নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিপিএলের আজকের খেলাটা বড্ড জমে উঠেছে। খেলায় টানটান উত্তেজনা। প্রায় শুরু থেকেই।
বশীর খ্রিষ্টান গোরস্থানের অপরপার্শ্বে টেলিভিশনের শোরুমের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই শুরু থেকেই খেলা দেখছে। আজকের খেলায় তার দেশেরবাড়ী চিটাগং খেলছে। পরপর তিনটা ম্যাচ হেরে যাওয়াতে পয়েন্ট তালিকায় চিটাগঙ তলানীর দিকে। বশীর সেই তিনটা ম্যাচের কোনটাই দেখতে পারেনি। তাই গতোকালকেই মনঃস্থির করেছিলো যে আজকের ম্যাচটি দেখবে। দেখা যাক তার খেলা দেখার সাথে সাথে তার প্রিয় দলের ভাগ্য বদলায় কিনা। খেলা দেখবে বলে তার গাড়ির গ্যারেজের কাজ যা বাকি ছিলো আগেভাগেই সব শেষ করে রেখেছে। আজকে রাতে তার কাছে তার পোষা মেয়েমানুষ জুলেখার আসবার কথা ছিলো। খেলা দেখবে বলে তাকেও নিষেধ করে দিয়েছে।
দেখতে দেখতে চিটাগঙের পরপর দুইটি উইকেট পড়ে গেলো। শোরুমে কাজ করা মালেক উল্লসিত। তার দল কুমিল্লা ট্যুর্নামেন্টের শুরু থেকেই চমক দেখিয়ে যাচ্ছে। কেউ তাদের ফেভারিট বলে গণনা করেনি অথচ পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে এখন তারাই। বশীরের উদ্দেশ্যে মালেক ফোঁড়ন কাটে,
“কিরে বশীর। তুই খেলা দেখতে আইলি। ভাবছিলাম আইজকা চিটাগঙ ফাটাইয়া ফালাইবো। কিন্তু বাঁশ দেখি আইজকাও ফাটা। কিছুতেই কিছু হয়না।” মালেক হো হো করে হাসতে থাকে।
বশীর নিজেও এই মুহূর্তে তার দলের উপরে প্রচন্ড রাগত। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকের খোঁচার সামনে তা প্রকাশের কোন অর্থ সে খুঁজে পায়না। কাজেই তার জিভের রিফ্লেক্স তড়িৎগতির, “শোনো, এখনই এতো চিল্লাইও না। খেলা শেষ তো হয়নাই, নাকি হইছে? খেলা শেষ হইতে দাও।”
বশীরের প্রত্যুত্তরের ক্যারিশমা নাকি কুমিল্লার খেলোয়াড়দের খেলার মাঠে রাশ আলগা করে ফেলা কিনা কে জানে পরপর দুইটি উইকেট হারিয়েও চিটাগং খেলায় নিজেদের ফেরাতে পারলো। তিন ওভারে উনতিরিশ রান তুলে ফেলার পরে বারো ওভার শেষে চিটাগঙের স্কোর গিয়ে দাঁড়ালো পাঁচ উইকেটে একশো দুই রান। এবারে বশীরের বক্রোক্তি করবার পালা। সে সেই সুযোগ ছাড়লোনা। মালেকের দিকে তাকিয়ে মধুর গলায় বলে উঠলো,
“কি মালেক ভাই, ফাটা বাঁশ তো দেখি কুমিল্লার প্লেয়ারগো কাছে চইলা গেছে গা।”
মালেক নিরত্তর থাকে। হঠাৎ তার দলের কি হলো ভেবে মাথা চুলকায়।
খেলা নিয়ে পারস্পরিক এই মৃদু খোঁচাখুচি তাদের দুইজনের মধ্যে বহু পুরনো। কেউই অপরের টিকা-টিপ্পনী বিশেষ একটা গায়ে মাখেনা।
খেলা এবারে দারুণ জমে উঠেছে। চিটাগঙের পাঁচ ওভারে প্রয়োজন আটচল্লিশ রান। হাতে আছে চার উইকেট। তবে ক্রিজে থাকা উভয়ই ব্যাটসম্যানই এখন সেট।
এই সময়ে উল্টা দিক থেকে একজনকে হেঁটে হেঁটে টিভির শোরুমের সামনে এসে দাঁড়াতে দেখলো মালেক এবং বশীর উভয়েই।
মানুষটাকে তারা তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। মাঝেমাঝেই এই এলাকায় সন্ধ্যায় কি রাতেরবেলায় সন্দেহভাজন মানুষজন রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে কি বড় কোন অপরাধ করার আগে অন্যরা যা করছে নিজেও তার মাঝে ভিড়ে যেতে চায়।
মাত্রই সামনে এসে দাঁড়ানো সেই মানুষটাকে দেখে কোনভাবেই সম্ভাব্য কোন অপরাধী বলে মনে হয়না।
উজ্জ্বল চোখে সেঁটে থাকা মোটা ফ্রেমের চশমা, দৃষ্টিতে ভালোমানুষী ভালোমানুষী ছাপ, লম্বা গড়ন, পরনে হালকা নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট, তার উপরে সমুদ্র নীল রঙের ফুলশার্ট। একদৃষ্টিতে সে খেলার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে পরিষ্কারই মনে হয় যে ভদ্র পরিবার থেকে আগত। মালেক কিংবা বশীর কারো দিকেই তার মনোযোগ নেই।
