নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিয়েবাড়ী

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:০৫

প্রত্যেকেই কথা বলছে । যার যার সঙ্গী – সাথীর সাথে কিংবা পাশে বসে থাকা অপরিচিতজনের সাথে । রাশেদের কানে কারো কথাই তাই ঠিকভাবে পৌঁছায়না । কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকার পর থেকেই মনোযোগ দিয়ে পিলারগুলা দেখতে শুরু করেছিলো । সেই দেখা এখনো জারি আছে । পিলারের রঙের কম্বিনেশনের কারণে । কম্বিনেশনটা এমন যা আগে কোন কমিউনিটি সেন্টার কিংবা হলে তার চোখে পড়েনি । রাশেদের এই নির্দোষ কর্মে কি দোষ আছে অন্যরাই বলতে পারে তবে নির্বিঘ্নে তা সে দেখতে পারলোনা । কাঁধে একটা শক্ত হাতের স্পর্শ অনুভূত হয় । পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে জুনায়েদ । সাদা রঙের চোস্ত স্যুট পরিহিত । তার গলায় জিজ্ঞাসা । গতানুগতিক ।

“ কিরে তুই একলা একলা এখানে খাড়াইয়া করোস কি , কাউরে পছন্দ হইলো নাকি ? “

রাশেদের মুখে থুথু জন্মে । তবে সভ্যতার বেড়াজালে অভ্যস্ত বলে তাকে মুখের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে নেয় । হারামজাদা রাশেদের হিস্টোরী সব জেনেও হুদাই মজা মারতেছে । তার উদ্দেশ্যে করা প্রশ্নটার জবাব দেবে কি ? উত্তর দেওয়ারই কোন মানে হয়না । দুই – এক সেকেন্ড ভেবে মনঃস্থির করলো আগ্রহ নিয়ে পিলার দর্শনের কথা জানাবে । কিন্তু তাকে কিছু বলতে হলোনা । তার আগেই জুনায়েদের মুখ ফের চলতে আরম্ভ করলো ।

“ ওই , চল পশ্চীম দিকের চার নাম্বার রোতে গিয়া বসি । সাবেক জাস্টিস করিম সাহেব যেইখানে বসছে । ভালো আলাপ জমছে । তুই আয় , জয়েন কর । “ জুনায়েদের চোখে মুখে কৌতূহল । কিসের সেই প্রশ্ন রাশেদের মনে জাগে সত্য । তবে সেই কৌতূহল নিবৃত্ত করার ইচ্ছা হলোনা । আবার এতোক্ষণ মনোযোগ দিয়ে পিলার দেখবার যেই কাজটা করছিলো সেই আগ্রহেও ভাটা পড়েছে ।

অনেকদিন পরে রাশেদ আজকে বিয়েবাড়িতে এসেছে । সেটা বাল্যবন্ধু আজীজের বিয়ে বলেই । এড়ায় কি করে ? তবে এটুকুতেই থামলে যতোটুকু বলা হয়েছে তার চাইতেও বেশী কথা গোপন থেকে যায় । সে তা নিজেও স্বীকার করে । নেলীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদের পরে নারীদের দিকে ভালো করে তাকিয়েও পর্যন্ত দেখেনি । কতোদিন হয়ে গেলো । চার মাস ? ছয় মাস ? রাশেদ কড়ে আঙ্গুলে হিসাব করে । আঙ্গুলের সাথে তার হৃদকম্পনের বেগ বাড়তে থাকে । পাক্কা নয় মাস । হিসাবে দুইশো সত্তর দিন । ঠিক পৌনে এক বছর ।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার হিসাবে গোলমাল থেকেই গেছে । এই যে কমিউনিটি হলে ঢুকেই ধবধবে সাদা টাইলসে তার পালিশ করানো প্রিয় শু মিনিটে মিনিটে স্লিপ করার দশা হয়েছিলো সেখান থেকেই শুরু । মিনিট দুয়েক যেতে না যেতেই পেচ্ছাব লাগলে রাশেদ বিরক্তি চেপে রাখতে পারেনি । সব শালা আজীজের দোষ । এমনভাবে সময় মতো আসতে বলেছিলো যে রাশেদ বাড়ি থেকে বেরুবার আগে জলবিয়োগের কাজটাও করে যেতে পারেনি । বিয়ের আনন্দে বেটা আউলা ছিলো মনে হয় । সাথে আরো লেকচার ঝেড়েছিলো ,

