নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুইসাইড নোট

১২ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৮

সুইসাইড করার ইচ্ছা আমার কতো তীব্র সেটা তোমাকে একশোবারের মতো বলছি। তারপরেও তুমি কনসিডার করতে চাওনা। খালি আমাকে ছাইড়া দিতে চাও।” বিকালে শারমিনের সাথে দেখা করার সময়ে প্রথমেই এই কথাগুলো বলবে ভেবে নিয়ে কাল সারারাত কতো প্র্যাকটিস করলো। কিন্তু লাভ হলো কই? জহিরের বুকে ব্যর্থতার তীর্যক ফুল ফুটলে তার কাঁটা বিঁধেই থাকে। হৃদয়ে ধারণ করে বেঁচে থাকা যায়না এমন সব বাক্যমালা রিহার্সেল করে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ঠিকই কারো সামনে উপস্থাপন করা যায়। যুগে যুগে মানুষ এমন করে এসেছে। বাবার কাছে, মায়ের কাছে, প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে শুরু করে হাড় হারামজাদা বন্ধু সবার সাথেই কথামালার ইম্প্রোভাইজেশনে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা যায়।

কিন্তু জহিরের পক্ষে সেটা সম্ভব হলো কই। বিকালে রুগ্ন, অর্ধমৃত দেখায় এমন দেখতে দুইটি রজনীগন্ধার স্টিক হাতে নিয়ে ঠিক ঠিক পৌঁছে গিয়েছিলো রমনা পার্কে। বাড়ি থেকে বেরুবার সময়ে খেয়ালই ছিলোনা যে আজকে কি বার। রবিবারে এবং বুধবারে রমনা শিশু পার্ক বন্ধ থাকে বলে সচরাচর সপ্তাহের এই দুইটি দিনে রমনা পার্কে অন্যান্য দিনের চাইতেও বেশী ভিড় থাকে। টাউট-বাটপারের সংখ্যাও অনেক বেশী থাকে। শারমিনকে সামনে হেঁটে আসতে দেখলে জহিরের আজকের বারের কথা মনে পড়ে। কিন্তু তার কপাল সেই পর্যন্তই সুপ্রসন্ন ছিলো।

চারপাশের রাস্তার কোথাও সম্ভবত বিয়ে হচ্ছে। নীল, সবুজ বাতি দিয়ে সমগ্র এপার্টমেন্ট সজ্জিত, রাস্তার ফুটপাথ ধরে সারি সারি গাড়ি রাখা, তার ভেতর থেকে রঙ বেরঙের জবরজঙ মার্কা পোশাক পরা নারী-পুরুষরা মুখে নন কমিটাল আধুনিক ইউরোপিয়ান হাসি এবং মগজে বঙ্গবাসীর পিউরিটার্ন সৌজন্যতা নিয়ে বিয়েবাড়িতে প্রবেশ করছে। সাদা রঙের পাতলা দাঁড়ি, দাঁড়ির চাইতেও বেশী সফেদ রঙের পাঞ্জাবী পরিহিত এক প্রৌঢ়কে দেখা যাচ্ছে আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতে। জহিরের অনুমান হয় সম্ভবত কনের জন্মদাতা হবেন। এরকম একজন শ্বশুরের সান্নিধ্য পাবার জন্য তার হৃদয়ও তো কম তৃষ্ণিত ছিলোনা। কিন্তু সেই সুযোগ তার হলো কোথায়? শারমিনের জন্য তার সুইসাইড করতে ইচ্ছা করে এই কথাটুকু শোনার পরেও যদি একটু বিবেচনা করতো তাইলে অদূর ভবিষ্যতেই শারমিনের বুড়া বাবাটাও তাকে, তার আত্মীয়স্বজনসহ আরো কতো অতিথিকে এভাবেই স্বাগত জানাতো।