কিন্তু উভয়ের মনোযোগই এই মুহূর্তে তার দিকে নিবিষ্ট।
বশীর কিংবা মালেকের কেউই আগত এই দর্শককে পছন্দ করতে পারছেনা।
উভয়েরই মনে হচ্ছে যে লোকটা কোন না কোন বদ মতলবে খেলা দেখার নাম করে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে।
তারা কেউই খেলায় মন দিতে পারছেনা।
অথচ খেলার উত্তেজনা এই মুহূর্তে তুঙ্গে উঠেছে।
একটা সম্ভাব্য ক্যাচ আউটের ভিডিও বারবার টিভিতে রিপ্লে দেখাচ্ছে। থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দর্শকেরা।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বড় পর্দায় বড় বড় অক্ষরে দৃশ্যমান হয়ে উঠলো। আউট।
বিপুল সংখ্যক দর্শক উল্লাসে ফেটে পড়লো।
মালেক খেলাতে মনোযোগ দেবে বলে মনঃস্থির করলো। চিটাগঙের উইকেটের পতনে সে উল্লসিত হয়ে উঠলো।
তখনই ঘটনাটি ঘটলো।
মালেক, বশীর কিংবা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ কেউই এমন কোন ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা।
খ্রিষ্টান কবরস্থানের পাশে থাকা চৌরাস্তা দিয়ে একটি রিকশা কবরস্থানকে অতিক্রম করে সালাউদ্দীন হাসপাতালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো।
আচমকাই সেই রিকশার যাত্রী, মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলা কোন এক অজানা কারনে ফেইন্ট হয়ে রিকশা থেকে গড়িয়ে পড়ে গেলেন।
রাস্তাটি বরাবরের মতোই ব্যস্ত। গতিশীল।
রাস্তায় চলাচলকারী মানুষজন অকস্মাৎ ঘটনাটি দেখে বিস্মিত হলো।
তারা প্রত্যেকেই মাটিতে পড়ে থাকা ভদ্রমহিলার কাছাকাছি এসে ভিড় করলো।
কিন্তু কেউই এর চাইতে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলোনা।
সম্ভবত তারা প্রত্যেকেই অপর কারো এগিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় নিজেরা এগিয়ে যাচ্ছেনা।
মালেক এবং বশীর এমন দৃশ্য অনেকবারই দেখেছে।
দৃশ্যটি তাই তাদের বিশেষ আলোড়িত করলোনা।
তাদের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে থাকা লম্বা গড়নের ভালোমানুষ ভালোমানুষ দেখতে মানুষটা ভদ্রমহিলার দিকে পা বাড়ালো।
মালেক এই প্রথম তার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো “ভাইজান আপনি যাইতেছেন ক্যান? চিন্তা কইরেন না। মহিলা এখানকারই। কেউ না কেউ আইসা নিয়া যাইবো। আপনার যাওনের দরকার নাই।”
মালেকের কথাগুলোর মধ্যে তাদের তিনজনের একসাথে জমজমাট খেলা আয়েশ করে দেখবার প্রস্তাব প্রচ্ছন্নভাবে আছে বুঝতে সেই মানুষটার কোন সমস্যা হলোনা।
সে খুব ক্ষণিক সময়ের মধ্যেই মালেকের প্রস্তাবে বিনাশব্দে সম্মতি জানালো।
এদিকে খেলা ততোমধ্যে ক্লাইমেক্সে পৌঁছে গেছে।
চার বলে সাত রান লাগবে চিটাগঙের। হাতে আছে দুই উইকেট।
সালাউদ্দীন হাসপাতালের বিশাল বোর্ডের লাল রঙ ছাড়াও আরো নানাবিধ উজ্জ্বল রঙে সমগ্র রাস্তাটি উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। বরাবরের মতোই।
এদিকে মাটিতে পড়ে যাওয়া ভদ্রমহিলা ততোমধ্যে জ্ঞান ফিরে পেয়ে পুনরায় রিকশাওয়ালাকে সালাউদ্দীন হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে রিকশায় উঠে বসেছেন।
উপস্থিত অনেকেই দৃশ্যটি দেখলো। তবে কারো কোন প্রকারের ভাবান্তর ঘটলোনা।
এদিকে ম্যাচ শেষ। চিটাগঙ অবিশ্বাস্যভাবে শেষ বলে বাউন্ডারী মেরে ম্যাচটি জিতে গিয়েছে।
২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৩
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ভালোই লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৪
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার গল্প| আমি আপনার গল্পের ফ্যান হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ| এক অন্যমাত্রার গল্পকার আপনি