নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোন একদিন পৃথিবীতে

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:০৭

এক উজ্জ্বল রুপালী রাতে চারপাশে বৃষ্টি নেমে আসলো। ঈশ্বরই তাকে আকাশে নামিয়ে দিলেন। তার অভিপ্রায় কি সেটা সকলের কাছে গোপনই থাকলো। পৃথিবীর অন্তঃস্থ মানুষেরা শুধু জানলো যে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। গাঢ় নীলাভ রঙের আকাশের প্রতিটি জায়গাজুড়ে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট।

পাতালে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ আনন্দে মশগুল। তারা এরকম রাত্রির দেখা আগে কখনো পায়নি। ভবিষ্যতেও কখনো পাবে কি পাবেনা কে বলতে পারে? নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে তারা প্রতিটি মুহূর্তে উপভোগে মগ্ন। হাসি-গানে রাত পরিপূর্ণতার চূড়ান্তে পৌঁছে যাচ্ছে ক্রমশ। তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা বলতে যদি কিছু বুঝায় তবে সেটা হলো এই রাত। উজ্জ্বল রুপালী রাত। এতো আনন্দের মাঝেও পৃথিবীর অন্তঃস্থ মানুষেরা তাদের প্রতি ঈশ্বরের মমতাকে এতোটুকুও ভুলে গেলোনা। ঈশ্বরে অকুন্ঠ আস্থা রাখা প্রতিটি মানুষের প্রশংসার বৃষ্টিতে ঈশ্বর স্নাত হলেন।

ঈশ্বর সবই দেখলেন, শুনলেন, অনুভব করলেন। কিন্তু রইলেন প্রত্যুত্তরহীন। তিনি কিছু ভাবছিলেন।

দীর্ঘসময় যাবত তিনি ভাবলেন। কি ভাবলেন, ভাবনা থেকে কোন গূঢ় দার্শনিক সত্য আবিষ্কারের কাছাকাছি পৌঁছালেন তা কাউকে জানালেন না। আনন্দে বিভোর মানুষগুলোর কারো কোন ইন্দ্রিয়তেই ঈশ্বরের ভাবনার কনাংশ পৌঁছালোনা। তারা রাত্রি উপভোগ করছে সমগ্র সত্তাকে মিশিয়ে দিয়ে। উজ্জ্বল রুপালী সেই রাত্রি।

দীর্ঘ ভাবনাচিন্তা শেষে ঈশ্বর কোন সিদ্ধান্তে আসলেন। তার কোন সিদ্ধান্তে কখনোই কোন মানুষ চিড় ধরাবার ক্ষমতা রাখেনি। ঈশ্বর নিজেও সংকল্পবদ্ধ হৃদয়েই নিজ সিদ্ধান্তে অটুট থাকবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন।

ধীরে ধীরে আকাশের সমস্ত উজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করলো। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ক্লান্তিহীনভাবে আনন্দ উদযাপন করা মানুষগুলো শরীরে ধীরে ধীরে অবসন্নতা অনুভব করতে শুরু করলো। ক্লান্তির সেই অনুভূতি তাদের প্রায় অচেতন করে ফেললো। তাদের প্রত্যেকেই বুঝতে পারলো আজকের দিনের জন্য সমস্ত আনন্দের প্রহর শেষ হয়েছে। এবারে নিজেদের ঘরে ফিরে যাবার পালা।

তারা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো। এবারে আসলেই ঈশ্বর তাদের ঘরে ফিরে যাবার অনুক্ত আদেশ দিয়েছেন। তারা ঘরে ফিরে যেতে শুরু করলো।

ঈশ্বর মানুষকে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন যে তীব্র আনন্দে মশগুল থাকবার পরে, চারপাশের প্রত্যেকের সাথে একত্রে প্রতিটি ক্ষণ উদযাপন করার পরে তারা যখন ঘরে ফিরবে তখন তাদের কেমন দেখাবে।

