নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্যালকুলেটর

২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:২৬

রাতেরবেলায় মন দিয়ে টিভিতে সংবাদ দেখছিলো শাকিল। রামপাল চুক্তি নিয়ে আন্দোলনরতদের উপরে প্রেসক্লাবে বেধড়ক হামলা চালিয়েছে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের তিরিশজন গুরুতর আহত। লাঠির সাথে সাথে পিপার স্প্রেও নাকি ব্যবহার করেছে পুলিশেরা। সচরাচর শহরের সবচাইতে প্রাজ্ঞ চিন্তাশীল গোষ্ঠি- অর্থাৎ বামদের উপরে পুলিশ লাঠিপেটা করলে সেই নিয়ে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো তেমন একটা সরব হয়না। শীর্ষস্থানীয় খবরের কাগজগুলো যদি দয়াপরবশ হয়ে কখনো সেই নিউজটা ছাপেই তাহলেও শেষের পৃষ্ঠায় কিংবা ভেতরের কোন পৃষ্ঠায় এমনভাবে ছাপবে যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পত্রিকা পড়া মানুষ বাদে আর কারো কাছেই খবরটা যাবেনা। তবে হ্যা, সেইসব নিউজের খুঁটিনাটি জানতে ফেসবুকে আসলেই যথেষ্ট। সমগ্র ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানা যাবে, সরকারের ছাত্রসংগঠণ কতোটা নৃশংস এই সাধারণ সত্যটুকু আরেকবার কোষ্ঠি বিচার করে অবশেষে অপরিসীম বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় দিয়ে প্রমাণ করা যাবে। কারো কারো এমনও মনে হতে পারে যেনো ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠণের কাছে ধর্মাবতারের আচরণই প্রত্যাশিত ছিলো। যাক গে এতোসব কথা, কিন্তু এই মুহূর্তে শাকিলের মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।

সংবাদ দেখা শেষে যখন রামপাল নিয়ে অনুষ্ঠিত টক শো দেখতে বসলো তখন শাকিলকে অস্থিরতা আরো বেশী পেয়ে বসলো। সে মন দিয়ে রামপালের চুক্তি নিয়ে কথা বলতে টক শোতে উপস্থিত সরকারী দলীয় এমপির বক্তব্য শুনতে চেষ্টা করছে কিন্তু মন দিতে পারছে কই? সপ্তাহখানিক আগে হঠাৎ একদিন অফিসে তারেকের ফোন এসেছিলো।

“শাকিল ভাই, আছেন কেমন বস?”

“আরে, এতোদিনে এই অধমকে মনে পড়লো দেখি। আমার আর থাকা। তা তোমার খবর কি?”

“আমি আছি মোটামুটি শাকিল ভাই। তা বস, আমার একটা ছোট্ট উপকার যে করতে হয়।”

“আরে বইলা ফেলো তাড়াতাড়ি। তোমারে আমি সাহায্য করবোনা তা কেমনে হয়?”

তারেককে সেদিনই কথা দিয়েছিলো। রামপাল ইস্যু নিয়ে বর্তমানের হালহকিকত খুবই গরম। শাকিল একসময়ে কবি ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিপ্লব, বিক্ষোভে মুখরিত সব কবিতা লিখে ক্যাম্পাসে তার বেশ পরিচিত হয়েছিলো। পুরনো সেই বিপ্লবী চেতনার কথা তারেক ভালোভাবেই জানে। তাই সে শাকিলকে অনুরোধ করেছিলো তার অনলাইন পত্রিকার জন্য নিজের বিপ্লবী কবিসত্তাকে আর একটিবারের জন্য ফিরিয়ে আনতে। সেই ফোনকলের পর থেকেই শাকিল ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠেছে।

