নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অগ্রজ

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৮

বাসের হইহল্লার তোড়ে হারিয়ে যাওয়া বিষয়টিকে পুনরায় বাতাসের মাঝে ভাসিয়ে দিয়ে রেজাউল বলে উঠলো “এতো বিশ্রী সময় আর কখনো আসছে কিনা মনে করতে পারিনা। সময় যখন খারাপ যায় সবদিক দিয়েই খারাপ যায়।”

মুনতাসীর বিরক্ত হলেও তার প্রকাশ করা থেকে নিজেকে সচেতনভাবে বিরত রাখলো। সবার সাথে বিরক্তি প্রকাশ করা যায় নাকি? না সেটা করা উচিত? চাকরীতে ঢুকেছে সাড়ে তিন বছর হলো। তার দ্বিতীয় প্রমোশনের সময় আসন্ন। রেজাউল, এই মুহূর্তে তার পাশাপাশি রাস্তায় হাঁটতে থাকা গাধাটা তার ইমিডিয়েট বস। একে যদি সন্তুষ্ট না রাখতে পারে তবে তার ফায়দা কি? কি কষ্টে চাকরীটি যোগাড় করেছিলো সেই খবর একমাত্র জানে মুনতাসীর নিজে আর উপরে যার দিকে মানুষ কারনে অকারনে বিশ্বাস্ব অবিশ্বাসে দুই চোখে তাকায় সে। তাই সে স্বভাববিরুদ্ধ ভঙ্গিতে আন্তরিক হলো। অনেকদিনের অভ্যাসে বিষয়টা সড়গড় হয়ে গেছে। তাই তেমন কষ্ট হলোনা,

“ও হ্যা রেজাউল ভাই আপনি বাসে যা বলতেছিলেন। বেকুব প্যাসেঞ্জারগুলার কারনে তো আর শুনতে পারলাম না।”

পাশে থাকা সঙ্গী তার কথা আদপেই শুনতে আগ্রহী নাকি স্রেফ করায়ত্ত ভদ্রলোকীর ঠোনা মারা কৌতূহল দেখাচ্ছে সেই দিকে রেজাউল কর্ণপাত করার প্রয়োজনবোধ করলোনা। আজকের গরমটা ভ্যাপসা ধরণের, দুপুরবেলাতে অফিসে মিটিং বসেছিলো। শার্টের প্রতিটা বোতাম সেই থেকে লাগানো এখনো খোলা হয়নি। বুকের দিকে প্রথম দুইটি বোতাম খুলে একটু স্বস্তিবোধ করলে রেজাউল তার ইমিডিয়েট অধঃস্তনের উদ্দেশ্যে নিজের জীবনগাঁথা বলতে শুরু করে,

“তুমি তো আমার ফ্যামিলীর সম্পর্কে জানোই। আমিই তোমাকে আগে একবার বলছিলাম। আব্বা রিটায়ার্ড সেই কবে থেকেই, মানসিকভাবেও খুব অস্থির স্বভাবের। আম্মা আগলে না রাখলে সেই কবেই দুনিয়া থেকে আউট হয়ে যেতো। আম্মার নিজের শরীরও ভেঙ্গে পড়েছে। নিজেকে সামলাতেই তার কষ্ট হয়। তার উপরে আব্বাকে সামলানো, কোনভাবেই পেরে উঠছেনা। এর মধ্যে আমার ছোট ভাই রাজিব, যাকে একবার অফিসের সামনে দেখছিলা সে ফ্ল্যাট-ট্যাট কিনে হুলুস্থূল করেছে। ব্যবসা শুরু করছিলো মাত্র পাঁচ বছর আগে। সেই ব্যবসার ক্যাপিটাল আমি তাকে কিভাবে যোগাড় করে দিছিলাম তার সবও তুমি জানো। এর মধ্যেই টাকাপয়সা করে আমার ভাইকে এখন আর চেনাই যায়না। সে যাই হোক কিন্তু রাজিবের ফ্ল্যাট কিনার বিষয়টা সে আমাদের, মানে পরিবারের সবার কাছে গোপন করে রাখছিলো।” কথাগুলো বলে রেজাউল থামে। এই মুহূর্তে এর চাইতে বেশী সম্প্রসারণের নিরর্থক নাকি পাশেরজনের কৌতূহল পরখ করতে সে উন্মুখ তা বোঝা যায়না।
তারা রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটছিলো।
দুইজনের মাথায় ভিন্ন ধরণের ভাবনা।
অগ্রজের আছে নিজের ব্যক্তিগত দুর্যোগের কথা কাউকে জানিয়ে হালকা হওয়ার তাড়না।
অনুজ আকাঙ্খিত প্রমোশনের বাসনায় অগ্রজের ডাল একঘেঁয়ে পারিবারিক কেচ্ছাকাহিনীতে প্রয়োজনের চাইতেও বেশী মনোযোগ দিতে সচেষ্ট।

