নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নগর সম্পর্কে কিছু কথা যা আমি বলবোই

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:৪১

দর্শন কি দৃষ্টিভঙ্গী; একটু ভারিক্কি চালের মানুষ ব্যবহার করবেন প্রথম শব্দটি, সহজাত সপ্রতিভ যিনি তিনি ব্যবহার করবেন দ্বিতীয় শব্দটি আসলে পথে চলতে চলতেই বদলে যায়। এই যেমন ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে চলে আসলে আমরা পরিণত হই সেই মানুষে যার সাথে আমাদের দৈনন্দিন সংযোগ অত্যন্ত কম। যেই মানুষটি যে কোন সাধারণ দৃশ্য দেখলেই নিজেকে অভয় দেয় এই বলে যে স্রেফ বেঁচে থাকাটাই এক আনন্দদায়ক ঘটনা। এই বাস্তবতার মাঝে কোন কমা, সেমিকোলন ইত্যাদি নেই। থেকে থাকলেও তা ধর্তব্যের মধ্যে পড়েনা।

“তোমারে কাল বিকালে ফোন দিছিলাম। ধরোনাই কেনো?”

“তখন ঘুমাইতেছিলাম তো। অফিস থেইকা আইসা কতো টায়ার্ড হইয়া যাই জানোই তো।”

“তাই বইলা ফোন ধরবানা? এমনে পইড়া পইড়া ঘুমাইবা? বিয়ের পরেও তুমি অফিস থেইকা ফিরে এমনে ঘুমাবা?”

“হা হা হা। তখন তো অন্য কেস। দুইজনে থাকলে কি আর ঘুম হবে?” (চোখ পাকিয়ে)

আমরা সেই সময়ে কানে হাত দিয়ে থাকিনা। রবীন্দ্র সরোবরে অবশ্যই সেটা করিনা। নিয়ম নেই। বরং যতোটা সম্ভব কান খাড়া করে রাখতে চেষ্টা করি। আমাদের কানযুগল ক্রমশ উঠতে থাকে তো উঠতেই থাকে।

আবার নিউমার্কেটে চলে আসলে কন্ঠস্বর স্তিমিত হয়ে আসে। আমাদের অবশ্যই। চারিদিকে তো হইহল্লা, কান ফাটিয়ে দেয়না এমন চিৎকার চেঁচামেচি তবুও আমাদের গলা নেমে আসে। গভীর কোন ষড়যন্ত্রহীনতার সাথে মিতালী না করেই।

“মামা কতো নিবা সিডিটা? একশো? বেশী বইলা ফালাইছো। গাঁজার পুরিয়া এখনো দশ টাকাই আছে কিন্তু। সত্তর টাকায় দিতে পারলে দাও। নাইলে নাই।”

“মামা, সত্যজিৎ রায়ের গল্পের বইটা কতো নিবা? সাড়ে তিনশো? কিনার দাম বলো। একশো আশিতে দিতে পারলে দাও। আমারে এইসব বইলোনা। দশ বছর হইলো নীলক্ষেত থেকে বই কিনি। তুমি আমারে দামের কথা শিখাইয়োনা। একশো আশি? দিবা?”

পিঠটা ঘুরিয়ে অতঃপর আমরা একটু চিন্তা করি। গ্লোরিয়া জিনসে যাবো। ধানমন্ডিতে। ব্যাগের দিকে একবার তাকাই। চেহারা কেমন হয়েছে ব্যাগটার? এটা নিয়ে গ্লোরিয়া জিনসে ঢুকলে লোকে হাসাহাসি না করলে হয়। ধুরো, ব্যাগটায় ধুলা দেখা যাচ্ছে। একটু ঝাড়া দরকার। অতঃপর আমরা ব্যাগ ঝেড়ে মনঃস্থির করে ফেলি রাস্তাটা পার করতে হবে। এক নাম্বার গেটের একটু সামনে থেকে; যেখান থেকে ২৭ নাম্বারগামী বাসগুলো এসে দাঁড়ায় দুরন্ত গতিতে চলে যাওয়ার নিমিত্তে সেখান থেকে একটা রিকশা ঠিক করি। যেই রিকশাওয়ালা ভাড়া চল্লিশ টাকার বেশী চায় তাকে সর্ব শক্তি খরচ করে একটা চড় দেওয়ার বাসনাকে দমিত রেখে আমরা অবশেষে রিকশায় চেপে বসি। যেই রিকশাওয়ালা চল্লিশ টাকা চেয়েছে তার রিকশাতে।