“তোমার এইসব ভাবের কথা, কাজের বেলাতে সব ঠনঠন।” শারমিন কথাগুলো বলেই খিলখিল করে হেসেছিলো। কি হারামজাদী মেয়ে দেখো, জহির শুনে তার দিকে রাগত ট্রাফিক সার্জেন্টের মতো করে তাকিয়েছে দেখেও এতোটুকু মাথা নিঁচু করেনি। অবলীলায় নিজের আনন্দময় ভবিষ্যতের কথা বলে গেছে। শিহাবকে বিয়ে করলে তার ভবিষ্যত কতোটা উজ্জ্বল আর নিরাপদ, তার হবু জামাই কি রকম ম্যানলী, ব্যাঙ্কব্যালেন্সের সাথে সাথে মেয়েদের সাথে নিঁখুত ম্যানার বজায় রাখবার অতুলনীয় দক্ষতা কিভাবে আয়ত্ত করেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা। জহিরের তখন সুইসাইড করবার ইচ্ছাটা আবারো চাগাড় দিয়ে উঠেছিলো। সে করে বসতে পারতোনা? আলবত পারতো। কিন্তু সময়টাই আসলে গুবলেট করে দিয়েছিলো। সদ্য দিনের আলো নিভে নিভে আসছে, মানুষজনের বৈকালিক মৃদু আলস্যে ভরা চলাফেরা তখন মাত্রই গতির সঞ্চার পেতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পরেই রমনা পার্কের চারপাশের বেঞ্চগুলোতে আঁধার নেমে আসবে, গাছগাছালীর আশেপাশে এদিকে ওদিকে প্রেমিক-প্রেমিকাদের পারস্পরিক সান্নিধ্যের আকুলতা বেড়েই চলবে। এমন এক অবস্থায় জহির পারতোনা শারমিনের বাহু সজোরে আঁকড়ে ধরে তেমন একটা জায়গায় চলে যেতে? তারপরে অচিরেই শারমিনের পাতলা ঠোঁটের উপরে তার গাবদা গাবদা ঠোঁটজোড়া ঠেসে ধরলে শারমিন তো শারমিন কোন মহিলা কুস্তিগীরেরও সাধ্য ছিলোনা জহিরের সাথে গায়ের জোরে পেরে উঠে।

প্রাক্তন প্রেমিকার ঠোঁটের উপরে নিজের ঠোঁটজোড়াকে প্রতিষ্ঠিত করবার কাল্পনিক ইচ্ছা বেশীক্ষণ যাবত জহিরের সঙ্গী হতে পারলোনা। কখন যে হাঁটতে হাঁটতে মাঝ রাস্তা বরাবর চলে এসেছিলো তার হদিস কি প্রেমের কথা স্মরণ করবার সময়ে খেয়াল থাকে? একটা প্রাইভেট কার কোত্থেকে এসে প্রায় জহিরের শরীর ঘেঁষে তাকে অবজ্ঞা করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে গেলো। জহিরের বুকের মাঝে ঈর্ষার ধনুক শিরশির করে। শিহাব, শারমিনের জামাই হতে যাওয়া ভেড়ুয়া গার্বেজটা নাকি প্রাডো চালায়। জহিরের সাথে বজায় রেখে চলা বানোয়াট সম্পর্কের ইতি টানতে চায় কথাগুলো নির্বিকারভাবে জানাবার পরপরই নিজের হবু স্বামীর প্রাডো গাড়ি চালাবার গর্বে শারমিনকে বিভোর লেগেছিলো। প্রেমিকার মুখে এসব কথা শোনার পরে বিশ্বের কোন প্রেমিকের ইচ্ছা হবেনা একটা জবরদস্ত সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করবার? জহিরের ইচ্ছা হয়েছিলো একটু পাশেই যেই ডাবওয়ালা দা দিয়ে নিরাসক্তভঙ্গিতে ডাব কেটে মানুষজনকে খাওয়াচ্ছিলো সেই দা দিয়ে নিজের শরীরের সর্বত্র নিজেই কোপায়। কিন্তু কথাগুলো বলবার সময়ে শারমিনের স্তনজোড়া জহিরের বুকের সাথে রায় ঘষা খাচ্ছিলো। নাইলে জহির তখনই এসপার ওসপার কিছু একটা করে ফেলতোনা?

আজকে সারাটাদিন কম পথ হাঁটেনি সে। বিশ্রী গরম পড়েছে শহরে। কি পাবলিক বাসে, কি সিএনজিতে কি খোলা পথে হাঁটা গরম থেকে শহরবাসীরা রক্ষা পায়নি। তারপরে আসন্ন মেয়র নির্বাচনের জন্য গোটা মোহাম্মদপুরের রাস্তা ছিলো গমগমে। একটা সুইসাইড নোট লিখে তারপরে গাদাগাদা ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরে যাবার ইচ্ছাটা জহিরের বহু পুরনো। ইচ্ছাপূরণের জন্য আজকের এই অসহ্য গরমের দিবসটি যথার্থ। উপলক্ষ্যটিও কি কম যথার্থ? মাত্র ঘন্টা তিনেক হলো প্রেমিকা কর্তৃক ছ্যাঁকাপ্রাপ্ত হয়েছে। কতোদিনের সম্পর্ক? একেবারে শুরুর দিন থেকে গুনতে গিয়ে জহিরের দুইবার গোলমাল হয়ে যায়। তৃতীয়বারের সময়তে এসে জহিরের আঙ্গুলজোড়া ঠিক ঠিক তার প্রেমের সম্পর্কের স্থায়িত্বকাল গণনা করতে পারে। দুই বছর চার মাস বারোদিন।

