নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সকলে ভালো থাকলেই ভালো

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৪৮

টিএসসিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে রাকিন পেছন থেকে চমকে দিয়ে বললো “চল তাইলে স্যারের বাসায়।”

মেজাজ খারাপ হলেও কিছু বলতে পারলাম না। গরম চা গলার ভিতরে ঢুকে যেতে পারে। রাকিনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। এই মাত্র পনেরো মিনিট আগেও শালাকে দেখে মনে হচ্ছিলো তার পেনিস বুঝি কেউ গায়েব করে দিয়েছে। ব্যাপার আর কিছুই না। মোহাম্মদপুর থেকে বাসে করে শাহবাগ আসছিলাম। শাহবাগে নামার পর থেকেই বন্ধু আমার অসহায় হয়ে গিয়েছিলো। মুতবে। ব্লাডার যে কোন সময়ে ফেটে যেতে পারে। টিএসসির ঐতিহাসিক জেন্টস টয়লেট থেকে বেরিয়ে এসে দিব্যি শাহেনশাহ হয়ে গেছে। এখন আমাদের গন্তব্য সেগুনবাগিচা। ডিপার্টমেন্টের এক স্যারের সাথে দেখা করতে যাবো। আসগর হোসেন। তার মাঝে অজগর অজগর কোন ভাব নেই। ওমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে আমাদের বিভাগে জয়েন করেছিলেন। স্যার রাকিনকে দুপুরবেলাতে ফোন করেছিলো। যেন তার বাসায় যায়।

টিএসসিতে আজকে মেলা প্রোগ্রাম। নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই টানা চলছে দেখেছি। বিশেষ লোকজন আসেনি। সম্ভবত সেই কারনেই তাবড় তাবড় এনজিও নেত্রীদের আজকে সমাবেশে বক্তৃতা দিতে ডাকা হয়েছে। এই কৌশলে খুব একটা লাভ হয়নি। চারপাশে লোকজন পাছা চুলকাতে চুলকাতে কিংবা অসন্তোষ নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে বক্তাদের বক্তৃতার দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেনা। যদিও দোষ কৌশলের নয়। গতোকাল বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ-ভারতের কোয়ার্টার ফাইনাল ছিলো। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুইটা সিদ্ধান্ত গেছে এবং প্রায় সকলেরই বিশেষজ্ঞ মতামত হলো দুইটা ভুল সিদ্ধান্তের কারনেই ভারত সেমিতে অসিদের সাথে খেলতে পারছে। নাইলে বাঙ্গালীদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারতোনা।

চশমা পরিহিতা এক ডাকসাইটে এনজিও নেত্রী দুই দফা কেশে নিয়ে বৈপ্লবিক কিছু কথা বলতে আরম্ভ করলে আমি রিকশা ধরতে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। চাটুকু পর্যন্ত সম্পূর্ণ করতে পারিনি। কিন্তু কি আর করা? গন্তব্য সেগুনবাগিচা কথাটা মনে পড়ে গেলো যে।

সেগুনবাগিচায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে গেলো। রাকিন বললো আমরা বরং কিছুক্ষণ শিল্পকলা একাডেমীর রেলিঙে বসি। এখন স্যারের বাসায় যাওয়ার কোন অর্থ হয়না। স্যার নামাজে বসেছেন। শালার, এই জায়গায় হাওয়া খেতে তো প্রেমিকাকেও কখনো নিয়ে আসিনি। বাধ্য হয়ে বসলাম। বিশ মিনিটের মাথায় রেলিঙে বসা থেকে একটু একা উঠেছিলাম। আশেপাশে চা পাওয়া যায় কিনা দেখতে। ব্যর্থ মনোরথে রেলিঙের কাছাকাছি ফিরে এসে দেখি টাক মাথার, মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক রাকিনের উরুতে হাত রেখে হাসিহাসি মুখ করে কথা বলছেন। রাকিনের মুখ প্রায় রক্তবর্ণ। ভদ্রলোককে দেখে অবাক হলাম না। শিল্পীদের আঁতুড়ঘর বলে কথা। এরকম তিন চারটা পিস থাকবেনা তা কি করে হয়? তবে রাকিনের মুখ দেখে মায়াই লাগলো। বেচারা এমনিতে বাইরে থেকে শক্তপোক্ত রাফ এন্ড টাফ থাকলে কি হবে ভেতরের অনেকটাই নারিকেলের শাঁসের মতো। অজাতশত্রু হবার এক বিরল ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে। এরকম একজনকে হোমোসেক্সুয়াল কেউ হ্যারাস করবে না তো কারে করবে? আমি সোজাসুজি রাকিনের উরু ঘষাঘষি করা ধিমানের দিকে এগোলাম। পাঁচ সেকেন্ড তার চোখের দিক চোখ রেখে কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে উঠে পড়তে বলে স্যারের বাসার দিকে রওনা দিলাম।

স্যারের বাসায় আড্ডাটা প্রত্যাশানুযায়ীই খুব জমে উঠলো। বারোশো পচাত্তর স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে বসে ঝলমলে আলোতে ফ্ল্যাটের মালিকের হাতে কোন টাকাই বলতে গেলে নেই এই কথা শুনতে বেশ লাগে। এক ধরণের গা এলিয়ে দিয়ে কেচ্ছা শোনা আর কি। আরো খুশী হলাম স্যার যখন “আপনারা দুইজন একটু বসেন আমি আসতেছি।” আমার মুখে হাসি চলে এলো। নিশ্চয়ই হরেক রকম মিষ্টি আসছে। প্রতিবারই এমন হয়। রাকিনের দিকে ভুলেও তাকিয়ে দেখলাম না। সে এখনো ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অপরিচিত কোন মেয়েও অকস্মাৎ এসে যদি তার উরুতে হাত রেখে কথা বলতো তাহলেও বেচারা এই সময় একই রকম ট্রমায় থাকতো বলেই আমার ধারণা। সেখানে একজন হোমোসেক্সুয়াল? যাক গে।

