নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন ও সম্ভাব্যতা

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৩৩

১. (শওকত হোসেন)
শেষ কবে এমন মনোমুগ্ধকর বৃষ্টি দেখেছি আমার মনে পড়েনা। গতোকাল বিকালের বৃষ্টির কথা অনেকদিন মনে থাকবে। বৃষ্টির কথাই শুধু বলি কেন প্রকৃতির কোন দিকটাই বা আমাকে আকৃষ্ট করেছে তীব্রভাবে? রিনার সাথে বিয়ের বাইশ বছর হলো। তার সাথে একসাথে বারান্দায় বসে চা খাওয়ার সামান্য কাজটাও আমার কতোদিন করা হয়ে উঠেনা। গতো তিন বছরে কম করে হলেও দশ কি বারো জন নারীর আপাদমস্তক আমার চেনা হয়েছে। তারা এসেছে, আমার কাছে নিজেদের সমর্পণ করেছে, নিজের সুবিধাটুকু আদায় করে নিয়ে সরে গেছে। কেউ এর থেকে বড় পরিসরে কিছু চিন্তা করলেও কি ভিন্ন কোন পরিণতির সম্ভাবনা ছিলো? ছিলোনা। এই সত্য নগ্ন, নির্জন। রিনা আইনত এখনো আমার স্ত্রীই আছে বটে। নিজের ক্ষমতাকে ক্রমশই মহীরুহ করে তোলার লক্ষ্যে নিজের ব্যবসাকে অনেক বিস্তৃত করেছি বটে তবে তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমার প্রতি রিনার ঘৃণা বেড়েছে। নাহ, ভুল শব্দ ব্যবহার করলাম। ঘৃণা নয়, নিষ্পৃহতা। নতুন ছুরির মতো ধারালো উদাসীনতা। নাইলে রাতেরবেলায় আমার উল্টাদিক করে শুয়ে থাকবার সময়ে অন্তত একদিন হলেও তার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেতো।

প্রায় বারো বছর পরে বাড়ি এসেছিলাম। অসুস্থ বাবাকে দেখবার কথা বলে। কথাটা শোনার পরে রিনার ব্যাঙ্গাত্মক হাসির দৃশ্য আমৃত্যু ভুলবোনা। রাইসার ঘরে যেতে যেতে মেয়েকে বলছিলো “শুনলি? তোর বাবার নাকি কারো কথা মনে পড়ে।” আমার মেয়ে সেই কথায় কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। ছেলে মারুফকে এসকল কথা বলার কোন সুযোগ নেই। আমার মাদকাসক্ত ছেলের মাদক ছাড়া আর কিসে আগ্রহ আছে সেই খবর ছেলের মা, বোন কিংবা আমি কেউই জানিনা। কখনো জানতে পারিনি। তবে রিনা যে তার কথা শেষ করে শব্দ করে হেসে উঠেনি আমি সেই দৃশ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছিলাম। তারপরেই মনঃস্থির করেছিলাম যা হবার হবে, বাবাকে আমি দেখতে যাবোই। আমার নিতান্তই সাধারণ স্কুলমাস্টার বাবা, যিনি চোখে বলতে গেলে কিছুই দেখেন না তার কাছে নিজেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলাম। পেরেছি। আমার কাছে এতোটুকুই যথেষ্ট ছিলো। বাবার চার সন্তানের মধ্যে আমি সবচাইতে বেশী অপ্রিয়। এই নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। প্রিয় হবার মতো কীই বা করেছি জীবনে? অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতা, জাগতিক সাফল্য? অগণিত মানুষ এসবের কথাই সবার আগে বলবে। সাথে এটাও সত্য যে যারা এভাবেই দেখে অভ্যস্ত তাদের কেউই সতেরো বছর আগে রিটায়ার করা স্কুলমাস্টার রাজ্জাক হোসেনকে চেনেনা। চিনে থাকলে কেন আমি আমার সাতাত্তর বছর বয়সী পিতার অপ্রিয়তম সন্তান তা বুঝে নিতে দেরী করতোনা।