“ তুই দোস্ত ঠিক আটটার মধ্যে চইলা আসবি । দেরী য্যান না হয় । আর তোর খাসিলত জানি । পোলাও – মাংস খাইয়াই বাড়ির দিকে দৌড় দেওনের জন্য ব্যস্ত হইয়া পড়বি । আজকে এইসব হাংকিপাংকি চলবোনা । সীমার সাথে দেখা না কইরা কোন যাওয়াযাওয়ি নাই । “

রাশেদের মুখে গালি চলে এসেছিলো । বিয়েবাড়িতে এসে কনের সাথে দেখা করার সুযোগ পেলে সেটা হারাতে চায় কোন পুরুষমানুষ ? বিয়ে করতে যাচ্ছে এমন লোকের মুখে এইসব বালছাল মানায় ? তবু নিজেকে সেন্সর করে নিয়েছিলো । তারপরে বিশ মিনিট অপেক্ষা করে যেই সিএনজি পেয়েছিলো আড়াইশো টাকায় তাতে চড়ে মালিবাগের এই কমিউনিটি হলে আসা আর দুই মিনিটের মাথাতে পেচ্ছাব করতে টয়লেটে ঢোকা ।

এদিকে পশ্চীম দিকের তিন নাম্বার রোতে ততোমধ্যে আলাপ বেশ জমে উঠেছে । সাবেক জাস্টিস করিম সাহেব , জুনায়েদ আর কালো স্যুট পরা নাম না জানা এক ভদ্রলোকের মধ্যে । আলোচনার বিষয় সাম্প্রতিক রাজনীতি । প্রত্যাশিত । সম্বিত ফিরে পেলে রাশেদ মনে মনে শব্দটি উচ্চারণ করে । নিজের কাছেও গোপন শোনায় এমনভাবে । এই ঝকমকে কমিউনিটি সেন্টারে খাওয়ার জন্য হাপিত্যেশ করার সময়ে রাজনৈতিক আলাপ ছাড়া আর কি নিয়েই বা ঝড় তোলা যায় ?

“ এই সরকার একেবারে অপদার্থ । আটারলী ওর্থলেস । এতো এতো অবরোধ হচ্ছে , বিরোধী দলের কর্মীরা যেখানে সেখানে হামলা করছে । বাড়ি থেকে বেরুলেই বোমা কি গোলাগুলি । কই , শুনতে তো পেলাম না পুলিশ কাউকে ধরতে পেরেছে । কেবল আক্রান্তই হয়ে আসলো । আর নিরীহ সাধারণ মানুষগুলা কিভাবে মারা যাচ্ছে । আজকে গুলি খেয়ে তো আগামীকাল বোমায় , আহারে । “ এটুকু বলে কালো স্যুট পরা ভদ্রলোক থামেন । কপালে একটা কড়া ভাঁজ । যেন আক্রান্ত জনগণের সমস্ত দায়ভার তার প্রশস্ত কাঁধের উপরেই । তিনি সেই দায় নিয়ে সামনে থাকা পানির বোতলটা খুলতে খুলতে জুনায়েদ শুরু করে ।

“ এটা তো একতরফা গভর্নমেন্টেরই দোষ দেওয়া হয়ে গেলো । গতকালকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম । তিনি বললেন এই অতর্কিত হামলায় হতাহত যাই হয়েছে তার সংখ্যা আর তিনি বাড়তে দেবেন না । শহরে এর মধ্যেই বিজিবি নামানোর আদেশ দিয়েছেন । র্যা ব – পুলিশ তো আগে থেকেই রাস্তায় আছে । সত্য যে মারা যাওয়ার সংখ্যাটা কম না । কিন্তু সরকার তো বসে থাকছেনা । প্রয়োজনীয় একশন নেওয়া হচ্ছে । “