কথা বলতে বলতে ক্রিকেটের প্রসঙ্গ চলেই আসলো। আমি দ্রুত স্যারের সাথে একমত হলাম যে গতোকাল দুইটা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পক্ষে গেলে তারাই সেমিফাইনালে উঠতো। আসলে দ্রুত প্রসঙ্গান্তরে যেতে চাইছিলাম। কৌশলটা কাজে দিলো। দিতোই। মুখে মোলায়েম চমচম প্রবেশ করাতে করাতে ঢাকা শহরের বিয়েবাড়ীগুলার জবরজং কাজকারবার নিয়ে রাজা-উজির মারার আনন্দ বোঝে কয়জনে?

বাসায় ফিরে পানি খেতে খেতে মায়ের মুখে সংবাদ শুনি। বাংলাদেশ-ভারতের কোয়ার্টার ফাইনালের ফলাফল নিয়ে রাউজান, ফেনী, নোয়াখালীতে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু নারীদের উপরে যৌন নিপীড়ন পর্যন্ত হয়েছে। অবাক হলাম না। এরকম ঘটনা না ঘটলেই না বিস্মিত হবার কিছু ছিলো। যেসব পরিবার সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে একটা পরিবারকে আমি চিনি। আরো নির্দিষ্ট করে বললে সেই পরিবারের ছোট মেয়েটিকে। আমার মামাতো বোনের বান্ধবী। শ্যামলী নাম। পাঁচ বছর আগে একবার দেখেছিলাম। টানা টানা চোখ। চাহনীতে তীক্ষ্ণতা। যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সেজো মামা-মামীর আজ ঈদ উৎসব। অনেকদিন হলো চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো কোন গল্প পাওয়া যায়নি। আজ হয়েছে তো হয়েছেই একেবারে মেয়ের বান্ধবীর পরিবার নিয়ে গল্প। তাও সাম্প্রদায়িক আক্রমণের ঘটনা, মেয়ের বান্ধবী খোদ নিপীড়নের শিকার। ভাবা যায়? হিন্দিতে যাকে বলে দেনেওয়ালা যাব ভি দেতা, দেতা ছাপ্পড় ফাড়কে। আজকে সেজো মামা-মামীকে ছাপ্পড় ফাড়কে দিয়েছে। কে দিয়েছে সেই প্রসঙ্গ নিতান্তই অবান্তর।

ফেসবুক খুলে বসি। হোমপেইজ একটু স্ক্রল করে নিচে নামতেই দেখি বউসহ বিজয়ের প্রোফাইল পিকে আসগর স্যারের লাইক। সাথে মাখোমাখো মন্তব্যও আছে। বিজয় আমাদের সাথেই পড়তো। মফস্বল থেকে এসেছিলো। স্মার্ট ছেলে ছিলো। দ্রুতই বুঝে গিয়েছিলো আধুনিক শহরে ভিক্ষা করবার তরিকা অনেকটাই আলাদা। যা ভিক্ষা করে পাওয়াটা এখানে সবচেয়ে বেশী জরুরী তা অর্থকরী কিছু নয়। সেটা হলো চারপাশের মানুষের সহানুভূতি। তাতে সর্বাংশে সফল হয়েছিলো। আমাদেরই বিভাগের জুনিয়র একটা মেয়ে কি যেন নাম ও হ্যা আঁখি তার সাথে প্রেম করতো। সেই প্রেম নিয়ে কতো রকমের কন্ট্রোভার্সিই না করলো বিজয়। আসগর স্যার ঘটনাগুলোর সম্পূর্ণটুকুই জানতেন। সব জেনেও নিজের কৃতি ছাত্রের পাশে এসেই দাঁড়িয়েছিলেন। সেই দাঁড়ানোটা কাজে দিয়েছে। তার কৃতি ছাত্র স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কোন এক দেশে এখন উচ্চতর পড়াশোনা করে উচ্চতর মানুষ হতে ব্যস্ত। বিয়ে করে বউকে নিয়েও গেছে। স্যারকে নাকি প্রায়ই সেখান থেকে ফোন করে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর চকলেটও নাকি খুবই সুস্বাদু। আজকে সন্ধ্যাবেলায় স্যার কথায় কথায় বলছিলেন। যাক গে সকলে ভালো থাকলেই ভালো।

সবার ভালো থাকাটা স্বস্তিদায়ক কথাটা সন্ধ্যাবেলায় স্যারের ফ্ল্যাটে বসেই প্রথম মনে হয়েছিলো। বিজয়ের কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে স্যার তার এক ছাত্রীকে কিভাবে ডিভোর্স নেওয়া থেকে বাঁচিয়ে সেই মেয়ের পারিবারিক বিপর্যয় ঠেকিয়েছেন সেই কাহিনী বর্ণনা করছিলেন। নাহ সেই বাল আবার মনে করে কি হবে? ক্লান্তিবোধ করছি। বিজয়, আসগর স্যার, শ্যামলী এদের কাউকে নিয়েই ভাবতে ভালো লাগছেনা। আমি ফেসবুকের হোমপেইজ স্ক্রল করে আরো নিচে নামতে থাকি।

সকলে ভালো থাকলেই ভালো। এভাবে ভালো থাকা যায় তো। নাকি যায় না?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:২১

ফেক রুধির বলেছেন: আসলেই সবাই মিলে সবাই একসাথে সবাই সবাই ভালো থাকাটাই জরুরি।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৩৫

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লাগল লেখাটি।
+++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.