নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে হরোস্কোপে মুখ দেখা যায়না

২০ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪

আমার যখন বিশ বছর বয়স, তখন একদিন হেমন্তের এক সন্ধ্যায় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে (অবশ্যই একা) আমার মনে হয়েছিলো যে চল্লিশ বছরের বেশী আর একটা দিনও বাঁচতে চাইনা। দিন শব্দটার শেষে যুক্ত ‘ও’ টা খুব স্পষ্টভাবেই চল্লিশ বছরের বেশী বেঁচে থাকবার ব্যাপারে আমার অনীহাকে মূর্ত করে তোলে। অনেক অনেকদিন পর আজকে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এই সময়ে, যখন সেই হেমন্তের সন্ধ্যার পরে আরো আটটি বছর কেটে গেছে- যখন আমার বয়স বিশ থেকে আটাশে চলে এসেছে- বাঙ্গালী যুবকদের যেই বয়সে খাটাশের স্বভাবপ্রবৃত্তিগুলো ক্রমশ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। স্মৃতির রিওয়াইন্ড করার এই ব্যাপারটাকে কাব্যিকভাবে দেখতে গেলে ‘আট বছর আগের এক দিন’ এভাবে লিখতে হয়।

আট বছর পেরিয়ে গেছে। তবুও চল্লিশের বেশী আর একদিনও বাঁচতে চাইনা- বাঁচতে চাওয়ার এই অনাগ্রহের ব্যাপারটায় আগ্রহ একরত্তিও কমেনি। সেখানে কোন মেদ জমেনি। ইচ্ছা, যা কিনা এখনো সংকল্পে পরিণত হয়নি তা শুরুতে যেমন নির্মেদ ছিলো এখনো তাই আছে। নিন্দুকেরা কিংবা যারা জীবন থেকে আজীবন পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে সুযোগ পেলেই অন্যদের জীবনবাদীতার গল্প শোনাতে ভালোবাসে তাদের কাছে কোন দাবী কিংবা প্রত্যাশার প্রত্যাশা রাখিনা। তবে এতোটুকু তাদের বলাটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে যে চিল যেভাবে উড়ে এসেছে এতোটা কাল আজও সেভাবেই উড়ে। আমি নিজের চোখে দেখেছি কিছুক্ষণ আগে। মানুষকে, তার স্বপ্ন, স্বাধ, লোভ, হতাশা, মৃত্যু সবকিছুকেই ক্রসফায়ারে দেওয়া সম্ভব। আইনগতভাবেই। আইনজীবীদের কিচ্ছুটি বলার নেই। কিন্তু যেভাবে চিলের আকাশে উড়ানোকে ক্রসফায়ারে দেওয়া যায়নি সেভাবে আমার উপরিউক্ত ইচ্ছাটিকেও ক্রসফায়ারে দেওয়া সম্ভব নয়। এই সংকল্পটিকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার সামর্থ্য কারো থেকে থাকলে সেটা একমাত্র আমার নিজেরই আছে। বিনা বন্দুকেই।

কিছুদিন আগে এক বন্ধুর সাথে, সেই বন্ধুর নাম কি সে এক অপ্রয়োজনীয় তথ্য যা এখানে জানাতে অনিচ্ছুক বিধায় উল্লেখ করলাম না, পথে হাঁটছিলাম। চারুকলার শরীর যতোটুকু এখনো বেঁচে আছে সেটা ঘেঁষে। হালকা পাতলা গড়নের এক ভদ্রলোকও সেই রাস্তা ধরে হাঁটছিলো। তার পরনের সবুজ রঙের শার্টটা দেখে এতো ভালো লেগেছিলো যে মনে হচ্ছিলো যদি লোকটার কাছে এগিয়ে যাওয়া যেতো; তার সামনে গিয়ে তার সাথে নিজের পরনের শার্টটি বিনিময়ের প্রস্তাব দেওয়া যেতো তবে কেমন হতো? বন্ধুকে ইচ্ছাটার কথা বলা মাত্রই সে বলে উঠেছিলো আমার সাথে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করাটাই নাকি বিপদজনক। কোনদিন পাবলিকের মার খেতে হয় কে জানে। খুবই ন্যায্য আশঙ্কা। এতোটাই যে বন্ধুর মুখে সেই কথা শোনার পরে তার দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি দিয়ে রাস্তা পার হয়ে বারডেমের রাস্তায় ফার্মগেটের বাসের জন্য অপেক্ষা করা ব্যতীত আমার আর কিছু করার ছিলোনা।