সাবেক জাস্টিস করিম সাহেব বিরোধীদল ক্ষমতাসীন থাকবার আমলে জাস্টিস ছিলেন । সেই ইতিহাস এখনো মনে রেখেছেন বলেই কিনা তার দুই বাক্যের বক্তব্য কালো স্যুট পরা জাতির বিবেকের বক্তব্যের ইকোর মতো শোনালো ।

“ এরকম ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে কিন্তু সরকারের উপরেই সবাই তাকিয়ে থাকে । সেটা প্রত্যাশিতও বটে । “

ততোমধ্যে টেবিলে পোলাও – মাংস আসেনি তবে বোরহানী চলে এসেছে । রাশেদ লক্ষ্য করে নিজের গ্লাসে বোরহানী ঢালতে ঢালতে স্যুট পরা লোকটার মুখে নীরব কিন্তু বিষাক্ত হাসি ফুটে উঠে । দ্রুতই তা মিলিয়ে যায়না । সেটা নিশ্চয়ই তার বক্তব্যের সাথে সমাজের মান্যগণ্য এক ব্যক্তির সম্মতি জ্ঞাপনের আনন্দে । রাশেদের চোখ এবারে জুনায়েদের দিকে যায় । বাস্তবে জোঁকের মুখে নুন পড়লেও ভঙ্গিমায় জুনায়েদ দার্শনিকের মুখ করে বসে আছে । দূর থেকে তাকে কেউ ডেকে উঠলে সিট ছেড়ে সে দ্রুত উঠে দাঁড়ায় । যেন কারো ডাকের জন্যেই এই মুহূর্তে সে বসে ছিলো । রাশেদের মনে হয় সে নিজেও টোটাল কমিউনিটি সেন্টারটায় আরো একবার এক পাক ঘুরে আসে । মাত্রই পঞ্চম ব্যাচের খাওয়া শেষ হয়েছে । সহসাই তাদের খাবার আসবার কথা নয় ।

আজকে , এই শীতের রাতে তার সাথে নেলী থাকলেই কি এই পরিবেশটা রাশেদের কাছে সুশোভিত বলে মনে হতোনা ? হলের যেই দিকটায় দাঁড়ালে বিয়ে উপলক্ষ্যে সাজগোজ করা রমনীদের সবচেয়ে কাছ থেকে দেখা যায় সেখানে দাঁড়িয়ে রাশেদ প্রশ্নটা নিজেকেই করে । তবে উত্তর দেওয়ার ফুরসত পায়না । কেননা ততোক্ষণে অপরিচিতা নারীকূলের চলাফেরা রাশেদকে ব্যাকুল করতে আরম্ভ করে । কিছুক্ষণ আগের স্যাঁতস্যাঁতে মনটা তখন ভিজে উঠতে শুরু করেছে ।

ভিড়ের মধ্যে গণহারে সেলফি তোলায় ব্যস্ত নারীদের একটা বড় দল দেখা যাচ্ছে । তাদের মধ্যে ডানদিকের থেকে তিন নাম্বারজন । বিয়ে উপলক্ষ্যে উটকো এক সাজ দিয়েছে । তবুও রাশেদের বেশ ভালো লাগে । পরনের সবুজ রঙের শাড়িটায় এক ধরণের ব্যতিক্রমী সফিসটিকেশন । এরকম বেশী চোখে পড়েনা । চোখে আইলাইনার যেটা দিয়েছে তা রাশেদের চোখে পড়লে সে নির্বিকার থাকতে পারেনা । কি ক্ষতি হয় যদি সে নিজে গিয়ে মহিলার সাথে পরিচিত হতে যায় ? তাকে ছ্যাবলা মনে করবে , নাহ সেই সুযোগই রাশেদ দেবেনা । বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর মার্কেটিং বিভাগে চাকরী করছে সাড়ে চার বছর হলো । গায়ে দামী পারফিউমের ঘ্রাণ এখনো চলে যায়নি । একবার সেলফি তোলা থেকে ব্রেক নিলে রাশেদ স্বভাবসুলভ স্মার্ট ভঙ্গিতে কাছে গিয়ে “ এক্সকিউজ মি , আপনাকে আগে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে । আপনি কি সীমা আই মিন কনের বান্ধবী “ ......... নাহ এভাবে এপ্রোচ করাটা বেশ মেইনস্ট্রিম । হিন্দী ছবিগুলোতে অসংখ্যবার দেখা গেছে । অল্টারনেটিভ স্মার্ট বাক্যবলী কি হতে পারে ভেবে রাশেদের মন দিশেহারা হয় । তার চাইতে বরং অন্য কারো দিকে মন দেওয়া যাক । হ্যা , ওই যে মেরুন রঙের শাড়ি পরা আছে সে । রাশেদ এতোক্ষণ সেলফি তোলায় নিমগ্ন নারীদের দলটিকে মনোযোগ দিয়ে দেখেছে কিন্তু সেখানে এই মহিলাকে দেখেনি । রাশেদের দিকে একবার তার চোখ গেলো কি ? তার পা জোড়ায় হালকা কাঁপুনী । ডান দিকের পকেটে পকেট টিস্যু আছে । বের করে মুখ মুছবে নাকি একবার ? কেমন তৈলাক্ত হয়ে আছে । নাহ থাক , তার দিকে আরেকবার তাকালেই বুঝবে সে নার্ভাস হয়ে গেছে । তখন স্বল্প সময়ের জন্য হলেও নাকে দড়ি দিয়ে তাকে ঘোরাতে চাইবে । এসব রঙ-ঢঙ করার বয়স চলে গেলেও কিছু নারীর চরিত্রে থেকেই যায় ।

