নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথোপকথন

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:২৩

কেমন আছেন আপনে?

আছি মোটামুটি। স্যাডিস্ট হবার পথে। - আশিকের কন্ঠস্বরে চাপা হিউমার আর চাহনীতে অভ্যস্ততা এর কোনটাই শাহেদের মস্তিষ্ক এভয়েড করলোনা।

হা হা হা, স্যাডিস্ট আপনে সহজে হবেন না। যেহেতু সচেতন আছেন।

আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত হইতে পারলে একটু স্বস্তিতে থাকতে পারতাম। কিন্তু কনফিউজড বলে ঝামেলা পাকাইয়া ফালাই। নিজের সাথে, অন্যদের সাথে। - আশিকের ভাষায় ক্লান্তির ছাপটা স্পষ্টই বোঝা যায়।

শাহেদ কি বলবে ভাবতে একটু সময় নেয়। এই ধরণের কথোপকথন বেশ ডেলিকেট। প্রায় প্রতিটা কথাই বলার আগে পরে চিন্তাভাবনা করে বলা দরকার। তার নিজের জন্যেও। নিজস্ব অভিজ্ঞতায় সে দিনে দিনে বুঝতে পারছে মানুষে মানুষে প্রাত্যহিক যেই কথোপকথন, সেটা অনেক বেশী গুরুত্বের দাবী রাখে। শব্দ, ভাষা, এইসব হলো রক্তপাতহীন যুদ্ধের মতো। মানুষের উপরে এর আফটার এফেক্ট অনেক অনেক গভীরে প্রবেশ করে। বিনা বাঁধায়। ততোমধ্যে নিজেকে, অন্যকে বুঝে নিতে অনেক দেরী হয়ে যায়।

শাহেদ সিগারেট ধরিয়ে কপাল কুঁচকে ভাবে। চোখে ধারালো তবে ক্রুঢ়তামুক্ত দৃষ্টি এনে সহজভাবে বলতে শুরু করে – বুঝলেন পরশুদিন রহমান সাহেবের এক ফেসবুক পোস্ট পড়লাম। সেই লেভেলের বিনোদন।

কোন রহমান সাহেব? – রহমান সাহেবকে স্মরণের সকল প্রচেষ্টাই তার ব্যর্থ হয়ে যায়।

আরে, পুলিশ অফিসার। পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশের পিপলের ব্লু আইড ফেবু সেলিব্রেটি। - শাহেদের বাক্যমালায় সহজাত উইট।

এবারে আশিককেও সেই হিউমার স্পর্শ করে। সে বলে উঠে – ও আচ্ছা আচ্ছা। ল এন্ড অর্ডার মেইনটেইনেন্সের অগ্রপথিক। ফেসবুকে যার বিচরণ ছাড়া জাতি জানতেই পারতোনা যে পুলিশেরও একখানা আস্ত হৃদয় আছে, যা কিনা কোমল?

হা হা হা, সেই। পজিটিভিজম নিয়া সেই এক পোস্ট ফাঁদছে। হাজারে হাজারে লাইক। - শাহেদ সিগারেটে একটা লম্বা টান দেয়।

ঠিকই আছে। এরা কোমল মাখন মোলায়েম ভালো ভালো জিনিস না গিলাইলে পাবলিককে কে দেবে আশা? কে দেবে ভরসা? – আশিকের কন্ঠে শ্লেষের পরিমাণ বেশ তীব্র ছিলো। সম্ভবত তাই একটু দূরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপরত দুইজন মধ্যবয়স্ক লোক তার দিকে অবাক হয়ে তাকায়।

এদের সাথে ডায়লগে যাওয়াটা মেলা বিপদের আছে। এদের যেই বিশাল ফ্যান ফলোয়িং তারা আপনার তলোয়ার হাতে নিয়া ওস্তাদের হইয়া ঝাঁপাইয়া পড়ে।

হা হা হা হা। আপনে এদের পোস্টে কমেন্ট করেন কি কামে? এই প্রশ্নটা আপনারে জিগামু ভাবছিলাম। এখন কথায় কথায় মনে পইড়া গেলো। - আশিকের কন্ঠস্বর এবার গড়পড়তা ডেসিবেলে।

আর বইলেন না। সেইদিন মেজাজ বেশ বিলা আছিলো। কেমনে বিষয়টারে ডিল করুম বুঝতে পারতেছিলাম না। এমন সময়ে ফ্রেন্ডলিস্টে একজনে সেই পোস্ট শেয়ার দিলো। দেইখা মেজাজ হইলো আরো খারাপ। ধুপ কইরা মেইন পোস্টে গিয়া তারপরে সময় নিয়া একটা লম্বা কমেন্ট করলাম। এখনো পোস্টদাতার কোন রিপ্লাই পাইনাই। তবে ভদ্রলোকের কিছু মুরিদ আইসা ঝাঁপাইয়া পড়ছিলো। - শাহেদ বলতে বলতে এমনিতেই চোখ নাচালো।

