নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈশ্বর, বিশ্বায়ন, প্রেম, সড়ক ও অন্যান্য

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭

১। ঈশ্বর বললেন এবারে আলো উপস্থিত হোক। পৃথিবীর জন্ম হলো। মতান্তরে, ঈশ্বর বললেন ‘পড়ো’।

২। চৈত্র মাসের বর্ষাস্নাত একটি দুপুর। আকাশে মেঘ করে আছে। বৃষ্টি এসেছে। পুনরায় আসবে এমন আভাস আবহাওয়ায়। শীতল বাতাস। শরীরের প্রতিটি কোষকে যা স্পর্শ করে যায়। তাঁতীবাজারে পানের দোকানদার হাশেম মিয়া উত্তেজিত কন্ঠে বলে যায়, “এক গ্রুপ থেইকা সেমিফাইনালে উঠছে ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অন্য গ্রুপ থেইকা উঠলো নিউজিল্যান্ড আর ইন্ডিয়া। এশিয়ার দলগুলার মধ্যে খালি ইন্ডিয়াই সেমিফাইনালে উঠবার পারছে। কারবার দেখো মালাউনগো।”

৩। মধুর ক্যান্টিনে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের প্রেসিডেন্ট এসেছে। চারিদিকে হইহুল্লোড়। সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনের মধ্যম সারির নেতা-কর্মীরা আসছে এবং যাচ্ছে। প্রত্যেকের মুখেই বিগলিত হাসি। এর কতোটুকু স্বতঃস্ফূর্ত আর কতোটা ইম্প্রোভাইজেশনের খেলা হাসিমুখগুলোই সবচেয়ে ভালো জানে।

৪। রাখী মিষ্টির সাথে চা খেতে খেতে আগত এবং প্রস্থানরত নেতা-কর্মীদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলো।

৫। টুটুল রাখীর, তার চার বছরের প্রেমিকার আচরণকে অদ্ভুত বলে মনে করছিলো। তার কন্ঠস্বর ঝাঁঝিয়ে উঠতে নেয়। কিন্তু নিজেকে সে পরক্ষণেই সামলে নেয়। কখন কি ঘটে যায় কে বলতে পারে? এই রিস্ক নেওয়াটা ঠিক হবেনা। তাছাড়া স্থানটাও তো ট্রিকি।

৬। স্টেডিয়াম দিয়ে ওয়ারী যাওয়া যাচ্ছেনা। পুলিশ বরাবরের মতোই সেই রাস্তা রিকশাগুলোর জন্য আটকে দিয়েছে। পয়ত্রিশ বছর বয়সী রিকশাচালক মোসলেম ট্রাফিকের দিকে তাকিয়ে তার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনের চাইতেও ধীরে গালিগালাজ করে “খানকির পোলায় খালি রিকশা আটকায়। গাড়ির ড্রাইভার হের বাপ লাগে। খানকির পোলার এক লক্ষ বাপ। অর মায়রে পাইলে………

৭। মিরপুর ১০ নাম্বারের ওভার ব্রিজে প্রচন্ড ভিড়। সায়মা লোভী চোখগুলোর থেকে নিজেকে প্রাণপণে বাঁচাতে বাঁচাতে হাঁটছিলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা। চল্লিশ কি পয়তাল্লিশ বছরের শুকনো মতো দেখতে এক ব্যক্তি ঠিকই কনুই দিয়ে তার বুকের স্পর্শ নিয়ে নিলো। আশেপাশের কেউই সেই দৃশ্য দেখতে পেলোনা। কেউই নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা। সেই চেষ্টাও করছেনা।

৮। রাইফেলস স্কোয়ারের বিপরীত পার্শ্বে একটি মিনি এক্সিডেন্টে আহত ভদ্রমহিলা তার সেই ক্ষুদ্র বিপর্যয়কে মেনে নিতে অপারগ। সিএনজি ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে তার ক্লান্তিহীন কটুক্তি চলছে। আট মিনিটের মধ্যে সাতবারের মতো সিএনজি ড্রাইভার শহীদ মিয়া শুনলো সে যাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে আহত করে ফেলেছে তার স্বামী একজন কেউকেটা লোক। তার মতো সিএনজি ড্রাইভারকে যে কিনা দশ মিনিটের মধ্যে শহরছাড়া করে ফেলতে পারে। শহীদ মিয়াকে শহর ত্যাগের সম্ভাব্যতায় তেমন একটা বিচলিত বলে মনে হয়না। স্ত্রী হাসিনার সাথে তার কথা আগে থেকেই হয়েই আছে। তাদের মেয়ে টুনি পাঁচ বছরে পা দিলো। শহীদ মিয়া ঢাকা শহরে সাত বছর থেকে যেই টাকা জমিয়েছে সেই টাকায় টুনির পড়াশোনার খরচ সে অনায়াসেই বহন করতে সক্ষম।

৯। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাঙ্গন এলাকার ভিসি চত্ত্বরের সামনে মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ একজনকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি বিষোদগার করতে করতে সামনে এগুতে দেখা যায়। সে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে যেতে থাকে, “তোরা শালার কি পাস করছোস? খানকির পোলারা। বি কম পাশ দিছোস? অনার্স পাশ দিছোস? চামারের পোলা চামার। তোগো বিকম পাশ, অনার্স পাশ আমি গুইলা খাইছি। পড়াশোনার নাম নাই, খালি গলাবাজি কইরা কাটাইয়া দিলি হারামজাদা।” কার উপরে কিংবা কাদের উপরে তার এই তীব্র আক্রোশ, এই অপ্রতিরোধ্য ক্রোধের হেতু কি চারপাশের উৎসুক জনতা কখনোই জানতে পারবেনা। শুধু লোকটির দিকে চেয়ে থেকে নিজেদের মনে রসিকতাই করে যেতে পারবে।