ঘড়িতে সময় দেখে নেওয়ার জন্য জহির স্টাইল করে বাম হাতের কবজিটা ঘোরালো। রাত বাজে নয়টা বেজে সাইতিরিশ। সম্পর্কের প্রথমদিকে এরকম স্টাইল করে তার কবজি ঘোরানো দেখলে শারমিন প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠতো। সামান্য এক কবজি ঘোরানোতেই। অথচ এখন দেখো, কেমন নৈর্ব্যক্তিকভাবে তারই মুখের উপর দিয়ে গড়গড় করে শিহাবের প্রশংসা করে গেলো। জহির এতোবার করে বললো আরেকটিবার ভেবে দেখতে। কিন্তু শালী শুনলোই না। সমগ্র শরীর ক্লান্তিতে প্রায় নুয়ে পড়েছে, পা জোড়াতেই দীর্ঘ সময়ের অবসন্নতা। তবুও মৃদু মন্দ আলোতে ভরা নিজের ঘর জহিরকে এতোটাই আকর্ষণ করতে শুরু করলো যে সমস্ত ক্লান্তিকে অতিক্রম করে সে দ্রুত পা ফেলতে কুন্ঠিতবোধ করেনা। মনের মতো একটা সুইসাইড নোট লিখে তারপর জমা করে রাখা গোটা তিরিশেক ঘুমের ওষুধ গিলে মরে যাবার জন্য আজকের রাতটা উৎকৃষ্ট বললেও কম বলা হবে।

ঘরে প্রবেশ করার পথে প্রথম পদক্ষেপেই জহিরের চোখজোড়া ঘুমে বিশ্বচরাচর থেকে নিজেকে পৃথক করে নিয়ে অচেতন হবার বাসনায় নিজেকে প্রায় সমর্পণ করে। কিন্তু বহুদিনের পুরনো এক ইচ্ছাপূরণের জন্য আজকের দিনটা মোক্ষম। প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে গেছে, জানালা খুলে দিলেই চাঁদের আলো আকাশ থেকে সোজা তার ঘরে নেমে আসবে। একটা মৃদু মন্দ ন্যাংটা বাল্ব, মাথার উপরে বনবন করে ঘুরতে থাকা ফ্যানের পরিষ্কার ব্লেড, আহ!! জহিরের হাত টেবিলে আতিপাতি করে কলম আর ধবধবে সাদা কাগজ খোঁজে। সারাদিনের পরা জামাকাপড় ছাড়তে ছাড়তে জহিরের কি হলো সেটা ঈশ্বরই বলতে পারে গলা অবদি কামবোধের অনুভূতি জাগ্রত হলে শারমিনের স্বাদ তার কখনো পাওয়া হয়নি বিষয়টা মনে পড়ে। আগামীকাল কি পরশু যখন বন্ধুবান্ধবেরা তার বিচ্ছেদের বিষয়টি জানবে তারপরে এই নিয়েই তাকে খুঁচিয়ে একাকার করে আস্ত রাখবেনা। তাই টেবিলে যত্ন করে সাজিয়ে রাখা নতুন ফাউন্টেন পেন এবং ধবধবে সফেদ কাগজ নিজেদের স্থিরতায় আবিষ্কার করে। ততোমধ্যে জহিরের মাথার দুই পাশে অতৃপ্ত কাম দপদপ করে জ্বলতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় সুইসাইড নোট লিখবে তার সেই সাধ্য কই?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৯

সুলতানা রহমান বলেছেন: ভাল লেগেছে। গল্প টাতে বাস্তবতার ছোঁয়া ছিল।

২| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:১৭

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো।

৩| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:২৭

জেন রসি বলেছেন: ভালো লেগেছে।

৪| ১৩ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:০৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অসাধারণ এক কথায়| আপনার বলার ভঙ্গিটা দারুন| অবলীলায় বলে যাচ্ছেন সবকিছু মজাকরে অথচ ধারটা ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে| শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.