নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক মুখ দশ অবয়ব

১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ১:৫০

বাবর রোডের আল্লাহর দান ফার্মেসীতে প্রয়োজনীয় ওষুধ শেষ পর্যন্ত ঠিকই পাওয়া যায়। তবু নিজামের বুকের খচখচ অনুভূতিটা কিঞ্চিত হয়ে এলেও তাকে বিদ্ধ করতেই থাকে। রুবেলের বাড়ি থেকে বেরুবার সময়ে সোনালী রঙের স্বল্প দামের হাতঘড়িতে সময় দেখেই জিভ কেটে ফেলেছিলো। আজ বাড়ি ফিরলে রুনার কাছে অন্তত খবর ঠিকই হ্যাজ। বাসা থেকে বেরুবার সময়ে বলেছিলো বেশ তাড়াতাড়িই বন্ধুর বাড়ি থেকে বেরুবে। তিনদিন হলো তাদের কন্যার বেশ ভালো রকমের জ্বর। সাথে খাদ্যগ্রহণেও রাজ্যের অনীহা কিংবা অক্ষমতা। যাই খাচ্ছে বমি করে ফেলে দিচ্ছে। মেয়েটার কি যে হয় কয়দিন পরপরই। শরীরটা ধারাবাহিকভাবেই খারাপ থাকে। আজ জ্বর তো কাল অরুচি। এ তো গেলো বাড়ির টেনশন। তার উপরে আজকে নিজাম এতো দেরী করে ফেললো। বাড়ি গিয়েও রুনার গুরুগম্ভীর মুখ দেখবে। প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেলো বিছানায় তারা পরস্পরের সাথে সংযোগহীন। নিজামের আইডিয়া ছিলো আজকে বন্ধুর বাড়ি থেকে দ্রুত নিজের বাড়ি ফিরে বউকে খুশী করবে। তারপর খাওয়া শেষ হলে............

কিন্তু মাথায় এতো প্ল্যান থাকলেই কি আর সব বাস্তবায়ন করা যায়? তাও যদি এরকম রসিক বন্ধু আর বন্ধুপত্নী থাকে? সত্যি বলতে আজকে রুবেলের বাড়িতে বেশ জমে গিয়েছিলো। বহুদিন পরে আজকে নিজাম প্রাণখুলে হাসতে পেরেছে। তার বাল্যবন্ধু শৈশব থেকেই হাড় হারামজাদা ছিলো। যেই মানুষকেই একবার দেখতো তার গলার স্বর, হাঁটাচলা সবই নিঁখুতভাবে নকল করতে পারতো। আজকে তারা দুই বন্ধু কিছু কেজো পেশাগত কথা বলে নিয়ে একটু থামবে কি রুবেলের বউ যুথী দুনিয়ার খাওয়া – খাদ্য নিয়ে হাজির। এরকম লোভনীয় সান্ধ্যকালীন খাবারের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ নিয়মিত আর পাওয়া যায় কোথায়? নিজাম স্ন্যাক্স একটু পেটে পুরেছে মাত্র রুবেল তার শ্বশুরের কথা বলার ভঙ্গি থেকে শুরু করে কন্ঠস্বর পর্যন্ত নিঁখুতভাবে অনুকরণ করে দেখিয়েছে। নিজাম তো নিজাম খোদ রুবেলের স্ত্রী যুথী পর্যন্ত তার জন্মদাতা বাপের চালচলনের এই রিডিক্যুল করা দেখে হেসেই কূল পায়না। তারপর একে একে স্বামী আর স্বামীবন্ধুর পরিচিত অনেক মানুষের হাঁটাচলার নিঁখুত চিত্র দেখে, আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু শুকনো সাংসারিক আলাপ, কন্ঠে পর্যাপ্ত উৎকন্ঠা নিয়ে সাম্প্রতিক রাজনীতির ভয়াল দশা নিয়ে আলোচনা করতে করতে রাত নটা বেজে গেলো।

ফার্মেসীওয়ালার কাছ থেকে কেনা ওষুধ আবারো শার্টের পকেট থেকে বের করে দেখে আরেকবার নিশ্চিন্ত হতে চাইলো নিজাম। নাহ, রুনা যেই ওষুধের নাম বলেছিলো সেটাই। পরিমাণও ঠিক আছে। কিন্তু এই নিয়েই যে নিজাম বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করেছে মহারাণীর মুখ ভার হওয়াটা ঠিকই অনিবার্য। চোখেমুখে আষাড়ের যেই ঘনঘটা তাতে একটুকু আলো দেখবে নিজামের সেই ভাগ্য কোথায়? অথচ রুবেলের বউ যুথীর দিকেই দেখা যাক। সারাদিনে তার উপরে সাংসারিক ঝক্কিঝামেলা কম যায়? মোটেও না। রুবেলের বাড়িতে তো নিজাম মাত্রই হলো আসেনা। বহু বছর ধরেই আসছে। প্রায় অথর্ব হয়ে যাওয়া শ্বাশুড়ী, সদ্যই কৈশোরোত্তীর্ণ দেবর নিয়েও দিব্যি সবকিছু জমিয়ে সংসার করছে। এই যে আজকে তাদের দুই বন্ধু চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো তখনও কি যুথী এসে তাদের সাথে যুক্ত হয়নি? রুনাকে নিয়ে এই নিয়ে চারবারের মতো রুবেলের বাড়িতে এসে নিজাম আড্ডা দিয়ে গেছে। যুথীকে দেখেও তার বোধদয় কিছুমাত্র হলোনা। নিজামের বুকের খচখচ অনুভূতিটা তার চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়তেই থাকে।