১০। ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে অবস্থিত লাবাম্বার দোকানী আসলাম নিজের বিরক্তি চেপে রাখতে পারেনা, “এইটা বেশী বেশী। একটা মুসলিম দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে সমস্যা কি? জামাতের হরতালে ভুল তো কিছু দেখিনা।”

১১। ঈশ্বর রুষ্ট হয়েছেন। নিজের উপরে। প্রথমে আলো আসুক সেই আদেশ দেবেন নাকি মানবজাতিকে পড়বার আদেশ দিয়ে দিন দুনিয়ার যাত্রা শুরু করবেন সেই নিয়ে দ্বিধান্বিত। তাকে বেশ বৃদ্ধ দেখাচ্ছে। সাথে কিছুটা ক্লান্তও।

১২। ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে পত্রপত্রিকার বহুবিধ আজেবাজে সংবাদের বিরুদ্ধে হাশেম মিয়াকে সোচ্চার হতে দেখা যায়। “শুয়োরের বাচ্চাগো সাহস দেখছেন আপনে বারেক ভাই? মাশরাফিরে নিয়া কি সব খবর ছাপছে। মাদারচোতের পোলারা। একটা দুইটা ম্যাচ খারাপ খেলছে এই নিয়া মাশরাফিরে গাইল পাড়ে। এক বছর দলরে এই জায়গায় নিয়া আসছে কি অগো আব্বায়?” হাশেম মিয়াকে অন্যান্য দিনের চাইতেও আজকে ওনেক বেশী ক্রোধান্বিত দেখায়। ছোট ছেলে জাকারিয়ার জ্বর। একশো দুই ডিগ্রি। গতো দুই দিন যাবত। ওষুধেও কাজে দিচ্ছেনা। ছেলের মা হাসিনা ঘরে থাকলে অনর্গল স্বামীকে গঞ্জনা দিয়ে যাচ্ছে। হাশেম মিয়ার ব্যবসাপাতির অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে। নাইলে স্ত্রীকে দুই চার ঘা ঠিকই বসিয়ে দিতেন।

১৩। কালো শার্ট, কালো প্যান্ট পরিহিত ছেলেটিকে আগেও কোথায় দেখেছে রাখী। এই মুহূর্তে মনে করতে পারছেনা। অনেকক্ষণই তো হল একের পর এক ছেলেদের তাদের নেতার ঘর থেকে বের হতে দেখছে। কিন্তু এরকম স্মার্ট ছেলে আর একটিও দেখেনি। কি সুন্দর চেহারা ছেলেটির!! পোশাক থেকে শুরু করে চলাফেরা, কথাবার্তা, চাহনী সবই মনোমুগ্ধকর। এরকম ড্যাশিং ছেলে রাজনীতিতে উপরে উঠবেই। রাখী ক্রমশই মুগ্ধ হতে থাকে। টুটুলকে চার বছরে যদি এতোটুকুও শোধরাতে পেরেছে!! সেই ভ্যাগাবন্ডের মতোই চলাফেরা। আজকাল তাকে সাথে নিয়ে বের হতে রাখীর বলতে গেলে এক ধরণের লজ্জাই লাগে।

১৪। টুটুলের দিকে তাকিয়ে নিমেষেই নিজের চোখে মাদকতা এনে নিয়ে রাখী বলে উঠলো “এই চলো হাকিমের দিকে যাই। রাশিদা মনে হয় এতোক্ষণে কাজ শেষ করে ফেলছে।” ম্যাচ করে কালো শার্ট কালো প্যান্ট পরা স্মার্ট চেহারার যুবকটিকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।

১৫। আসলাম অনেক চেষ্টা করছে ভুলে থাকবার। কিন্তু কোনভাবেই ভুলতে পারছেনা। তখন সবেমাত্র কলেজে উঠেছে। তৃষাকে তখনই তার মনে ধরেছিলো। সেই শরীর। সেই ফিগার। হেঁটে গেলে পাছার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে হয় এমন। হিন্দু ছিলো। আসলামের তাতে কি যায় আসে? সে তো আর বিয়ে করতে যাচ্ছিলো না। ব্যাস কেবল……আর বেশীদূর মনে করতে পারেনা। গাল বরাবর সদূর অতীতের চড়ের সেই আওয়াজটা এই মুহূর্তের বর্তমানেও তার সমগ্রকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। পিজা সার্ভ করতে করতেও সে বুঝতে পারে মালেক ভাই তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। বেশ আগের থেকেই। আসলাম সহজ হতে চেষ্টা করে। মুখের পেশীগুলোর তেমন কোন পরিবর্তন হয়না। হাসলে হয়তো মালেক ভাই আশ্বস্ত হবে। আসলাম আরোপিত হাসি হাসে।

১৬। রাসেলের সাথে দেখা হতেই সায়মা মিষ্টি হাসি হাসলো। সেই হাসি রাসেলসহ উপস্থিত অন্যান্যরাও দেখতে পেলো।

১৭। শুধু সায়মা দেখতে পেলোনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.