আমি সচেতনভাবে পত্রিকা পড়ার বদঅভ্যাস ত্যাগ করেছি পাঁচ বছর হলো। আজকে কিছু পরিত্যাগ করা বদঅভ্যাসের কাছে নতুন করে হাত পাতবো বলে পত্রিকা খুললাম। চিরন্তন জনগণসম্পৃক্ত কিছু খবর যেমন প্রধানমন্ত্রীর বাণী, লেটেস্ট আলোচিত রেপ কেসের ঘটনা, ব্যবসায় বিনিয়োগ, শিল্পবান্ধব রাষ্ট্রের দিকে ধাবমান জাতির ভবিষ্যৎ, চলমান রোজার সময়ে কিভাবে পোশাক পরলে নারীরা আরাম এবং সৌন্দর্য উভয়ই বজায় রাখতে সক্ষম হবে ইত্যাদি ইত্যাদির উপরে গভীরভাবে চোখ বুলানোর পরে রাশিচক্রে মনোনিবেশ করলাম। তারিখ সূত্রে আমার জোডিয়াক সাইন ক্যাপ্রিকর্ন। মকর। প্রতীক যা বাঙ্গালীর প্রবৃত্তির সাথে চমৎকারভাবে মিলে যায়ঃ ছাগল। শনি দ্বারা আচ্ছন্ন। সবচেয়ে মঙ্গলজনক সংখ্যাঃ ৮, এটসেটরা এটসেটরা এটসেটরা।

কি পড়তে পেলাম রাশিচক্রে? আপনার দিনটি মঙ্গল যাবে। অর্থের সাথে সংযোগ ঘটবে। সামাজিক পরিমন্ডলে সম্মাননা বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে হবে কেননা তার অবস্থা সঙ্গীন হবার সম্ভাবনা প্রবল। তবে মন ভালো থাকবে। প্রিয়জনের চিঠি পাবেন। ফেসবুকে টালিউডের নায়ক প্রসেনজিতের ছবি নিয়ে একটি মেমে কয়েক বছর আগে একবার ফেসবুকে চোখে পড়েছিলো যেখানে প্রসেনজিৎ গম্ভীর মুখে পোজ দিয়ে আছেন; নিচে লেখা ‘হালকা মুতে শুয়ে পড়।’ এখানে পড় শব্দটি পড়তে হবে তুই অর্থে। অনেকদিন পরে মেমেটির তাৎপর্য্য উপলব্ধি করতে পারলাম। এর প্রয়োজন ছিলো।

সেই বন্ধুটির কথা বলছিলাম না যে কিনা আমার সাথে রাস্তায় চলাফেরা করার সময়ে পাবলিকের সম্ভাব্য পিটুনীর আশঙ্কায় হিন্দু ধর্মালম্বী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ আল্লাহ করে থাকে? সে চাকরীর জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলো। বেলজিয়ামের মুদ্রার নাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিষয়ে রাজাউজির মারার পরে সে জানতে পারলো যে সেই অফিসে নিয়মিত ইয়েস স্যার ইয়েস স্যার করবার জন্য তার পাঁচ লাখ টাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। নইলে? সরি, নো ভ্যাকেন্সী। জানার কোন শেষ নেই সেই সন্ধ্যায় সে আরো জানতে পারলো তার প্রেমিকা পরিবার থেকে আসা বিয়ের প্রস্তাবে সানন্দে রাজি হয়ে গেছে। আমার সেই বন্ধুটির প্রতি কিছু হয়তো মমতা পোষণ করে থাকবে মেয়েটি। তাই তারা আর কখনো একে অপরের সাথে যোগাযোগ করবেনা এই মর্মে অলিখিত প্রতিশ্রুতি করে নিয়েছিলো। আমার সেই বন্ধুর জোডিয়াক সাইনঃ বৃশ্চিক। স্কোর্পিও। সবচেয়ে মঙ্গলজনক সংখ্যাঃ ৯, সেদিন স্কোর্পিওর হরোস্কোপে লেখা ছিলোঃ আজকের দিনটি অত্যন্ত শুভ যাবে। চাকরী বাকরী সংক্রান্ত ইতিবাচক সংবাদ পাবেন। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাবেন এটসেটরা এটসেটরা এটসেটরা।

কি বুঝলেন তেলতেলে হাসির অধিকারী জীবনবাদীরা? আপনাদের হরোস্কোপ দেখতে ইচ্ছা করে কখনো কখনো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:১৭

মহসিন ৩১ বলেছেন: তাই তারা আর কখনো একে অপরের সাথে যোগাযোগ করবেনা এই মর্মে অলিখিত প্রতিশ্রুতি করে নিয়েছিলো।"
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.