নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একদিন শহরে

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫২

একঘেঁয়ে শহরটা অনেকদিন পরে জগলুর গতানুগতিক বলে মনে হয়না । পাড়ার সলিম মিয়ার চায়ের মতো টাটকা স্বাদের বলে মনে হয় । আহ , পাঁচ বছর হয়ে গেলো সেখানে সে চা খায় কিন্তু স্বাদ যদি একটুকুও বদলেছে । সেই মাপমতো লিকার তেমনি পরিমিত চিনি । দুধটাও দেয় ঠিক যতোটা জগলুর জিভ আকাঙ্খা করে । উপমাটা মনে করতে করতে সলিম মিয়ার বানানো ‘ ইস্পিশাল চা ‘ আর আদিরসাত্মক বাক্যমালায় জগলু হারিয়ে যায় যায় অবস্থা । দ্বিতীয় বিষয়টা প্রথমটাকে আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে এই সত্য জগলু নিজেই নিজের কাছে স্বীকার করে নেয় । তবে মাঝেসাঝে । সবসময় নয় ।



এই সময়ে এমন অনুভূতিটাই জগলুর জন্য স্বাভাবিক । সে নিজেও বুঝতে পারে । বিকালের ঘটে যাওয়া ঘটনাটার জ্বলজ্যান্ত স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকলে সেই সময়ের মতোই তার চোখজোড়া বড় হয়ে আসে । জিভে কি পানি চলে এসেছে ? একটু একটু পানির স্বাদ পাচ্ছে । ঠিক এরকম এক ঘোর লাগা ক্ষণে স্ত্রী আলেয়া এসে “ এখনো জামা-প্যান্ট ছাড়োনাই ? “ বলে বাগড়া বাঁধালে জগলু রুষ্ট হয় । পাঁচ বছর হয়ে গেলো কিন্তু মেয়েছেলেটা যদি এক ইঞ্চিও বদলাইছে । একবার স্ত্রীর দিকে চেয়ে তাকে পরখ করে জগলু মিটিমিটি আলোতে জামা বদলাতে উঠে । শরীর থেকে দ্রুতগতিতে ছাই রঙা প্যান্ট , আধময়লা স্যান্ডো গেঞ্জি আর কালো আন্ডারওয়ার নেমে আসতে আসতে জগলু স্ত্রীর পোস্টমর্টেম করতে বসে যায় ।





অথচ এমনটা হবার কথা ছিলোনা । আজ বিকালে কি সুন্দর কল্যানপুর বাসস্ট্যান্ড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাকে দেখেছিলো । আহ , পাগলী হলে কি হবে এখনো শরীরের যেই গাঁথুনী । পাছাটার এমন নিটোল গড়ন , চোখ পড়তে বাধ্য । চোখ ফেরাবে সেই সাধ্য কোন বেটামানুষের ? সেই বুক , একটুকুও ঝুলে যায়নি । চোখ পড়ে গেলে জগলু কিছু সময়ের জন্য টাসকি খেয়ে গিয়েছিলো । এমনটা কতোদিন দেখেনি । পরনের শাড়িটাও ছিলো আলুথালু । আধ ছেঁড়া আধ শরীর ঢাকতে পারে এমন । যাদের দেখার চোখ আছে তাদের দৃষ্টিকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব । জগলুর চোখজোড়া তাদের কাতারেই পড়ে । পাগলীর আলুথালু বেশ আর চিৎকারে মনে হচ্ছিলো কয়েকদিনে পেটে তেমন কিছু জোটেনি । তা জাহান্নামে যাক চোদানীর বেটি জগলুর তাতে কি আসে যায় ? তার চোখের ক্ষিধা যা মিটানোর তা তো মিটেছে । আরো কিছু মিটতে পারে প্রথমে তা কল্পনাই করতে পারেনি । সামনেই ছিলো কাঁচাবাজার । তা সেখানে চলাচলকারীদের কেই বা পরবর্তী ঘটনার কথা কল্পনা করতে পেরেছিলো ? আকাশ ছিলো পরিচ্ছন্ন । শরতকালে যেমন বাতাস সবাই প্রত্যাশা করে অনেকটাই তেমন । সূর্যের খর উপস্থিতি কিংবা মেঘের ঘনঘটা কিছুই পথযাত্রীদের হুমকি দিচ্ছিলোনা । উজ্জ্বল আবহাওয়া তার উপরে চোখের সামনে যৌবনা । যাকে সবার জন্য উন্মুক্ত বলে মানুষজন ভাবলে সমাজ – সভ্যতা কোনকালেই নিজের আবরণ খসে গেলো বলে বিপদে টালমাটাল হয়না । এরকম সুযোগ কি জগলুদের কেরাণী জীবনে বারবার আসে ? আসেনা ।