সামনের মাসে আরেকটা ইন্ডাস্ট্রি শুরু করবো। খলিল, দ্যাট স্কাউন্ড্রেল কিভাবে কিভাবে যেনো খবরটা পেয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত আমার অফিস থেকেই খবরটা লিক হয়েছে। কে করতে পারে? শাকিল? নাকি রোমেল? আমার কেন যেনো মনে হচ্ছে এই দুইজনের যে কোন একজনই কালপ্রিট। অথচ এই দুইজনের উপরেই আমার সমস্ত ভরসা। আমাদের দেশেই কিনা কে জানে তবে মানুষের চোখ লোভে একবার উপরের দিকে তাকাতে শুরু করলে আর নিচে নামতেই পারেনা। সেই চোখ হামেশাই উপরে রাখতে সে সম্ভাব্য যে কোন কিছুই করতে পারে। উদাহরণঃ সফল বিজনেস টাইকুন শওকত হোসেন। ফলাফল? শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হতে পারি এই সম্ভাব্যতায় অনেকটা আত্মগোপনের মতো করেই নিজ গৃহে ফিরছি। তবে গতোকাল রাতে বাবার সাথে কথা বলতে বলতে যখন কেঁদে ফেলেছিলাম তারপরে শোবার ঘরে গিয়েই মনঃস্থির করেছি যে এবারে ফিরে আসার পালা। আমার প্রতি রিনার দমবন্ধকর ঘৃণাকে আর বাড়তে দেবোনা। রিনা একসময় তার রিলকের কবিতা খুব আওড়াতো। তার প্রিয়তম কবি। আমি তার কানে অত্যন্ত মৃদুস্বরে ধীরে ধীরে বলবো, “Love consists of this: two solitudes that meet, protect and greet each other. ” রিলকে যদি ক্রমশই আমার অর্জিত ক্ষমতাকে গ্রাস করতে থাকে তবে তাই হোক। কাম হোয়াট মে। মারুফ ছোটবেলায় বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালোবাসতো। বৃষ্টির কাছে সে তার ভেতরে এখনো রয়ে যাওয়া নিষ্পাপতা নিয়ে যেন আবারো ফিরে আসতে পারে একজন বাবা হিসাবে এর বাইরে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।

২. (শিরিন)
তেইশ বছরের পুরনো নিজের ঘরে প্রথম পা রাখতেই আমার শরীরটা শিরশির করে উঠেছিলো। অথচ ঘরে ঢুকতে ঢুকতে অনুভব করলাম কিছুই আর আগের মতো নেই। যতোদিন এই ঘরের একচ্ছত্র মালিকানা আমার ছিলো আয়নাটা সবসময়ে সোজা থাকতো। একেবারে নিঁখুত সোজা। মা এই নিয়ে আমাকে কম কথা শুনাতো? তিন বছর পরে এসে সেই কপট ধমকের জন্য আমি তৃষ্ণিত হয়ে আছি। কিন্তু না, আমার ভেতর থেকেই আয়নাসম্পর্কিত সেই বালখিল্য অভিযোগের কথা এলোনা। বাঁকা হয়ে থাকা আয়নাটা আমি নিজেই সোজা করে দিলাম। তারপরে সাদা-নীল চাদরের বিছানায় এসে বসতেই নিজেকে আর জাগিয়ে রাখা গেলোনা। তিন বছরের সমগ্র ঘুম যেন বাড়ি ফেরার প্রথম দিনের সেই নয় ঘন্টায় ঘুমিয়েছিলাম।