“বুঝলেন ভাই, আপনার বন্ধু আসলেই এক চিজ। বাসায় যতক্ষণই থাকে আমারে যদি রেহাই দেয় একটুও। হাসাইতে হাসাইতেই আমার অবস্থা কাহিল হয়ে যায়।” হাসতে হাসতেই যুথী একপর্যায়ে বলেছিলো।

রুবেল আর কি জবাব দেবে? তার নিজের হাসি থামলেই না দেবে। বন্ধু একা তাদের এভাবে দীর্ঘক্ষণ হাসতে দেখলে বিব্রত হবে এই দয়ায় হাসি কোনমতে থামিয়েছিলো রুবেল। কিন্তু নিজামের ঈর্ষার ভার তার বন্ধুর নেওয়ার সাধ্য কই? এমনিতেই ব্যবসার যেই হালহকিকত তার উপরে বাড়ি ফিরলেও যদি একদন্ড শাস্তি পাওয়া যায়। শোবার ঘর তো শোবার ঘর ডাইনিং টেবিলেও তারা যখন একসাথে খাওয়াদাওয়া করে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকালে মনে হয় যাবজ্জীবন প্রাপ্ত আসামীর মুখ দেখছে। যন্ত্রের মতো চলাফেরা, কথাবার্তাও রোবোকপের মতো। তার উপরে তাদের মেয়েটার উপরেও কথায় কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। নিজাম বেশ কয়েকবার মৃদু স্বরে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু স্ত্রীর ক্ষুরধার রিফ্লেক্সের সাথে পেরে উঠবে সেই ক্ষমতা তার কোনকালে ছিলো? তাই প্রতিবার মুখঝামটা খেলেই সে দার্শনিক হয়ে উঠে।

বাবর রোডের সামনের গলিটা একটু ট্রিকি। বেশ সরু মতোই। রাস্তার সর্বত্র সারাদিনের বালির প্রায় অদৃশ্যমান উপস্থিতি, একটু লাল লাল রঙের দেখায় এমন রাস্তা। অর্ধেকটা যেন আধপাকা এমন। তাছাড়া এই রাতে রাস্তাটা এভয়েড করতে পারলেই ভালো ছিলো। সামনেই যুবদলের ছোট্ট একটা অফিস। স্থানীয় কিছু নেশাড়ুরা ফেনসিডিল, গাঁজা এসবের জন্য প্রায় আধপাগলের মতো হয়ে যায়। এরকম সময়ে রাস্তায় একলা কাউকে পেলেই ডেসপারেট হয়ে উঠে। এ তো গেলো রাস্তার বিপদসংকুল চেহারা। তার উপরে আশেপাশের কোত্থেকে যেন মরা ইঁদুরের বিশ্রী পচা গন্ধ আসছে। উৎকট সেই গন্ধে নিজামের মনে হয় যেন সন্ধ্যায় বন্ধুর বাড়িতে ভক্ষণ করা সকল সুস্বাদু খাদ্য এই বুঝি পাকস্থলী থেকে বেরিয়ে এলো। কিন্তু এসবের কিছুই হয়না। যাত্রীবাহী একটি রিকশার বেল দুইবার শোনা যায়। দুইটি বয়োবৃদ্ধ কুকুর ক্লান্ত সুরে ঝগড়া করতে করতে আরো ক্লান্ত হয়ে গেলে রাস্তার সাইড দিয়ে নীরবে হেঁটে যেতে থাকে। একটু পূর্ব দিকে উপরের কোন একটা বিল্ডিং থেকে সম্ভবত কোন কিশোর/ কিশোরী একবার তীব্র শব্দে গান বাজালে সমগ্র এলাকার নীরবতা ভেঙ্গে খানখান হয়ে যেতে যেতেই সেই শব্দ নিস্তব্ধ বাতাসের সাথে মিলিয়ে যায়। সামনে উদয়ন রেসিডেনশিয়াল হাই স্কুলের গলিটা পেরুলেই বাবর রোডের চার নম্বর গেট। রাত দশটার পরে এক নম্বর, চার নম্বর আর দশ নম্বর গেটটাই কেবলমাত্র খোলা থাকে।

