নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এটা প্রেমের গল্প হতে পারতো

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২১

ইভানা হাসিতে গলে গলে পড়ে । অথবা বলা যায় ইভানার হাসিতে চায়না কিচেন রেস্টুরেন্ট নির্মোহ দুপুরে নৈর্ব্যক্তিকতা কাটিয়ে উঠে । হিমেল বিরক্ত হবার ভান করে । কিন্তু তার মুখে সে ছাপও ভালো ফুটে উঠতে পারেনা । বিব্রতভাব ঝেড়ে ফেলতে একটু কাঠখোট্টা গলাতেই বলে উঠে ,



“ এইটা রেস্টুরেন্ট । এমনে হাসলে কেমনে কি ? লোকজন ভর্তি , ওয়েটারেরা আসা – যাওয়া করতেছে । খোলা মাঠ পাইছো নাকি ? “



ইভানার মুখের রেখাগুলোর কোন প্রতিক্রিয়া হয়না । তবে ধারাবাহিক হাসি স্তিমিত হয়ে আসে । তার কিছুটা ধরে রেখেই সে হিমেলের কাঁধে প্রায় এলিয়ে পড়ে ,



“ আমারে বকা দাও ক্যান ? দোষ তোমার । ভালো করে জানো সানীর কথা শুনলেই আমার কেমন হাসি আসে । তোমার এই বন্ধুর কথা বলা , হাঁটাচলা দেখলেই মনে হয় একটা আস্ত কার্টুন ক্যারেকটার । আমার কপালেও জুটছে এক জোকার । বন্ধুর হাঁটাচলা , কথা বলা সব নকল করে দেখাইতে হবে । “ ইভানা পুনরায় প্রগলভ হয় । তার চুলের একটা বড় অংশ ততক্ষণে হিমেলের ডান কাঁধে আশ্রয় নিয়েছে ।



হিমেলের মন তৃপ্ত হয় । নিজের মনে একটু হেসে নেয় । সবুজ – নীল কম্বিনেশনে সালওয়ার কামিজ পরিহিতা ইভানার চোখ এড়িয়েই । তবে সেই হাসি বাষ্প হয়ে নিমেষেই উড়ে যায়না । তাদের প্রেমের আড়াই বছর বয়স হয়েছে । এই মুহূর্তে শরীরে প্রায় সেঁটে থাকা প্রিয়জনকে কখনোই জানাতে পারেনি তাদের প্রেমটা যেন হয়ে যায় তার জন্য কতো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলো । বলতে গেলে ইভানার প্রিয় বান্ধবী শারমিনের হাতে পায়ে ধরেই পছন্দ – অপছন্দ সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর করেছিলো । প্রায় ছয় মাস দুই বন্ধু মিলে ইভানাকে নিয়ে নিঁখুত হোমওয়ার্ক করার পরে তবেই একদিন পুরান ঢাকায় নান্নার বিরিয়ানীতে লাঞ্চের অফার করলে হিমেলের সেই প্রস্তাবে মহারাণী রাজি হয়েছিলো । তাও সে কি ডাঁট মেয়ের । যেন পদমর্যাদায় কুইন এলিজাবেথ । রুপে মিস এশিয়া প্যাসিফিক । প্রথম ডেটিঙেই দিব্যি ঘাড় বাঁকিয়ে বলেছিলো “ দেখো , আমি কিন্তু অন্য মেয়েদের মতো না । গদগদ কথাবার্তা বলে আমাকে নরম করা যাবেনা । “ শুনে হিমেল প্রতিক্রিয়াশূন্য ছিলো । মনে মনে বলেছিলো “ সময় দাও , সময় দাও । সময় হলেই বুঝবা গদগদ কথা কারে কয় । নিজেই শুনার জন্য হা করে বইসা থাকবা । “ তা হইলো তো ? আড়াই বছর চলে গেলো । দুইটা বসন্ত , দুইটা বর্ষা পার করে এখন নিজেই আমার গায়ে ঢলে পড়তে পড়তে ন্যাকা কথার ফুলঝুরি ছোটানো হচ্ছে ।



হিমেলের আনন্দময় স্মৃতি রোমন্থনে বেরসিক ভাটা পড়ে । প্রায় আধা ঘন্টা পার হয়ে গেছে রেস্টুরেন্টে এসেছে অথচ কোন অর্ডার দেয়নি । নীল রঙের শার্ট পরা অল্প বয়স্ক , দেখতে চ্যাংড়াই লাগে ওয়েটার এসে বিনীত গলায় হিমেলের কাছে খাবারের অর্ডার জানতে চাইলে হিমেল বাস্তবে ফিরে আসে । আসলেই তো , এতোক্ষণ ধরে খাবারের অর্ডার না দেওয়ার মানেই হয়না । বেলা বেজেও গেছে তিনটা । ধাতস্থ হয়ে ওয়েটারকে মেন্যু সেট ওয়ানের কথা বলে হিমেল একটু থামে । হাতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে অনুভব করতে পারে । তারপর কিছু একটা ভাবে । কি ভাবে তার তল খুঁজে পাওয়া যায়না । ইভানাও ব্যর্থ হয় । সম্ভবত আহত হয়ে পুনরায় শুরু করে ,