তিনি তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আনন্দরত প্রতিটি মানুষ যখনই ঘরে ফিরবে তারপরে তারা চোঁখের সামনে একটি আয়না দেখবে। প্রতিটি আয়নাই হবে পৃথিবীর স্বচ্ছতম আয়না। সেই আয়নায় নিজের শরীর তো বটেই এমনকি নিজেদের স্বপ্ন, বেদনা, আশা, হতাশা, ক্ষোভ, ভালোবাসা, ঘৃণা, মমতা, বিতৃষ্ণা প্রতিটি ক্ষুদ্র-বৃহৎ অনুভূতির পরিষ্কার ছবি তারা দেখতে পাবে। ঈশ্বর দেখতে চেয়েছিলেন তারই সৃষ্ট রক্তমাংসের এই মানুষগুলো কিভাবে বেঁচে থাকে, কেমন করে বেঁচে থাকে। এই সৃষ্টির সাথে সংলগ্ন যেই অপরিসীম বেদনার ভার তিনি এতোকাল যাবত নিঃসঙ্গ বয়ে বেড়িয়েছেন তাকে নতুন করে অনুভব করতে চাইছেন ঈশ্বর।

ক্লান্ত মানুষগুলো ঘরে ফিরলো। নিজ নিজ ঘরে প্রবেশ করতেই তাদের চোঁখ ধাঁধিয়ে গেলো। এরকম স্বচ্ছ আয়না তারা কোনকালে দেখেনি। এই আয়না তাদের ঘরে কিভাবে আসলো? কে দিয়ে গেলো? অগণিত প্রশ্নে তারা হতবিহ্বল হলো।

প্রশ্নগুলোর উত্তরের খোঁজ করতে করতে তারা কিছু সময় পরে হতভম্ব হয়ে লক্ষ্য করলো স্বচ্ছতম এই আয়না, যা এই মুহূর্তে তাদের চোঁখের সামনে সেই আয়নায় তাদের শরীরই শুধু নয় তাদের প্রতিটি অনুভূতি, অভিব্যক্তি স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো ধরা পড়ছে। আরো বিস্ময়ের এবং বিপদের বিষয় হলো তারা প্রত্যেকেই একইসাথে নিজেদের আয়না এবং পাশে থাকা পরিবার-পরিজনদের আয়নাও স্পষ্ট পড়তে পারছে। অপরজনের কাছে পরিপূর্ণভাবে নগ্ন হয়ে যাবার দৃশ্যমান বাস্তবতা অল্প কিছু সময় আগেই যেই অপার্থিব আনন্দ তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো তার সবটুকু তাদের হৃদয় থেকে মুছে দিলো। নিজেকে অন্যদের কাছে ক্ষমাহীন বাস্তবতায় নগ্ন হয়ে যেতে দেখা, অপরজনের সমগ্র নগ্নতাকে স্পষ্ট অনুভব করার এই অভূতপূর্ব বেদনার তীব্র ক্ষরণ তারা বুকের ভেতরে অনুভব করতে থাকলো। অন্যদের কাছ থেকে নিজেদের প্রতিনিয়ত গোপন রাখবার যেই আত্মপ্রেমী প্রবণতাকে তারা আলিঙ্গন করে বাঁচতে শিখে গিয়েছিলো, অপরের সমগ্র সত্তাকে অনুভব না করতে চাইবার যে আরামপ্রিয়তার মাঝে তারা নিজেদের ডুবিয়ে দিতে জেনে গিয়েছিলো তার সম্পূর্ণটুকুই এক লহমায় যে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়েছে। অসহায়ত্বের এই ব্যঞ্জনা সে কি সুতীব্র!!!

পরদিন সকালে পৃথিবী নিজেদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাওয়ার গ্লানির ভারে বিপর্যস্ত অযুত-নিযুত কঙ্কাল এবং তাদের ঈশ্বরকে মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থরুপে আবিষ্কার করলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.