ফুটপাথ থেকে তারা একটু সরে এসেছিলো। পায়ের কদম দুইজনেরই বেশী আঁকাবাঁকা।
বয়স বাইশ তেইশ হবে এমন বয়সের সবুজ রঙের সালওয়ার কামিজ পরা জনৈকা সুন্দরী মুনতাসীরের শরীর ঘেঁষে তাকে অতিক্রম করে গেলো।
মুনতাসীরের শরীর শিরশির করে উঠলো। কিন্তু তাকে প্রশ্রয় দিতে চাইলোনা।
এখন সেই সময় নয়।

তাই সে রেজাউলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো “থামলেন যে রেজাউল ভাই। তারপরে? আপনারা রাজিবের ফ্ল্যাট কিনার খবরটা জানলেন কেমনে? রাজিবের বউ জানাইছে?”

মুনতাসীর ঠিক ঠিক প্রশ্নটি সম্পন্ন করে স্বস্তিবোধ করে। সবুজ রঙ তার চোখ শুধু নয় আরো কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধাঁধিয়ে দিয়েছে।

রেজাউল ফের তার পরিবারের গল্পে প্রত্যাবর্তন করে, “হ্যা ঠিকই ধরছো। অহনাই, মানে রাজিবের বউ গতোকাল রাতে খাওয়া শেষ হইলে আম্মার কাছে এসে খুব মিনমিন করে ব্যাপারটা তাকে জানাইছে। আর একজনকে জানানো মানেই বাকিদের অটোমেটিক জেনে যাওয়া এটা তো আর বলার কিছু নাই। আমার রাগটা কোথায় জানো?”

শালা, তুই না বললে আমি কিভাবে জানবো তোর আসল রাগ কোথায়? আমি তো নস্ত্রাদামাস না, না তোর চাঁদমুখ দেখে দেখে তার ভিতরটা পড়ে নেওয়ার কোন ইচ্ছা আছে। কথাগুলো শব্দ ব্যবহার করে বলতে পারলে মুনতাসীরের জিভ আরামে নিজেকে এলিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু তার কন্ঠ সুললিত,

“কোথায় রেজাউল ভাই?”
“আমার রাগ হইলো তোর যেই বড় ভাই তোকে ব্যবসার টাকা যোগাড় করে দিছিলো, যার থেকে টাকা নিয়ে তুই আজ ফ্ল্যাট পর্যন্ত কিনে ফেললি তাকে পর্যন্ত খবরটা জানালিনা। নিজের বাচ্চাবয়সী দুইদিনের বিয়ে করা বউটাকে পাঠাইয়া দিলি আমাদের জানানোর জন্য। টাকাপয়সা হলেই এরকম করতে হয়?” রেজাউলের মুখে থুথু জন্মে।

আল্লাহ তাকে মাফ করে দিতে পারেনা? মুনতাসীর কি এমন মহাপাপ করেছে সে বুঝতে পারলোনা। এই কলকাতার ডেইলী সোপ-অপেরামার্কা কেচ্ছা মনোযোগ দিয়ে শোনার উপরে তার প্রমোশন নির্ভর করছে? নিকুচি করি এই চাকরীর। পরক্ষণেই তার মনে পড়লো চাকরীটা পাওয়ার জন্য তাকে কি কি করতে হয়েছিলো। তাই সে সহকর্মীর প্রতি ফিটফাট সমব্যথী,

“আপনাকে কি যে বলবো রেজাউল ভাই। আমি আসলে বলার মতো কিছু পাচ্ছিনা। রাজিব এরকম কাজ করবে আমি ভাবতেই পারিনাই। ফ্ল্যাট কিনা তো ক্রাইম না যে আপনাদের সবার কাছ থেকে গোপন করতে হবে। আপনি কি পরিবারের কেউ না? তার বড় ভাই নাকি, শত্রু তো আর না। আর মা-বাপের সাথেও বা এমন করতে আছে? আপনার উপরে দিয়ে এরকম ঝড় যাইতেছে বুঝতেই পারিনাই। আপনি অনেক শক্ত মানুষ বইলা শক্ত থাকতে পারতেছেন। আমি হইলে তো……”, কাল্পনিক দুঃখে শিউরে উঠবার আতিশয্যে মুনতাসীরের মুখের অভিব্যক্তি কিম্ভুতকিমাকার রুপ ধারণ করে।

রেজাউল অনুজের সেই অভিব্যক্তির দিকে ফিরেও তাকায়না।
পরিবারের বড় সন্তান হিসাবে নিজেদের অমর্যাদার বিষয়ে এই মুহূর্তে সে বিষম কাতর।
মুনতাসীরের বাসা প্রায় কাছে চলে এসেছে। তাকে যা বলতে চেয়েছিলো তা দ্রুত শেষ করতে হবে। রেজাউল কালক্ষেপণ না করে পুনরায় শুরু করলো,

