নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবিষ্কার

২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৫৭

ঘরে এসে শার্ট বদলাতে বদলাতে প্রীতম বিষয়টা আবিষ্কার করলো। এমনই এক বিষয় যা বহু আগেই তার মগজের নাগালে আসবার কথা ছিলো। কিন্তু আশ্চর্যরকমভাবে সেই সত্য তার মগজের ফাঁক গলে এতোদিন পালিয়ে ছিলো।

আজ, এতো দীর্ঘ অতিক্রান্ত সময় পরে যা সে বুঝতে পারলো।

শেষ কিছুদিন সে ঘরেই থেকেছে। স্বেচ্ছা নির্বাসন। পরিবারের মানুষদের বিস্মিত করে। যদিও কেউ তার এই ঘরে আটকে থাকবার বিষয়টি নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলেনি। সে নিজেও আগ বাড়িয়ে কিছু জানাবার প্রয়োজনবোধ করেনি। নিজের ঘরেই সন্তুষ্টির সাথে সীমাবদ্ধ ছিলো। খাওয়া, গোসল, নিদ্রা, মাস্টারবেশন সবই নিয়মমাফিক চলেছে। চিরাচরিত কিছু অপরিবর্তনীয় অভ্যাসের মতো।

গতোবছর জন্মদাতা-জন্মদাত্রীর সাথে সে কক্সবাজারে গিয়েছিলো। সমুদ্র দেখবে বলে। তাদের একসাথে কোথাও যাওয়া হয়না প্রীতমের মায়ের সেই ধারাবাহিক অভিযোগের পরে সেই সফরে যাওয়া হয়েছিলো। সমুদ্র তো সমুদ্র আরো কতো কি যে আবিষ্কার করা গিয়েছিলো সেই সমুদ্রযাত্রায়। প্রীতম সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক যা আবিষ্কার করেছিলো সেটা হলো নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝেও মানুষ কতোটা কুৎসিত হতে পারে। তাও স্বচ্ছস্ফটিক সাবলীলতায়। মৃত হয়ে আসা এক বিকালে; সূর্যের মনোমুগ্ধকর লাল রঙটাও যখন সেদিনের জন্য ইন্নালিল্লাহ উচ্চারণ করবে করবে, এমন সময়ে দেখা গেলো শর্টস পরিহিত এক যুবক তার প্রেয়সীর হাত ধরে সমুদ্রের ধারে হাসতে হাসতে দৌড়ে চলেছে। সেই হাত অবশ্যই প্রেমিকার হাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। যখন হাতের সেই চঞ্চলতা কোমর থেকে জনসমক্ষেই উপরের নাজুক বিপদসংকুল জায়গাগুলাতে বিস্তৃত হচ্ছিলো সেই সূর্যডোবা মুহূর্তে প্রীতম দেখতে পেয়েছিলো লোকটির, মানে দাঁত বের করে হাসতে থাকা যুবকটির শর্টসে একটা বড় আকারের গর্ত। সেখান থেকে লোকটির পুরুষাঙ্গ স্পষ্টতই দৃশ্যমান। সেই অবস্থাতেই যুবকটি প্রেয়সীকে নিয়ে সমুদ্রের পানিতে আছড়ে পড়লো।

প্রীতম সেই দৃশ্য দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলো। সমুদ্রের শরীরের সাথে সংলগ্ন এরকম কোন কুৎসিত দৃশ্যের কথা আগে কখনো কারো মুখ থেকে সে শোনেনি। কতো পরিচিত মানুষই তো অজস্রবার সমুদ্রসফরে গেছে। একজনও এরকম কোন দৃশ্য দেখেনি? অবিশ্বাস্য। মাত্রই যা দেখলো প্রীতম পরিষ্কারই বোঝা যায় এরকম দৃশ্য প্রাত্যহিক। ব্যতিক্রম কিছু নয়।

শার্ট বদলে একটা আরামদায়ক টি-শার্ট পরে ধাতস্থ হলো প্রীতম। চা খাওয়ার জন্য মা ডেকেছে। ইদানিং লক্ষ্য করেছে সে তার বাবা অবসর নেওয়ার পরে চা খাওয়ার জন্য হলেও তাকে একই টেবিলে চা খেতে ডাকা হয়। বিষয়টা তার মন্দ লাগে এমন নয়। চা খেতে খেতে হালকা কিছু কথাবার্তা হয়ে থাকে পিতা, মাতা এবং পুত্রের মধ্যে। বহুল ব্যবহৃত প্রজন্ম দূরত্ব কমে কি বাড়ে জাবেদা খাতায় সেই হিসাব তাদের কেউই কখনো করেনা। কিন্তু এই কথাটি সত্যের কোন অপলাপ নয় যে তারা তিনজনই একত্রে চা পানের সেই সময়টুকু উপভোগ করে।

