নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চকিতে অচেনা

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১১

জাহিদের বাসা থেকে বেরিয়ে মাত্রই পা জোড়া মাটিতে স্পর্শ করলে শ্যামলের ভার ভার লাগে । শরীরের এই অঙ্গদ্বয় পীঠে বালির বস্তার মতোই দুঃসহ ঠেকে । শীতকাল এলে মাঝেমাঝে এমনটা হতেই পারে । চেনা কথায় তবু প্রবোধ দেওয়া যাচ্ছেনা নিজেকে । শ্যামল , ছিপছিপে গড়নের এক রক্তমাংসের শরীর নিয়ে অনর্থক পেলবতায় ছোট ছোট ধাপে পা ফেলছে । যেন সমগ্র রাস্তাটাই মখমলি । স্বাভাবিক গতিতে পা ফেললে রাস্তার প্রতিটি অংশ ছিন্ন হয়ে যাবে । অথচ দক্ষ কোন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলে রাস্তাটি দেখেই বলে দিতে পারবে বহুদিন হলো এই রাস্তাটি শরীরে কোন বিটুমিনের স্পর্শ পায়নি । প্রতিদিন কতো অগণিত মানুষ ধ্যাবড়া ধ্যাবড়া পা নিয়ে গোটা শহরটির মতো রাস্তাটিকেও প্রাণহীন করে ফেলেছে ভাবতে গেলে শ্যামল নিজের সঙ্গত ভাবনাকে অনাবশ্যক ভেবে নীরব হয়ে যাবার চেষ্টা করে । ভেতরেও ।

জাহিদের বউ যে তরকারী করেছিলো তার প্রায় প্রতিটা আইটেমেই লবনের পরিমাণ অত্যাধিক ছিলো । জিভে এখনো তার তেতো স্বাদ লেগে আছে । ঠোঁটের চারপাশে বিচরণ করে তাকে ভিজিয়ে নিলে সেই তেতো স্বাদের প্রত্যাবর্তনে আটাশ বছরের শ্যামল , গত তিন মাস যাবত যে বেকার মিইয়ে যায় ।

বন্ধুপত্নীর রান্না নয় , আসলে আরো বেশী তেতো ছিলো বাল্যবন্ধুর বাক্যবাণ । বাইঞ্চোত কোথাকার । সিমেন্টের ব্যবসা করে একটু টাকাপয়সা হয়েছে তো ধরাকে সরা জ্ঞান করিস । তাও আবার ন্যাংটাকালের বন্ধুর সাথে । শ্যামল মনের সুখে সময়ের সাপেক্ষে প্রাচীন হওয়া বন্ধুকে গালাগাল করে যায় । মনের আনন্দে । ক্রমশ তা ছাপার অযোগ্য শব্দাবলীতে চলে যেতে শুরু করে । তবে বোঝা যায়না অনর্গল গালাগালিতে সিমেন্ট ব্যবসায়ী বড়লোক বন্ধু নাকি গালাগাল করা শ্যামলই বেশী ক্ষতবিক্ষত হয় । অগণিত রিকশার টুংটাং শব্দকে যখন আর কান এড়িতে যেতে সক্ষম হয়না সেই সময়ে সে ধাতস্থ হয় । দম দেওয়া কোন ঘড়ির মতো । এতোদূর হেঁটেছে রাস্তাটা অন্ধকার ছিলো তবে তেমন আশেপাশে পায়ের আওয়াজের শব্দ পায়নি । এখন যেই রাস্তায় এসেছে সেটাও তেমন আলোকিত নয় । তবে মানুষের পদচারণায় তা অপেক্ষাকৃত বেশী সপ্রতিভ । সাথে রিকশাগুলোর নিজেকে জানান দেওয়া মৃদু আওয়াজ । বন্ধুর প্রতি ভর্ৎসনা সশব্দে হলে শ্যামলের মানসিক ভারসাম্যতার বিষয়টাই চারপাশের অপরিচিত তবু গুরুত্ববাহী মানুষগুলোর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে ।