আশিক জানে। এমনটাই হবে। কারণ এমনটাই হয়ে এসেছে বরাবর। এমনটাই হবার নিয়ম। ফেসবুক, টুইটার, এইসবের মারফতে মানুষের অনেক নতুন নতুন প্রবণতা সহজেই চোখে পড়ে। অন্তর্দৃষ্টি একটু স্বচ্ছ থাকলেই চলে। যেমন অনেকেই, বিশেষত অধিকাংশ ফেসবুক সেলিব্রেটিরাই নন ভায়োলেন্টলী নিজেদের ভায়োলেন্সকে বজায় রাখতে সচেষ্ট। ভক্তদের তোষামোদে চপচপ করা মন্তব্যে রেসপন্স করবে। কিন্তু বিরোধী কোন শক্তিশালী মত, যতো সোবার ভঙ্গিতেই বলা হোক তাকে কাউন্টার করবেনা। ভাবতে ভাবতে আশিক প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়।

আপনার কি খবর শাহেদ ভাই? নিজের কথা তো কইলেন না কিছু।

শাহেদ এবারে হাসে। মৃদু সেই হাসি। মুখে হাসি ধরে রেখে জবাব দেয় – আছি, তেমন কোন হেরফের নাই। একটা নতুন বই ধরছি। নন-ফিকশন।

কার লেখা প্রশ্নটা করতে যাবে তখনই আশিকের সেল ফোন বেজে উঠে। কল রিসিভ করে সে দেখে অনেক রাত হয়ে গেছে। এবারে নীড়ে ফিরে যাবার সময়। বাসে করেই যাবে। রাস্তা ফাঁকা আছে। যেতে বেশী সময় লাগবেনা। ঈদের ছুটির পরে এখনো অনেকেই নিজেদের গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে ফেরেনি।

শাহেদ আশিককে বাসস্টপ পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। তার বাসায় ফেরার বিশেষ কোন তাড়া নেই। তাই দশ মিনিট পর যখন বাসায় গিয়ে পৌঁছাবে সারাদিনে কি কি তার চোখে পড়লো মনে রাখবার মতো তাই নিয়ে ভেবে দিনের অবশিষ্ট সময়টুকু কাটিয়ে দিতে পারবে।

বাসে উঠে নিজের পছন্দমতো সিট খুঁজে নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো আশিক। নিঃসঙ্গ রাত। বাতাস, বাসের ভেতরকার হইহল্লা, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা-চলাফেরা করা মানুষজনের ক্লান্তি, তাদের অবয়বে দৃশ্যমান চিরন্তন রুক্ষতা সবকিছুকে কম্পাইল করলে আশিক বরাবরই যা আবিষ্কার করে এসেছে তা হলো- মানুষ কোথায় আছে তা সে জানতে উদগ্রীব। তার সকল ছোটাছুটি এই একটা উদ্দেশ্যেই। আশিকের মনে হলো মাত্রই শাহেদের সাথে তার যাপিত দুই ঘন্টার সময়টায় যা সবচেয়ে বেশী আকর্ষনীয় ছিলো তা হলো আলাপে পারস্পরিক স্বাস্থ্যকর এক সংকেত। আমি তোমাকে অনেককিছুই বলিনি। কিন্তু সে আমার শঠতা ছিলোনা। আমি বলিনি যেনো তোমার সাথে কথোপকথন স্বাস্থ্যকর থেকে যায়।

শাহেদের মনে কি চলছিলো তার খবর আশিক জানতোনা। জানলেও অবশ্য সে বিস্ময়ে বিমূঢ় হতোনা। রিকশা করে বাসায় ফিরতে ফিরতে শাহেদ ভাবছিলো সম্ভবত এই প্রথম এমন কোন সঙ্গের সাথে তার পরিচয় ঘটলো দীর্ঘদিন সে যার অপেক্ষায় ছিলো। কথোপকথনের আড়াল সবসময় ধূর্ততার পোশাকই পরে থাকে এমন কিছু নয়। আবরণপূর্ণ হৃদ্যতার অস্তিত্ব ধুলিকাঁদার এই পৃথিবীতে টিকে আছে। স্বীয় প্রয়োজনে। কথোপকথনের অন্তর্গত নির্মলতাকে বিসর্জন না দিয়েই।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.