নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি রাত খুন হলো । একটি রাত জন্ম নিলো ।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৪৪

ঘরোয়া রেস্টুরেন্টে ভরপেট খাওয়ার পরে হৃষ্টচিত্তে একটু ভিক্টোরিয়া পার্কটা মনোযোগ দিয়ে দেখছি। চারপাশে কতো সাধারণ আবার কতো বর্ণিল চরিত্রের পোশাকের চোঁখের মগজের মানুষরাই না হেঁটে বেড়াচ্ছে। একেকজনের দৃষ্টি দেখে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয় মানুষের মাঝে পারিপার্শ্বিকতার প্রতি এতোটা অবিশ্বাস থাকতে পারে আবিষ্কার করে আবার সেই মুগ্ধ হয়ে যেতে হয় এই আপাদমস্তক নাগরিক হয়ে যাওয়া অতীতবিস্মৃত শহরে মানুষের চোঁখ এতোটা উজ্জ্বল থাকতে পারে সেটা অনুভব করে। এতোটা উজ্জ্বলতা কি আমরা, সমষ্টির কথা আপাতত না হয় বাদই দিলাম আমি নিজেই ধারণ করতে পারি? উত্তরে আর যাই হোক ইতিবাচক কোন শব্দ কি বাক্য তো প্রাণের ভেতর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়না। ধারণ করে থাকলে সাতাশ বছরের এই আমি, ঠিক তিন মাস পরে যার বয়স আটাশ হবে সে কেন প্রবল দ্বান্দ্বিকতায় আক্রান্ত মানুষের চোঁখের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা এই উজ্জ্বলতায় নিজেকে পুনরায় বিবর্ণ আবিষ্কার করে বিষন্নবোধ করবে? চোঁখ যদি কারো উজ্জ্বল থাকতেই হয়, যদি পারিপার্শ্বিকতাকে হৃদয়ের অপরিসীম অপরিমেয় দ্যুতি দিয়ে জ্বাজল্যমান বলে মনে করতেই হয় তবে আমার মতো যুবক বয়সী কেউই কেন নয়? কোন অজানা অচেনা দুর্জ্ঞেয় ক্ষমতা বলে কিংবা আমার চোঁখে ঐন্দ্রজালিক রহস্যময়তা বলে প্রতিভাত হওয়া কোন দুর্বোধ্য ঈর্ষনীয় সামর্থ্যের কারণে চিন্তাক্লিষ্ট সন্দেহপ্রবণ প্রাত্যহিকতার ভারে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সব লোক, যারা ইতোমধ্যেই জগতের যাবতীয় অমানবিকতা নিষ্ঠুরতা আত্মপ্রতারণা ধর্ষকামীতা দ্বিচারীতা হিংসা ঘৃণার দুঃসহতায় ন্যুব্জ হয়ে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজেদের স্বেচ্ছায় নির্বাসনে নিয়েছে তাদের চোঁখে ধরা দিতে পারে পরম আকাঙ্খিত তীব্র ভালোলাগার উজ্জ্বলতা? আমি ভিতরে ভিতরে ক্ষুব্ধ হই। সেই মানুষগুলোর প্রতি কোন গাঢ় স্থূল ঈর্ষায় লীন হয়ে যেতে যেতে নয়, বরং সম্পূর্ণটাই নিজের উপরে। অন্তর্গত স্বভাবের মধ্যে এখনো অনেকটাই নিষ্পাপতা আছে বলে মনে করি। কিন্তু এখন, অতিক্রান্ত হতে থাকা এই সাধারণ বৈশিষ্ট্যহীন মানুষের চলাচলে গমগম করতে থাকা অথচ প্রাণময়তায় ভরপুর মুহূর্তে আমি ভিতরে ভিতরে নিজেকে খুন করতে সচেষ্ট হয়ে উঠেছি। যেই নিষ্পাপতা আমার চরিত্রের অন্তর্গত বলে মনে করে