স্বপ্ন অলীক কল্পনা মাত্র ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:৫৭

েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: ইহুদী প্রটোকলে কথিত গয়(মুসলমান) বিরোধী ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা এবং আজকের ইসলাম ও বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা মূলত একই। যুক্তরাষ্ট্র তথা ইহুদীদের একটা বড় অভ্যাস হলো কোন কিছু করার আগে তারা ওই বিষয়টি ওই দেশের জনমানসে প্রকারান্তরে গভীরভাবে ঢুকিয়ে দেয়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতেও গৃহযুদ্ধ বাধানোর জন্য তারা সেই অপচেষ্টাই করে যাচ্ছে।
আর তাদের এই নীল নকশা বাস্তবায়নে তারা অত্যান্ত সুকৌশলে ব্যবহার করছে হাসিনা-খালেদা-এরশাদ-হেফাজত-জামাত-সুশিল-মিডিয়াকে।
একই ভাবে সারাবিশ্বে বহু নামধারী ইসলামী সংগঠন পরিচালিত হয় সিআইএ এবং এধরনের গোয়ন্দা সংস্হা গুলোর পৃষ্ঠপোষকতায়। ইহুদি- আমেরিকা এদের মাধ্যমে তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় ।এই জন্যই এরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার দোহাই দিয়ে জিহাদের জিগির তোলে,তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলামকে অভিযুক্ত করার সুযোগ করে দেয়।মুলতঃ তারা তাদের পশ্চিমা প্রভুদের নীলনক্‌শাই বাস্তবায়ন করে ।
Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.