কিন্তু তিন ঘন্টা পার হয়ে গেলেই বাস্তবতাটা কি রকম বদলে যায় দেখো । কোথাও সেই টানটান শরীরের আদিম নারী আর কোথায় ডালভাত মার্কা এই মেয়েলোক । সকাল হতেই মুখের একদিক থেকে লালা ঝরার কুৎসিত দৃশ্য দেখলে বিশ্বাস হতে ইচ্ছা করেনা রাতেরবেলা চোখে সম্পূর্ণ স্তব্ধতা আসবার আগে অন্তত মিনিট পনেরো সেই শরীরের সর্বত্র হাত , মুখ চষে বেড়ায় । জগলুর মরে যাবার আয়েসী ইচ্ছা জাগে । মৃদু ইচ্ছা পর্যন্তই । তারপরে নিয়মমাফিক সকালে নোংরা মুখ নিয়ে সেই পানসে শরীরটা ঘুম থেকে উঠবে । হালকা চা – নাশতা বানিয়ে ক্যারিয়ারে করে দুপুরের খাওয়া দিতে দিতে রুটিনমাফিক যা যা বলে তার সবই জগলুর নিমতেতো মনে হয় । মেয়েমানুষ এতো পানসে হয় কিভাবে ? চলনে – বলনে , কথাবার্তায় , শরীরে ? বিয়ের আগে দুই বছর তারা প্রেমও করেছিলো তার নিজেরই বিশ্বাস হতে চায়না ।



প্রাক – বিবাহ প্রেমের কথা ভাবতে ভাবতে জগলু বিনা কারণেই গোপন দীর্ঘশ্বাস ফেলে । এর কোন প্রয়োজন ছিলোনা । আশেপাশে কেউ নেই যে তা শুনে ফেলবে । স্ত্রীর প্রতি বিতৃষ্ণাটা আরেকটু গাঢ় হতে হতেই পুনরায় “ টেবিলে জলদি চইলা আসো , খাওয়া দিয়া দিছি “ আওয়াজে জগলু ধীরে ধীরে খাওয়ার টেবিলে এগোয় । যেন জোরপূর্বক তাকে বিষ খাওয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । হঠাৎ করেই ঘরের আশি ওয়াটের বাতির আলো জগলুর কাছে বড্ড বিবর্ণ বলে মনে হয় ।



বিকালে আচমকাই সেই হট্টগোল শুরু হয়ে গিয়েছিলো । জগলুর মতো আরো অনেকেই যখন চোখ দিয়ে , সাথে পোশাকের নিচে আবৃত থাকা আপাত অদৃশ্য কিন্তু প্রবল শক্তিশালী এক অঙ্গ দিয়ে পাগলীটার শরীরের অলিগলি মেপে নিচ্ছিলো সেই সময়ে তারা কেউই আসন্ন বিষয়টি ভাবতে পারেনি । সেই পাগলীটাও নিশ্চয়ই নয় । তৃতীয় গ্রাস মুখে দিতে দিতে জগলু স্পষ্ট মনে করতে পারে সে যেই দিক দিয়ে হাঁটছিলো তার পশ্চীম দিক থেকে প্রথমে তীক্ষ্ণস্বরের আওয়াজটা ভেসে উঠে । শক্তিশালীভাবে । উল্টাদিকে উত্তরবঙ্গে যাবার সকল বাসের কাউন্টার । জগলু স্পষ্ট মনে করতে পারে । মাঝখানে রিকশা , লেগুনা , লোকাল বাস সব মধ্যমগতিতেই পথ চলছিলো । হাতে কি একটা নোংরা কাগজ হাতে চোখজোড়া দেখতে ধূর্ত ধরণের এক অল্পবয়সী ছেলে গলা তুললো । “ এই বেটিই বাচ্চাডিরে ধইরা নিছে । এ ছাড়া আর কেউ হইবোনা । “ তারপরেই তো সেই সুতীব্র জোয়ার । পাশবিকতার । গহীনে সুপ্ত থাকা লুচ্চামী প্রস্ফুটিত হবার ।





