নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্য অথবা সিন্দুকের গল্প

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৪

তখন মনে হয় ক্লাশ এইটে পড়ি । স্কুলে যাবার আগে কি মনে করে পত্রিকা খুলেছিলাম । ষষ্ঠ কি সপ্তম পৃষ্ঠায় খবরটি পড়েছিলাম । ধর্ষণ সংবাদ । ১৫ বছর বয়সী কোন অজ্ঞাত কিশোরীর । জোরপূর্বক নিজ কামনা পূরণ করেই ধর্ষক তৃপ্ত হতে পারেনি । সাত কি আট টুকরা করে লাশ ছিটিয়ে রেখেছিলো । পত্রিকায় সেই প্রথম ধর্ষণ সংবাদ পাঠ । অভিজ্ঞতার ভালো খারাপ বিচার করার সময় তখন হয়নি । কেবল এটুকু লক্ষ্য করেছিলাম সংবাদপত্রে এই সংবাদগুলো আগ্রহ সহকারে ছাপা হয় । ভাষা দেখে মনে হতো সাংবাদিকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যেতো কে সংবাদটা কাভার করবে তা নিয়ে । সেই ভাবনা এখন যে বদলেছে তা নয় ।

এটুকু বলে থামলে টের পাই সেই পুরনো আতঙ্ক আবারো ফিরে এসেছে । শঙ্কায় । দুঃস্বপ্নে । বিব্রত হতে শুরু করে । একা থাকলে অস্বস্তি হতোনা । কিন্তু এই মুহূর্তে বন্ধুর সাথে আছি । রাশেদ । সাড়ে চার মাস হলো বিয়ে করেছে । সে নিশ্চয়ই মজা পেতে শুরু করেছে । ভাবছি প্রশ্নটা তাকে জিজ্ঞেস করবো কিনা । করতে গিয়েও পারলাম না । মনে হলো যে সংকোচটা অনেক বেশীই হচ্ছে ।

রাশেদ আমার মনের ভাব টের পেলো কিনা কেবল সেই বলতে পারে । আমার বিশ্বাস তার সদ্য স্ত্রীও উপস্থিত থাকলে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারতোনা । রাশেদ অবশ্য এমনিতেও প্রায় সবার কাছেই ভেজা বিড়াল হয়ে থাকে । স্কুলে থাকতেই দেখেছি বন্ধুবান্ধবদের বাপ – মা রাশেদ বলতে অজ্ঞান ছিলো । আমার বাপ – মাও তাই । কি অজানা ক্ষমতায় অভিভাবকদের বশ করে ফেলতো জানতে ইচ্ছা করলেও কখনো তা জিজ্ঞেস করিনি । কিন্তু গোলগাল মুখের আর চেহারায় আপাদমস্তক ভালোমানুষী ধরে রাখা তাকে দেখে কে বলতে পারে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে একদিন সন্ধ্যায় , শীতের বেলাতে নির্জন রাস্তায় , ওড়নাটা একটুকুই না হয়ে পড়ে গিয়েছিলো শারমিনের । আমাদেরই বন্ধু ইব্রাহিমের ছোটবোন । তাতেই জল খসে প্যান্ট ভিজে উঠতে হবে ? ঘটনাটা ঘটবার পর পাঁচ মিনিট লেগেছিলো ধাতস্থ হতে । তারপর কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা পথ ধরেছিলাম । রাসকেলটা অন্তত এই বুদ্ধিটা তখন রাখতো যে এমন সময়ে বন্ধু হাঁটা ধরলে পিছন ফিরে ডাকতে নেই । প্রায় সাড়ে তিন বছর লেগেছিলো আমাদের মধ্যে পরবর্তী বাক্যটি বিনিময় হতে ।

“ দোস্ত , তন্বী অনেক করে আমাকে বলছে তোরে ধরে আনার জন্য । বিয়ে হইলো চার মাস , তুই একদিনও বাসায় আসলিনা । এটা কি কথা ? সে কি ভাবতেছে মনে মনে আল্লাহই জানে । “

উফ , কি অসহ্য একটা । ওর বউ কি ভাবছে তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা । তন্বী নামক যুবতীটিকে কি আমি বিয়ে করে একঘরে ঘুমাচ্ছি নাকি ? এইসব কথা সরাসরি বলতে পারলে মন্দ হতোনা । কিন্তু সেটা কল্পনা পর্যন্তই । বাস্তবে কখনো নয় । আচমকাই মুখ ফসকে প্রশ্ন করে বসলাম ,

“ এই রাশেদ , তন্বীকে কি শারমিনের ঘটনাটা বলছিস ? “

রাশেদের ফর্সা মুখ আরো সাদা দেখাতে থাকে । বিরক্তিতে সম্ভবত মুখে থুথু জমে । হয়তো পুরনো স্কুল বন্ধুর প্রতি এতোটাও রুঢ় হতে পারেনা বলে সেগুলো গিলে নেয় । অপরের মুখে অজস্রবার শোনা কথাটাই আবার আমি শুনতে পাই । “ তুই না , আসলেই একটা যা তা । কখন কি কথাটা বলতে হয়না এখনো শিখিসনি । কথাই বলতে জানিসনা দেখে জীবনে এখনো তোর কিছু হলোনা । যত্তসব “ রাশেদ রাগটাও প্রকাশ করতে পারলোনা ।

কথাগুলোকে বিশেষ আমল দিলাম না । আমরা নিজের কাছে , অন্যের কাছে কথা কিংবা গল্প যাই হোক গোপন করতে করতে আমাদের একান্তই নিজস্ব সিন্দুকটা হারিয়ে ফেলেছি । আমি অন্তত নিজেরটা হারাতে চাইনা । তার জন্য কথা বলার কথিত ‘ শিল্পটা ‘ শিখতে না পারলে তাই সই । জীবনে কিছু হলোনা , চলে তো যাচ্ছে । শুধু গল্প বলার এবং রোমন্থন করবার সিন্দুকটা সাথে থাকলেই চলে ।


পত্রিকায় পড়া প্রথম ধর্ষণ সংবাদটার কথা আবারো মনে পড়লো । এবারে আর তেমন বিবমিষা হলোনা । মনে হলো রাশেদকে একটা ফিঁচেল প্রশ্ন করি । আচ্ছা , তন্বীকে কি এই চার মাসে একবারও ? জোর করে ? করলাম না । রাশেদের প্রতি করুণা দেখালাম । শারমিনের ঘটনাটা বলার সাহস না করেই তন্বীকে বিয়ে করে বসেছে । এতোটুকু করুণা তো বন্ধুকে করাই যায় । তবে কখনো আমার কাছে নিজের হারানো সিন্দুকের খোঁজ চাইতে আসলে সোজা ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেবো । এই বিষয়ে কোন দ্বিতীয় কথা নেই ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.