রিকশাওয়ালা ঢাকা কলেজের ছেলেপেলে, পার্শ্ববর্তী সিএনজি এবং ২৭ নাম্বারের উদ্দেশ্যে গমনকারী দ্রুতগতির বাসগুলোকে সামলেসুমলে রিকশা নিয়ে এগোয়। কিছুক্ষণ আগেই সায়েন্স ল্যাবের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে যেই শ্লথগতিতে আমরা নীলক্ষেত এসেছিলাম। ধুলোময় ব্যাগ কাঁধে করে।

রিকশায় উঠে হাওয়া খেতে খেতে (ঢাকা শহরে হাওয়া যতোটুকু পাওয়া যায় ততোটুকুই আর কি) আমরা আবিষ্কার করি আমাদের ব্যক্তিত্ব কিছুক্ষণ আগেও যেমন নিষ্প্রভ ছিলো; ঝিমিয়ে পড়া গলায় আমরা যেভাবে নীলক্ষেতে জনৈক বইয়ের দোকানদারের সাথে কথা বলছিলাম সেই অপ্রতিভতা থেকে আমাদের আপগ্রেডেশন হয়েছে। আমরা এখন সদাপ্রস্তুত। মেট্রোপলিটন সিটিতে বসবাস করতে হলে যেমনটা আবশ্যক। ঠিক সেরকম।

আমাদের দর্শন কি দৃষ্টিভঙ্গী; যা বলছিলাম বদলাতে শুরু করেছে। গ্লোরিয়া জিনসের প্রত্যক্ষ কি পরোক্ষ কোন অবদান থেকে থাকলেও থাকতে পারে। হু কেয়ার্স?

আমাদের রিকশাওয়ালা ততোমধ্যে সায়েন্স ল্যাবের ট্রাফিক জ্যাম অতিক্রম করে ফেলেছে। বাহ, দক্ষতা আছে বটে লোকটার। কেমন স্মার্টলী জ্যামটাকে কাটিয়ে সামনে চলে গেলো। চাইলেই কিন্তু পুলিশ ফাঁড়ির সরু রাস্তাটায় রিকশা ঢুকিয়ে ফেলতে পারতো। বেশীরভাগ রিকশাওয়ালারাই মূল সড়কের জ্যাম এড়াতে যেই নতুন জ্যামে আটকা পড়তে ভালোবাসে। কিন্তু এই লোক সেটা করলোনা। স্মার্ট আছে। নিশ্চয়ই অনেকদিন হলো ঢাকা শহরে রিকশা চালায়।

ভাড়া দেওয়ার সময়ে একবার রিকশাওয়ালার দিকে ভালোভাবে তাকাতে হবে। আমরা মনে মনে মনঃস্থির করি।

নির্বিঘ্নে, বাধাবিপত্তিহীনভাবে রিকশা ধানমন্ডি ১৫ নাম্বারের কাছে চলে আসতে আসতে রিকশাচালক সম্পর্কিত যা কিছু তন্ময়তাকে আমরা প্রশ্রয় দিয়েছিলাম সেগুলা নিভে আসতে থাকে। আমাদের প্রশ্রয়েই। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী আরেক দফা বদলাতে বদলাতে গ্লোরিয়া জিনসের সামনে এসে রিকশাটি থমকে দাঁড়ায়। তিনবার টুংটাং শব্দের জলতরঙ্গে আমরা একবার আকাশের দিকে তাকাই।

বেশ ঝকঝকে দেখতে। আমাদের মতোই মেট্রোপলিটন সিটিতে বসবাসের উপযুক্ত হয়েছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:১৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লিখেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.