আদনানের সাথে কাটানো তিন বছরকে আমার কাছে তিরিশ বছরের মতো লেগেছে। বিয়ের এক মাসের মাথাতেই স্বামীকে নিখাদ এক পারভার্ট হিসাবে আবিষ্কার করাটা খুব শক্ত চরিত্রের কারো পক্ষেও সহজ কিছু নয়। সেখানে আমি তো আজন্মই দুর্বল। এই কথা আমার ঘনিষ্ঠদের কে না জানে? আমি স্কুলে থাকতেই বাবা খুব আক্ষেপ করে মাকে বলতো “তোমার এই দুর্বল মেয়ের কপালে খারাপই আছে। বিয়ের পরে অনেক ভুগবে।” আমার বিয়ের দুই বছর আগেই বাবা মারা গিয়েছিলেন। নাইলে আবিষ্কার করতেন ভবিষ্যৎবক্তা হিসাবে তিনি নস্ত্রাদামাস না হলেও নিঃসন্দেহে তার কাছাকাছি।

আদনান আমার এই দুর্বলতারই সুযোগ নিয়ে গেছে গতো তিন বছর ধরে। নিরন্তর। ক্ষমাহীনভাবে। আমি কতোভাবে চেষ্টা করেছি নিজের মনোযোগ অন্য কোন খাতে প্রবাহিত করার। সেখানেও আদনানের আক্রোশ। এ এক অদ্ভুত ধরণের বন্যপ্রাণী। নিজের বিকৃতি স্ত্রীকে বাধ্যতামূলক মেনে নিতে তো হবেই, স্ত্রীর কষ্টও পেয়ে যেতে হবে প্রশ্নহীন আনুগত্যে। তাও আমার মতো উচ্চশিক্ষিতা একজন মেয়েকে স্বামীর চূড়ান্ত পর্যায়ের ধর্ষকামীতা, স্বেচ্ছাচারীতার সব সয়ে যেতে হবে। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তীব্র অহঙ্কারে ভুগতাম। গতো পরশু মায়ের সাথে রাতেরবেলায় নিজের সর্বস্ব ঢেলে দিতে দিতে আবিষ্কার করলাম অর্জিত শিক্ষার অহঙবোধ আদনানের সমস্ত নষ্টামীর প্রতি আমাকে আরো বিষিয়ে তুলেছে। বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে অহঙকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা কেন? আদনান কি আমার এই দুর্বলতারই সুযোগ নিয়ে যায়নি? এবারে ভিন্নভাবেই আমাকে লড়তে হবে।

গতোকাল বিকালে ছোট গোলাপ গাছগুলোর উপরে হাত বুলাচ্ছিলাম। সূর্যরশ্মি এমনভাবেই পাতাগুলোর উপরে পড়ছিলো যে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এমন আহামরি কিছু ঘটনা নয় তবু সেই মুগ্ধতা আমাকে বড্ড আকর্ষণ করেছিলো। বড় কিছুতে মুগ্ধ হবার সুযোগ শেষ কবে ঘটেছে আমার? সূর্যের আলো পাতাগুলোর উপরে পড়ে পাতাগুলোকে অন্য এক অবয়ব এনে দিয়েছিলো। তার উপরে হাত রাখতে রাখতে আমি নতুন কোন সম্ভাবনার কথা ভাবছিলাম। এই সম্ভাবনা একান্তই আমার আবিষ্কৃত। কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সিট খালি আছে এমন একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম কিছুদিন আগে। গতোকাল সকালে শায়লার ফোন এসেছিলো ঢাকা থেকে। ধানমন্ডিতে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের চাকরীর কথা বলছিলো। বাচ্চাদের পড়াতে হবে। স্যালারী যা দেবে তাতে আমার একলার দিব্যি চলে যাবে। হ্যা, একলারই। মায়ের সাথে কথা বলে যতোটুকু বুঝেছি তাতে জননীর সাথে আমার নাড়ি বুঝি আরেকবার ছিঁড়তে যাচ্ছে এই সম্ভাব্যতার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। পার্থক্য এতোটুকুই যে প্রথমবারে মায়ের নাড়ি ছিঁড়ে আমি বেরিয়ে এসেছিলাম। এবারে আমার নাড়ি ছিঁড়ে মা আমার থেকে ক্রমশই দূরে ছিটকে যাবে। দীর্ঘসময় আদনানের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হবার কারনেই সম্ভবত তারই এক অবিবাহিত বন্ধু আসিফের প্রতি আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। অসহায়ত্ব উৎসরিত সেই আকর্ষণকেও আমার অতিক্রম করেই যেতে হবে। স্বেচ্ছায়। সোয়া দুই কোটি মানুষের রাজধানীতে মরহুম মোস্তফা আনোয়ারের মেয়ে শিরিন আনোয়ার নিতান্তই দুই শব্দের এক পরিচয়হীন ভাষাহীন সত্তা মাত্র। সে তার সমগ্রতা নিয়ে পারিপার্শ্বিকতাকে জয় করতে না পারুক অন্তত অনিবার্য পরাজয়কে সঙ্গী করেই তাকে আমৃত্যু বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যাবার স্পৃহা রাখে। আদনানের দুর্বলতা আমি হাড়েমজ্জায় জানি। ওর প্রধান ভয় লোক জানাজানির। প্রয়োজন হলে সেই ভয় দেখিয়েই আমি নিজের আশু প্রয়োজন পূরণ করবো। মাত্র তিন মাসেরই তো ব্যাপার। আদনান সুড়সুড় করে মেনে নেবে।