“ ডালটা কেমন হইছে কইলানা । “ রাঁধুনীর কন্ঠ ভার ভার শোনায় । জগলু সংক্ষিপ্ত বাক্যে ইতিবাচক কিছু বলে পুনরায় স্মৃতিচারণে মন দেয় । স্ত্রীর প্রতি বিরক্তি দেখানোর সময় এইটা না । সামনের মেয়েছেলেটার প্রতি বিরক্তি , রাগ ভবিষ্যতে অনেক দেখানো যাবে । মাঝেমাঝে অসহনীয় হলে দু চারটা চড়চাপড়ও দিব্যি চলবে । ঘন্টা দুয়েক ফোঁস ফোঁস করবে । পরের সকালেই আবার মোটা মোটা অভ্যস্ত হাতে রুটি – পরোটা বানাবে । কিন্তু আজকের মতো ঘটনা বা সময় বারবার আসেনা ।



পাগলীটার গায়ে প্রথম হাত দিয়েছিলো প্রথমে আওয়াজ তোলা অল্পবয়সী ছোকরাটাই । চুদির ভাইয়ের সাহস আছে বটে । কি চালু !! কি চালু !!! “ এই পাগলী ছেলেধরা , এক বাচ্চা চুরি করছে “ বলার সাথে সাথে গায়ে হাত দিয়ে দিলো । খামচে ধরে বুক কচলে দিতে গিয়েছিলো কিন্তু প্রথমবারে হাত সেখানে পৌঁছাতে পারেনি । একবার গায়ে হাত পড়লে অন্যরা কি ভেরেন্ডা বাজতে বসে থাকবে নাকি ? জগলু এর কোন মানে দেখেনি । দশ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে সেই পাগলীর শরীরের উপরে জনা পঁচিশজন তো হবেই ছেলেধরার নাম করে হামলে পড়লো । এসব কেইস জগলু প্রচুর দেখেছে । পাবলিককে সেই সময়ে সরকারের বাপ এসেও ঠেকাতে পারবেনা । আর চার – পাঁচ হাজার টাকা বেতনের উর্দিপরা বোকাচোদা পুলিশ কি থামাবে ? সাধ্য আছে ? শালাদের কেউ সামনেই আসেনাই । দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখেছে । জগলুর কম কষ্ট হয়েছে ভীড় ঠেলে শালীর শরীরের হাত দিতে ? ইশ , মানুষের কি চুলকানি । একবার হাতাতে পারলে আর কাউকেই কোন সুযোগ দেবেনা । সামনের কালো গেঞ্জি পরা হারামজাদাকে প্রায় ধাক্কা দিয়েই তো জগলুকে এগিয়ে যেতে হয়েছিলো । তার লক্ষ্য ছিলো পাগলীটার বাম দিকের স্তন খামচে তিন সেকেন্ড ধরে রেখে তারপরে কষে তিনটে লাথি লাগানো । কিন্তু বুকে ঠিকভাবে হাতটাও দিতে পারেনি । পাশ ঘেঁষেই ফসকে গেছে । সেই আক্রোশেই কিনা লাথিটা ঠিক ঠিক কষেছে । চোয়ালের সবকটা হাড় একত্রিত করে । একেবারে মাজা বরাবর । অন্যরা তখনও পাগলীর বুক আর ঘাড় নিয়েই ব্যস্ত ছিলো । সেই সুযোগে জগলু মাজাটা ফাঁকা পেয়েছিলো । ততোক্ষণে শালীর আধ ছেঁড়া শাড়ি প্রায় পুরোটাই ছেড়াবেড়া । প্রথম দশ মিনিটে বেশ শব্দ করে গোঙ্গাচ্ছিলো । গলায় আওয়াজ আছে বটে । ভারী স্তন দুটায় গণহারে খামচি খেয়ে আর কোমরে লাথি খেয়ে তবেই বেটি সিধা হয়েছিলো ।