শাকিলের এই অস্থিরতার তল তার কলিগরা না পেলেও তিন বছরের স্ত্রী অবন্তী ঠিকই টের পায়। কিন্তু স্বামীকে এই নিয়ে কিছু বলা তার কাছে সমীচীন ঠেকেনা। কবিসত্তা যাই থাকুক কর্মস্থলে শাকিলের তৎপরতা প্রশংসনীয়। সেই কারণেই দ্রুতসময়ের মধ্যে দুই দুইটা ইনক্রিমেন্টের পরে কবিতা নিয়ে স্বামীর নস্টালজিয়াকে সে আদপেই দোষনীয় বলে বিবেচনা করেনা। বেচারার এতো ভালোবাসার জায়গা কবিতা। এই নিয়েও যদি সে ঝগড়া করে বসে তাহলে যাবে কোথায়? তাছাড়া এই বছরের শেষে অফিস থেকে শাকিলের পাওনা ছুটি কাজে লাগিয়ে তাদের ইউরোপ ঘুরে আসাটাও প্রায় নিশ্চিত।

কিন্তু অবন্তী বিষয়টাকে যতো সরলভাবে দেখেছিলো বিষয়টা ততো সরল পর্যায়ে আর নেই। এটা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠলো যখন একদিন রাতেরবেলায় ঘুম থেকে শাকিলকে দেখলো ল্যাম্পের আলোতে কিছু সাদা কাগজে পাগলের মতো কলম চালিয়ে যেতে। কাছে গিয়ে অবন্তী দেখলো একের পর এক অর্ধসমাপ্ত কবিতা লিখে শাকিল কোনটারই সমাপ্তি টানছেনা। লিখছে, অর্ধেক কি অর্ধেকের একটু বেশী হতেই কাগজটাকে বাস্কেট পেপারে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। শাকিলকে এই রুপে আগে কখনো দেখেছে বলে অবন্তী মনে করতে পারেনা; খুব সম্ভবত এই কারণেই সেই বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে অতঃপর পুনরায় বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

অফিস থেকে ইচ্ছা করে আজকে ডে অফ নিয়েছে শাকিল। বাই হুক অর বাই ক্রুক আজকে সে কবিতাটি লিখে শেষ করবেই। তারপর সাথে সাথে তারেককে একটা কল করবে। তারপরে লিখিত কবিতাটি পাঠিয়ে দেবে। অবন্তীও আজকে সকাল সকাল নিজের বাড়িতে গেছে। মা-বাবার সাথে লম্বা সময় কাটিয়ে সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরবে। বাসায় এখন শাকিল সম্পূর্ণই একলা। কোন কোলাহল নেই। কোন ঝঞ্ঝাট নেই। একেবারে নির্ভেজাল কিছু প্রহর। টেবিলে বসে ভেতর থেকে একগাদা সাদা কাগজ বের করলো শাকিল। আহ, দেখতেই কি অসাধারণ লাগছে! কার্তিক মাসের দুপুর। রোদে চারপাশটা ঝকমক করছে। বারান্দায় এক পাক ঘুরে আসলো শাকিল। আকাশ এতো উজ্জ্বল! কবিতা লিখবে কি ইচ্ছা করছে হাঁটতে বেরিয়ে পড়ে। হাঁটতে হাঁটতে সোজা চলে যাবে- কই চলে যাবে এই চিন্তা মাথায় আসতেই শাকিল বাইরে বেরিয়ে পড়ার ইচ্ছাকে আর প্রশ্রয় দেয়না। সাদা কাগজে মনোযোগ দেওয়ার আধাঘন্টা পরে শাকিল আবিষ্কার করে টানা টানা অক্ষরে দীর্ঘ কবিতার পরিবর্তে একটা স্কেচ অঙ্কিত। তিন মাথাওয়ালা একটা লোকের হৃদয়ের মধ্যখানে বড় একটা ক্যালকুলেটর বসানো। সেই লোক রোদের আলোতে টেবিলে লিখতে বসেছে। মাথাটা ঝুঁকে। কবিতা লিখছে কি স্কেচ সেটা বোঝা যায়না।

রামপাল ইস্যুটা আর কিছুদিন চলুক। আর মাত্র দশটা দিন হলেও চলবে। নিজেকে ধাতস্থ করে শাকিল স্বগতোক্তি করে।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:০৭

মুশশাররাফ হোসেন সৈকত বলেছেন: so you are still alive in somewhereinblog.net

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.