৩. (আলহ্বাজ জাকারিয়া মালেক)
কিডনীর সমস্যাটা অনেকদিনই হইলো ভুগাইতেছে। পরশুদিন রাইতে মেলা কষ্ট পাইতেছিলাম পেটে। ঘুম থেইকা চুপ কইরা উইঠা একলা একটু ব্যথাটা সহ্য করতে চাইছিলাম মুখ দিয়া এমনেই শব্দ বাইর হইয়া গেছিলো। আম্বিয়ার কান মাশাল্লাহ এমন খাড়া শব্দ শুইনাই ঘুম ভাইঙ্গা উইঠা বসলো। তারপরে সেই যে শুরু হইলো কান্দন আর থামানির নাম নাই। পাশের ঘরে দুই মাইয়া। এই ঘরের সাউন্ড সেই ঘরে বাতাসের থেইকাও জোরে যায় গিয়া। মেয়েছেলেটারে গালি দিয়া থামাইতে পারলে মুখ আর মন দুইটারই সুখ হইতে পারতো। আরাম পাইতাম। কিন্তু মাইয়ারা বড় হইছে। নিজেরে সামলাইয়া রাইখা চলতে হয়। আম্বিয়া এক গ্লাস পানি আইনা দিলো। খাইলাম। পানি তো পানি, এইডার আর স্বাদ কিয়ের? তয় আম্বিয়ার হাত থেইকা পানির গ্লাস নিজের হাতে নেওনের টাইমে আম্বিয়ার হাতের লগে আমার হাত লাইগা গেলে আম্বিয়ার হাত কাঁইপা উঠছিলো। ঘরের বাতিটাও এমন কইরাই জ্বলে যে আন্ধার আন্ধার লাগে। হেইডাই ভালো। নাইলে আম্বিয়া দেখতে পাইতো আমার চোখে পানি আইছে। বিয়ার পরে পরথম পরথম এমন হইতো। হাতের লগে হাত লাইগা গেলেই আম্বিয়া কাঁইপা উঠতো। সোহাগের সেইসব দিন কেমনে যে পর হইয়া গেলো।