“যুথী বুঝছোস, এতো সাহসী মেয়ে কল্পনাই করতে পারবিনা দোস্ত। এই যে পশ্চীম দিকের মসজিদের গলিটা আছে না এই রাস্তা দিয়েই প্রায় রাত্রেবেলা বাজার নিয়ে হাইঁটা আসে। মানে যখন আমি বাসায় থাকতে পারিনা আর কি। এই রাস্তা দিয়া রাত নয়টার পরে এলাকার পুরুষমানুষই পারলে হাঁটেনা আর তোর ভাবী মেয়েমানুষ হয়ে। তারপর দেখ ওই বজলু সাহেবের বখাটে পোলাটা আছে শিহাব, আজ পর্যন্ত তোর ভাবীরে কখনো টিজ করার সাহস করেনাই। তাইলেই বুঝ অবস্থা।“ বিয়ে করার পরে আজ পর্যন্ত নিজাম আজ পর্যন্ত যতোবারই রুবেলের বাড়িতে এসেছে প্রায় প্রতিবারই কোন না ছুতায় তাকে বন্ধুপত্নীর অসীম দুঃসাহসীকতার গল্প শুনতে হয়েছে। নিজাম প্রতিবারই এমন মুখ করে শুনেছে যেন এই প্রথম সে বিষয়টা সম্পর্কে অবহিত হচ্ছে। আজকেও একবার কি এক প্রসঙ্গে স্ত্রীর প্রশংসায় কথাটা বলতে গেলেই নিজাম আচমকা টয়লেটে যাবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করার কথাটা তুললে তবেই সে বন্ধুর চর্বিতচর্বণ থেকে রক্ষা পেয়েছিলো। প্রায় অন্ধকার রাস্তা, গাছের একটা পাতাও নড়েনা এমন ছমছমে বাতাসে নিজেই সাহসের অভাবে ভুগছে বলে কিনা কে জানে নিজামের মস্তিষ্কে ঘটনাটির আবছা স্মৃতি পুনরায় এসে আঘাত হানে। আগে কোনদিন অনুভব করেনি তবে এই প্রথম রুনার পরিবর্তে যুথীর মুখখানা কাঙ্খিত স্ত্রী্র মুখ হিসাবে ভেসে উঠলে নিজাম নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু এতো সহজ? রুনার সাথে রুচি, পছন্দ- অপছন্দের কিছুই কোনকালে তার মেলেনি। সারাদিন ব্যবসাপাতির ঝামেলা শেষ করে বাড়ি ফিরে এসে যদি যুথীর মতো হাস্যরসসম্পন্ন কাউকে দেখতে পাওয়া যেতো। নিজামের শরীরের সমগ্র একবার নড়ে উঠে, বিশেষত শরীরের মাঝখানের অংশ জুড়ে কাল্পনিক এক হিল্লোল বয়। আজকের দিনটা বন্ধুস্ত্রীকে একটু কম দেখে সময় মতো বাড়ি ফিরতে পারলেই হতো। রাতেরবেলায় নিজের স্ত্রীর মাঝেই যুথীকে খুঁজে নিতে নিজামের বিশেষ কষ্ট করতে হতোনা।

নিজামের সরলরেখা বরাবর হাঁটবার পদ্ধতি তাকে গজনভী রোডের সামনে নিয়ে আসলে আচমকা তার দুই চোখে আলো যেন আতশবাজির ঝলকানির মতো উপস্থিত হয়। টায়ারের দোকানগুলোর কর্মচারীদের নিরুৎসুক দৃষ্টির সামনে দিয়ে হেঁটে সমগ্র রাস্তাটি পেরুতে নিজামের কাছ থেকে দেড় মিনিট হারিয়ে যায়। বেশ রাত হয়ে গেছে। এই সময়তেও লোকাল বাসগুলোতে ভীড় ভালোই থাকে। বিশেষত মীরপুর দশনম্বরগামী বাসগুলোর কথা যতো কম বলা যায় ততোই ভালো। কোনভাবে একটায় উঠে পড়তে পারলেই নিজাম খুশী। জানালার কাছে সিট নাই হলো। পৌনে এক মিনিট পরে ডান পাটা বাসের পাটাতনের উপরে রেখে তাতে ভর করে বাম হাত হাতলে রাখতে পারলেই সম্পূর্ণ শরীরটা বাসের ভেতরে ঢুকে যায়। চোখ আতিপাতি করে কোন সিট চোখে না পড়লেও ড্রাইভারের সিটের বাম দিকে একবার চোখ গেলে সেখান থেকে নিজামের চোখ আর সরতে চায়না। পাঁচ ফুট সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি শরীরের ভেতরে এরকম মাংসল উরু, বৃহদাকার স্তনের অধিকারীনী কারো থেকে না মরদ ছাড়া আর কেই বা চোখ সরাতে চায়? বাসের পেছন থেকে কোন শালার আদমসন্তান বেরসিকের মতো ট্যাঁ ট্যাঁ করে কেঁদে উঠলে কামতাড়িত নিজামের মুখে একবার কন্যার ছবি আবছা ভেসে উঠলেও একটু সামনেই উপবিষ্টা উর্বশী সেই পিতৃস্নেহকে শাসন করলে নিজামের চোখজোড়া পুনরায় স্থির না হয়ে পারে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ২:০৬

(একজন নিশাদ) বলেছেন: ভাই বাস্তসম্মত লেখা।

২| ১৪ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মারাত্মক| নিজের স্ত্রীকে কেউই দেখি পছন্দ করেনা| আমাকে দিয়ে দিলেই হয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.