কাঁপুনী পা জোড়া থেকে শরীরের অন্যত্র ট্রান্সফার হলে রাশেদ অনুভব করে এমন অবস্থায় ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে নারী শরীর দেখার চাইতে ভারমুক্ত হওয়াটাই ভালো । সচরাচর কমিউনিটি হলগুলার টয়লেট বেশ ব্যস্ত থাকে । কিন্তু এখানে তেমন দেখা যায়নি ।

ওয়াশরুমে গিয়ে রিফ্রেশড হতে গেলে কোনার দিকে স্লাইড দিয়ে ঘেরা অংশটুকুর কাছে যেতে হয় । তার বিপরীত দিকের দেয়ালের পাশে ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার । পালিশ করানো শু নিয়ে , এই ধবধবে সাদা রঙের টাইলসে যা বারবার স্লিপ কেটে যাবার উপক্রম করেছিলো রাশেদ টলমল পায়ে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতেই কিছু পথ পরে থমকে যায় । আশেপাশে এই মুহূর্তে কেউ নেই । মানুষজন অনেকেই খাওয়ার অপেক্ষায় মগ্ন থেকে নিজ নিজ সিটে বসে আছে । ভিড় যতোটুকুই আছে তার প্রায় সবই বর-কনের রিসেপশনের জায়গাটুকুতে । সেখানে সেলফি তুলে অপরের সান্নিধ্যে থাকবার সময়টিকে ফ্রেমবন্দী করতে ব্যস্ত নারী – পুরুষের কমতি নেই । কিন্তু স্লাইড দিয়ে ঘেরা অংশটুকুর সামনে আপাত এই নির্জনতার সুযোগে যুবক বয়সের এক যুগলকে পরস্পর চুমু খেতে দেখা যাবে এই দৃশ্যের জন্য রাশেদ প্রস্তুত ছিলোনা । তাদের নির্বিঘ্নে চুমু খাওয়ার সুযোগেই নাকি নিজের বিব্রতভাবে কাটাতে কে জানে রাশেদ দ্রুত ওয়াশরুমের একটায় ঢুকে পড়ে । প্যান্টের বেল্ট খুলতে খুলতেও সে মনঃস্থির করতে পারেনা কার কথা কল্পনা করে শরীরের কাঁপুনী থামাবে । প্রেমিককে চুমু খাওয়া সাহসী মেয়েটাকেও লিস্টে ঢোকানো যায় । ক্ষতি কি ? তবে মেয়েমানুষ আজকে কম দেখলোনা । নয় মাস , গুনে গুনে ঠিক নয় মাস পরে একসাথে এতো উর্বশী চোখে পড়লে নিজেকে সামলে রাখবার কি মানে আছে ?





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.