আল্লাহর খেল একবার দেখো সবে। পরের দিন সকালেই ব্যথাডা আরো বাইড়া গেলে ঠিক হইলো আমারে যাইতে হইবো। আমার ছোটভাই সাব্বিরের কাছে। ভাইডা আমার বিরাট চাকরীজীবী হইছে। মাসে দেড় লাখ কইরা বেতন পায়। সুন্দর বউ আছে, বড় পোলাটার আট নয় বছর হইবো। কি যে সুন্দর দেখতে!!! আমি আমার ভাইয়ের বাড়ি গেছি তিনবার। আমারে দেখলেই দাঁত বাইর কইরা হাসে। কলিজাটা জুড়ায়া যায় গা। ছোট মাইয়া রেশমীরে একবার কইছিলাম। মাইয়া আমার আদব লেহাজ শেখেনাই কিছুই। দুম কইরা কইয়া বসলো, “হ, সে ছোটমানুষ। কিছু না বুইঝাই আপনের দিকে তাকাইয়া হাসে। চাচা-চাচীও আপনের দিকে তাকাইয়া হাসে। সেই হাসি মুখে থাকেনা, থাকে চোখে। তাগো হাসি বুঝদারের হাসি।” কথা শেষ হইছে কি হয়নাই দিছি কইষা একখান থাবড়। এইটুকু মাইয়া, নাক টিপলে দুধও বাইর হয়না মুখের কথা শোনো মাইয়ার। থাবড় খাইয়া মাইয়া পুরাই তাজ্জব হইয়া গেছিলো। তাগো বাপে কখনো গায়ে হাত তুলেনাই। থাবড় খাইয়া বাপের দিকে চাইয়া আছিলো। সেই তাকানিতে কি আছিলো জানিনা। আমি কইতে পারুম না। তয় এইটুকু বুঝছিলাম মাইয়ার চোখের দিকে তখন তাকাইয়া থাকনের সাহস আমার আছিলোনা। সেই থেইকাই তারে ধমকাইয়া উঠছিলাম “তাকাইয়া তাকাইয়া দেহোস কি? আরেকবার খাইতে চাস?” সেই ধমকে গলায় জোর পাইনাই।

মাইয়া আমার ছোট মুখে বড় কথা কইয়া ফালাইছিলো। কিন্তু ওর কথায় কোন ভুল আছিলোনা। আমি জানি। ভালো কইরাই জানি আমার ছোট মাইয়াটার প্রতিটা কথা সত্য। ভাইডার বাড়ি গিয়া কোনকালে আরাম পাইনাই। আমি ওর বড় ভাই হই। হইলাম না হয় গরীব, তার বড় ভাই তো। এই সত্য আল্লাহই বানাইছে। এই কথাটারে কেমনে অস্বীকার করবো? ভাইডা আমার নিজের অফিসের লোকজনের সামনে আমার পরিচয় দিতে শরম পায়। শ্যাষবার আমি নিজেই জোর গলায় নিজের পরিচয় দিছিলাম। লোকজনের চোখ বড় হইয়া গেছিলো। পরে ভাইডার মুখ দেইখা বুঝছিলাম যে তার রাগ হইছে। শুধু কি ভাইয়ের বাড়ি? ধানমন্ডিতে কি এক হসপিটাল আছে জানি, ও হ পপুলার ডায়গনিস্টিক সেন্টার। একবারে কি কি চেক আপের লাইগা খেয়াল নাই সেইখানে গেছিলাম। একলাই। সবুজ রঙের বোর্ডে বড় বড় কইরা লেখা। সন্ধ্যার সময় আছিলো। আমি একলা একলা চেক আপের লাইগা দরকারী রুম খুঁজি। সকলেই আমার দিকে চাইয়া থাকে। আমি মাইনষের চোখের ভাষা বুঝি। ষোলোআনা বুঝি। আমার পরনের পোশাক আর দাঁড়ি-টুপি দেইখা সবাই ভড়কাইয়া গেছে। আমারে বিপদজনক মনে করছে। আমি মফস্বলে থাকলে হইবো কি দেশের হালহকিকত জানিনা নাকি? মাকসুদ মিয়াও তো ঢাকা গেছিলো। ফিরা আইসা আমার লগে কতো কথা তার। শহরের মাইনষে নাকি কারো দাঁড়ি-টুপি দেখলেই ডরায়। আমি শুইনা হাসছিলাম। সেই হাসির মইধ্যে কতো কান্না লুকাইয়া আছিলো মাকসুদ মিয়ারে বুঝবার দেইনাই। এই শহরের মানুষ এক আজিব চিড়িয়া। সহায়সম্পত্তি বাড়াইতে যারা দাঁড়ি-টুপি পইরা, আল্লাহ আল্লাহ জিকির কইরা ধর্ম নিয়া ব্যবসা করে তাগো লগে বেবাক দাঁড়ি-টুপিঅলা মানুষরেই গোলাইয়া ফালায়। আমার লাহান নিরীহ মানুষরেও একইরকম ভাবে যে মইরা গেলে পাড়ার নেড়ি কুত্তাডার চোখও ভিজবোনা। তয় সত্য স্বীকার করতে শরম নাই, মাইনষের সেই সন্দেহের তাকানি দেইখা মইরা যাইতে মনে চাইছিলো।