“রাজিব ফ্ল্যাট কিনেছে তো কিনেছেই আগামী মাসেই সেই ফ্ল্যাটে বউসহ উঠে যাবে। তার মানে বুঝতে পারতেছো? আব্বা-আম্মার সব দায়িত্ব আমার কাঁধে ডাম্প করে দিয়ে যাইতেছে। আমি আমার ভাইকে হাড়েহাড়ে চিনে গেছি। বাপ-মায়ের সব দায়িত্ব বড় ভাইয়ের উপরে চাপাইয়া সে নিজে বাকিজীবন পায়ের উপরে পা তুলে আরামে কাটাইয়া দিবে।” রেজাউলের কন্ঠে পরিষ্কার দ্বেষ। নিজের ভাইয়ের পেশাগত কৃতিত্বের কারনে নাকি আব্বা-আম্মার প্রতি আসন্ন দায়িত্বের সবটুকুই তার নিজের নিতে হবে সেই যন্ত্রণার জন্য তা অস্পষ্টই থেকে গেলো।

আগামীকালকের অফিসের কার্যাবলী সম্পর্কে রেজাউলের সাথে স্বল্প কথায় সেরে নিয়ে মুনতাসীর নিজের বাড়িতে চলে গেলো।

প্রথমেই সোজা নিজের ঘরে প্রবেশ করলো। খুব বেশী বড় ঘর নয়। মুনতাসীরের বড় ঘর কখনোই পছন্দের ছিলোনা।
ঘরটি ছোট হলেও সম্পূর্ণই আরামদায়ক। নিজের ঘর বলে কথা।
সমগ্র ঘর টিপটপ। শৈশব থেকে নিজের ঘর গুছিয়ে রাখতে তার আগ্রহ অপরিসীম।
মুনতাসীর ওয়াশরুমে যায়। আজকে বিশ্রী ভ্যাপসা গরম পড়েছে। শরীর ঘামে চটচট করছে।
আয়নায় মুনতাসীর নিজের চেহারার দিকে একবার ভালো করে চেয়ে দেখে। তার খুবই প্রিয় অভ্যাস।
পানি দিয়ে সমগ্র মুখের উপরে ঝাপটা মারলে তার ফরসা মুখ পুনরায় উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

মুনতাসীর ফ্রেশ হয়ে মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালে তার মা নিজেই মুনতাসীরের দিকে এগিয়ে আসে। মুনতাসীর চাঁপা ফুলের গন্ধ পায়।

মুনতাসীর গন্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই তার মা তাকে বলে উঠে “লামিয়ার জ্বর তো এখনো কমেনাই রে। সকালে রকিব এসে দেখে গেছিলো। তখন ছিলো একশো দুই। এখনো একই।”

লামিয়া মুনতাসীরের বড় ভাই রাশেদের মেয়ে। লামিয়ার দুই বছর বয়সে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছিলো।

মুনতাসীর মায়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে, “ভাইয়া কই? তাকে বাসায় দেখতেছিনা।”

“তোর ভাই দুপুরে কাজে বাইর হইছিলো। এখনো তো ফিরেনাই।”

মুনতাসীর অকস্মাৎ রাজিবে পরিণত হয়ে উঠে। জননীর সামনেই তার প্রথম সন্তানের সমগ্র অস্তিত্বের প্রতি শ্লেষাত্মক মনোভাবের যতোটুকু সে মনে মনে পোষণ করে তার সবটুকু সে বের করে দেয়।

“হেহ, দুই বছরে একটা চাকরী জুটাইতে পারেনাই আর বাবু বাইর হইছেন কাজে, ফাইজলামী আর কি। নিজের মেয়ে জ্বরে কাঁপে তারপরেও লাটসাহেব বাসায় থাকতে পারলেন না। কেন পারলেন না? কারন ছোট ভাই তো আছেই। টাকার যোগানদার। টাকা যা লাগবে দিবে গৌরী সেন। তাই বাবু রাজকার্যে বের হইলেন।”

মুনতাসীরের মা বরাবরেই মতোই নিরুত্তর রইলেন। এই ইশারার অর্থ মুনতাসীর বোঝে। নীরব প্রশ্রয় কি সমর্থনের ভাষা পৃথিবীতে একটাই।

তাছাড়া এই বাড়িতে মাছের মাথা কিংবা মাংসের বড় অংশটি অনেক আগে থেকেই মুনতাসীরের জন্য বরাদ্দ।









মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯

blackant বলেছেন: ভাই , আপনার লেখা আরোও সহজ কথাই , ছোট বাক্য লিখলে ভাল হবে শুভ কামনা রইল।

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০০

সুমন কর বলেছেন: আরো সময় দেবার প্রয়োজন ছিল। তেমন লাগেনি...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.