“ আচ্ছা , রুবির কথা তোমাকে কতোদূর বলছি ? কলেজে থাকতে আমার সবচেয়ে ক্লোজ বান্ধবী ছিলো । তুমি তো দেখছোও এক দুইবার । তোমার মনে নাই ? জানতাম তোমার মনে থাকবেনা । তোমার এমনিতে সব খেয়াল থাকে । রাস্তায় বের হয়ে সুন্দরী মেয়ের দিকে চোখ পড়লে দুইদিনেও তারে ভুলতে পারোনা । কিন্তু আমি যাই বলবো , যাদের কথাই বলবো সব ভুলে বসে থাকবা । “ ইভানার কন্ঠে কপট বাষ্প ঝরে ঝরে পড়ে । হিমেল যার সাথে সুপরিচিত । এই সময়ে নিজের মুখটা ভারাক্রান্ত করে রাখলে একটু সময় পরে বাষ্প বাক্যমালার ভীড়ে উড়ে যাবে । হিমেল প্রথম যেদিন বিষয়টা টের পেয়েছিলো তারপর থেকে এমন কপট সময়ে নিজেও কপটতার আশ্রয় নিয়েছে । ফল পেয়েছে হাতেনাতে ।



তবে এই বেলা তাকে সেই কসরত করতে হলোনা । ইভানা পুরনো টেপ রেকর্ডার বাজিয়েই চলেছে ক্লান্তিহীন ,



“ আরে সেই যে কলেজে থাকতে রুবির সাথে একবার কলেজ পালাইছিলাম । পালানোর পরে বের হয়ে দেখি কোথায় যাবো তার নাই ঠিক । দুইজনে কোনভাবেই বের করতে পারতেছিলাম না কই যাওয়া যায় । বিডিআর ১ নম্বর গেইটের কিছু সামনে এসে , ওই যে ঢাবির ছাত্রী হোস্টেল আছে যে কুয়েত মৈত্রী হল সেখানে কার মুখে শুনে ঠিক করছিলাম মিরপুর বেড়িবাঁধ যাবো দুই বান্ধবী মিলে । তারপরে চটজলদি সিএনজি ভাড়া করে চলে গেলাম । বেড়িবাঁধ পৌঁছাইতে পৌঁছাইতে দুপুর পার হয়ে বিকাল হইলো । তারপরে সেখানে গিয়ে দেখি সেদিন তেমন মানুষজন নাই । পরপর তিনটা চায়ের দোকান আছে সেখান থেকে কিছু গুন্ডাপান্ডা লোক আমাদের দিকে বারবার তাকাইতেছিলো । পরে দুইজন রুবির কাছে এসে .........”



ইভানা তার দীর্ঘ ইতিহাসের বয়ান সমাপ্ত করতে পারেনা । তার শরীরের প্রতিটি রেখা কলেজ জীবনের সেই ভয়াল সময়ে চলে যাবার সংকেত দেয় । অন্তত বাইরে থেকে তেমনই দেখায় । হিমেলের কোন সহানুভূতি জাগেনা । মেয়েদের প্রথম দেখাতেই সে চিনে নিতে পারে বলে বন্ধুমহলে তার বিশেষ খ্যাতি আছে । সে নিজেও এই খ্যাতিকে যথেষ্টই গুরুত্ব দেয় । ঠিকই তো ভার্সিটি লাইফে এসে ইভানাকে পটাতে পারলো । যদিও এই মেয়েটাই তাকে সবচেয়ে বেশী যন্ত্রণা দিয়েছে কিন্তু তাতে কি ? হিমেল প্রথম দেখাতেই যখন বুকের বাম পাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করেছিলো সাথে এও বুঝেছিলো প্রেয়সী তার কতোটা ডেয়ারিং । কথা বলার ধরণ , হাঁটার গতিতে এক অদ্বিতীয় ছন্দ । সে কসম কেটে বলতে পারে এমনটা আর কারো মধ্যে দেখেনি । এমন মেয়ে বাই ডিফল্ট ডেসপারেট না হয়ে পারেইনা । এই যে এখন কলেজের সেই বিভীষিকার স্মৃতিচারণ করে মেয়েটা আতঙ্কে এতোটুকু হয়ে গেছে এর মধ্যেও কি নিয়ম ভাঙ্গবার আনন্দ প্রচ্ছন্ন অবস্থায় নেই ? আলবত আছে । হিমেল মেয়ে তো কম দেখলোনা । ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগেই তো কাটিয়ে দিলো প্রায় চার বছর । অনার্স প্রায় শেষই হয়ে এলো । বাপরে বাপ , মেয়েগুলা একেকটা আরেকটার চাইতে ডেঞ্জারাস । বিশেষ করে মফস্বল থেকে যারা আসছে । আজীবন ঢাকার বাইরে এক পা না ফেলা ইভানা তো তাদের তুলনায় নিতান্তই পুঁচকে । নাক টিপলে দুধ বেরোয় এমন । হিমেল তাই প্রেমিকার অতীত স্মৃতিচারণে বিশেষ ভাবিত হয়না । এই সময়ে আদর্শ প্রেমিকের কাজ হলো শুধু শুনে যাওয়া । অপরপ্রান্ত থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না পেলে নিজেই কথা বলার টপিক বদলাবে ।



ইভানা সহসা প্রসঙ্গ বদলাবার প্রয়োজনবোধ করেনা । তার বাক্যমালা চিরসবুজ হয়ে ধারাবাহিক ফুটতেই থাকে ,



“ তুমি একবার ভাবতে পারো আমার সাথে এককথায় কলেজ পালাইয়া মিরপুর বেড়িবাঁধ চলে যাওয়া রুবির ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে থাকতে বিয়ে হয়ে গেছে । বাচ্চাও হইছে একটা কিছুদিন হইলো । স্বামী , সন্তান আর সংসার এই তিনের বাইরে আর কিছু নিয়ে যদি কথা বলে । মানুষ এতো পাল্টায় কেমনে কে জানে । “



হিমেল গৎবাঁধা কিছু বলবার চেষ্টা করে । “ বিয়ে হইলে সবাই ই একটু আধটু চেঞ্জ হয় । এমন সিরিয়াস হবার কিছু নাই । “ ইভানা কনভিন্সড হয় কিনা সেটা নিয়ে তর্কের অবকাশ থেকেই যায় । কিন্তু হিমেল তা নিয়ে চিন্তায় মগ্ন হয়না । ইভানাকে জানতে না দিয়ে তার সাথে নীরবে এক ধরণের বাগযুদ্ধে লিপ্ত হতে হিমেল বেশ ভালোবাসে । প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রেয়সী ইভানার উদ্দেশ্যে হিমেল নিঃশব্দে বলতে থাকে “ মানুষ এতো পাল্টায় কেমনে তোমারে ধরে ধরে শিখাইলেও বুঝবানা । তোমারে পটানোর জন্য আমি হিমেল , তোমার প্রেমিক দিনের পর দিন কতো হোমওয়ার্ক করে রাখছিলাম তার কি বুঝছো তুমি ? কিচ্ছু বুঝোনাই । বাপ – মায়ের একমাত্র সন্তান তুমি । তোমার বাপে এজিএম ব্যাঙ্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট না হইলে ইভানা আহমেদকে এই হিমেল পুছতো নাকি ? কাভি নেহি । সুন্দরী মেয়ে কম দেখছি এই জীবনে ? আসছে আর গেছে । সূর্যসেন হলে থাকতেছি চার বছর । একদিনও মিছিলে যাইনাই । কিন্তু অনার্সটা শেষ হোক একবার । সরকারী ছাত্রসংগঠণের এক পান্ডাকে ধরে চল্লিশ হাজার স্যালারীর চাকরী আমি জুটাইয়া নিবোই । মাস ছয়েক গেলে তোমার চাকরীও জুটে যাবে । মানুষ কিভাবে পাল্টায় , ক্যান পাল্টায় তা তুমি বুঝবা কেমনে ? বলো কেমনে ? “



প্রেয়সী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হওয়া ইভানার প্রতি সেই সময়ে হিমেলের করুণা হয় । বিনা কারণেই তার দিকে আড় চোখে চেয়ে দেখে । আহা , বেশ ক্ষিধা লাগছে বেচারীর । খাওয়ার ধরণ দেখেই সে বুঝতে পারছে । হিমেলের বুকে আচমকা পলাশ ফুল জন্মে । এতোক্ষণ ধরে যতো যাই ভাবুক মনে মনে মেয়েটার প্রতি তার ফিলিংসও তো আছে । নাইলে এরকম গোগ্রাসে খাইতে দেখে তার হৃদয়েও বাষ্প জমে কেন ? ইভানা প্রেমিকপ্রবরের মনের ভেতরকার এতো জটিল হিসাবনিকাশের কিছু বোঝেনা । নিবিষ্ট মনে প্রেমিকাকে দেখতে দেখতে হিমেলের প্যান্টের ডানদিকের পকেট ভাইব্রেট করে । ডেট করতে বেরুলেই সে মোবাইল ভাইব্রেট করে রাখে । ঠিক এমন সময়তেই যতো ইম্পরট্যান্ট ফোন কল আসতে হবে । তবে ইভানা কোনদিন এই নিয়ে রাগ করেনি । এদিকে বিকাল পড়ে এলে চায়না কিচেন রেস্টুরেন্ট আরো বেশী গমগমে হয়ে উঠে । এমন সচকিত সময়ে প্রেমিকার প্রতি মমতা ক্রমশ উষ্ণ হতে থাকলে হিমেলের তাতে খারাপ লাগবে কেন ?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আপনি ভালোই লিখেন। কিন্তু ব্লগে অন্যদের সাথে আপনার ইন্টারেকশন অনেক কম। অন্যদের সাথে ইন্টারেকশন থাকলে নিজের লেখার ব্যাপারে আরো ভালো ফিডব্যাক পেতেন, যা মে বি আপনার লেখার মান আরো বৃদ্ধি করতে সাহায্য করত। :)

শুভেচ্ছা রইল। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.