খাওয়া শেষ হয়ে ততোক্ষনে জগলু আর আলেয়া শোবার ঘরে চলে এসেছে । আলেয়া টেবিলে পড়ে থাকা পুরনো কাপড়চোপড় গোছাতে গোছাতে জগলু টিভি সেটটা অন করে । খুলতেই স্টার জলসায় এক বাচ্চা ছেলের ছবি টিভির পর্দায় ভেসে আসে । একেবারেই বাচ্চা একটা ছেলে । কান্নার কি এক দৃশ্য । বয়স ছয় কি সাত হবে । আজকের বিকালে যেই বাচ্চাটাকে সেই পাগলী ধরে নিয়েছে বলে চাউর হয়েছিলো সেরকম বয়স । যদিও পাগলীটাকে পিটিয়ে থেঁতলা করে ফেলার পরে এক বাসার গেটের মুখ দিয়ে সেই বাচ্চাকে বাচ্চার মা দেখতে পেয়েছিলো । যদিও ততোমধ্যেই পথযাত্রীদের বীরত্ব কিংবা মর্দানগিরি যাই বলা হোক তা দেখানো শেষ ।





কম্পিত ডান হাতে টিভির চ্যানেল বদলাতেই বেসরকারী এক বাংলা চ্যানেলে খবর চলতে দেখা যায় । জগলু সেদিকে মিনিট চারেক দৃষ্টি নিবন্ধ রেখে তারপর পাশে আজকের দিনের পত্রিকা দেখতে পেলে তা হাতে তুলে নেয় । ততোক্ষণে সেই হাতের কম্পন অবশ্য থেমে গেছে । পত্রিকা উল্টাদিক থেকে হাতে চলে গিয়েছে তাই শেষের পৃষ্ঠার দিকেই দৃষ্টি চলে আসে । তার এক কোনায় ‘ ছিনতাইকারী সন্দেহে ৩জনকে গণপিটুনী “ খবর দেখে জগলুর মেজাজ বিগড়ায় । মনে মনে একবার “ ধুর বাল “ বলতে বলতেই ততোমধ্যে আলেয়া জগলুর একেবারে নিকটে । কি আশ্চর্য তো !!! আলেয়ার শরীরের দিকে এখন চোখ ফেরানোই যাচ্ছেনা । জগলু ভাবলো একবার চোখ কচলে দেখে । কিন্তু করলোনা । আসলে আজকের বিকালটাই তার চোখে ঘোর লাগিয়ে দিয়েছে । এই ঘোর কাটলেই স্ত্রীর শরীরের মাপ ঠিক বুঝতে পারা যায় । সে স্বামী হয়ে যদি না বুঝে তাইলে বুঝবে কে ? প্রতিবেশী ?





বিঃ দ্রঃ ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে , খুব সম্ভবত মীরপুরে ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলাকে পিটিয়ে মারা হয় । মৃত্যুর অল্প কিছু সময় পরেি যেই বাচ্চাটিকে নিহত ধরে নিয়ে গিয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় তাকে একটা বাড়ির গেটের মুখে বাচ্চাটির মা দেখেন । হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হবার সময়ে বাচ্চাটি সেই বাড়ির গেটে নিজের মনে খেলছিলো ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৮

সুদীপ্ত সরদার বলেছেন: এক কথায় অসাধারন..!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.