চা খেতে খেতে প্রীতমের সেই দৃশ্যটি আবারো মনে পড়ে। না, সমুদ্রসফরে জনৈক যুবকের শর্টসের ফাঁক দিয়ে পুরুষাঙ্গ বেরিয়ে আসবার সেই ডি-মরালাইজিং দৃশ্যটি নয়। আজকে যা দেখলো। যেই দৃশ্য স্মৃতিতে, চোখে ভাসবার সময়কালে একেবারে টাটকা সেই দৃশ্যটি। অত্যন্ত সাধারণ সেই দৃশ্য। কিন্তু এই প্রথম তাকে অন্য চোখে আবিষ্কার করা।

রোজার মাস চলছে। রাতেরবেলায় সমগ্র রাস্তা সঙ্গত কারনেই বেশ শূন্য থাকে। কিছু মানুষ তবুও নিজ নিজ আনন্দে কি প্রয়োজনে তখনো চলাফেরা করে। তবে তাদের থেকেও বেশী সক্রিয় থাকে মার্কেটগুলো। গতো বিশ বছরে দেশের জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে যা সমানতালে বেড়েছে তা হলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং মাঝারি, বড় আকৃতির উজ্জ্বল মার্কেট যার শরীরে উচ্চমধ্যবিত্তের সুস্পষ্ট ছাপ। যেই মানবসন্তানের ঘ্রাণশক্তি কুকুরের মতো তীব্র নয় সে পর্যন্ত তার আশপাশ দিয়ে গেলে মার্কেটগুলো থেকে আসা সেই জেল্লার গন্ধ নাকে পাবে। প্রতিবার রমজান মাসের মতো এবারেও দোকানগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ কোন রঙ নেই সেই লাইটিঙে? প্রীতম রিকশা দিয়ে যেতে যেতে তেমনই একটি দোকানের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলো দোকানটির লাইটিঙ এমনই এক আবহ তৈরী করেছে যার কারনে আকাশে থাকা মস্ত বড় ডিম সাইজের চাঁদটাকে মর্মান্তিকভাবে অত্যন্ত নিষ্প্রভ দেখাচ্ছে। নৈসর্গিক অন্যান্য ছোটখাটো সৌন্দর্যও যা কিছু আছে সেগুলোও ম্লান হয়ে পড়েছে। আলোকসজ্জার কৃতিত্বে নয়, তার দীনতায়।

রিকশা করে জায়গাটি পার হতে হতে এক দশক আগের সময়ে রিওয়াইন্ড করে গিয়েছিলো প্রীতমের স্মৃতি।

“জানো অয়ন আমাকে পরশুদিন বলছে যে সে আমাকে ভালোবাসে। আমি কোন জবাব দেইনাই।”

নীরবতা।

“কি হইলো? তুমি কিছু বলতেছোনা কেন? আমার কথা মন দিয়ে শুনতেছো?”

“তোমার কথা মন দিয়েই শুনতেছি। এখানে আমি কি বলবো? যা বলার তোমাকে বলতে হবে।”

“আশ্চর্য!” সোমা বিস্ফোরিত হয়ে গিয়েছিলো। “তোমার এখানে কিছুই বলার নাই?” একটা ছেলে আমাকে প্রোপোজ করে বসলো আর তুমি কিছু বলবানা? তোমার সাথে আমার রিলেশন আছে এই কথা কিন্তু অয়ন জানে। আমিই তাকে বলছিলাম।”

বুদ্ধিমান কি নির্বোধ যে কেউই এই সত্য সম্পর্কে অবগত যে সতেরো আঠারো বছর বয়সে যে কোন বিষয়ে বিশেষত প্রেমের ইস্যুতে মগজে জ্যাঠামীর সামান্যতমও আশ্রয় হয়না। ভালো কি মন্দ যেই ভাবনারই উদয় হয় সেটা আসে ইন্সটিংক্ট থেকে। অন্য কাউকে হোক কি নিজেকে হোক, সাজেশন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে যাই মাথায় আসে সেগুলো ইন্সটিংক্ট নির্ভর হয়। প্রীতমের ইন্সটিংক্টে যাই এসেছিলো সেই সাজেশন সোমা নিয়েছিলো। সাজেশন আদান প্রদানের এক মাসের মাথায় অয়ন আর সোমার সম্পর্কটা শুরু হয়েছিলো বলে পরে জেনেছিলো প্রীতম।

এগারো বছর পরে একদিন রাতেরবেলায় বেরিয়ে মার্কেটের আলোকসজ্জা দেখে বাড়ি ফিরে শার্ট বদলাতে বদলাতে প্রীতম আবিষ্কার করলো মার্কেটের আলোকসজ্জাতে যেভাবে আশেপাশের ছোটখাটো নৈসর্গিক সৌন্দর্য ধুয়ে মুছে যায় এই অভিজ্ঞতা আসলে তার এই প্রথম নয়। অতীতেও সে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। তবে সেটা ছিলো অভিজ্ঞান।

বিষয়টা এই প্রথম আবিষ্কার করলো প্রীতম। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে শার্ট বদলাতে বদলাতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.