নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চারপাশ লাল হতে অনেক দেরী

২২ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২৮

রিকশা তখন মাত্র ডাসের সামনে এসে থেমেছে। ভাড়া দিয়ে রাজু ভাস্কর্যের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। সমগ্র জায়গাটি অসম্ভব লালে লাল হয়ে আছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রোগ্রাম। খুব সম্ভবত সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কোন প্রোগ্রাম হয়ে থাকবে। সচরাচর সাম্রাজ্যবাদ ব্যতীত অন্য কোন বড় সংকটের মধ্যে দেশ আছে বলে তারা মনে করেন না। বিষয়টি আগেও দেখেছি। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে। এতো লাল? চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। আমি ঢাকা শহরেই জন্মেছি। শুধু জন্মানো না। খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে মলমূত্রবীর্য বিসর্জন সবই মোদ্দাকথা বড় হওয়াটাও আমার পুরোদস্তুর শহরেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই এবং মফস্বল কিংবা গ্রাম থেকে শহরে এসেও নিজের মফস্বলী/গ্রাম্য প্রবণতাগুলো যারা বজায় রাখতে সচেষ্ট এবং সেই প্রবণতাকে বিনা বিচারে ইতিবাচকভাবে দেখে অভ্যস্ত তাদের ভাষায় আমি নিখাদ ‘নাগরিক।’ সেই কারনে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ এমনকি মাওবাদ বিষয়ক জানাশোনা অল্পবিস্তর এবং ধারণ করাটা সাধ্যের মধ্যে থাকবার পরেও আমি জনসাধারণের কাছে ‘লাল’ বলে বিবেচিত নই। এই বিষয়টা মেনে নিয়েছি। অযথাই এঁড়ে তর্কে গিয়ে কি হবে? তার দরকারই বা কি?

টিএসসি বরাবর যেতে যেতে কানে হাত দিতে হলো। সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে, সাম্রাজ্যবাদ কতো প্রকার ও কি কি, কিভাবে কোন কূটকৌশলে সাম্রাজ্যবাদ চারপাশে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সেই বিষয়ক কথাবার্তা মাইকে করে বলা হচ্ছে। ইংরেজীতে। কলোনিয়াল হ্যাংওভার অথবা বাংলায় বললে সাম্রাজ্যবাদ বিষয়টা তার স্বীয় ওজন হারায় অথবা বক্তা সম্ভবত বাংলা বলতে জানেননা এই তিনটার যে কোন একটা বিষয় হতে পারে। তবে এই কথাটি আমাকে বলতেই হবে যে বক্তার ইংরেজী উচ্চারণ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এক অভিনেতার ইংরেজী উচ্চারণের মতোই রুগ্ন এবং বর্ণনাভঙ্গী দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এক ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারের মতোই একঘেঁয়ে। জায়গাটিতে বেশ ভীড় আছে বৈকি। সেটা অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রোগ্রামের কারনে নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এমনেস্টি মোড়লগিরি করতে আসলে, আইসিসির তেড়িবেড়িতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ক্ষতিগ্রস্থ হলে কিংবা বাংলাদেশের জামদানী শাড়ি ভারতের সরকার কম দামে কিনে নিজেদের দেশে চড়া দামে বিক্রি করলেই কেবলমাত্র মানুষজন সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ জাতীয় কঠিন কঠিন শব্দের কথা মনে করে লেনিনের নামে বুক চাপড়ায়। কেউ কেউ মাও সে তুঙের কথা গোপনে স্মরণ করে মূত্র বিসর্জনের সময়ে প্রথম ফোঁটাটির মতো একটুকু মৃদু ফোঁটার অশ্রু বিসর্জন করেও বটে। মাও সে তুঙের কথা গোপনেই স্মরণ করা হয়। যেই ভালোবাসা আমরা এড়িয়ে যেতে পারিনা আবার জনসমক্ষে প্রকাশ করতেও সনাতন বাঙ্গালীসুলভ লজ্জায় নুয়ে পড়ি তাকে তো গোপনেই স্মরণ করবো। নাকি?

“বিপ্লবের আগে চীনের পুরুষদের তিনটি পর্বত বইতে হতো। সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদ। আর চীনের নারীদের বইতে হতো চারটি। বলাই বাহূল্য, চতুর্থটি চীনের পুরুষ।” – মাও সে তুং

মাও সে তুং একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশ দেখে থাকলে পাঁচ নাম্বার পর্বতটি নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে অনায়াসেই দেখতে পারতেন। সেটা হলো বাংলাদেশের আপামর নারী-পুরুষের নির্বুদ্ধিতা। টিএসসির ঐতিহাসিক অতি নোংরা জেন্টস টয়লেটে যেতে যেতে লক্ষ্য করলাম সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের লাল রঙের ক্যাপ পরে কিছু অল্পবয়সী, যেই বয়সে হাফপ্যান্ট পরনেওয়ালারা ফ্রকের রহস্য জানতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে আর ফ্রকপরনেওয়ালীরা হাফপ্যান্টের ঔদ্ধ্বত্য সম্পর্কে উন্মুখ হয় সেরকম ছেলেমেয়েরা নিজেদের ক্যাপগুলোর সৌন্দর্য নিয়ে পরস্পরের সাথে হাসি তামাশায় মত্ত। তাদের সাথে কিছু বয়স্ক মানুষজনকেও দেখতে পেলাম। এই আলোতে তাদের দাঁত কি উজ্জ্বলই না দেখাচ্ছে! ঠিকই তো আছে। সম্রাট শাহজাহান কুরআন পাঠ করিয়া এবং টুপি সেলাই করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিতেন এই বিষ্ঠা যেই দেশের বাচ্চাদের একেবারে ছোট থেকে অমৃতের মতো করে গেলানো হয় তাদের গালাগাল করে কি উদ্ধার হবে? দেশ? জাতি? মরালিটি? বীরত্ব? সাহস? গৌরব? আত্মতৃপ্তি?

আমি জায়গাটি ছেড়ে চলে আসি। মনঃস্থির করলাম রিকশা করে মতিঝিলে যাবো। শাপলা চত্ত্বরের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষারত মানুষজনকে অনেকদিন দেখা হয়নি। সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ ছাড়াও আরো কতো প্রকারের পর্বত নারীপুরুষ নির্বিশেষে তারা প্রতিনিয়ত বহন করে খুব তাৎক্ষণিক সময়ের মধ্যে ধরতে চেষ্টা করবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে মারা চিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা। হাইস্কুল পর্যায়ের সেই অবিমৃষ্যকারীতায় আর কতোদিন?

টিএসসি অতিক্রম করে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান থেকে রিকশা নেবো। পঞ্চাশ টাকার রিকশা ভাড়া অবলীলায় আশি টাকা বলার পরে সংশ্লিষ্ট রিকশাওয়ালার লুম্পেন চরিত্র নিয়ে ভাবতে ভাবতে পুরনো এক বন্ধুকে দেখতে পেলাম। যতোদূর জানি সে খুব সম্ভবত সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা হতে যাচ্ছে।

তাকে কি ডাকবো? ডেকে কুশলাদি বিনিময়ের পরে রাজনৈতিক আলাপ শুরু করবো? তাহলে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়া লুম্পেনচরিত্র নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ভ কথা বলে তৃপ্তি পাওয়া যেতো।

বন্ধুকে ডাকলাম না। তাহলেই তো সেই আলাপ প্রলাপে গিয়ে গড়াবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:২৭

বিজন রয় বলেছেন: আপনার লেখায় সবসময় একটি বড় থিম থাকে।
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.