নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের মাঝে

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৬:২৭

তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন এই যে ছটফটানি, শত সহস্র দিনের না বলা কথার ভারে ভারে যা আজ নিজেকে প্রকাশের জন্য উন্মুখ হয়েছে তাকে দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। নয়তো এর মধ্যেই বিপদ কিছু ঘটে যেতে পারে। কি করনীয় এই বিষয়ে তার সন্দেহ সামান্যই। তার এই সতর্ক ভাবনার মধ্যে কনামাত্র ভুল কিছু নেই এই নিয়ে সংশয়ে ভোগার বয়স বহু আগেই অতিক্রম করে এসেছেন। সেই সময়টায় শুধু ভাবালুতা কেন আরো কতোকিছুতে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া যেতো। মদ, জুয়া, নারী, প্রয়োজনের সীমা ছাড়িয়েও দেদারসে উড়াবার জন্য রয়ে যাওয়া উদ্বৃত্ত টাকা, খুব কম কিছু তো ছিলোনা। ঐন্দ্রজালিকতায় আচ্ছন্ন থাকবার জন্য খুব কম কিছু তো উপাদান নয় এসব। আবছা করে মায়ের মুখ মনে পড়লো। কাটাকাটা মুখ, কিন্তু সেই মুখের সাথে সামঞ্জস্যহীন নিরীহ, সবকিছুকেই মেনে নেওয়া শান্ত-পরিশ্রান্ত চাহনী। শৈশবে মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত ছিলেন এমন নয় কিন্তু প্রতিবারই যখন তার শরীরের ঘ্রাণে নাক ডুবিয়ে দিয়েছেন বুকের মধ্যে বিষাদের মৃদু আওয়াজ পেয়েছেন। যেন সেই স্নেহ কি মমতা যাই বলা হয়ে থাকুক তা যতো না প্রকাশিত হচ্ছে তার চাইতেও বেশী অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে। জননীর মমতামাখা সেই অপত্য স্পর্শে এমন কিছু আছে যার মূর্ছনা অস্পষ্টভাবে হয়তো উপলব্ধি করা যায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ঠিক আয়ত্ত্বে আসছেনা। কিন্তু আসলে মানুষের কোন ভাবনারই কি চূড়ান্ত সীমা বলে কিছু আছে? কোন মানুষই কি নিজের কোন ভাবনার চূড়ান্তে পৌঁছাতে পারবার সাফল্যে অবগাহন করতে পারে? এই যে জীবনের প্রায় অন্তিম সময়ে এসে প্রতিদিন তার নিত্যনতুন সব ভাবনা জাগে, সবসময়েই এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন এমন সব প্রশ্ন হৃদয়কে বিদীর্ণ করে যায় সেগুলাও কি আসলে তার যাপিত যাপনের সাথে সাথে জড়িয়ে থাকে? নাকি কিছুক্ষণের জন্য হৃদয়কে বিদীর্ণ করে একটুকু কি অসচেতন হয়েছেন তখনই নিজেদের ঠিকানায় মিলিয়ে যায়? এই প্রশ্নগুলো কার কাছে রাখবেন? উত্তরই দিতে চাইবে কে? মানুষ কি নিজের কাছেই প্রশ্নগুলো রাখলে উত্তর দিতে চাইবে? না চাইলে কেন অপর কারো এই তীক্ষ্ণ প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার সাহস করবে সে? এতো এতো তীব্রমাত্রার প্রশ্নবোধক সব কথা, যার পরতে পরতে জটিলতার তীক্ষ্ণ ভাঁজ। সহজে খোলা যায়না। খুলতে চাওয়ার সাহস করে এমন মানুষই এই মর্ত্যে খুব বেশী নেই। তিনি স্পষ্টতই বুঝতে পারছেন তার সময় প্রায় শেষের দিকে। আজীবন ঈশ্বর নামক ধারণা এবং তার সাথে সম্পর্কিত প্রচলিত আচার-ব্যবহার থেকে নিজেকে সবসময়েই বিযুক্ত রেখেছেন, এই অন্তিম সময়েও নিজের অবস্থান আচমকাই বদলে ফেলতে তার হৃদয় একেবারেই সায় দিচ্ছেনা। আজীবন নিজের অন্তর্জগত কি বাইরের প্রসারমান বিশ্ব থেকে আলাদা করে রাখা পিতার চেহারা ভেসে উঠলো। সেই নিয়ম করে ভোর হতে না হতেই ফজরের ওয়াক্তের জন্য নিঁখুত কায়দায় ওযূ করা, ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী আর পাজামায় জায়নামাজের নিচে বসা। দোয়া পড়বার সময়ে কোন এক ব্যাখ্যাতীত মায়ায় কি সৃষ্টিকর্তার প্রতি তীব্র ভয়ে চোঁখের কোনা থেকে অঝোরে জলধারার প্রবাহিত হওয়া দৃশ্যাবলী বাড়ির অন্যদের সবসময়েই অভিভূত করতো কিন্তু তাদের কেউই সেই অনুভূতির কথা ভদ্রলোকের জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় তাকে জানাতে পারেনি। তিনি স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছেন যে একের পর এক সব স্মৃতির ঝাঁপি কোনকিছুর তোয়াক্কা না করেই তার বুকে ক্রমশ সঞ্চারিত হচ্ছে। এর সাথে কোন প্রকারের পাল্টা প্রাপ্তি কি স্বীকৃতি জ্ঞাপনের প্রত্যাশা নেই। শুধুই স্বতঃস্ফূর্ত এই প্রবাহ। তিনি একবার পাশ ফিরলেন। বুকের ব্যথাটা কি আরো বেড়ে গেলো বলে? চারপাশে বাতাসের এতো অভাব অনুভূত হচ্ছে কেন? তার শোবার ঘরের চারপাশে কতো খোলা জায়গা। খুব বেশী বহুতল ভবন নেই আশেপাশে। নগরেই বসবাস করে গেলেন আজীবন তবু নগরের ঝলমলে আদলের নিচে সুপ্ত থাকা ক্লান্তি কি গুমোট ক্লেদ তার শোবার ঘরকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। তবে আজ এই মুহূর্তে কেন তার মনে হচ্ছে তিনি আলো-বাতাসহীন একটি সাক্ষাত নরকের মাঝে আছেন? তার মনে হতে লাগলো একটুকু পানি গলায় গেলে বুঝি কারাগার থেকে মুক্ত হবার আনন্দ মিলবে। বলে উঠলেন “পানি দাও।” বিনা অপরাধেই শাস্তিপ্রাপ্ত দন্ডিতের নীরব আর্তচিৎকারের চাইতেও মৃদু শোনালো সেই আওয়াজ। তাই কারো ইন্দ্রিয়ের সীমানায় সেই কাতর ধ্বনি পৌঁছালোনা। ভদ্রলোক আরো একবার নিজের অজান্তেই পাশ ফিরলেন। বাইরের আবহাওয়া সেই সময়ে সম্পূর্ণই নিস্তব্ধ, অসহনীয় নীরবতার মাঝে ছটফট করতে করতে তার মনে হতে থাকলো যেন হৃদয়ে এসে কড়া নেড়ে যাওয়া কিছু ভাবনা কি প্রশ্নের চূড়ান্তে তিনি যেতে পারছেন। তার ঠোঁটের একপাশ দিয়ে লালা গড়াতে আরম্ভ করলো। কিন্তু মুখের মধ্যে লেগে থাকা দুর্জ্ঞেয়, অজেয় হাসির অস্ফুট রেখা তখনো ঠিকই জাজ্বল্যমান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.