নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্ল্যামার

১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:৫৬

প্রেসক্লাবে একটা মিছিল দেখতে পাচ্ছি। সংখ্যা এতোই কম যে দেখলেই মানুষ গুনে দেখবার লোভ সামলানো যায়না। গুনে দেখলাম। বারোজন। সর্বসাকুল্যে বারোজন। ইংরেজীতে টুয়েলভ। কলেজে থাকতে যিনি কেমিস্ট্রি নিতেন তিনি থাকলে অবশ্য টুয়েলভ আর টুয়েলভ থাকতোনা। টোয়ালেভ হয়ে যেতো।

দুপুরের কড়া রোদ। খুব রোমান্টিক মানুষের মুখ থেকেও ক-বর্গীয় চ-বর্গীয় গালি বেরিয়ে আসবে এই সময়ে। তা তিনি যতোই সৌম্যকান্তি সংস্কৃতির অধিকারী হয়ে থাকুন না কেন। মে মাসের দুপুর, প্রেসক্লাবের মাহাত্ম্য এখানেই। প্রথম আলো পত্রিকার মতো মানুষকে বদলে দেয়। মিছিলের দিকে একবার তাকালাম। বারোজন এসেছে মাত্র। দেখেই মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটাই দস্তুর। ইস্যুটা অবশ্য দেখে নিয়েছি। খুব সম্ভবত নার্সদের বেতনবৃদ্ধির ইস্যু। মাননীয় সরকারের কাছে নিজেদের বেতন বৃদ্ধির আকুল আবেদন। হ্যা, আকুল শব্দটি যুক্ত করতে হবে। আমরা সকলেই আকুল। কিছুক্ষণ আগে আমি নিজেই যেমন আকুল হয়ে উঠেছিলাম কাটাবনে যাওয়ার জন্য। শর্মা হাউজে অনেকদিন যাওয়া হয়না। নিজেই ঘ্যানঘ্যান করে বাণীকে আমার সাথে সেখানে যেতে রাজি করিয়েছি । নিজে খাওয়াবো এই টেম্পটেশনে।

কিন্তু এই রোদে ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে আটকে থাকতে থাকতে ক্রমশ শর্মার প্রতি আমার নিজেরই টেম্পটেশন কমে যাচ্ছে। আমরা দুইজনে বসেছি বামদিক থেকে চার নাম্বার সিটে। কিছুক্ষণ আগে এক মলম বিক্রেতা বাসে উঠে বেশ ক্যারিকেচার দেখিয়ে গেলো। তারপর থেকেই অনুভব করছি বাসে থেকে প্রতিটা মানুষের গায়ের ঘামের গন্ধ অবর্ণনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। নিজেরটা পরখ করে দেখবার দুঃসাহসও করছিনা এই ভয়ে।

“ভাই দেখেন”, বাণী খুব স্বাভাবিক কথাটাও উত্তেজিত স্বরে বলে থাকে। যেন এই বুঝি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিতে যাওয়া কোন ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে চলেছে। প্রথমে বাণীর মুখের দিকে তাকিয়ে তারপরে তার ডিরেকশন অনুযায়ী লক্ষ্যস্থানের দিকে তাকালাম। দেখলাম হাই তুলতে থাকা এক পুলিশকে প্রেসক্লাবের পেছনে যেই গ্রিলগুলো আছে তার একটায় বসে থাকা একটা বানর খুবই মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আমি মনোযোগ দিয়ে দেখছি হাই তুলতে থাকা পুলিশটিকে। কোন বোয়াল মাছ ঘটনাস্থলে থাকলে লজ্জিত হতো।

আচ্ছা এই মিছিলে মাত্র বারোজন কেন? গাড়ল কোথাকার, নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে সম্বিত ফেরানোর চেষ্টা করি। তবে মনে মনে। বাসশুদ্ধ লোকদেরকে নিজের সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন জানাবার কোন অর্থ হয়না। সম্ভাব্য কারণ যে কোনটাই হতে পারে। প্রসেস অব এলিমিনেশন সূত্র অনুযায়ী এগোলে প্রথমে ধরে নিতে হয় বাংলাদেশে নার্সদের সংখ্যা মাত্র বারোজন। এইটাকে ঝটপট নাকচ করে দিলে আসে নার্সদের বেতনবৃদ্ধির ইস্যূটা মাত্র বারোজনকে নাড়া দিয়েছে। তারপরে সিরিয়াল অনুযায়ী একের পর এক কারণ আসতে আসতে শেষে পাওয়া যায় আন্দোলনটায় কোন গ্ল্যামার নেই। হ্যা, গ্ল্যামার হবে শব্দটা। জি এল এ এম ও ইউ আর। এটা মিসিং। শাহবাগে চক্রাবক্রা শার্ট পরেই হোক কিংবা হিসাব নিকাশ কষে বাহাদুর শাহ পার্কের অভিমুখে দুস্থ দুস্থ ভাব নিয়ে মলিন প্যান্টে দাঁড়িয়ে থাকাই হোক এক ধরণের গ্ল্যামার লাগবেই আন্দোলনে। যারা আন্দোলন আর লাক্সের সাবানের বিজ্ঞাপনের একীভূত হবার বাস্তবতায় আস্থা রাখেনা তাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই। এই বাস্তবতা আর কেউ না বুঝে থাকুক বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ সাংবাদিকেরা ঠিকই বোঝে। যেহেতু তাদের কেউই এখানে নেই তাই নার্সদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের কোন ভবিষ্যৎ নেই।

আচ্ছা, শেষ কবে জোৎস্না হয়েছিলো? মনে করতে পারিনা। জোৎস্নার গ্ল্যামার নিয়ে কার মুখ থেকে যেন এক মজার কথা শুনেছিলাম। যদিও বেশ হিমুএস্ক। তা হলো জোৎস্নার আলোতে আন্দোলন সমাবেশ করলে তার সফল হবার সম্ভাবনা বেশী বেড়ে যায়। কোন এক আড্ডায় শুনেছিলাম। প্রত্যেকে হো হো করে হেসে উঠেছিলো। শান্ত, বাণী, আমি। আশ্চর্য !!! কথাটা কে বলেছিলো সেটাই মনে করতে পারছিনা।

তিনটা পুলিশ মিছিলের সামনে দিয়ে ক্যাটওয়াক করে গেলো। তাচ্ছিল্যের সাথে। এদিকে বাস ছেড়ে দিয়েছে। হাইকোর্ট দেখতে দেখতে মনে হলো সমগ্র দৃশ্যটায় গ্ল্যামারের বড্ড অভাব। আমি বাণীর দিকে তাকিয়ে ট্রাফিক জ্যাম ছেড়েছে তাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা উচিত এই সংকেত দেই। অনুক্ত।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৪১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: গল্পেও গ্ল্যামারের বড্ড অভাব মনে হচ্ছে

২| ১৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:২২

আরিফ রুবেল বলেছেন: হুম গ্ল্যামার ছাড়া আন্দোলন জমে না। আন্দোলনে গিয়ে যদি সেলফি তোলা না গেল, দুই একবার মিডিয়ায় চাঁদ মুখখানা প্রদর্শিত না হল তাহলে কিসের চুল চামড়ার আন্দোলন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.