এসেছি তাকেও হাস্যকর বলে মনে হতে থাকে। আমার পাশে থেকে আমার সাথে সমান্তরালে হাঁটতে থাকা ছয় বছরের পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু বাঁধন, যার সাথে আমার সত্যিকার অর্থে বন্ধুত্ব শুরু হওয়া এবং গাঢ় থেকে গাঢ়তর হওয়া সবই হয়েছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়বার পর থেকে তাকে এসবের কিছুই আমার বলা হয়না। এমন নয় যে তাকে নিজের এতো ভেতরের কথা বললে সে বুঝবেনা। বরং চারপাশে প্রতিনিয়ত দেখা কথা বলা ভাব আদান প্রদান হওয়া চলাফেরা যাদের সাথে আমার অনেক বেশী প্রাত্যহিক তাদের অনেকের চাইতেই গভীরভাবে সে অনেক কিছু বুঝতে পারে বোঝে এমনকি নিজের লালিত প্রতিটি উপলব্ধিকে নিগূঢ় যত্নে সুপ্ত থাকা ক্যানভাসে রেখে দেওয়ার সুদূরপ্রসারী স্পর্ধা দেখাতে কুন্ঠিতবোধ করেনা যেই অতি প্রয়োজনীয় চারিত্রিক বলিষ্ঠতার অভাবে এই নগর রুগ্নদশায়, নগরের প্রায় প্রতিটি মানুষই জ্বলজ্যান্ত কঙ্কাল হয়ে শহরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি তারপরেও বাঁধনকে কিছু বলতে পারিনা। এই বিপন্ন রাতে নিকট ভবিষ্যতে বিস্মৃত হতে যাওয়া অতীতমুখী মুহূর্তে আমাদের হাঁটবার গতিপথই শুধুমাত্র নয় আমাদের পারস্পরিক ভাষা সেটা সরবতার হোক কি নীরবতার তাও সমান্তরালে চলছে। আমি কিছু ধোঁয়া ছেড়ে চারপাশে কিছু ধোঁয়াকে আবির্ভূত হতে দেখতে চাই অনুভব করলে একটা গোল্ডলিফ ধরাই, এতোটাও বেয়াড়া হয়ে যাইনি যে বাঁধনকে অফার করবোনা কিন্তু আমাকে সে তার চিরাচরিত স্মিত হাসিতে রিফিউজ করে। দুইটা টান দেওয়ার পরে আমি অনুভব করি এই মুহূর্তে, ভিক্টোরিয়া পার্কের থেকে বামে গিয়ে দশ গজ কি বারো গজ দূরত্বে যেই স্থান এখনো অনেকেরই এমনকি আমারও মুখে মুখে ফেরে তিন বছর আগে বিশ্বজিতের হত্যাকান্ডের স্থান হিসাবে সেখানে আমাকে একটু দাঁড়াতে হবে। আমি স্পষ্টতই অনুভূত হওয়া এই ভ্যাপসা গরমের মাঝেও সেই স্থানে, যেখানে বেশ কিছু ডেন্টাল ক্লিনিক আছে সেখানে দাঁড়িয়ে শ্মশানসুলভ শীতলতা অনুভব করি। ঠিক তখন বাঁধনকে এই জায়গাটায় মানে ভিক্টোরিয়া পার্কে আরো কিছুক্ষণ উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাটি করার প্রস্তাব দিলে সে স্পষ্টভাষায় তৎক্ষণাৎ আমাকে তার অসম্মতির কথা জানিয়ে দেয়। আমি মনোক্ষুন্ন না হয়ে সেই স্থান থেকে পাঁচ গজ কি সাত গজ দূরত্বে সামনে গিয়ে যার যার ঘরে ফিরে যাবার নিমিত্তে রিকশা ধরতে চাইলে আমাকে সচকিত করে এতোক্ষণ যাবত নীরব নিষ্পৃহ স্তব্ধ থাকা বাঁধন বলে বসে “আমি কিছু জায়গা সবসময়ে এভয়েড করে চলি। আর কিছু বিশেষ কলেজের পোলাপানদেরও। তিতুমীর কলেজ, ঢাকা কলেজ আর কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের পোলাপানদের। আমার ধারণা বাংলাদেশের যাবতীয় এলাকা থেকে সমস্ত বাইনচোদ আর শুয়োর এসে এই তিনটা কলেজে এসে ভর্তি হয়।” আমি বিশেষ অবাক বিরক্ত রাগান্বিত কিছুই হইনা। কবি লুধিয়ানভীর কথা আমার মনে পড়ে, “একটি সমাজ যখন পঁচতে শুরু করে তখন তার চারপাশে বাজার গড়ে উঠে।” তিতুমীর কলেজ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ আর ঢাকা কলেজ সেরকম পরিত্যাজ্য নষ্ট অপাঙতেয় বাজার হয়ে উঠতেই পারে, কারো তেমনটা মনে হতেই পারে। সকল প্রকারের অস্বাভাবিকতার সম্ভবপরতার অন্তর্গত এই শহরে এ এমন কিইবা অবিশ্বাস্য অবৈজ্ঞানিক কোন কথা হতে পারে? তবে আমি লক্ষ্য করি কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের কাছে দাঁড়িয়ে রিকশা ধরতে ধরতে যখন বাঁধন কলেজটির নাম উচ্চারণ করার সময়ে অনেক বেশী গলা নীচু করে। তাকে কাপুরুষ ভাবার কি বিপরীতভাবে “আমি বাঁধনের জায়গায় থাকলে এই জায়গাতেই গলা জোর করে কলেজটার নাম উচ্চারণ করতাম” কল্পনা করে মৃদু অদৃশ্যমান আত্মরতিতে সুখ পাওয়ার কোন অনুভূতিই আমার হয়না। এসব নিতান্তই অর্থহীন। বাঁধনকে কাপুরুষ ভেবে নিয়ে তার মানদন্ডে নিজেকে অসীম সাহসী বীরবিক্রম বলে মনে করার মানেই হলো বাঁধনের ভীরুতার সাপেক্ষে আমার সাহসের কনামাত্র অস্তিত্ব নেই। এই দ্বান্দ্বিকতার পাঠ মার্ক্সের কাঠখোট্টা দর্শনের সাথে পরিচয়ের সময়ের চাইতেও অনেক বেশী বিপন্নতায় অন্তর্গত এই সাধারণ বর্ণিল বিস্মৃত মনোমুগ্ধকর রাতে আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠে। সত্তর টাকা ভাড়ায় রিকশা ঠিক করে টিএসসির উদ্দেশ্যে যেতে থাকা রিকশায় উঠে একটু থিতু হয়ে বসেছি তো প্রথমেই স্বাভাবিকের চাইতেও মৃদুস্বরে বাঁধন আমাকে জিজ্ঞেস করে, “যেই জায়গাটায় তুই কিছুক্ষণ দাঁড়াইছিলি সেখানে দাঁড়ানোর সময়ে নিজেকে আমার বিশ্বজিৎ বলে মনে হচ্ছিলো।” শুনে অনুভব করলাম আমি পুনরায় ভিতরে ভিতরে নিজেকে খুন করতে সচেষ্ট হতে চাইছি। আর দ্রুতবেগে রিকশার ইংলিশ রোডে চলে যাওয়া জনমানবহীন প্রায় সম্পূর্ণ খালি রাস্তাটিতেও দেখছি অবিশ্বাস নিষ্ঠুরতা উজ্জ্বলতা ভালোবাসা হিংসা স্বপ্নচারীতা নিয়ে সাধারণ রাতটিকে বর্ণিল করে তোলা অগণিত চোঁখজোড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে। বড্ড মন্থর স্থবির সেই পথচলা। কিন্ত তার অভ্যন্তরীণ গতি স্পষ্টতই উদ্ভাসিত।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১

সুমন কর বলেছেন: আমার কাছে, বক্তব্য স্পষ্ট মনে হলো না !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.