কৌণিক দূরত্বে একটা আধা পাকা মসজিদ দেখা যায় । তার সিড়ির একটুপাশে সারি সারি করে রাখা অজস্র জুতাজোড়া । প্রায় কোনটাই এমন মানের কিংবা দামের নয় যা হারালে কেউ মর্মাহত হতে পারে । মসজিদে চলাচলের পথে বাঁধার সৃষ্টি না করেও একটু পাশেই ঝালমুড়ির সকল সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখে ঝালমুড়িওয়ালা নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে । যেমনটা বাসে উঠলে ক্যানভাসারদের দেখা যায় তেমন । ডান হাতের আঙ্গুলগুলোতে মটকা ফোটানোয় তাকে ব্যাপৃত হতে দেখা যাচ্ছে । তবে কেউ একজন তার কাছে এসে শীতের এই সন্ধ্যায় মুড়ি – চানাচুরের উষ্ণ , ঝাল স্বাদে নিজের সান্ধ্যকালীন রসনাবিলাস তৃপ্ত করবে তার অপেক্ষায় ঝালমুড়িওয়ালার দৃষ্টি বরাবরের মতোই উৎসুক । পাশে দিয়ে হাঁটতে থাকা যুবক বয়সী দুজনকে প্রথমে দেখে আগ্রহী বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো । কিন্তু চারপাশের রিক্ততা , পরস্পর বিচ্ছিন্নতা , কোন গোপন কোনায় হালকাভাবে প্রস্ফুটিতভাবে থাকা ক্ষণিক আনন্দের সামান্য উপকরণ এর কিছুর প্রতিই কোন মনোযোগ দিয়ে তারা দ্রুত পা ফেলে মসজিদের পশ্চীম দিক দিয়ে অদৃশ্য হয় । শ্যামল ঝালমুড়িওয়ালার দিকে চেয়ে দেখে । কৌতূহলে । অসহায়ত্বে । মমতায় । ঝালমুড়িওয়ালার মুখের রেখা ভাবলেশহীনই দেখায় । তবে হৃদয়ের ভেতরের অংশের সাথে তা সাংঘর্ষিক কিনা সেই প্রশ্নটা থেকে যেতেই পারে । শ্যামল এবারে একটু দ্রুত পা ফেলে । এতোক্ষণ সেখানে যেই আড়ষ্টতা অনুভব করছিলো সেটা সম্ভবত কেটে যেতে শুরু করেছে ।

ডানদিকে পেরোতেই বেশ লম্বা একটা রাস্তা দেখা যায় । সরুও । শ্যামলের চিরচেনা এই রাস্তা । চারপাশে যেই বড় বড় দালানগুলা দেখা যাচ্ছে কোন কারণে তার প্রায় প্রতিটা বারান্দাই শূন্য । কোন বাতি জ্বলছেনা । না কেউ সেখানে বসে আছে । আবারো জাহিদের বাড়িতে তার সাথে কথোপকথনের বিষয়টি স্মরণে এলে শ্যামল এবারে আর বিব্রতবোধ করেনা । বন্ধু তার যাই বলেছে তার বেশীরভাগ কথাই অস্পষ্ট ছিলো । দুই ধরণের মানে করা যায় এমন । হাহ , ব্যবসা করে করে এখন বাল্যবন্ধুর সাথেও সেই ঢঙেই কথা বলা হচ্ছে ।

সরু রাস্তা বরাবর যেতে যেতে দুই পাশে যেই ইটের ঢিবি দেখা যায় সেদিকে শ্যামলের চোখ যায়না । প্রায় দুই বছর হলো দুই পাশে এই জিনিস । ইটগুলো ক্রমশ বিবর্ণ হচ্ছে । তার নিজের জীবনের মতোই । এক হালকা দোদুল্যমনতায় ভরা এবং অর্থহীন মনে হতে থাকা প্রয়োজনীয় ভাবনার দোলাচলে থাকা শ্যামল আচমকা চমকে উঠে । মিশমিশে এবং স্বাস্থ্যবান দেখতে একটা কালো বিড়াল বিনা কারণেই একটা ঢিবি থেকে সতর্ক এবং দ্রুত ভঙ্গিমায় আরেকটা ঢিবির পেছনে চলে গেছে । চারপাশের প্রতি সন্দেহ নিয়ে । ক্ষিপ্রগতির এই স্থান বদল অজানা কোন ভয় থেকে উৎসরিত ? এতো গোপনীয়তাই বা কিসের জন্য ? এই আধাঁরেও নিজেদের এতো আড়াল করবার তাড়না প্রাণীদের । শ্যামল আবারো চমকে উঠে । এবারে নিজেদের সেই খাপে মিলিয়ে দেখতে গিয়ে । আচ্ছা এই যে কতক্ষণ আগে তারা দুই বাল্যবন্ধু প্রায় তিন মাস পরে পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করলো , কতো কথাই না বিনিময় হলো দুজনের মধ্যে কিন্তু তা কি নিজেদের গোপন রেখে তারপরেই নয় ? জাহিদ তাকে সরাসরি বলতেই পারতো যে নিজের ব্যবসাটায় তাকে যুক্ত করে চাচ্ছেনা । সেও তো ......... গন্তব্যের শেষ মাথায় এসে পৌঁছালে শ্যামল সন্তর্পনেই জীর্ণ গেটটায় হালকা একটা কড়া নাড়ে । খুলে গেলে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে তার দৃষ্টি সতর্ক হয় । সন্দেহপ্রবণও । তবে কালো বিড়ালটির মতো কোন ঢিবির পিছনে নিজেকে আড়াল করার প্রয়োজনীয়তা শ্যামলের থাকবার কথা নয় ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.