এই নিয়া চারবারের মতোন সাব্বিরের বাড়ি যাইতেছি। ব্যথাডা অনেক বাড়ছে। জমিজমা নিয়াই ঝামেলা আছে গেরামে। কথাবার্তা কইতে হইলেও সাব্বিরের লগে তো বইতেই হইবো। ভাইডা আমার এতো বড় চাকরী করে। সেইটা ফালাইয়া মফস্বলে আইবো কেমনে? আম্বিয়ারে কিছু কইনাই। মাইয়া দুইটার কথা তো গোনার মধ্যেই আসেনা। জমিজমা যাই আছে তার একটা অংশ সাব্বিরের নামে লিখ্যা দিমু। আমার যা বাকি থাকবো তা দিয়া বাকি জীবন চইলা যাইবো ইনশাল্লাহ। মাইয়া দুইডার বিয়াশাদির ব্যবস্থা হইয়া যাইবো। আমি আর আম্বিয়া, এই দুই বুড়াবুড়ি কাটাইয়া দিমু ছোট্ট ঘরের মধ্যে। জীবনে আর আছে কি? সোলেমান রাজশাহী থেইকা বাড়ি আইছিলো। বস্তাভর্তি আম দিয়া গেছে। সাব্বিরের লাইগা কিছু আম নিয়া আসছি। আম ছাড়া তারে দেওয়ার মতো আর কিছু তো আমার নাই। দেওনের মতো সবই তো ভাইডার আছে। ঢাকার মানুষ, রাজশাহীর ফ্রেশ আম পাওনের প্রশ্নই নাই। আইচ্ছা, তার লাইগা আম নিয়া আসছি, জমিজমার কিছু অংশ তার নামে লিখ্যা দিমু, ভাইডা আমার খুশী হইবো তো? ছোটবেলায় থাকতে তারে কান্ধে কইরা নিয়া কতো ঘুরতাম। হাসিতে ভাইডার মুখ ভইরা থাকতো। সে কি অহন অমনে হাসবার পারে? জানতে বড় সাধ হয়। থাক, অত সাধ ভালো না। সেই প্রশ্ন ওরে জিগানোর কোন মানে নাই। তার চাইতে আম নিয়া যাই আগে। বড় ভাইয়ের দরদ বুঝবো নিশ্চয়ই। রক্তের টানের উপরে মাইনষের ভরসা না কইরা উপায় আছে?

৪. (পরিশেষ)
গতোকাল রাতে ট্রাকের সাথে চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী বাসের প্রবল সংঘর্ষে আঠারোজন গুরুতরভাবে আহত এবং তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের নামঃ ১)শওকত হোসেন, ২)শিরিন আনোয়ার, ৩)আলহ্বাজ জাকারিয়া মালেক।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১১

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: নতুন ছুরির মতো ধারালো উদাসীনতা

বরাবরের মতই, ইন্টারেস্টিং লেখা। বড় কিছু লিখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.